সদ্য মা হয়েছেন, তাই তো? এইসময় নিজের একরত্তি সন্তানকে প্রত্যেকদিন একটু একটু করে বেড়ে উঠতে দেখা যতটা আনন্দের, ততটাই উদ্বেগেরও বই কি! বাচ্চার কান্না, খিটখিটে ভাব, খেতে না চাওয়া বা ক্লান্তি ভাব, কোন মায়ের ভালো লাগে বলুন তো? মায়েরা সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে, যে ওদের সঠিক যত্ন হচ্ছে তো, কোন কষ্ট হচ্ছে না তো? কারণ, একরত্তি গুলো যে কিছুই বলতে পারে না, কান্নাটাই ওদের একমাত্র হাতিয়ার । নতুন দাঁত বা দুধের দাঁত ওঠার সময়েও বাচ্চাদের বেশ অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়, আর বলাই বাহুল্য মায়েরা তার থেকেও বেশি অস্থির হয়ে পড়ে ওদের একটু আরাম দেওয়ার জন্য।তাই বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় নানারকম সমস্যার ঘরোয়া অথচ কার্যকরী কিছু সমাধান নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। (Things to do when baby is teething in Bangla)
সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকে শিশুদের মুখে নতুন দাঁত ওঠা শুরু হলেও এর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় মাতৃগর্ভেই। নিশ্বাস নেওয়া, খাবার খাওয়া ইত্যাদির মতই বাচ্চার চোয়ালে দাঁত গজানো একটি অতি সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক প্রক্রিয়া। সাধারণত ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত দুধের দাঁত গজাতে পারে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিন মাস বা চোদ্দ মাসেও বাচ্চার দাঁত গজানো শুরু হতে পারে।
নতুন দাঁত ওঠার সময় তা শিশুর নরম মাড়িতে সারাক্ষণ চাপ দিতে থাকে, আর সেটা শিশুর বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অস্বস্তির থেকে আরাম পাওয়ার জন্য শিশু হাতের কাছে যা পায়, তাই কামড়াতে চেষ্টা করে । এই ব্যথা অনেক সময় কান পর্যন্ত চলে যায়, এবং শিশু বারবার কানে হাত দেয়। মাড়ি কিছুটা লালচে হয়ে ওঠে এবং ফুলে যেতে পারে। শিশু ঠিক মতো খাবার খেতে চায় না এবং খিটখিটেও হয়ে যেতে পারে । পেট খারাপ এবং অকারণ কান্নাও দাঁত ওঠার সময় মাড়ির অস্বস্তির কারণে হতে পারে। সামান্য জ্বর আসাও অস্বাভাবিক কিছু নয় । দুধের দাঁত সাধারণত রাত্রে বেশি বাড়ে বলে ব্যথার জন্য রাত্রে বাচ্চার ঘুমেরও অসুবিধে হয়।
দাঁত ওঠার সময় বাচ্চা সবসময় নিজের হাত মুখে দেয় বা সামনে যা পায় তাই নিয়ে চিবোতে শুরু করে । জীবাণু সংক্রমণ এড়াতে সবসময় বাচ্চার হাত এবং খেলনা ভালো করে পরিষ্কার করে রাখুন। দাঁত ওঠার সময় বাচ্চার মুখ থেকে লালা ঝরা বেড়ে যায়, কিছু সময় পরপর বাচ্চার মুখ পরিষ্কার কাপড়ে মুছিয়ে দিন, এতে র্যাশ হওয়ার ভয় থাকে না।
