শিশুর জন্য তার মায়ের দুধ অমৃতের মতো। পৃথিবীর আলো দেখার পর প্রথম ৬ মাস মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য সবথেকে ভালো। বুকের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শিশুর ঘ্রাণশক্তি বাড়ায় ও স্বাদ বিচারের ক্ষমতাও তৈরি করে। মায়ের খাদ্যাভ্যাসে রদবদলের সাথে সাথে বুকের দুধের স্বাদের পরিবর্তন ঘটে, তাই শিশু একটু একটু করে নানারকম স্বাদের সাথে পরিচিত হতে পারে। মায়ের সাথে শিশুর সম্পর্ক নিবিড় করে এই স্তন্যপান করানো। মায়ের দেহের সংস্পর্শে এসে, মায়ের আদর ও নিজের পুষ্টি দুইই গ্রহণ করে শিশু, আর নিজের পরম নির্ভরতার জায়গাটিও খুঁজে পায়। শুধু কী বাচ্চা, বুকের দুধ বাচ্চাকে খাওয়ালে মাও নানা ভাবে উপকৃত হন। তাই কখনও, কোনও অবস্থাতেই গোরুর দুধ মায়ের দুধের বিকল্প হতে পারে না। দেখে নিন কেন!(Cow’s milk cannot replace Breastmilk in Bangla.Why can’t Cow milk be the replacement to Breastmilk in Bengali.)
#1. ফ্যাটি অ্যাসিড (Fatty Acids): মায়ের দুধে আছে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড (লিনোলিক অ্যাসিড), শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ, চক্ষু গঠনে ও রক্তনালীর জন্য যার ভূমিকা অপরিসীম। এই সব অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড কিন্তু গোরুর দুধে নেই!
#2. কেসিন কম (Less Casein): মায়ের দুধে কেসিন (ছানা জাতীয় উপাদান) থাকে অনেক কম, মাত্র ৩৫%। যেখানে গোরুর দুধে এরই পরিমাণ প্রায় ৮০%। শিশুর শরীরে ঢোকামাত্র এই কেসিন শক্ত দইয়ের মতো হয়ে যায়। ফলে সহজে হজম হয় না।
#3. ল্যাকটোজ বেশি (Higher Lactose): মায়ের দুধে ল্যাকটোজের পরিমাণ থাকে অনেক বেশি। এই ল্যাকটোজই শিশুর মস্তিষ্কের গঠন ও বিকাশে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরের ভেতর প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামও টেনে আনে। এতে শিশুর ”রিকেট” হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
#4.পর্যাপ্ত ভিটামিন (Sufficient Vitamin): মায়ের দুধেই শিশুর শরীরের চাহিদামাফিক পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন থাকে। গোরুর দুধ সেই চাহিদা মেটাতে পারে না। সব রকম ভিটামিনের কমতি তো বটেই। সর্বোপরি শিশুর জন্য অত্যাবশ্যক ভিটামিন-সি-ই থাকে না গোরুর দুধে।
#5.পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম (Sufficient Calcium):মায়ের দুধ থেকে শিশু তার প্রয়োজন মতো ক্যালসিয়াম পেয়ে যায়। গোরুর দুধে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ফসফেট থাকলেও ফসফেটের আধিক্যের কারণেই ক্যালসিয়াম ঠিকঠাক শোষিত হয় না। অযথা শিড়-টানের আশঙ্কা বাড়ে!
#6. শ্বেতকণিকা (White Blood Cells): মায়ের দুধের শ্বেতকনিকা এবং বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধক রোগভোগ থেকে রক্ষা করে আপনার শিশুকে। পেট খারাপ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, কানে ইনেফকশন, প্রস্রাবের সংক্রমণ- এসব আর হয় না ওর। গোরুর দুধে সে গুণ আর কই!
#7. আয়রন (Iron): মায়ের দুধের প্রায় ৫০% আয়রনই শিশুর দেহে শোষিত হয়। ফলে শিশুর রক্তাল্পতায় ভোগার আশঙ্কা কমে। অপর দিকে গোরুর দুধে আয়রনের পরিমাণ মায়ের দুধের তুলনায় বেশি হলেও এর থেকে মাত্র ১০% আয়রন পায় শিশুর দেহ!