কীভাবে বুঝবেন আবোল-তাবোল কথার মানে? মায়েদের জন্য থাকল শিশুর ভাষার অর্থ বোঝার টিপস!

কীভাবে বুঝবেন আবোল-তাবোল কথার মানে? মায়েদের জন্য থাকল শিশুর ভাষার অর্থ বোঝার টিপস!

ধরুন, আপনাকে আমি জিগ্যেস করলাম যে, পৃথিবীর সবথেকে দুর্বোধ্য এবং মিষ্টি ভাষাটি কী? কী বলবেন বলুন দেখি! এতো ভাবছেন যখন, তা হলে আমিই বলে দিই না হয়। উত্তরটা হল, বাচ্চার আবোল তাবোল আওয়াজ থুড়ি কথা বলার চেষ্টা। বাচ্চারা যেহেতু মায়ের সাথে সারাদিন চিটে থাকে, তাই মা তার সব আগডুম বাগডুম কথা দিব্যি বুঝে নেয়; কয়েকবার ঠেকে শিখে, সুন্দর শিশুর ভাষাতেই কথা বলতে পারে তারা। আর সত্যি বলতে কী, কচি শিশুর ভাষা তো আর বোঝার জন্য নয়, পুরোটাই অনুভবের। নানা সময়ে নানা রকম আওয়াজ করতে থাকে খুদেটা, মেজাজ ভালো থাকলে তো সোনায় সোহাগা। ওই একরত্তির কলকলানি বক্তৃতা শুনে কাটিয়ে দেওয়া যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাই তো? (Understanding sounds and noises your baby makes in Bangla. Sishur bhasa bojhar tips)

এবার ধরে নিই, আপনি সদ্য মা হয়েছেন এবং একটি বেশ বড় পরিবারে সবার সাথে মিলেমিশে থাকেন। বাচ্চা মানুষ হচ্ছে আপনার হাতে, কিন্তু সবাইকে সাথে নিয়ে। ‘মা’ হিসেবে আপনিও বড্ড ছোট, আপনি বেশ ধৈর্য ধরে বোঝার চেষ্টা করছেন, কী বলছে আপনার ছানাটি? বেশ ভেবে টেবে আপনার মনে হল, ওর হয়তো খিদে পেয়েছে। খাওয়াতে গেলেন, হাঁ-হাঁ করে ছুটে এলেন বাড়ির একজন জেঠিমা বা কাকীমা। ওনার মতে, বাচ্চা নাকি কোলে চাপতে চাইছে! আপনি পড়লেন মহা মুশকিলে, সব পর্যবেক্ষণ তো ঘেঁটে ঘ। হয়তো আপনি ঠিক বুঝেছিলেন, কিন্তু অভিজ্ঞতার ওপরে গলা তোলার সাহস আপনার নেই। আবার হতে পারে, উনিই ঠিক। এরকম বেশ কয়েকবার হতেই আপনার আত্মবিশ্বাস গিয়ে তলানিতে পৌঁছল। মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে বসলেন, আর মনে হয় বাচ্চার সাথে আপনার সদ্ভাব এজন্মে হল না। এত জলদি হাল ছাড়লে চলবে? তার ওপর যখন আপনার পাশে আমরা আছি খুঁটির মতো ঠেক হয়ে! বন্ধু ভেবে সাহায্য নিন নির্দ্বিধায়। কী করে উদ্ধার করবেন বাচ্চার আবোল তাবোল কথার মানে? এইতো, বলে দিচ্ছি।

বাচ্চা কত ধরনের আওয়াজ করে কথা বলতে চেষ্টা করে? (Decoding Baby’s Funny Little Noises and Sounds)

#1. গলার ভিতর থেকে উত্তেজনাপূর্ণ আওয়াজ (Squeals)

কোনও কিছু দেখে উত্তেজিত হলে বা আনন্দ হলে বাচ্চা গলার ভিতর থেকে তীক্ষ্ণ একরকম আওয়াজ বার করে। সাধারণ আওয়াজের থেকে এটা বেশ জোরালোই হয়ে থাকে। বাচ্চা এরকম আওয়াজ করলে আপনার কানে আসতে বাধ্য। একবার দুবার এরকম আওয়াজ করে ও হাত-পা নেড়ে তার আনন্দ প্রকাশ করে। ধরুন, আপনি কোনও খেলনা দেখাচ্ছেন বা অঙ্গভঙ্গী করছেন, হঠাৎ পুঁচকে হাত-পা নেড়ে মুখে অমনি আওয়াজ করলো। তার মানে, আপনি যা করছেন, সেটা ওর ভারি পছন্দ হয়েছে। কিন্তু, যদি দেখেন একনাগাড়ে এরকম আওয়াজ করে যাচ্ছে, আর চোখ-মুখ কুঁচকে আছে, তা হলে বুঝবেন ওর কোথাও অসুবিধা হচ্ছে।

আরও পড়ুনকীভাবে বুঝবেন বাচ্চার কান্নার ভাষা?

