ভালোবাসার আবার সময়-সুযোগ কী, আর হিসেব-নিকেশই বা কী? হাজারবার মানছি আপনার কথা। কিন্তু জানেন কি, সুখের চেয়ে সোয়াস্তি ভালো। সাময়িক আবেগে ভেসে গিয়ে পরবর্তীতে যে মানসিক টানাপোড়েনে অস্থির হবেন! (Different Ways to Avoid Pregnancy, Birth Control Methods & Options)
যে দম্পতিরা একটি মিষ্টি সন্তানের আশায় দিন গুনছেন, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা এখনও অর্থনৈতিক বা মানসিক দিক দিয়ে একেবারেই তৈরি হননি, তাদের জীবনে হঠাৎ একটি সন্তানের আগমন কিন্তু সন্তান ও বাবা-মা উভয়ের জন্যই যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ রোধ করা নয়, সহবাস সংক্রান্ত অনেক গুরুতর অসুখ এবং সংক্রমণ এড়ানো যায় একটু সচেতন হলেই। আর সেখানেই গর্ভ নিরোধক ব্যবস্থা (Pregnancy Precautions) বা উপায়গুলির প্রয়োজনীয়তা।
প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখে এড়িয়ে চলে গেলে আখেরে ক্ষতি আপনার। নিজের মানসিক ও শারীরিক শান্তি বজায় রাখতে এসব কিছু নিয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা খুব প্রয়োজন। জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কত ধরনের হয় (Preventing an Unintended Pregnancy), কীভাবে কাজ করে তারা, তাদের গুরুত্বই বা কতখানি, এই সবকিছু নিয়েই আজকের প্রতিবেদন। নিজের ভালোর জন্যই পড়ে নিন একনজরে।
#1. কনডোম: জন্ম নিয়ন্ত্রণের এই ব্যবস্থাটাই মনে হয় সবথেকে পরিচিত ও প্রচলিত। শুধু জন্ম নিয়ন্ত্রণ নয়, সহবাসের ফলে অনেকসময় যে সমস্ত যৌন রোগগুলি ছড়ায়, তার থেকেও রক্ষা করতে পারে এইটি।
ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারেন।
বিশেষ টিপস: গর্ভ নিরোধক ব্যবস্থা বা জন্ম নিয়ন্ত্রক হিসেবে কনডোম ব্যবহার করা সবসময়েই নিরাপদ। যৌনরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না আবার এতে হরমোনের কোনও প্রভাব নেই বলে ব্যবহারকারীর শরীরের কাজের কোনও তারতম্য ঘটে না। তবে, ব্যবহার করুন ভালো মানের কনডোম এবং সঠিক পদ্ধতিতে। অন্যথায় কনডোম ছিঁড়ে যেতে পারে। অনেকের ল্যাটেকস কনডোম থেকে এলারজি হয়; সেক্ষেত্রে সাহায্য নিতে পারেন অন্য পদ্ধতির।
#2. গর্ভ নিরোধক বড়ি বা পিল: আরও একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি এটি। মহিলাদের এই পিল (Birth Control Pill) বা বড়ি রোজ একটি করে খেতে হয়।
বিশেষ টিপস: ডাক্তারের কথা মেনে এই গর্ভ নিরোধক পিল ব্যবহার করলে অতিরিক্ত উপকৃত হতে পারে আপনার শরীর। পিরিয়ডসের ব্যথা কম হয়, সহবাস আরামদায়ক হয় এবং মুখে ব্রণ হওয়াও কমে যায় অনেকের ক্ষেত্রেই। আবার যৌনরোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে কিন্তু ব্যর্থ এইসব পিল। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করেই যে কোনও ওষুধ কিনবেন এবং একমাত্র মহিলারাই এই ওষুধ খেতে পারবেন।
#3. সারভিকাল ক্যাপ: এই সারভিকাল ক্যাপ একটা নরম টুপির মতো জিনিস যা মহিলাদের সারভিক্সে একটা আবরণ তৈরি করে (Birth Control Types)। এর ফলে স্পারম জরায়ুতে ঢুকতে পারে না।
বিশেষ টিপস: অনেকের এর থেকে এলারজি হতে পারে। আবার অনেকের এটা পরে থাকা অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
#4. ভ্যাজাইনাল রিং বা কন্ট্রাসেপটিভ রিং: এই রিংটি এমনভাবে তৈরি যে এটি মহিলার শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেসটোজেন হরমোন নিঃসরণ করতে পারে।
বিশেষ টিপস: যেসব মহিলার শরীরে ইস্ট্রোজেন যুক্ত গর্ভ নিরোধক কোনও কিছু স্যুট করে না, তারা এটা ব্যবহার করতে পারেন না। সঠিক সময়ের গ্যাপে এটা খুলে ফেলে নতুন না পরলে কর্মক্ষমতা থাকে না। কোনও যৌন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না।
আরও পড়ুনঃ সতর্ক নন সঙ্গমে; কীভাবে আটকাবেন প্রেগন্যান্সি?
