সময় হয়েই এসেছে প্রায়। আর কিছুদিনের মধ্যেই ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে টলমল করে বাড়িময় ঘুরে বেড়াবে পুঁচকেটা। ১০ মিনিটের মধ্যে ধুপ করে এক-দু’বার পড়বে, তিন-চারবার হোঁচট খাবে আর পাঁচ-ছয়বার উঠতে না পেরে প্যাঁ করবে। আর আপনি সেই দেখে সারাদিন নির্মল আনন্দে ভাসবেন আর বাচ্চার কোটি খানেক ছবি আর ভিডিও তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিতে থাকবেন। কি, ঠিক বলছি নিশ্চয়। সত্যি তো, পুঁচকেটা যদি সারাক্ষণ আপনার পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে, টলমলিয়ে হাঁটতে গিয়ে নানা মজার অঙ্গভঙ্গী করে,কোন বাবা-মা চাইবে না সেই মুহূর্তগুলোর আনন্দ নিতে? নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখবে আপনার রাজপুত্র বা রাজকন্যা। কিন্তু মাগো, বাচ্চার হাঁটতে শেখা শুধু প্রাণ ভরে দেখলেই তো হবে না। প্রথম দিকে ওকে সাহায্য করতে হবে আপনাকেই। সাধারণত, ১০-১৮ মাস বয়সের মধ্যে অধিকাংশ বাচ্চা হাঁটার চেষ্টা শুরু করে। কী করলে বাচ্চা জলদি হাঁটতে শিখে যাবে, সেই উপায় বাতলে দিচ্ছি আমরা! বাচ্চার মতো করে ভেবে আপনিও এগুলো ট্রাই করে দেখুন তো! (Ways to teach a baby how to walk)
বাচ্চার বয়স ১০-১১ মাস হয়ে গেলে ওকে বুঝতে দিন যে ও পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসুন এবং বাচ্চাকে কোলের ওপর দাঁড়াতে এবং লাফাতে দিন। অবশ্যই আপনি ওকে ধরে থাকবেন। বাচ্চাকে কোনও ছড়া বলুন বা ও যদি কোনও গান পছন্দ করে তা হলে সেটাও করতে পারেন। বাচ্চা নিজের ভঙ্গীতে লাফাতে ও নাচতে চেষ্টা করবে আপনার কোলের ওপরেই। মাঝে মাঝে হয়তো দাঁড়িয়েও পড়তে পারে।
Also read: খেলতে খেলতে বুদ্ধির বিকাশ
বাচ্চারা অনেকসময় কিছু একটা ধরে দাঁড়িয়ে তো পড়ে, কিন্তু তারপরে কী করবে সেটা আর বুঝতে পারে না। ফলস্বরূপ, উপায়ান্তর না দেখে কাঁদতে শুরু করে। দাঁড়ানোর পরে যে বসতে হয়, সেটা তো জানেই না একরত্তি গুলো। অতএব, এগিয়ে আসতে হবে আপনাকেই। ওকে আস্তে আস্তে বসিয়ে দিন। শিশুকে অভ্যেস করানোর জন্য মাঝে মাঝে ওকে দাঁড় করিয়ে দিন এবং তারপরে নিজেই আস্তে আস্তে ওকে ধরে মাটিতে বসিয়ে দিন। এর ফলে, শিশু ধীরে ধীরে বুঝে যায় যে, না দাঁড়াতে পারলে বসে পড়তে হয়। আবার এর থেকে হাঁটু কীভাবে মুড়তে হয় বা ভাঁজ করতে হয়, সেটাও তারা জলদি শিখে নেয়।
যখন দেখবেন, বাচ্চা একটু একটু পায়ে দাঁড়ানোর জোর পাচ্ছে বা হাঁটু ভেঙে কী করে একটু একটু পা ফেলতে হয় সেটা শিখে গেছে; ওকে ধরে ধরে হাঁটার অভ্যেস করান। বাচ্চার দুটো হাত শক্ত করে ধরে থাকুন। এবার ওর সাথে আস্তে আস্তে হাঁটুন। ওকে জোর করবেন না বা অনেকক্ষণ হাঁটাবেন না। বাচ্চার পা যাতে সোজাভাবে মাটিতে পড়ে সে ব্যাপারে বিশেষ যত্নশীল হোন এবং প্রয়োজনে অন্য কারও সাহায্য নিন। বাচ্চার কচি পা যেন মচকে না যায়।
বাচ্চার প্রিয় খেলনা এমন জায়গায় রেখে দিন, যাতে খেলনাটা নিতে হলে ওকে দাঁড়াতে হয়। যেখানেই রাখুন, খেয়াল রাখবেন উঠতে গিয়ে কোনও ভাবেই যেন মাথায় আঘাত না পায়। বাচ্চা সবকিছু খামচে ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, তাই করতে গিয়ে যেন বাচ্চা আঘাত না পায়। আপনিও খেলনাটা নিজের হাতে উঁচু করে ধরে রাখতে পারেন। বাচ্চা কাঁদলে বা ইশারা করলে তাকে খেলনাটি দিয়ে দেবেন না। ওকে বোঝান যে ওকে নিজেকেই নিতে হবে; আর দাঁড়িয়েই নিতে হবে।
দিন না ওকে উজ্জ্বল রঙের প্যাঁকপ্যাঁকে দুটো জুতো কিনে! আজকাল তো জুতোতে নানারকম আলোও জ্বলে। এতে বাচ্চা হাঁটতে গিয়ে খুব মজা পাবে। দস্যিটা যেই দেখবে, মাটিতে পা দিলে ‘প্যাঁক’ করে আওয়াজ হচ্ছে আর জুতোয় আলো ঝিকমিক করছে, ওর হাঁটার ব্যাপারে উৎসাহ কিন্তু বহুগুণে বেড়ে যাবে। বেশ প্যাঁকপ্যাঁক আওয়াজ তুলে হেঁটে বেড়ানোর মজাটাই যে আলাদা ওর কাছে।
বাচ্চারা যে অনুকরণ করতে ভালোবাসে, এটা কে না জানে! একটু করে বেড়াতে নিয়ে যান ওকে বিকেল হলেই। সে হতে পারে কোনও বাচ্চাদের পার্ক বা সোসাইটির প্লে- গ্রাউন্ড। ও যখন দেখবে, অন্য বাচ্চারা হেঁটে বেড়াচ্ছে বেলুন হাতে বা লাথি মারছে ফুটবলে; ওরও ভয়ানক ইচ্ছে হবে ওদের সাথে খেলার। আর এই ইচ্ছের তাগিদেই হয়তো জলদি জলদি হাঁটা শিখে নিল আপনার বীরপুরুষ বা বীরাঙ্গনাটি।
Also read: ৭টি ধাপে শিশুর পটি ট্রেনিং!
বড্ড ভালোবাসে ওরা মায়ের আদর। কিছুটা করে হাঁটতে শিখে গেলে, ওকে নামিয়ে দিয়ে অল্প দূরত্বে আপনি বসে পড়ুন এবং কোলে নেওয়ার ভঙ্গীতে ওকে নিজের দিকে ডাকুন। আপনার কাছে আসার জন্য টলমল পায়ে ঠিক হেঁটে আসবে খুদেটা। ওর এই কোলে চাপতে আসার পুরষ্কার হিসেবে দিয়ে দিন ওকে ন’টা-দশটা-বারোটা-তেরোটা হামি।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null