“দুধে-দাঁত তো পড়ার জন্যই গজায়, অতএব ওর যত্নআত্তি বিশেষ প্রয়োজন নেই।” এই ধরনের ভাবনা অনেকেই পোষণ করেন এবং বুঝতেও পারেন না অজান্তেই কতটা ভুল করছেন তারা। ভিত নড়বড়ে হলে যেমন অট্টালিকা দাঁড়ায় না; ঠিক তেমনই মাড়ি শক্ত না হলে বা দুধে- দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো না রাখলে আগামীর স্থায়ী দাঁত সম্পূর্ণ সুস্থ হয় না। দাঁত ক্ষয়ে পড়ে গেলে মাড়ি নড়বড়ে হয়ে যায় এবং এরপরে গজানো দাঁত অসমান, এবড়োখেবড়ো হয়ে ওঠে। নিজের সন্তানকে সুস্থ-সবল ৩২ পাটি দাঁত উপহার দিতে পারেন আপনিই। উপহার বলছি কারণ, দাঁতের যত্ন শিখিয়ে দিতে হবে আপনাকেই। আর এর জন্য প্রয়োজন একটু সতর্কতা আর কিছু ভালো অভ্যাস। (How to Prevent Tooth Decay in Your Baby)
দুধে-দাঁতের ক্ষয় কেন হয়, কীভাবে আটকাবেন এই ক্ষয়, কী কী অভ্যাস বদলে দিতে পারে দাঁতের স্বাস্থ্য, এইসব নিয়েই আজকের প্রতিবেদন। জানতে হলে পড়ে ফেলুন।
বড়দের তুলনায় ছোট্ট বাচ্চাগুলোরই দাঁতের ক্ষয় বেশি হয়। আমাদের দাঁতের বাইরে যে শক্ত আস্তরণ বা এনামেল থাকে, ছোট্ট বাচ্চার দাঁতে সেটি খুব পুরু থাকে না। ফলে, বাচ্চার দাঁতে ক্ষয়ের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। শুধু বাড়ন্ত বাচ্চার নয়, দুধে-দাঁত যুক্ত একরত্তির ক্ষেত্রেও ভয়টা মোটেই অমূলক নয়। বরং, খানিকটা বেশিই বলতে পারেন।
দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার পিছনে প্রধান কারণগুলি হল;
একদম ছোট্ট বাচ্চা অর্থাৎ ৬ মাসের কম বয়সি বাচ্চা যারা শুধুমাত্র ব্রেস্টমিল্ক খায়; তারাও কী তবে এই বিপদের বাইরে নয়? ওরাও তো বারেবারে মায়ের দুধ খায় এবং অনেকক্ষণ ধরেই খায়। প্রশ্ন আসতেই পারে!
শুধুমাত্র মায়ের দুধকে দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী করা যায় না। তবে, ছোট্ট বাচ্চার মুখগহ্বর অপরিচ্ছন্ন রাখলে বাচ্চার মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতি হতে পারে আগামী দাঁতেরও। মাড়ি শক্ত ও সুস্থ থাকলে তবেই সে দাঁতকে সঠিক সাপোর্ট দিতে পারে। তাই একদম ছোট্ট বাচ্চার মাড়ি, জিভ আলতো হাতে পরিষ্কার করা খুব প্রয়োজন।
দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ খালি চোখে বোঝা প্রায় অসম্ভব। মাড়ির কাছে দাঁতের গোড়ায় এবং দাঁতের ওপর সাদা সাদা দাগ দেখা দিতে শুরু করে। পরবর্তীতে এইগুলোই বদলে যায় খয়েরি বা কালো দাগে, ক্ষয়ে যেতে থাকে দাঁত।
আরও পড়ুন: কোন কোন খাবার বাচ্চার দাঁত শক্তিশালী করে তুলতে পারে, দেখে নিন একনজরে!
