যোনিতে চুলকানি ভাব, জ্বালা ও দুর্গন্ধ? কোনও সংক্রমণ হয়নি তো আপনার?

যোনিতে চুলকানি ভাব, জ্বালা ও দুর্গন্ধ? কোনও সংক্রমণ হয়নি তো আপনার?

ইনফেকশন বা সংক্রমণ ব্যাপারটা কোনও দিনই ভালো নয় জানেন তো? আর শরীরের গোপন জায়গায় যদি হামলা করে এই ইনফেকশন, তা হলে তার ক্ষতি করার ক্ষমতা কম বই বেশি নয়। গোপনে আছে বলে সহ্য করে নিলেন দাঁতে দাঁত চিপে, এতে কিন্তু আপনার অস্বস্তিই বাড়বে! (Vaginal Infections, Itching and Odor)

ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে ভয়ানক আকার নিতে পারে ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন বা যোনিতে সংক্রমণ। নিজের সুরক্ষায় সচেতন হন এবার। নিজের ওপর এত অবিচার নাই বা করলেন! তাও আবার অহেতুক লজ্জা পেয়ে।

ভ্যাজাইনা বা যোনিতে যে ইনফেকশন হয়েছে (Jounange Chulkani, Durgandho), সেটা কীভাবে বুঝবেন? কীভাবে নেবেন নিজের যত্ন আর কী কী মেনে চললে এসব ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা কমবে, এইসব কিছু নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

বন্ধু হয়ে আপনার স্বাস্থ্যরক্ষায় (Vaginal Infection Symptoms, Home Remedies, Causes, Types) আমরা হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। নিজের প্রতি সতর্ক হয়ে আপনি এক পা এগিয়ে এসে প্রতিবেদনটি পড়ে ফেলুন। অন্যান্য বন্ধুদেরও সতর্ক করে দিন শেয়ার করে। তবেই না পাশে দাঁড়ানো এবং পাশে থাকার অঙ্গীকার সত্যি হবে। প্রতিবেদনটি পড়ে নিন এখনই।

 

যোনি বা ভ্যাজাইনাতে ইনফেকশন হয়েছে বুঝবেন কীভাবে? (What Are the Symptoms of Different Vaginal Infections)

  • চুলকানি ভাব
  • জ্বালা বোধ হওয়া
  • দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ
  • মিলনের সময় অস্বস্তি
  • র‍্যাশের মতো হয়ে যাওয়া

 

কোন কোন ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ ইনফেকশনের ইঙ্গিত দেয়? (All Types of Vaginal Discharge: What do They Really Indicate?)

  • স্বচ্ছ স্রাব, অল্প চ্যাটচেটে স্বচ্ছ স্রাব, জলের মত স্রাব বা সাদা স্রাব; এইগুলি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে যোনিতে চুলকানি অনুভব হলে এবং স্রাবে দুর্গন্ধ থাকলে তা স্বাভাবিক হয় না এবং ইনফেকশনের ইঙ্গিত দেয়।
  • আবার সাদা স্রাব যদি চকের মত ঘনত্বের হয়ে যায়, তা হলেও তা ইনফেকশনের লক্ষণ। ওভ্যুলেশনের সময় স্বচ্ছ বা সাদা স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায় (Gopon Onger Chulkani o Jala Theke Bachun)।
  • যোনিতে একধরনের ইনফেকশন হয়ে থাকে, যার নাম ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis)। এই ইনফেকশনের প্রভাবে হলুদ রঙের, ফেনাযুক্ত ও দুর্গন্ধময় স্রাব হয়। সাধারণত, সহবাসের দ্বারা এই ইনফেকশন সংক্রমিত হয়। এছাড়াও বাইরের থেকে কোনও সংক্রমিত বস্তু যোনির সংস্পর্শে এলেও এই ইনফেকশন হয়ে থাকে।
  • হলুদাভ সাদা স্রাব ইস্ট ইনফেকশন বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে। যোনিতে জ্বালা করে বা চুলকানির অনুভব হয়। এই স্রাব অনেকটা পচে যাওয়া দুধের মতো গন্ধযুক্ত। খুব বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রভাবে, ডায়াবেটিক মহিলাদের বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের এই ধরনের স্রাব হতে পারে।
  • সবুজ স্রাব ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ইনফেকশনের অন্যতম উপসর্গ। যে ব্যক্তির গনোরিয়া জাতীয় অসুখ আছে, তার সাথে সহবাস করলে এই ব্যাকটেরিয়া যোনিতে আক্রমণ করে (Vaginal Itching and Discharge)। সেক্স টয় থেকেও এই ধরনের ইনফেকশন হতে পারে। এই স্রাবেও (Vaginal Discharge) যোনিতে জ্বালা হয় এবং স্রাব দুর্গন্ধময় হয়ে থাকে।

