ছোট্ট সোনার কানে পোকা ঢুকে গিয়েছে? এই পরিস্থিতি সামাল দেবেন কীভাবে?

ছোট্ট সোনার কানে পোকা ঢুকে গিয়েছে? এই পরিস্থিতি সামাল দেবেন কীভাবে?

ঐশী প্রিয়াঙ্কা আর তন্ময়ের একমাত্র মেয়ে। আবার ওদের জীবনের সৌভাগ্যও। ঐশী আসার আগে আর্থিকভাবে ওরা স্বচ্ছল ছিল না। ঐশী আসার পর থেকে ওদের জীবনে একের পর এক মিরাকল ঘটতে শুরু করে। দুই বছরের মধ্যেই আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসে জীবনে। এখন ওরা তিনজনে সুখে আছে। (Things To Do If Insects Enter Ear)

তন্ময় তো ঐশীকে রীতিমতো চোখে হারায়। ওকে প্রতিদিন স্কুলে নামিয়ে দিয়ে ও অফিস যায়। তবে এত যত্ন নেওয়া সত্ত্বেও কিছু বিপদ কোনও রকম জানান না দিয়েই আসে। সেদিনও তেমনই হয়েছিল। দিনটা ছিল শনিবার। শনিবার ঐশীর হাফ স্কুল হয়। (Bug in Ear)

তন্ময় প্রতি শনিবার বাড়িতেই থাকে। সেদিন তন্ময় আর প্রিয়াঙ্কা দুজনেই ওকে আনতে গিয়েছিল। স্কুল ছুটি হলে দেখা গেল ঐশী কাঁদতে কাঁদতে বেরোচ্ছে। ব্যাপার কী? ওর বন্ধুরা জানাল, ওর কানে নাকি পোকা ঢুকে গিয়েছে, কিছুতেই সেটা বেরোচ্ছে না (Kane Jodi Poka Ba Pipra Jay)। তন্ময়, প্রিয়াঙ্কা দুজনেই রীতিমতো অবাক। এমনও যে হতে পারে, তা ওদের ধারণাই ছিল না।

গাড়িতে উঠে ঐশীর কান্না থামানোর অনেক চেষ্টা হল। কিন্তু ঐশী রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছে। প্রিয়াঙ্কা ওর মাথা একপাশে হেলিয়ে পোকাটা বের করার চেষ্টা করলো। কিন্তু লাভ হল না। ১০ মিনিট এমন চেষ্টা করার পর তন্ময় গাড়ি ঘুরিয়ে দিল ঐশীর চিকিৎসকের চেম্বারের দিকে। (Insects in a Child’s Ear)

বড় হোক বা ছোট, কনে পোকা ঢুকলে তা সবসময়ই ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে ছোট্ট সোনার কানে পোকা ঢুকলে সে তো কান্নাকাটি করবেই। ওর কান্না দেখলে বাবা-মায়েরও ভয় লাগা স্বাভাবিক। তবে শিশুস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে কয়েকটি প্রাথমিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পরামর্শ দেন। (Things To Do If Insects Enter Ear) এগুলো জানা থাকলে বাবা-মায়ের পক্ষেই এই পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব। সেই প্রাথমিক পদ্ধতিগুলো কী কী, রইল তারই হদিস।

 

বাচ্চার কানে পোকা বা পিঁপড়া ঢুকলে কী করবেন জেনে নিন (Things To Do If Insects Enter Ear)

 

#1. ওকে শান্ত করুন: পোকা বা অন্য কোনও কিছু কানে ঢুকলে ছোট্ট সোনা কেঁদেকেটে একশা করবে, সেটাই স্বাভাবিক। এখানে মা বা বাবা হিসেবে ওর ভরসা আপনিই। প্রথমেই ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করুন। কান্না না-থামিয়ে কখনওই পোকাটা বের করবেন না। তা হলে আরেক বিপদ হতে পারে। (Bug in Ear) ওকে বোঝান যে আপনি ওই দুষ্টু পোকাটাকে খুব সহজেই বের করে ফেলতে পারবেন। ও যেন আপনার উপর ভরসা রাখে।

 

#2. খোঁচাখুঁচি নয়: এই সময় বাচ্চা ভয় পেয়ে নিজেই কানে আঙুল ঢুকিয়ে পোকা বের করার চেষ্টা করে। এমন করতে দেখলেই ওকে বাধা দিন। এতে পোকাটা বেরনোর বদলে আরও ভিতরের ঢুকে যেতে পারে। অনেকসময় বাবা-মাও ইয়ার বাড বা দেশলাই কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে পোকাটা বের করার চেষ্টা করেন। চিকিৎসকের কথায়, এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। (Remove Insect From Ear) কারণ এতে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। তেমন হলে ওর শোনার ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যাবে।

 

