সকালটাই যেন মনখারাপের পর্দা টেনে শুরু হয়েছে, তাই না? আপনার ছোট্ট সোনার গা গরম সকাল থেকেই। শরীরের অস্বস্তির জন্য বেচারা ঘ্যানঘ্যান করেই যাচ্ছে, হাসি-খেলা তো দূর অস্ত। বাচ্চার গায়ে জ্বর থাকলে সে আর পাঁচটা দিনের মতো হাসিখুশি থাকে কেমন করে! বাচ্চাদের মধ্যে এই জ্বর আসা ব্যাপারটা কিন্তু খুবই সাধারণ। বাচ্চারা প্রায়ই নানা কারণে জ্বরে ভুগে থাকে। তা সে টিকা নিয়েই হোক, সর্দি হয়েই হোক বা অন্য যে কোনও শারীরিক সমস্যা। জ্বরটাই যে কোনও শারীরিক সমস্যার উপসর্গ হয়ে দেখা দেয় এই ছোট্ট ছানাপোনাদের ক্ষেত্রে। শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি বেড়ে গেলে তা কিন্তু খুবই ক্ষতিকর এবং মস্তিষ্কের ক্ষতিও করতে পারে। বাচ্চার জ্বর হঠাৎ খুব বেড়ে গেলে, ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারেন আপনিই। এইসব টোটকায় শরীরের তাপমাত্রা তাড়াতাড়িই কমে যায়। (Natural ways to bring down your child’s fever in Bangla. Shisur jwor komanor ghoroa upay)
জ্বর হলে জলপটি দেওয়া সবথেকে চেনা টোটকাগুলোর অন্যতম। একটা পরিষ্কার কাপড় ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে অতিরিক্ত জল নিংড়ে ফেলে দিন। এবার কাপড়টি শিশুর কপালে কয়েক মিনিট রাখুন। এইরকম বার কয়েক করুন, দেখবেন তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যাবে।
কুসুম গরম জলে, বাচ্চাকে স্নান করিয়ে দিন। যদি স্নান না করতে চায়, তা হলে ওই জলে তোয়ালে ভিজিয়ে গা স্পঞ্জ করিয়ে দিন এবং মাথাটা শুধু জল দিয়ে ধুইয়ে দিন। ভালো করে মাথা মুছিয়ে হাল্কা জামা পরিয়ে দিন। শিশু আরাম পাবে।
পেঁয়াজ ঘষা (Rub an onion)-> পেঁয়াজের কিছু চমৎকার ওষধি গুণের মধ্যে একটি হল, দেহের তাপমাত্রা কমানো। একটা পেঁয়াজকে পাতলা পাতলা করে কেটে নিন এবং ওই টুকরো বাচ্চার পায়ে ঘষুন। জ্বর কমাতে হলে দিনে দুই বার এটা করতে পারেন।
সরষের তেল আর রসুনের মিশ্রণ শুধু জ্বরই কম করে তাই না, ঘামের সাহায্যে শরীরের টক্সিন বের করে দেয়। আবার এই তেল ম্যাসাজ করার ফলে গা ম্যাজম্যাজ করা কমে ও গায়ে ব্যথাও কমে যায়। ২ টেবিল চামচ সরষের তেল গরম করে নিন। এবার ওই তেলে এক টেবিল চামচ রসুনের পেস্ট ভালো করে মিশিয়ে নিন। ২-৩ মিনিট এই মিশ্রণটি নাড়াচাড়া না করে রেখে দিন। এবার বাচ্চার হাতের তালু, পায়ের তলা, পিঠ, বুক ও ঘাড়ে ভালো করে মালিশ করুন। রাতে শোওয়ার আগে এই মালিশ করা খুব ভালো।
বাচ্চা জ্বর হলে অনেক সময় জল খেতে চায় না। কিন্তু এসময় বাচ্চাকে জল খাওয়ানো খুবই জরুরি। শুধু জল না, অন্য যে কোনও তরলও বাচ্চার শরীরকে আর্দ্র রাখবে। ফলের জ্যুস, জল, দই ইত্যাদি বাচ্চার শরীরকে আর্দ্র রাখে ও জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
শুনে অবাক হবেন না। ডিমের সাদা অংশটি সত্যিই শরীর থেকে তাপ শোষণ করে নিতে পারে। একটি ডিম ফাটিয়ে কুসুম ও সাদা অংশ আলাদা করে নিন। এবার ভালো করে ডিমের সাদা অংশটি ফেটিয়ে নিন। ফেটানো ডিমে একটা মসৃণ ভাব চলে এলে, দুটো পাতলা তোয়ালে এতে ডুবিয়ে ভিজিয়ে নিন। এবার ওই তোয়ালে দুটো বাচ্চার পায়ে ভালো করে জড়িয়ে দিন এবং ওপর থেকে হাল্কা কাপড় চাপা দিয়ে দিন। এভাবে প্রায় এক ঘণ্টা রাখতে পারেন। বাচ্চার পায়ের তলায় প্লাস্টিক জাতীয় কিছু পেতে দিলে আপনার বিছানা নোংরা হওয়ার ভয় থাকবে না। বাচ্চা যদি চঞ্চল হয়, তা হলে পাতলা তোয়ালের জায়গায় ওয়াশক্লথ ব্যবহার করুন। ওয়াশক্লথের ওপরে খুব টাইট নয় এরকম মোজা পরিয়ে রাখলে, বাচ্চা পা নাড়লেও এটা খুলে যাবে না।
এক চামচ মধুর সাথে অল্প লেবুর রস ও আদার রস মিশিয়ে বাচ্চাকে দিনে দু’বার খাওয়ান। লেবু,আদা ও মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আর জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে।
দুটো আলু ব্লেন্ডারে দিয়ে একটা মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার ওই পেস্ট বাচ্চার পায়ে লাগিয়ে বাচ্চাকে মোজা পরিয়ে দিন। কয়েক মিনিট পর মোজা দুটি খুলে দিন। এই পদ্ধতিতে দেহের তাপমাত্রা খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়।
জ্বর হলে বাচ্চাকে অনেক জামাকাপড় পরিয়ে রাখা বা চাদর দিয়ে পুরো ঢেকে রাখা একবারেই উচিত নয়। হাওয়া-বাতাস চলাচল করে ও কটনের তৈরি, এরকম জামা পরান। ঘাম হয়ে জামা ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে দিন। বাচ্চা যদি শীত বোধ করে, তা হলে র্যাগ বা লেপ ওর গায়ে জড়িয়ে দিতে পারেন।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null