“মাত্র কয়েকদিনেই আপনার ত্বক হয়ে উঠবে শিশুর মতো কোমল” বা “শিশুর মতো নরম, পেলব ত্বকের রহস্য এবার আপনার হাতের মুঠোয়”; কী বলুন তো এগুলো? ঠিক ধরেছেন, এগুলো বিজ্ঞাপনের চটকদার সংলাপ। টেলিভিশনে যে কোনও নামী কোম্পানির ক্রিম, স্ক্রাব বা বিউটি অয়েলের বিজ্ঞাপন চলাকালীন এই লাইনগুলো আসবেই আসবে। আর আপনি এবং আমি ভাবতে বসবো, ঠিক কোনটা কিনে ফেললে আবার আমার ত্বক শিশুর মতো সুন্দর আর নরম হয়ে যাবে। কি তাই তো? আমাদের ব্যবহার যোগ্য অধিকাংশ প্রসাধনীর বিজ্ঞাপনে সুন্দর ত্বকের মাপকাঠি “শিশুর মতো ত্বক”। এবং আমরা সব্বাই জানি, এই উপমায় কোনও রং মেশানো নেই। আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য শৈশবেই সবথেকে ভালো থাকে। কোনও কিছু মেখে, ঘষে তাকে বাড়তি সুন্দর করতে হয় না, প্রয়োজন শুধু একটু পরিচর্যার। (Most helpful tips to keep your baby’s skin healthy in Bengali, sishur twoker jotno, sishur twoker jotne tips.Tips To Keep Your Baby’s Skin Healthy in Bengali.)
একরত্তির গালে আঙুল ছোঁয়ালেই কপ করে গালের ভিতর যেন আঙুলখানা ঢুকে যায়। বাসে, ট্রেনে রোজ ধাক্কাধাক্কি করা অফিস- যাত্রী বাবাটি নিজের শক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে দশবার ভাবেন বাচ্চাটিকে কোলে নেওয়ার আগে। মনে ভয়, “বাসের রড ধরে কড়া পড়ে যাওয়া হাতে যদি বাচ্চার ব্যথা লাগে?” তুলতুলে এই ছানাদের ত্বক সত্যি এতটাই নরম এবং স্পর্শকাতর হয়। কচি বাচ্চার ত্বক এত কোমল, নমনীয় হয় বলেই তার যত্নও কিন্তু প্রচণ্ড যত্নে এবং সাবধানে করতে হয়। অন্যথায়, কচি ত্বকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য ওত পেতে বসে থাকে র্যাশ আর ফুসকুড়ির বংশ। আর শিশু অবস্থায় ত্বকের যত্নের ওপরই নির্ভর করে বাচ্চার ভবিষ্যতের ত্বকের স্বাস্থ্য কেমন হবে, সেটাও। কাজেই আজ থেকে ১৫/২০ বছর পরে আপনার তন্বী সুন্দরীটি যদি তার ত্বকের দেখভাল নিয়ে আপনার কাছে আপনার নামেই নালিশ করতে আসে, তখন বলবেন না যে আমরা আপনাকে আগে সাবধান করিনি। তার থেকে ভালো, ছোট থেকেই বাচ্চার ত্বকের যত্ন কীভাবে করবেন, দেখে নিন একনজরে।
#1. শিশুর ত্বক পরিষ্কার রাখা (Clean your baby’s skin regularly)-> নবজাতক শিশুর ত্বক সাধারণত কোঁচকানো হয়ে থাকে। শিশুর ত্বকের ওপর সাদা মোমের মতো একটি আচ্ছাদন থাকে, যার পোশাকি নাম ভারনিক্স (vernix)। এই ভারনিক্স জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আস্তে আস্তে উঠতে শুরু করে। এর জন্য আপনাকে কোনও কিছুই করতে হবে না। বাচ্চার জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ ওকে শুধু স্পঞ্জ করিয়ে পরিষ্কার করে দিন। একদম পাতলা নরম সুতির কাপড় ঈষদুষ্ণ জলে ভিজিয়ে নিংড়ে নিয়ে বাচ্চার গা মুছিয়ে দিলেই যথেষ্ট। ডায়াপার বদলের পরে ভালো করে পরিষ্কার করে দেবেন ডায়াপার এরিয়া। শিশুর গায়ের ত্বক পরিষ্কারের সাথে সাথে বাচ্চার জিভ ও মুখের ভিতর পরিষ্কার করতে ভুলবেন না যেন।