অনেকেই মনে করেন, দুধের দাঁতের ক্ষয়ে গেলেও কোনও অসুবিধা নেই, সে তো পড়েই যাবে কয়েকদিন পরে। হ্যাঁ, পড়ে যাবে বটে, কিন্তু ভবিষ্যতের স্থায়ী দাঁতের ভিতটা অর্থাৎ মাড়ির স্বাস্থ্য নড়বড়ে করে দিয়ে যাবে। এছাড়াও, দাঁত ক্ষয়ে গেলে পরবর্তীতে;
নতুন দাঁত বেড়ে উঠবে ছন্নছাড়ার মতো। আকার বা সঠিক স্থান পাবে না তারা। মোদ্দাকথা নতুন দাঁত এবড়োখেবড়ো হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
দুধে দাঁতগুলোই কিন্তু বাচ্চাকে খেতে শেখায় এবং সঠিক উচ্চারণে কথা বলতেও সাহায্য করে। তাই এই দাঁতের যত্ন না নিলে পরবর্তীতে স্পিচ প্রব্লেম বা বাজে খাদ্যাভ্যাস (চিবিয়ে না খাওয়ার অভ্যাস) তৈরি হতেই পারে।
শুরু করুন একেবারে গোড়ার থেকেই। গর্ভবতী থাকা অবস্থাতেই নিজের দাঁতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান নিয়মিত। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, মায়ের সবকিছুই বাচ্চার ওপর কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করে। অতএব, নিজের দাঁতকে ভালো রাখুন।
#1. বাচ্চা মায়ের দুধ খাক বা ফর্মুলা, দিনে দুইবার নিয়ম করে ওর মুখের ভিতর ও মাড়ি পরিষ্কার করে দিন। পরিষ্কার নরম কাপড় ঈষদুষ্ণ গরম জলে ভিজিয়ে ওর মুখের ভিতর, মাড়ি ও জিভ মুছিয়ে দিন। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ভয় কমবে।
#2. একটি দাঁত যেই দেখা দেবে তখন থেকেই শুরু করুন যত্ন। বেবি টুথব্রাশ কিনে আনুন, বাচ্চার জন্য যে টুথপেস্ট পাওয়া যায় সেটি চালের দানার পরিমাণে নিয়ে বাচ্চার ওই একটি দাঁতই ব্রাশ করে দিন।
#3. বাচ্চা এক বছরের হয়ে গেলেই শুরু করুন সুঅভ্যাস। দিনে দু’বার ব্রাশ করান ওকে। ফ্লুওরাইড যুক্ত টুথপেস্ট নিন ওই চালের দানার পরিমাণে। লক্ষ্য রাখুন বাচ্চা যেন গিলে না নেয়। সবথেকে ভালো হয় যদি বেবি টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
#4. বাচ্চাকে দুধের বোতল, মধু ভরা প্যাসিফায়ার মুখে বেশিক্ষণ রাখতে দেবেন না। রাতে তো একেবারেই দেবেন না। সিপি কাপের ক্ষেত্রেও একই কথা বলবো। জল ছাড়া কিছুই দেবেন না ওতে। সাধারণ কাপ থেকে খেতে শেখান বাচ্চাকে। এতে খাবার জলদি শেষ হবে, বাচ্চার অভ্যাসও ভালো হবে।
#5. জেদ করলেই মিষ্টি, চকোলেট ইত্যাদি খাবার একদম নয়। বাচ্চা যদি মিষ্টি, জ্যুস বা চকোলেট খায়; সঙ্গে সঙ্গে মুখ ভালো করে কুল্কুচি করে ধুইয়ে দিন। এড়িয়ে চলুন অতিরিক্ত চিনি মেলানো খাবার। শুধু দাঁত নয়, উপকৃত হবে সমস্ত শরীর।
আরও পড়ুন: দাঁত ওঠার সময় নানান অস্বস্তি হয় বাচ্চার। ঘরোয়া অথচ কার্যকরী উপায়ে আরাম দিন ওকে!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null