নরম একটা কাপড়কে প্রথমে গরম জলে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন, তারপর সেটা ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে দিন। কাপড়টা একটু ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনার বাচ্চার হাতে দিন। বাচ্চা এই ঠান্ডা, নরম কাপড়টা চিবোলে মাড়ির ফোলা ভাব কমবে এবং ব্যথা কম লাগবে। আপনি নিজে হাতেও এটা আস্তে আস্তে করে দিতে পারেন এবং কাপড়ের জায়গায় আলতো করে বরফ লাগাতে পারেন । তবে খেয়াল রাখবেন, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই করবেন, না হলে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। আপনার বাচ্চা যদি শক্ত খাবার খেতে শুরু করেছে তা হলে তাকে ঠান্ডা জাতীয় ফল যেমন গাজর, শসা বা আপেল দিতে পারেন। বাচ্চাকে এসময় নরম খাবার দেওয়াই ভালো।
প্রত্যেকবার খাওয়ানোর পরে একটা পরিষ্কার কাপড় গরম জলে ভিজিয়ে নিন এবং আঙুলে জড়িয়ে বাচ্চার মাড়ি এবং যে জায়গায় দাঁত উঠছে, সেখানে আলতো ভাবে মুছে দিন। মনে রাখবেন, আপনার আঙুল যেন পরিষ্কার থাকে।
আপনার আঙুল পরিষ্কার করে আলতো চাপে বাচ্চার মাড়িতে ম্যাসাজ করে দিন, এতে মাড়ির ওপর হওয়া চাপ থেকে শিশুর আরাম লাগবে। অল্প নুন জলে আঙুল ভিজিয়েও বাচ্চার মাড়িতে লাগিয়ে দিতে পারেন।
আপনার বাচ্চার জন্য নন টক্সিক মেটেরিয়ালে তৈরি ভালো টিদার কিনে আনতে পারেন। এই টিদার কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে দিন এবং ঠান্ডা হলে শিশুকে দিন। বেশিরভাগ ভালো টিদারের মধ্যে তরল ভরা থাকে। এই ঠান্ডা টিদার চিবোলে মাড়ি আরাম পায়।
ঠিক মাত্রায় এসেন্সিয়াল অয়েলের ব্যবহার খুবই কার্যকরী হয়ে থাকে। ১ টেবিল চামচ নারিকেল বা অলিভ অয়েলের সাথে ১ ফোঁটা ক্যামোমাইল অয়েল মিশিয়ে শিশুর মাড়িতে লাগালে ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমে যায়। বাচ্চার বয়স ২-এর বেশি হলে লবঙ্গ তেল বা মধুও লাগাতে পারেন। মনে রাখবেন, ১ বছরের নীচে বাচ্চাকে কখনই মধু দেবেন না। জলের সাথে সামান্য আমন্ড-এর নির্যাস মিশিয়ে মাড়িতে লাগাতে পারেন। আদার রসও ফোলার কারণে হওয়া অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
খুব বেশি কড়া হবে না, এরকম ক্যামোমাইল চা তৈরি করুন এবং আপনার ফ্রিজে আইস কিউব তৈরির জন্য রেখে দিন। আইস কিউব হয়ে গেলে একটা পরিষ্কার মসলিন ব্যাগে সেটা রেখে ভালো করে মুখটা বেঁধে বাচ্চার হাতে দিন। বাচ্চা ওটা চুষলে বরফের ঠান্ডায় মাড়ির লাল ও ফোলা ভাব কমবে আবার ক্যামোমাইলের জন্য ব্যথাও কমে যাবে। লক্ষ্য রাখবেন যেন শিশু অতিরিক্ত সময় বরফ মুখে না দেয়, তাহলে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে।
দাঁত ওঠার এই পর্যায়ে কোনও শিশুর বেশি সমস্যা হয় আবার কারও বা অত হয় না।এটা একেবারেই স্বাভাবিক এবং এতে ভয় না পেয়ে আপনার মাতৃত্ব উপভোগ করুন। শিশুর পাশাপাশি নিজেরও যত্ন নিন, বিশেষ করে যেসব মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান। এসময় মায়েরা যদি ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন, তা হলে বাচ্চাদের দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো হয়। আনন্দে থাকুন আর বাচ্চাকে প্রত্যেকদিন বেড়ে উঠতে দেখুন। হাত বাড়ালেই বন্ধু পেয়ে যাবেন, এই কথাই রইল তা হলে!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null