#2. তেল মালিশ (Oil massage)-> যে কোনও বয়সভেদে শরীরে তেল মালিশের গুরুত্ব অপরিসীম। আর প্রশ্ন যখন শিশুর ত্বকের যত্ন, তখন তেল মালিশকে বাদ দেওয়া যাবে না কিছুতেই। সঠিক উপায়ে তেল মালিশ ত্বককে নরম ও আর্দ্র রাখে। শরীরের রোমকূপে জমে থাকা ময়লাও টেনে বের করে দেয় তেল মালিশ। ছোট্ট সোনার ত্বকের দেখভালে তাই তেল মালিশ মাস্ট। অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল, নারকেল তেল বাচ্চার নরম ত্বকে মালিশের জন্য বিশেষ ভালো। এসব তেল বাচ্চাকে মাখানোর আগে সামান্য কুসুম গরম করে নিলে এর এফেক্টই হয় আলাদা। বাজারে বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ফর্মুলায় তৈরি বেবি অয়েল কিনতে পাওয়া যায়। যে কোনও ভালো কোম্পানির বেবি অয়েল দিয়ে শিশুর ত্বক মালিশ করতে পারেন আপনি। নিয়মিত ভালো করে তেল মালিশ করলে শুধু শিশুর ত্বক ভালো থাকে তাই নয়, পেশীর ক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ সাহায্য করে এই মালিশ। শিশুর তেল কেনার সময় ভালো কোম্পানির বেবি অয়েল কিনুন এবং কেনার আগে দেখে নিন তাতে যেন কোনও বাড়তি পারফিউম বা ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ, রাসায়নিক ইত্যাদি না থাকে। তেল মালিশের পরে সাবান-জল দিয়ে রোজ স্নান করাতে হবে এমন কোনও কথা নেই। ভেজা কাপড় দিয়ে অতিরিক্ত তেল মুছে ওকে পরিষ্কার করে দিন।
#3. পরিমিত স্নান (Limited bathing)-> একদম ছোট্ট বাচ্চাকে কিন্তু প্রত্যেকদিন স্নান করানোর কোনও প্রয়োজন নেই। সপ্তাহে তিনবার স্নান যথেষ্ট। বাচ্চার নাড়ি যতদিন না পড়ে যায়, ততদিন পর্যন্ত জল ঢেলে স্নান করাবেন না। নাড়ি পড়ে যাওয়ার পর যদি জায়গাটা নরম থাকে, সেটা শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ততদিন পর্যন্ত না হয় বাচ্চার গা স্পঞ্জ করিয়ে দিন বা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিন। ছোট্ট বাচ্চার ত্বক খুব সংবেদনশীল হয় বলে রোজ স্নান করালে ত্বক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে খসখসে হয়ে যেতে পারে। ঈষদুষ্ণ গরম জলে খুদেটিকে স্নান করান। নিজের কনুই ডুবিয়ে জলের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিতে ভুলবেন না। ব্যবহার করুন বাচ্চার জন্য বিশেষভাবে তৈরি নামী কোম্পানির বেবি সোপ। স্নানের পরে বাচ্চার গা রগড়ে রগড়ে মুছবেন না। নরম তোয়ালে চেপে চেপে শুকনো করে নিন বাচ্চার গা। বাচ্চার শরীরের খাঁজে ও গোপনাঙ্গে যেন জল লেগে না থাকে; না হলে ওই সব জায়গায় ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। বাচ্চা একটু বড় হয়ে গেলে ওকে রোজ স্নান করাতে পারেন।