#5. ডায়াফ্রাম: এই ডায়াফ্রামকে মহিলাদের কনডোম বললে ভুল কিছু বলা হয় না। ছোট্ট, নরম টুপির মতো এই জিনিস ডায়াফ্রাম মহিলাদের ভ্যাজাইনার ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় (How to Avoid Pregnancy)।
ডায়াফ্রাম শুক্রাণুকে জরায়ু পর্যন্ত পৌঁছতে দেয় না।
বিশেষ টিপস: ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখলে ও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে একই ডায়াফ্রাম একাধিকবার এবং বছরখানেক ব্যবহার করা যায়। যারা ডায়াফ্রাম ব্যবহার করেন, ডায়াফ্রাম শরীরের মধ্যে ঢোকানো ও বের করে নেওয়ার যে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান আছে, তা মেনে চলা অবশ্যই উচিত।
#6. কন্ট্রাসেপটিভ ইঞ্জেকশন: এই ইঞ্জেকশনে প্রজেসটোজেন হরমোনের সিন্থেটিক ভার্সন মহিলাদের শরীরে প্রবেশ করানো হয়।
বিশেষ টিপস: একবার ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরে তিন মাস পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কাজ করে। সময়ের হিসেব রাখা এক্ষেত্রেও জরুরি। এই ইঞ্জেকশনের প্রভাবে অনেক মহিলার পিরিয়ডস অনিয়মিত হয়ে যায়।
#7. কন্ত্রাসেপটিভ ইমপ্ল্যানট: এই পদ্ধতিতে একটি ছোট্ট, নমনীয় রডের মতো জিনিস মহিলার বাহুর ত্বকের তলায় বসিয়ে দেওয়া হয় (What’s the Best Kind of Birth Control)। এটি প্রজেসটেরন হরমোন নিঃসরণ করে।
বিশেষ টিপস: জন্ম নিয়ন্ত্রণের এই প্রক্রিয়া অন্যদের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদও বটে। তবে, যাই করুন, একজন দক্ষ চিকিৎসকের কাছেই এই ইমপ্ল্যানট করানো উচিত। ইমপ্লানটেশনের প্রথম দিকে পিরিয়ড বা মাসিক অনিয়মিত হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন বা এস টি আই (STIs) থেকে সুরক্ষা দিতে পারে না এই ব্যবস্থা।
#8. ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস (Intrauterine Device (IUD)): এটি একটি ছোট্ট, ইংরেজি “T” এর মতো দেখতে বস্তু। প্লাস্টিক ও কপার বা প্রজেসটেরন হরমোন এই ডিভাইসে মজুত থাকে। এই ডিভাইসটি ইচ্ছুক মহিলার জরায়ুতে স্থাপন করা হয় (Birth Control IUD)।
বিশেষ টিপস: ইমপ্ল্যানটেশনের পরে প্রথম ৬ মাস অনিয়মিত মাসিক হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এছাড়াও স্পটিং লক্ষ্য করেন অনেকেই। এই ডিভাইস একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই ইমপ্ল্যানট করা উচিত।
#9. স্টেরিলাইজেশন: জন্ম নিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতিটি তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা আর কোনও দিনই সন্তান চাইবেন না। অপারেশনের সাহায্যে শরীরের জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা বা প্রাণ সৃষ্টি করার ক্ষমতাই নষ্ট করে দেওয়া হয় এক্ষেত্রে। গর্ভ নিরোধক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একে স্থায়ী সমাধানই বলা উচিত (How Can You Prevent a Future Unwanted Pregnancy)।
বিশেষ টিপস: এই পদ্ধতি মহিলা ও পুরুষ দুইয়ের জন্যই প্রযোজ্য। যেসব দম্পতির ১/২ টি সন্তান হয়ে গেছে এবং যারা আর সন্তান চান না, তারা এই স্থায়ী সমধানের সাহায্য নিতে পারেন। (Types of Contraception to Prevent Pregnancy) তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া বাঞ্ছনীয় এবং প্রক্রিয়াটিও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই করানো উচিত।
এই স্টেরিলাইজেশন ছাড়া কিন্তু কোনও গর্ভ নিরোধক ব্যবস্থাই ১০০% নিরাপদ নয়। ১% হলেও সম্ভাবনা থেকেই যায়। তবে যদি এখনই ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এ ইচ্ছুক না হন, বাকি ৯৯% এর ওপরই ভরসা করে দেখুন না। নিজের মাসিক চক্র ভালো করে বুঝুন, ওভ্যুলেশনের হাল-হকিকত সম্বন্ধে জেনে রাখুন। ভবিষ্যতে অবাঞ্ছিত প্রেগন্যান্সি আটকানোই হোক বা ফ্যামিলি প্ল্যানিং; সুবিধে হবে আপনারই। (Different Ways to Avoid Pregnancy)
আরও পড়ুনঃ অসতর্ক সঙ্গমও যখন পুরোপুরি নিরাপদ!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null