মা হতে আর মোটে তিনটে মাস হাতে, গর্ভবতী বন্ধুরা আজ থেকেই তৈরি করুন নিজেকে!

মা হতে আর মোটে তিনটে মাস হাতে, গর্ভবতী বন্ধুরা আজ থেকেই তৈরি করুন নিজেকে!

আর তিনটে মাস বাকি! তারপরেই আপনার কোল জুড়ে আসতে চলেছে সাত রাজার ধন এক মাণিক, আপনার ছোট্ট সন্তান। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের অসুস্থতা, উদ্বেগ, মানসিক টানাপোড়েন অনেকটাই কমে গিয়ে আপনাকে যেন প্রত্যেকদিন আরও বেশি সহনশীল ও সুন্দর করে তুলছে। আপনার মাতৃত্ব প্রত্যেকদিন একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে নতুন ধাপের দিকে। পেটের দরজায় কে যেন মাঝে মাঝেই টোকা দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে তার উপস্থিতি; টুকুর-টুকুর নড়াচড়ায় জানান দিচ্ছে তার ব্যস্ত অস্তিত্ব। দেখতে দেখতে কেটে যাবে, শেষের তিন মাস। আর তারপরেই আপনার দ্বিতীয় জন্ম, ‘মা’ হিসেবে। ভারী শরীরের হাঁসফাঁস, কোমরে ব্যথা বা হাঁটাচলায় কষ্ট, এসব যেন আপনার কাছে কষ্ট বলে মনেই হচ্ছে না আর। তাই তো? হবেই তো, আপনি যে হবু মা। এটুকু বীরাঙ্গনা তো আপনাকে হতেই হবে। (Tips for Last or Third Trimester of Pregnancy in Bangla. Gorbhokalin sesh tin mas.)

তবে জানেন কি? কিছু কিছু ক্ষেত্রে পূর্ব পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত আগামীর রাস্তাটা অনেক মসৃণ করে দিতে পারে। এড়ানো যায় বহু অবাঞ্ছিত ঘটনা, প্রস্তুত থাকা যায় যে কোনও বিপদ-আপদের সামনা করার জন্য। কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখলে নিজে যেমন মানসিক শান্তি ও সাহস পাবেন, আবার হঠাৎ কোনও প্রয়োজনে দিশেহারা হতেও হবে না আর আরাম পাবেন বর্তমানেও। যেহেতু, আপনার কাছে আর তিন মাস সময়; আবার শেষ মাসের যে কোনও দিন তো বাচ্চা তাড়াহুড়ো করে চলে আসতে পারে নির্ধারিত তারিখের আগেই, তাই এখন থেকেই একটু করে প্রস্তুত করুন নিজেকে। সঙ্গীর সাহায্য নিয়ে প্ল্যান ছকে ফেলুন সবকিছুর। প্রেগন্যান্সির শেষ তিন মাসে কী কী করবেন, রইল তারই স্পেশ্যাল টিপস।

প্রেগন্যান্সির শেষ ৩ মাসে কী কী করবেন, রইল তারই স্পেশ্যাল টিপস! (Tips for Third Trimester Pregnancy)

আপনার গর্ভস্থ সন্তানটি এখন বেশ সাইজমতো হয়ে গিয়েছে। ওর শরীরের ভার আর চাপেই বেশ খানিকটা ঝঞ্ঝাট, গোল পাকাবে আপনার শরীরেও। জরায়ু পেল্লায় হতে হতে ডায়াফ্রামে চাপ তৈরি করবে। আর এই কারণেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে আপনার। জল জমে গোড়ালি, হাত, পায়ের পাতা, মুখ ফুলে ঢোল হতে পারে, তা নিয়েও ঘাবড়ে যাওয়ার কিচ্ছুটি নেই! এ যে বড়ই স্বাভাবিক। মুখে কালো ছোপ পড়তে পারে। পেট, উরু, স্তন ও নিতম্বে উদয় হতে পারে স্ট্রেচ মার্কের। এসব দেখেই মোটমুটি নিশ্চিত হয়ে যান, এসব তারই আসার পূর্বাভাস! সেই মতোই তাই শুরু করে দিন প্রস্তুতি…

