যোনিস্রাবের প্রকারভেদের কারণ কী!

যোনিস্রাবের প্রকারভেদের কারণ কী!

আলোচ্য বিষয়ের নাম শুনেই লজ্জা পেলেন বুঝি বা মনে হল, এই বিষয়ে জানার আর কী প্রয়োজন? থাক না যেমন আছে, গোপনে, অজানা-অচেনা হয়ে। ভুলটা তো আমরা মেয়েরা এখানেই করি। নিজেদের শরীরের গোপনাঙ্গের কার্যকলাপ বুঝতে চাই না কিছুতেই, জানতে চেষ্টাও করি না আমাদের শরীর আদৌ সুস্থ আছে তো? দাঁতে দাঁত চেপে সব যন্ত্রণা আমরা সহ্য করে নিতে পারি, কিন্তু অহেতুক লজ্জা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারি না। জানেন কি; নিজেদের শরীরের সমস্ত অংশ সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকলে অনেক সময় বহু জটিল রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়? যোনিস্রাবের ক্ষেত্রেও কখন কোনটা স্বাভাবিক বা কোনটা অস্বাভাবিক, সেটা বুঝতে পারলে আর প্রয়োজন মতো লজ্জার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলে উপকৃত হবেন আপনিই। মেয়েদের শরীরে এই যোনি শুধু জন্ম দিতেই তৈরি হয়নি, তার আরও অনেক গুরুত্ব আছে যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। আর সময় বিশেষে এই যোনি বা ভ্যাজাইনা (Vagina) থেকে যে তরল বেরিয়ে আসে, তাকেই যোনিস্রাব বা Vaginal Discharge বলা হয়। এই যোনিস্রাবের রং বা ঘনত্ব সময় বিশেষে বদলে যায়। শরীরের ভিতর কোনও অসুবিধা সৃষ্টি হলে এই যোনিস্রাবের মাধ্যমে অনেকসময় তা শনাক্ত করা যায়। কোন স্রাব স্বাভাবিক আর কোনটাই বা অস্বাভাবিক, সেটা বোঝা থাকলে অনেক জটিল রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।দেখে নিন একনজরে। Types of Vaginal Discharge: What is Normal and What isn’t/ Types of vaginal discharge in Bangla. Also read: অসতর্ক সঙ্গমও যখন পুরোপুরি নিরাপদ!

যোনিস্রাবের প্রকারভেদের কারণ কী/ Vaginal Discharge: Causes, Treatments, and Colors

কী এই যোনিস্রাব? (What is Vaginal discharge?)

যোনিস্রাব খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। এর মাধ্যমে শরীর যোনিপথকে সুস্থ রাখে। মিউকাস ও যোনি নিঃসৃত কিছু পদার্থ মিলে তৈরি হয় এই যোনিস্রাব। সারভিক্স এবং যোনির ভিতরের ত্বক সবসময়েই কিছু না কিছু ত্যাগ করে। শারীরিক সম্পর্কের সময় যোনিস্রাব হওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ঠিকই, এছাড়াও অন্যান্য সময়েও কিছুমাত্রায় এই যোনিস্রাব হতে পারে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা একেবারেই স্বাভাবিক। যেমন, মাসিক চক্রে ওভ্যুলেশনের সময় শরীরে প্রচুর পরিমাণে মিউকাস তৈরি হয় যা সাধারণ সময়ের থেকে প্রায় ৩০ গুণ বেশি। রং,গন্ধ এবং ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে কোন যোনিস্রাব স্বাভাবিক এবং কোনটা অস্বাভাবিক, সেটা নির্ধারণ করা যায়। অনেক সময় অস্বাভাবিক যোনিস্রাব গোপনাঙ্গে ইনফেকশন বা শারীরিক কোনও জটিলতার সঙ্কেত দেয়।

কত ধরনের যোনিস্রাব হয়? কীই বা তারা ইঙ্গিত করে?/ All types of vaginal discharge: what do they really indicate?

#1. সাদা স্রাব (White discharge)

মাসিক চক্রের আগে এবং পরে সাদা থকথকে ধরনের স্রাব হয়।

#2. অল্প চ্যাটচেটে স্বচ্ছ স্রাব (Clear and stretchy discharge)

ওভ্যুলেশনের সময় এই ধরনের স্রাব হয়। শরীরে যে অতিরিক্ত মিউকাস তৈরি হয়, এই স্রাবের মাধ্যমে তা বেরিয়ে যায়।

#3. স্বচ্ছ জলের মতো (Clear water like discharge)

মাসিক চক্রের যে কোনও সময়েই এই ধরনের স্রাব হতে পারে।

#4. হলুদ বা সবুজ স্রাব (Yellow or green discharge)

অনেক সময় হলুদ বা সবুজ স্রাব হতে পারে; এই স্রাব দুর্গন্ধ যুক্ত হয়।

#5. খয়েরি স্রাব (Brown discharge)

