মা হতে চলেছেন আপনি! এর থেকে খুশির খবর আর মনে হয় কিচ্ছুটি হয় না। শরীরের ভিতরে একটু একটু করে বেড়ে ওঠা প্রাণ সাড়ম্বরে জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব। নানান ধরনের পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছেন আপনিও। নিজের শরীরে যতটা গর্ব ভরে বয়ে চলেছেন মাতৃত্বের সমস্ত চিহ্ন; শরীরের ভিতরে ঘটা পরিবর্তন সম্বন্ধে আপনি ততটাই ওয়াকিবহাল তো? (How to Know When Your Water Breaks)
না, কোনও শক্ত হিসেব বা ডাক্তারি অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনাকে ঘাঁটাঘাঁটি করতে বলছি না। নিজের শরীরে যা পরিবর্তন হচ্ছে বা আগামীতে হতে পারে, সেই নিয়ে আপনাকে একটু সজাগ থাকতে বলছি মাত্র। এতে কী হয়? কোনও অবস্থাতেই আপনি অযথা প্যানিক করবেন না বা ঘাবড়ে যাবেন না!
“জল ভাঙা” বা “ওয়াটার ব্রেক” করা প্রেগন্যান্সিতে খুব সাধারণ একটি ঘটনা (Water Breaking During Pregnancy)। নির্দিষ্ট সময়ে এই ওয়াটার ব্রেক হওয়া যেমন কাম্য, অন্য সময় হয়ে গেলে তা ভয়ের কারণই হতে পারে। তাই প্রয়োজন যথাযথ তত্ত্বাবধান ও চিকিৎসার।
কখন ওয়াটার ব্রেক হলে ভয় পাবেন না বা কখন হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারবাবুকে খবর দেবেন, ওয়াটার ব্রেক হয়েছে সেটা বুঝবেন কীভাবে (How to Know When Your Water Breaks) এবং এই “ওয়াটার ব্রেক” ঘটনাটি কী? সবকিছু নিয়ে আলোচনা রইল প্রতিবেদনে। আশা করি, হবু মায়েদের অনেকটাই সাহস জোগাবে এই আলোচনাটি।
সোজা ভাষায় বললে, গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন বাচ্চা জলভর্তি একটা থলের মধ্যে বড় হয়। এই ব্যাগের পোশাকি নাম অ্যামনিওটিক স্যাক। আর এই ফ্লুয়িডকে বলে অ্যামনিওটিক ফ্লুয়িড। প্রসবের সময় হয়ে এলে এই স্যাক ভেঙে যায় এবং এর ভিতরের সমস্ত তরল হবু মায়ের ভ্যজাইনা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। একেই ওয়াটার ব্রেক হওয়া বা চলতি কথায় “জল ভাঙা” বলে।
সাধারণত, গর্ভবতী মহিলাদের তৃতীয় ট্রাইমেসটারের শেষের দিকে ওয়াটার ব্রেক হওয়া মানে প্রসবের সময় আসন্ন। ওয়াটার ব্রেক হওয়ার পরেই প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। ওয়াটার ব্রেক হওয়ার ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে লেবার পেন বা প্রসব যন্ত্রণা শুরু হতে পারে। অবশ্য কারও কারও ক্ষেত্রে এই সময়ের কম-বেশি হতেই পারে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে ওয়াটার ব্রেক হয়ে গেছে, অথচ প্রসব বেদনা শুরু হচ্ছে না এরকম হয়; সেক্ষেত্রে চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন প্রসব বেদনা ওঠানোর জন্য।
এই অ্যামনিওটিক ফ্লুয়িড বেরিয়ে যাওয়ার পরে খুব বেশিক্ষণ বাচ্চা পেটের মধ্যে থাকলে ইনফেকশন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্ষতি হতে পারে বাচ্চা এবং সাথে মায়েরও। তাই ওয়াটার ব্রেক হয়ে যাওয়ার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রসব হয়ে যাওয়াই মঙ্গলের।
মাত্র ১৫ শতাংশ মহিলার লেবার পেন বা প্রসব বেদনা ওঠার আগে ওয়াটার ব্রেক হয়ে যায়। বাকিদের ক্ষেত্রে লেবার পেন ওঠার পরেই এই ওয়াটার ব্রেক হয় বা ওষুধ/ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে করানো হয়।
তৃতীয় ট্রাইমেসটার যখন শেষের দিকে, তখন ওয়াটার ব্রেক হওয়া খুব স্বাভাবিক এবং প্রার্থনীয়ও বটে! কিন্তু, ৩৭ সপ্তাহের আগেই যদি এই ঘটনা ঘটে, তা হলে একে প্রিটার্ম প্রিলেবার রাপচার অফ মেম্ব্রেন্স (Premature Rupture of Membranes) বলা হয়।
সময়ের আগেই ওয়াটার ব্রেক হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যদি
আরও পড়ুন: গর্ভকালীন দিনগুলোয় আপনার গোপনাঙ্গের যত্ন নেওয়ার গোপন কথা
সময়ের আগে ওয়াটার ব্রেক হলে যা হয়:
প্রসবের সময় যত এগিয়ে আসবে, আপনার ডাক্তারবাবুও কিন্তু আপনাকে সেইভাবে তৈরি করবেন। যাতে যে কোনও অবস্থায় আপনি অতিরিক্ত ঘাবড়ে না যান। আপনার শরীরের অবস্থা অনুযায়ী তিনি এই বিষয়েও আপনাকে সবকিছু জানিয়ে রাখবেন। মেনে চলুন ওনার পরামর্শই।
প্রসব যন্ত্রণা উঠেছে এবং অনেকক্ষণ ধরে চলছে; অথচ ওয়াটার ব্রেক হয়নি। এরকম অবস্থায় চিকিৎসক অনেক ক্ষেত্রেই বাইরে থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে ওয়াটার ব্রেক করিয়ে দেন। প্রসবক্রিয়া কিছুটা হলেও কম সময় নেয়। ওয়াটার ব্রেক হয়ে গেলে কন্ট্রাকশন আরও তীব্র হয় এবং ব্যথাও বেশি হয়।
এছাড়াও প্রেগন্যান্সিতে কখনও ওয়াটার ব্রেক হলে যদি সেই জল বাদামি বা সবুজ রঙের বেরোয়, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারবাবুকে ডাকুন। বাচ্চা পেটের ভিতর মলত্যাগ করলে এই ঘটনা হতে পারে। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ইনফেকশন ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। নিজের শরীরে ঘটা পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে নিজে ওয়াকিবহাল থাকুন এবং সতর্ক থাকুন, দেখবেন কোনও ঘটনাই আপনাকে বিব্রত করতে পারবে না। (How to Know When Your Water Breaks)
আরও পড়ুন: আইভিএফ আসলে কী? কাদের সাহায্য করতে পারে কৃত্রিম ভাবে গর্ভধারণের এই পদ্ধতি?
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null