 

#1. বালিশ বালিশ বালিশ চাই (Use pillows for support): শরীর এসময় বেশ ভারী হয়ে যায় এবং রাতে শোওয়ার পজিশন যেন কিছুতেই জুতসই হতে চায় না। ফলে, ব্যাঘাত হয় ঘুমেরও। উদ্ধারকর্তা হতে পারে নরম বালিশ। শুধু মাথায় নয়, বালিশ থাকুক কোমরে, পিঠে, পায়ে এবং পেটের তলায় সাপোর্ট হয়ে। আরামে ঘুমোতে পারবেন আপনি। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা আগে জল খান, তা হলে আপনাকে বারবার বাথরুম যেতে হবে না সারারাত ধরে।

 

#2. বডি ম্যাসাজের তুলনা নেই (Try massage and warm water therapy): কোমরে, পিঠে বা পায়ে ব্যথা এসময় কম বেশি সব্বার হয়। মাঝে মাঝে ঈষদুষ্ণ গরম জলে স্নান করে আসুন। স্নানের জলে মিশিয়ে নিতে পারেন কয়েক ফোঁটা সুগন্ধি এসেন্সিয়াল অয়েল। শরীরের সাথে সাথে ফুরফুরে হয়ে যাবে মনও। পিঠ, পা এবং কোমর মালিশ করে দিলে, আরাম হবেই হবে। সঙ্গীকে আপনার মনের কথা জানান। আপনার প্রেগন্যান্সিতে ওনাকেও কাজ ধরিয়ে দিন। আলতো হাতে বডি ম্যাসাজের থেকে আরামদায়ক এসময় আর কিছুই নেই। নিজের পেরিনিয়াম ম্যাসাজ করুন সপ্তাহে ৩-৪ বার করে। কয়েক ফোঁটা মিনারেল অয়েল দিয়ে আলতো করে স্ট্রেচ করে করে ম্যাসাজ করুন কিছুক্ষণ। এতে নর্মাল ডেলিভারির সময় পেরিনিয়াম ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে।

 

#3. কাজ থেকে এবার ছুটি নিন (Take Maternity Leave): এবার একটু শুয়ে বসে থাকুন দেখি। অনেক দৌড়েছেন অফিস কাছারি। এবার বাড়িতে একটু সময় কাটান নিজের মতো করে। বাড়িতে সময় কাটানো মানে যে একেবারে শুয়ে থাকা, তা কিন্তু নয়। হাঁটাচলা, হাল্কা রান্না আপনি সবই করতে পারবেন, শুধু অতিরিক্ত পরিশ্রম বাতিল। দূরপাল্লার কোনও জার্নি করার প্ল্যান থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে তা করবেন। আপনার শারীরিক অবস্থা বুঝেই ডাক্তার আপনাকে অনুমতি দেবেন।

 

#4. নিজের আরাম খুঁজুন নিজেই (Try to Soothe Yourself): ঢিলে-ঢালা পোশাক পরুন। নিজের ঘরের পরিবেশ আরামদায়ক করে রাখুন। নিজের মন যাতে ভালো থাকে, সেই ব্যবস্থা করে ফেলুন নিজেই। পর্যাপ্ত ঘুম আর তরতাজা মন একে ওপরের পিছু ধরে চলে। মুড সুইংস হতেই পারে, আসন্ন ডেলিভারির কথা ভেবে ভয়ে বুক ধড়ফড় করতেই পারে। তখন নিজের মনোমত গান শুনুন, বন্ধুদের ফোন করে আড্ডা দিন বা সঙ্গীর সাথে কিছুটা সময় কাটান। নিজের মনের ভয়, ভাবনা সব খুলে বলুন কাউকে। এতে আপনার মন হাল্কা হবে।

 

#5. বাচ্চার জিনিসপত্র কই? (Get Ready For Baby’s Arrival): বাচ্চার জন্য দু-একটা খেলনাপাতি আনা শুরু হোক এবার। বুক করে আসুন ছোট্ট বেবি কট। যা যা জামা-কাপড় কিনেছেন ওর জন্য, সেগুলো সব মাইল্ড ডিটারজেন্ট দিয়ে কেচে রেডি করে রাখুন। বাচ্চাকে পরালে র‍্যাশ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকবে না।