মাসিক শেষ হওয়ার ঠিক পরপরই এই খয়েরি স্রাব হয়। এর মাধ্যমে মাসিকের পর যোনিপথ পরিষ্কার হয়ে যায়। আবার মাসের অন্য সময়ে এই ধরনের খয়েরি স্রাব খুবই কম পরিমাণে দেখা দিলে, তা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। কোন যোনিস্রাব স্বাভাবিক?/ Vaginal Discharge: What's Normal? স্বচ্ছ স্রাব, অল্প চ্যাটচেটে স্বচ্ছ স্রাব, জলের মত স্রাব বা সাদা স্রাব; এইগুলি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে যোনিতে চুলকানি অনুভব হলে এবং স্রাবে দুর্গন্ধ থাকলে তা স্বাভাবিক হয় না এবং ইনফেকশনের ইঙ্গিত দেয়। আবার সাদা স্রাব যদি চকের মত ঘনত্বের হয়ে যায়, তা হলেও তা ইনফেকশনের লক্ষণ। ওভ্যুলেশনের সময় স্বচ্ছ বা সাদা স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়। মাসের অন্যান্য দিন যোনিস্রাব কোনও দিন কম হতে পারে আবার কোনও দিন বেশিও হতে পারে। আবার দেখা গেল, কোনও দিন একটুও হল না। পরিমাণের তারতম্যও প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা হয়। গর্ভাবস্থায় এই যোনিস্রাবের পরিমাণ প্রচুর বেড়ে যায়।

কোন কোন যোনিস্রাব অস্বাভাবিক ও কেনো?/ Abnormal Vaginal Discharge and Reasons Behind It

#1. হলুদ স্রাব (Yellow discharge)

যোনিতে একধরনের ইনফেকশন হয়ে থাকে, যার নাম ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis)। এই ইনফেকশনের প্রভাবে হলুদ রঙের, ফেনাযুক্ত ও দুর্গন্ধময় স্রাব হয়। সাধারণত, সহবাসের দ্বারা এই ইনফেকশন সংক্রমিত হয়। এছাড়াও বাইরের থেকে কোনও সংক্রমিত বস্তু যোনির সংস্পর্শে এলেও এই ইনফেকশন হয়ে থাকে।

#2. হলুদাভ সাদা স্রাব (Pale discharge)

ইস্ট ইনফেকশন বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে এই ধরনের স্রাব হয়ে থাকে। যোনিতে জ্বালা করে বা চুলকানির অনুভব হয়। এই স্রাব অনেকটা পচে যাওয়া দুধের মতো গন্ধযুক্ত। খুব বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রভাবে, ডায়াবেটিক মহিলাদের বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের এই ধরনের স্রাব হতে পারে।

#3. সবুজ স্রাব (Green discharge)

ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ইনফেকশনের প্রভাবে এই ধরনের স্রাব হয়। যে ব্যক্তির গনোরিয়া জাতীয় অসুখ আছে, তার সাথে সহবাস করলে এই ব্যাকটেরিয়া যোনিতে আক্রমণ করে। সেক্স টয় থেকেও এই ধরনের ইনফেকশন হতে পারে। এই স্রাবেও যোনিতে জ্বালা হয় এবং স্রাব দুর্গন্ধময় হয়ে থাকে। Also read: দ্রুত গর্ভধারণের ৭টি সহজ টিপস!

Types of vaginal discharge: Things to remember

  • প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এই যোনিস্রাবের গন্ধ আলাদা হয়ে থাকে। তাই এই গন্ধ কখন দুর্গন্ধ লাগছে তা বুঝতে হবে নিজেকেই।
  • ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে অন্তর্বাস থেকে অনেকসময় ফাঙ্গাল ইনফেকশন ছড়ায় এবং চকের মতো আঠালো সাদা স্রাব দেখা দেয়। অন্তর্বাস ভালো করে সাবান দিয়ে কেচে কড়া রোদে শুকোনো উচিত। বাসি অন্তর্বাস পরে থাকবেন না এবং রাত্রে অন্তর্বাস খুলে শোওয়া অভ্যেস করুন। এতে হাওয়া চলাচল ভালো হয়।
  • পরিষ্কার জলে নিয়মিত যোনি এবং তার চারপাশ পরিষ্কার করুন।
  • মাসিকের সময় ভালো কোম্পানির স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করুন এবং ৫-৬ ঘণ্টা পরপর তা বদলে ফেলুন। প্যান্টি লাইনার ব্যবহার না করলেই ভালো।
নারীর অস্বাভাবিক ‌যোনিস্রাব: মুক্তির উপায়/ Types of Vaginal Discharge and What They Mean সবথেকে বড় কথা, কোনও রকম অসুবিধা বুঝলে বা অস্বাভাবিক কিছু দেখলে, মুখ চুপ করে থাকবেন না। এতে আপনার ক্ষতি বাড়বে বই কমবে না। প্রয়োজনে অন্তত নিজের সবথেকে কাছের কাউকে আপনার সমস্যা খুলে বলুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন। লজ্জা পেয়ে চুপ করে থাকা কিন্তু কোনও রোগের ওষুধ নয়। নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারি সাহায্য নিন। একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null