 

ভ্যাজাইনা বা যোনিতে ইনফেকশন হওয়ার পিছনে দায়ী যারা (Vaginal Infection Causes)

#1. ইস্ট ইনফেকশন: ভ্যাজাইনাতে এই ইস্ট ইনফেকশন (Vaginal Yeast Infection) হওয়া খুবই সাধারণ একটা ঘটনা এবং প্রায় সব মেয়েই কম বেশি কিছু সময় এই ইনফেকশনের শিকার হয়। আমাদের ভ্যাজাইনাতে ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট মিলেমিশে সহাবস্থান করে।
এই ব্যাকটেরিয়াগুলি কিন্তু একেবারেই ক্ষতিকর নয়, উল্টে ভ্যজাইনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং ইস্টের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কোনও কারণে এই ব্যাকটেরিয়া আর ইস্টের সাম্যতা বিগড়ে গেলে ব্যাকটেরিয়া ইস্টের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না (Yeast Infection (vaginal) )। ভ্যাজাইনাতে ইস্টের মাত্রা বেড়ে গেলে এই ইনফেকশন হয়ে থাকে

  • কোনও ওষুধের প্রভাবে, যেসব মহিলার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের, ডায়াবেটিস থাকলে, গর্ভ নিরোধক ওষুধের প্রভাব বা শরীরে হরমোনের মাত্রার হঠাৎ তারতম্য ঘটলে (গর্ভাবস্থায়); এই ইনফেকশন হতে পারে।
  • ইস্ট ইনফেকশনের উপসর্গ হিসেবে ভ্যাজাইনাতে জ্বালা ভাব, চুলকানি হয়।
  • সাদা বা স্বচ্ছ ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জও দেখা দেয়।
  • ইস্ট ইনফেকশন খুব বেশি মাত্রায় হয়ে গেলে হলুদাভ সাদা রঙের, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব তৈরি হয়।
  • সারাক্ষণ একটা অস্বস্তি হতে থাকে।

 

আরও পড়ুন: গর্ভকালীন দিনগুলোয় আপনার গোপনাঙ্গের যত্ন নেওয়ার গোপন কথা

 

#2. ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস: এই ইনফেকশনটিও কিন্তু খুবই কমন। বিশেষ করে যেসব মেয়েরা মা হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ তৈরি তাদের মধ্যে এই ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বেশি দেখা যায়। ভ্যাজাইনা বা যোনিতে বসবাসকারী উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা কমে গেলে বা ব্যাল্যান্স গড়বড় হয়ে গেলে এই ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস (Bacterial vaginosis (BV)) হামলা করে (Common Types of Vaginal Infections)।

  • কোনও কেমিক্যাল দিয়ে ভ্যাজাইনা পরিষ্কার করা, মিলনের সময় গুণগত মানে নিচু এরকম লুব্রিকেনট ব্যবহার করা, ভ্যাজাইনাতে সরাসরি লাগানো উচিত নয় এরকম প্রোডাক্ট ব্যবহার করা, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর মিলন এবং কিছু ক্ষেত্রে খারাপ ডিটারজেন্ট বা সেন্টেড প্রোডাক্ট ব্যবহারকেও এই ইনফেকশন হওয়ার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। এছাড়াও কিছু অজ্ঞাত কারণেও এই ধরনের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে থাকে।
  • উপসর্গ হিসেবে জ্বালা ভাব, চুলকানি, অস্বস্তি এবং অস্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জই প্রধান।
  • গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ইনফেকশন ভয়ানক হতে পারে। সঠিক সময়ে লক্ষ্য না করলে না যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তা ক্ষতি করতে পারে ভ্রূণেরও। তাই, গর্ভবতী মায়েদের এই ইনফেকশন নিয়ে বিশেষ সচেতন থাকতে বলা হয় এবং ইনফেকশন হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।