 

#6. পেডিয়াট্রিশিয়ান রেডি তো? (Choose a Pediatrician): বাচ্চার জন্মের আগেই ওর পেডিয়াট্রিশিয়ান ঠিক করে রাখুন। একদম ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে যাতে কোনও রকম আপদ-বিপদে না পড়তে হয়, তার জন্যই এই উপদেশ।

 

#7. নিজের শরীরকে ভালো ভাবে বুঝুন (Try to understand your health): প্রসব যন্ত্রণা কী রকম হয় বা কী উপসর্গ হলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনার ডেলিভারির সময় আসন্ন; সেই সব কিছু নিয়ে ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করুন। শরীরে কখন কোন অসুবিধা দেখা দিলে সতর্ক হবেন বা কোন অসুবিধা নিছক সাময়িক, সেগুলো সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকুন। এতে দরকারে যেমন সময় নষ্ট হবে না আবার অযথা প্যানিকে ঘাম ছুটবে না কারও।

 

#8. সঙ্গীর সাথে আলোচনা মাস্ট (Share Baby’s Movements): বাচ্চার লাথি মারা, টোকা দেওয়া, আপনার শরীরে সমস্ত পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা আপনার সঙ্গীর সাথে ভাগ করে নিন। এতে আপনার মনের জোর বাড়বে এবং বাচ্চা নিয়ে আরও উৎসাহ তৈরি হবে। আগামী সন্তানের কথা ভেবে দু’জনে এতো মশগুল থাকবেন যে, মুড সুইংস বড্ড কম হবে। ডেলিভারির সময় আপনার হাসব্যান্ড আপনার সাথে ডেলিভারি রুমে থাকবেন না আপনি ওনাকে দেখলে আরও ঘাবড়ে যাবেন; এসব কিছু নিয়ে কথা বলে রাখুন এখন থেকেই।

 

#9. হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার ব্যাগ রেডি থাক (Be Ready for the Hospital): যদি সিজার করার কথা হয়ে থাকে, তা হলে আপনি একটু প্রস্তুত বলা চলে। কিন্তু যাদের নর্মাল ডেলিভারি হবে, তাদের ক্ষেত্রে কখন প্রসব যন্ত্রণা উঠবে, সেটা বলা ভারি মুশকিল। আবার বাচ্চাটির যদি বাইরে বেরনোর বড্ড তাড়া থাকে, তা হলে সে বিনা নোটিশে আসার জন্য তাণ্ডব শুরু করতে পারে আপনার ওপর। তাই, আগে থেকে গুছিয়ে রাখুন প্রয়োজনীয় সব জিনিস। এক মাস হাতে থাকতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সবকিছু ব্যাগের মধ্যে পুরে রেডি করে রাখুন।

মনে রাখুন কিছু কথা (Things to Remember)

  • নিয়মিত ডাক্তার দেখান।
  • বেশি করে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান। নিয়ম মেনে খাবার দাবার খান।
  • বেশি করে জল খান।
  • একবারে অনেকটা না খেয়ে কিছু সময় পরপর দিনে ৩-৪ বার খান।
  • শরীরে কোনও রকম বেগতিক বুঝলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে বলুন।
  • নিজের ব্লাড গ্রুপের ব্লাড যাতে প্রয়োজনে পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করে রাখুন।
  • বাচ্চার কর্ড ব্লাড সংরক্ষণ (Cord Blood Banking) করতে চাইলে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করে রাখুন। ভবিষ্যতে বাচ্চার অসুখ বিসুখ হলে এই স্টেম সেল তার প্রচুর কাজে লাগতে লাগবে বা চাইলে কাউকে দান করতেও পারেন।
  • অযথা প্যানিক বা উদ্বেগ করবেন না। সময় থাকতে বাড়ির অন্য সদস্যদের সাথে কথা বলুন, বাচ্চা নিয়ে বাড়ি আসার পর প্রথম ক’দিন তাদের সবার সাহায্য প্রয়োজন হবে আপনার।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null