বাড়িটা হঠাৎ ভীষণ শান্ত লাগছে, তাই না? দস্যিটা নিশ্চয় এমন কিছু কাজে ব্যস্ত, যা আপনি ওকে করতে বারণ করেছেন। বড়রা যা বারণ করে, তার ওপরেই তো খুদে শয়তানগুলোর আগ্রহ বেশি। চুপিচুপি গিয়ে দেখলেন, আপনার সাধের মোবাইল ফোনটি হস্তগত করে তিনি মগ্ন হয়ে কী যেন খুটুর-খাটুর করছেন। হাজার বারণ, ভয় দেখানো, বকাঝকা করা কিছুতেই যেন কাজ হয় না। লুকিয়ে লুকিয়ে মোবাইল সে নেবেই নেবে। আসলে, ওই পুঁচকে দস্যিগুলোকে ধমক দিয়ে বিশেষ কোনও কাজ হয় না। বেশি শাসন করতে গেলে উল্টে বাচ্চা খিটখিটে, একরোখা ও জেদি হয়ে যেতে পারে। আবার সে চাইলেই তো আর মোবাইল দেওয়া যায় না বা তার সব বাজে আবদার মেনে নেওয়াও উচিত না। এখানেই প্রয়োজন একটু বুদ্ধি আর বাড়তি ধৈর্যের। বাড়িতে অশান্তি না করে, বাচ্চার সাথে রোজ ঝামেলা না করে কীভাবে মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখবেন ওকে? উপায় তো আছেই, একটু প্রয়োগ করে দেখুন না,কাজ হয় কি না? (Mobile phone theke dure rakhun bachhake. Ways to keep kids away from mobile phones in Bangla)
জানেন তো, বাচ্চারা বড়দের অনুকরণ করতে ভীষণ পছন্দ করে! তাই,মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাকেও সংযমী হতে হবে। জানি, এখন হাতের মুঠোয় ছোট্ট ফোনটাতেই আপনি যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারেন, তাও চেষ্টা করুন দরকার ছাড়া মোবাইলে সময় না কাটানোর। বাচ্চার সামনে ফোন নিয়ে কারও চ্যাট পড়ে হাসা বা গেমে পয়েন্ট বাড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ, এগুলো করবেন না। এতে বাচ্চার মনে মোবাইল সম্পর্কে কৌতূহল বাড়ে। ফোন যে শুধুমাত্র যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় একটা মাধ্যম, বাচ্চাকে সেরকমই বোঝান। ছোট বাচ্চার হাতের নাগালে যেন ফোন না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
ছোট থেকেই বাচ্চাকে নানারকম সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। ছবি আঁকা, খেলাধূলা করা, গান গাওয়া বা গাছের পরিচর্যা করা, ইত্যাদিতে বাচ্চার মূল্যবোধ বাড়ে,চিন্তাশক্তিরও বিকাশ ঘটে। গল্পের বই পড়ার অভ্যেস তৈরি করান, প্রয়োজনে নিজে ওর সামনে বসে গল্পের বই পড়ুন।
অনেক বাবা-মা আছে, যারা বাচ্চার বায়না সামলাতে বা কান্না থামাতে তার হাতে মোবাইল ফোন ধরিয়ে দেয়। মোবাইলে গেম চালিয়ে বা গান চালিয়ে বাচ্চার হাতে ধরিয়ে দিলে, বাচ্চা অন্যমনস্ক হয়ে বায়না থামিয়ে দেয়। কিন্তু, এই অভ্যাস একেবারেই ঠিক নয়। প্রয়োজনে অল্প সময় টিভিতে কার্টুন বা গান চালিয়ে দিন, কিন্তু মোবাইল দিয়ে বাচ্চাকে শান্ত রাখার চেষ্টা কখনওই করবেন না।
বাচ্চা দিনের অনেকটা সময় একা থাকলে খিটখিটে হয়ে যায় ও বায়না বেশি করে। বাচ্চার সাথে যতটা বেশি সম্ভব সময় কাটান। তাকে গল্প বলুন, বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান, নিজে সারাদিন কী করলেন বলুন এবং ওর কাছেও জানতে চান। ওর সাথে এমন একটা সম্পর্ক তৈরি করুন যে, আপনি কিছু বললে সেটা ও নির্দ্বিধায় মেনে নেবে। আপনার মতের বিরুদ্ধে কোনও কাজ করতে ওর মন সায় দেবে না একেবারেই। মোবাইল ফোন ব্যবহার যে ভালো নয়, এটা গল্প করে, ছবি দেখিয়ে বাচ্চাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
অবশ্যই আধুনিক জীবনে মোবাইল ফোন অপরিহার্য। বাচ্চা যদি স্কুলে যেতে শুরু করেছে, তা হলে তার মোবাইলের ওপর আগ্রহ আপনি আটকাতে পারবেন না কিছুতেই। ধমক দিলে বা অতিরিক্ত শাসনে এই বয়সের বাচ্চাদের জেদ বেড়ে যায়; তারা লুকিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে। তাই তাকে মোবাইল ব্যবহার করতে দিন, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ে। মোবাইলে গেম খেলার সময় আপনিই ঠিক করে দিন এবং নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে ফোন নিয়ে নিন। এতে কোনও গেমের ওপর বা মোবাইলের ওপর Addiction তৈরি হয় না।
আপনার অনুপস্থিতিতে যাতে বাচ্চা মোবাইল ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য মোবাইলে পাসওয়ার্ড সেট করে দিন। এছাড়াও এখন অনেক অ্যাপ্লিকেশন আছে, যার মাধ্যমে আপনি মোবাইল ফোনে বাচ্চার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। এই অ্যাপগুলির সাহায্যে বাচ্চা মোবাইলে কী করছে, কী দেখছে সেটা আপনি বুঝতে পারবেন আর আপনি যা দেখাতে চাইবেন বাচ্চা শুধু তাই দেখতে পাবে। Ways to keep kids away from mobile phones.
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null