 

#3. এলারজিজনিত অস্বস্তি বা ইনফেকশন: এটার কথা একটু আগেই বলেছি যদিও। সেন্টেড প্রোডাক্ট, কোনও ইনটিমেট ওয়াশ বা লুব্রিকেনট স্যুট না করলে ভ্যাজাইনাতে ইনফেকশন হতে পারে। খুব বেশি মারাত্মক না হলেও ভ্যাজাইনাতে জ্বালা ভাব এবং অস্বস্তি ভালোই হয়ে থাকে (Overview of Vaginal Infections; Women’s Health Issues)। শুধু এই নয়, মাসিকের সময় একই প্যাড দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলেও এই ইনফেকশন হতে পারে।

 

গোপনাঙ্গে বা ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন থেকে আরাম পেতে কিছু ঘরোয়া উপায় (Home Remedies for Vaginal Infection)

  • ভেজা, বাসি, স্যাঁতসেঁতে অন্তর্বাস পরে থাকবেন না।
  • নিজের অন্তর্বাস প্রত্যেকদিন কাচুন এবং রোদে শুকিয়ে পরুন।
  • কোনও কেমিক্যাল বা সুগন্ধি জিনিস ভ্যাজাইনাতে ব্যবহার করবেন না।
  • যৌনমিলনের আগে ও পরে যোনি ভালো করে পরিষ্কার করুন।
  • রাতে অন্তর্বাস পরে ঘুমবেন না।
  • বাড়িতে থাকলে এমন জামা কাপড় পরুন, যাতে হাওয়া চলাচল করে।
  • মাসিকের সময় একই স্যানিটারি ন্যাপকিন দীর্ঘক্ষণ পরে থাকবেন না।
  • প্রোবায়টিক জাতীয় খাবার, দই ইত্যাদি বেশি করে খান (Natural Remedies for Yeast Infections)। শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় এইসব খাবার।
  • ভ্যাজাইনার বাইরের দিকে জ্বালা কমাতে সাহায্য করতে পারে খাঁটি অরগ্যানিক নারকেল তেল।
  • টি ট্রি অয়েলও এইসব ইনফেকশন সারাতে খুব কার্যকরী। কিন্তু, মনে রাখবেন এই এসেন্সিয়াল অয়েল কিন্তু সরাসরি ভ্যাজাইনাতে ব্যবহার করা যাবে না। নারকেল তেল বা জোজোবা অয়েলের সাথে একদম অল্প মিশিয়ে ইনফেকশনের স্থানে লাগান। প্রত্যেকদিন ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। প্রথমে খুব অল্প লাগাবেন। অস্বস্তি মাত্রাতিরিক্ত হলে আর লাগাবেন না।
  • পরিষ্কার ঈষদুষ্ণ গরম জলে কিছুটা অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে নিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন ভ্যাজাইনা
  • ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার, প্রচুর পরিমাণে জল খান নিয়মিত।

 

কিছুটা পরিচ্ছন্নতা আর নিজের প্রতি সতর্কতা থাকলে এই ধরনের ইনফেকশন হলেও জলদি সেরে যায়। ইনফেকশন থেকে যদি খুব কষ্ট পান এবং ইনফেকশন ৩-৪ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তা হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। নিজে নিজে কোনও মলম কিনে ওই স্থানে লাগাবেন না বা ওষুধ খাবেন না। (Feminine Care; Information on Vaginal Infections, Itching, and Odor)

 

আরও পড়ুন: যোনিস্রাবের প্রকারভেদের কারণ কী!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null