#4. সঠিক সাবানের সন্ধান (Choose a right cleanser)-> বাড়ির বড়রা যে সাবান ব্যবহার করেন, খবরদার বাচ্চাকে তা মাখাবেন না। বড়দের ব্যবহারের সাবানে উচ্চ মাত্রায় ক্ষার, কৃত্রিম পারফিউম ও অনেক কেমিক্যাল থাকে। বাচ্চাদের কোমল ত্বকের জন্য যা বড্ড ক্ষতিকর। যে কোনও ভালো কোম্পানির বেবি সোপ নিয়ে আসুন শিশুর জন্য। বাচ্চার সাবানে যেন পারফিউম, কোনও কৃত্রিম রং বা ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সাবান প্রথমে হাতের তালুতে ঘষে ফেনা করে নিন, তারপর বাচ্চাকে নিজের সুবিধা মতো ধরে সাবান মাখিয়ে দিন। সাবান মাখানো হয়ে গেলে হাতের তালুতে করে জল নিয়ে বাচ্চার গায়ের সাবান ধুইয়ে দিন। এতে বাচ্চার গায়ের ময়লাও সুন্দর পরিষ্কার হয়ে যাবে, আবার অতিরিক্ত সাবান ব্যবহারও হবে না। ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতাও বজায় রাখে এই বেবি সোপগুলি। ইচ্ছে হলে ব্যবহার করতে পারেন বেবি ওয়াশ জেলও।
#5. ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা (Keep your baby’s skin hydrated)-> সব বাচ্চার ত্বক সমান হয় না। অনেকের ত্বক তেল মালিশের পরে অনেকক্ষণ পর্যন্ত নরম থাকে, আবার অনেকের থাকে না। আপনার বাচ্চার ত্বক যদি একটু শুষ্ক ধরনের মনে হয়, তা হলে স্নানের পরে পাউডার না দিয়ে সারা গায়ে বেবি ময়েসচারাইজার মাখিয়ে দিন। যে কোনও নামী কোম্পানির বেবি ক্রিম বা বেবি লোশন শিশুর স্পর্শকাতর ত্বকের কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়। পারফিউম ও ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে না এতে।
#6. সঠিক সময়ে ডায়াপার বদলানো (Change the diaper frequently)-> বাচ্চাকে যদি অনেকক্ষণ ভেজা ডায়াপারে ফেলে রাখেন, তা হলে কিন্তু ওর র্যাশ হতে বাধ্য। বাচ্চার গোপনাঙ্গ স্নানের সময় রোজ পরিষ্কার করবেন। এছাড়াও, ডায়াপার নোংরা করে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে বদলে দিন সেটিও। ডায়াপার বদলে দেওয়ার সময় ভালো করে পরিষ্কার করে দিন ডায়াপার এরিয়া। পরিষ্কার কাপড় ঈষদুষ্ণ গরম জলে ভিজিয়ে বাচ্চাকে পরিষ্কার করে দিন। ব্যবহার করতে পারেন বেবি ওয়াইপসও। ডায়াপার র্যাশের হাত থেকে শিশুর ত্বককে রক্ষা করতে ব্যবহার করুন উন্নত মানের ডায়াপার। ডায়াপার এরিয়াতে পাউডারের বদলে ব্যবহার করুন বিশেষ ডায়াপার জেল বা ক্রিম।
#7. পাউডারের যথাযথ ব্যবহার (Use powder wisely)-> বেবি পাউডার আপনি চাইলে ব্যবহার করতেই পারেন। তবে বাচ্চার গায়ে কখনই খুব বেশি পাউডার ব্যবহার করবেন না। বগলের খাঁজে বা শরীরের ভাঁজে পাউডার বসে গেলে ত্বক স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে পারে না। ফলস্বরূপ দেখা দেয় র্যাশ ও ঘামাচির মতো সমস্যা। বাচ্চাকে পাউডার লাগাতে চাইলে বিশেষভাবে তৈরি বেবি পাউডারই কিনবেন। এইসব বেবি পাউডার যেন ভালো নামী কোম্পানির তৈরি হয়। পারফিউম ও ক্ষতিকর কেমিক্যালওয়ালা পাউডার এড়িয়ে চলুন সযত্নে। স্নানের পরে বাচ্চার গা সম্পূর্ণ শুকনো হয়ে গেলে তবেই ওকে পাউডার লাগিয়ে দিন। নিজের হাতে প্রয়োজনমতো পাউডার ঢেলে নিয়ে দু’হাতে ঘষে নিন। এরপর আপনার হাত দিয়ে ওকে বেবি পাউডার মাখিয়ে দিন। এতে বাচ্চাকে অতিরিক্ত পাউডার মাখানোও হয় না আবার বাচ্চার নাকে পাউডার ঢোকে না।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null