#2. মুখ না খুলে গলার স্বর ভারী করা (Grunts)

১ বছর হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকে বাচ্চা এইরকম আওয়াজ পটি করার সময় করতে শুরু করে। মজার ব্যাপার কী জানেন, ওইটুকু বাচ্চারও বিরক্তি লাগে এবং সে বোরও হয়। বাচ্চার বোর লাগলে বা বিরক্তি হলে অনেক সময় ওরকম ঠোঁট চেপে “হুম্মম হুম্মম” আওয়াজ করতে থাকে একটানা। আবার সে একটু বড় হয়েছে, তার নিজের দাবি-দাওয়া হয়েছে আজকাল, হাত তুলে বেশ দেখাচ্ছে নিজের পছন্দের জিনিসটিকে। পছন্দের কোনও খেলনা তার চাই, বা মা ঘরে ঢোকা মাত্র মায়ের কোলে চাপা চাই, এইরকম বিভিন্ন দাবি বুঝিয়েও বাচ্চা এই ধরনের আওয়াজ করে।

#3. কিছু একটা উচ্চারণ করা (Babbles)

সাধারণত, বাচ্চার বয়স ৪-৬ মাস হলে বাচ্চা কিছু একটু অর্থপূর্ণ বলার চেষ্টা করে। হ্যাঁ, সে চেষ্টা করে, আমাদের কানে কিন্তু সেটা মিষ্টি কতগুলো শব্দ হয়েই আসে। চারপাশে ভেসে বেড়ানো যে কথা বা শব্দ শিশু সারাদিন শুনছে, তার মধ্যেই ১-২ টি শব্দ সে উচ্চারণের চেষ্টায় থাকে। আমাদের কাছে তার কোনও মানে না থাকলেও শিশুর কাছে সেটা কিন্তু অনেক বড় গল্প।

#4. একটু আওয়াজ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া (Sighs)

বাচ্চারাও দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, মাঝে মাঝেই ছাড়ে। একেবারেই ভাবতে যাবেন না যে, ওই কয়েক সপ্তাহ বয়সি বাচ্চাটি আপনার মতো দুশ্চিন্তা করে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। বাচ্চা আর বড়দের ভাবনাচিন্তা কিন্তু বড়ই আলাদা। শিশু আনন্দ পেলেও দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, আবার নিজেকে রিল্যাক্স করতে চাইলেও তাই।

#5. গরগর আওয়াজ করা (Growls)

৬ মাস বয়সের মধ্যেই বাচ্চারা গরগর করে একধরনের আওয়াজ করতে থাকে। ভয় পাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। গরগর আওয়াজ করা মানে আপনার বাচ্চা বদমেজাজি হবে, এরকম কিন্তু ভাববেন না। বাচ্চারা যখন গরগর আওয়াজ করে, তাদের গলার মধ্যে একটা অনুভূতি হয় এবং সেটা ওদের বেশ পছন্দের। একটু বড় হওয়ার পরে কিন্তু বিরক্ত হলে বা কোনও কাজ তার অপছন্দ হলে এই রকম আওয়াজ করে।

#6. খিলখিল করে হাসা (Chuckles)

চারমাসের আশেপাশে বয়স হলে বাচ্চা হাসতে শেখে। একটু মজার কাজকর্ম করুন না, বাচ্চা হাসবে ভুঁড়ি দুলিয়ে। ওর হাঁটুতে একটু সুরসুরি দিয়ে দেওয়াই হোক বা পেটে নাক দিয়ে ঘষে দেওয়া হোক, বাচ্চা খুব মজা পায় এবং খিলখিল করে হাসে। আরও কিছুটা বড় হলে, বাচ্চা আপনাদের মুখের হাব-ভাব দেখে হাসবে বা কাঁদবে। ও দিব্যি আপনার মুখ দেখে বুঝে যাবে যে, আপনি রেগে আছেন না আনন্দে আছেন।

শিশুর ভাষার অর্থ বোঝার টিপস, নতুন মায়েদের জন্য!/ Understanding sounds and noises your baby makes in Bangla

আরও পড়ুনমোবাইল ফোন খেলনা নয়; দূরে রাখুন বাচ্চাকে!

মনে রাখুন কয়টি কথা (Points to remember)

  • এসব আগডুম বাগডুম আওয়াজ বা আবোল তাবোল ছাড়াও, বাচ্চা কান্নার মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে। বাচ্চার কান্নার ভাষা কী করে বুঝবেন, সে বিষয়ে আগেই বলেছি। মন দিয়ে কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝে যাবেন কোন কান্নার কী মানে।
  • বাচ্চার সাথে কথা বলুন। ও ওর ভাষায় কথা বললে আপনি পরিস্থিতি বিচার করে আপনার ভাষায় উত্তর দিন। হঠাৎ কোনও অর্থপূর্ণ শব্দ বাচ্চাটি বলে ফেললে তাকে আদর করুন এবং ওই শব্দটি ওকে বারবার বলুন। যাতে ও বুঝতে পারে, একটা বিশাল কাজ করে ফেলেছে এবং এরকম ভবিষ্যতেও করতে হবে।
  • বাচ্চা বলে কখনই ওকে অবহেলা করবেন না। বাচ্চাও কিন্তু মনোযোগ পছন্দ করে। তাই ও যখনই যেমন আওয়াজ করুক, তার উত্তর দিতে তৈরি থাকুন।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null