#3. মাথা একপাশ করে আস্তে ঝাঁকান: ছোট্ট সোনাকে শান্ত হলে প্রাথমিক পদ্ধতি হিসেবে এটি প্রয়োগ করুন। ওর যেই কানে পোকা ঢুকেছে সেই কানটি প্রথম নীচের দিকে হেলিয়ে দিন। এবার ওর মাথায় আস্তে ঝাঁকুনি দিন। দেখবেন যেন ঝাঁকুনি দিতে গিয়ে ওর কোনওভাবে আঘাত না লাগে। ঝাঁকুনির বদলে ওই কানটির লতি আগুপিছুও করতে পারেন‌। এতে পোকাটা কানের সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে আসবে।

 

#4. তেল দিন: ঝাঁকুনির পদ্ধতি প্রয়োগের পর ওকে জিজ্ঞাসা করুন, কানের মধ্যে পোকাটা কি এখনও রয়েছে? সেটা কি নড়াচড়া করছে? দুটো প্রশ্নেই ও যদি হ্যাঁ উত্তর দেয়, তখন এই উপায়টি বেছে নিন।
মাথায় রাখুন, পোকাটা যদি বেঁচে থাকে তবেই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা উচিত। ছোট্ট সোনার জন্য যে তেল ব্যবহার করা হয় বা সাধারণ ভেজিটেবল তেলের দু-এক ফোঁটা বালব ইয়ার সিরিঞ্জ দিয়ে ওই কানে ঢালুন। তেলটা যাতে সহজে ভিতরে যেতে পারে তার জন্য কানের লতি আগুপিছু করতে পারেন। তেলের জন্যই পোকাটা মরে যাবে (Insect Inside Ear) আর নিজে থেকে বেরিয়ে আসবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তেল অতি অল্প উষ্ণ হলে ভালো, কিন্তু কখনই যেন গরম না হয়। তাতে কানের বড়সড় ক্ষতি হতে পারে। তেল-এর এই পদ্ধতি প্রয়োগের আগে নিশ্চিত হোন কানে যা ঢুকেছে তা আদৌ পোকা কি না। পোকার বদলে অন্য কোনও পদার্থ হলে সেটি কিন্তু তেল শুষে নিতে পারে (Ant in Ear)। সেরকম হলে কান থেকে ওই বস্তুটা বের করা আর কঠিন হয়ে যাবে।

 

#5. জল দিন: ঝাঁকুনির পদ্ধতিটি প্রয়োগের পর ছোট্ট সোনাকে জিজ্ঞেস করুন, কানে পোকাটা কি এখনও রয়েছে? যদি ওর উত্তর বোঝা যায় পোকাটি নড়াচড়া করছে না কিন্তু রয়ে গিয়েছে, তবে এই উপায়টি বেছে নিন।
জলের অল্প কয়েক ফোঁটা বালব ইয়ার সিরিঞ্জ দিয়ে ওর কানে ঢালুন। (Foreign object in the ear: First aid) এতে পোকাটা কানের সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। জল নামমাত্র উষ্ণ হলে ভালো কিন্তু গরম জল কখনই ব্যবহার করবেন না।
গরম তেলের মতোই গরম জলও বাচ্চার কানের ক্ষতি হতে পারে। জলের এই পদ্ধতির ক্ষেত্রেও আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে জিনিসটা ওর কানে ঢুকেছে তা পোকাই কি না‌। পোকার বদলে অন্য কোনও বস্তু হলে তা কিন্তু জল শুষে আকারে বেড়ে যেতে পারে।

কানে ঢুকে যাওয়া পোকা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ততটা ক্ষতিকর হয় না। তাই বিশেষজ্ঞরা প্রথমে ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে এটি বের করার কথা বলেন। (Things To Do If Insects Enter Ear) কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকই শেষ ভরসা। কোন কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি? চলুন দেখে নেওয়া যাক।

 

আরও পড়ুন: চটজলদি গলার কাঁটা নামাবেন কী করে? ঘরোয়া পদ্ধতির চেকলিস্ট হাতে আছে তো!

 

কোন কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি?
(When to Consult a Doctor?)

  • কান্না থামছে না: ছোট্ট সোনার কান্না কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। এমনটা প্রথমবার হওয়ায় সে অত্যন্ত ভয় পেয়ে রয়েছে। কান্না কিছুতেই থামানো না গেলে প্রাথমিক পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ না-করাই উচিত। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকই ভরসা।

 

  • পুরোটা না বেরোলে: প্রাথমিক পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে পোকাটার কিছু অংশ বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু বাকিটা রয়ে গিয়েছে ভিতরেই। (Bug in Ear: Symptoms and How to Get it Out) এমন ঘটনা ঘটলে বাড়িতে আর চেষ্টা না-করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো।

 

  • ইনফেকশনের আঁচ: প্রাথমিক পদ্ধতি প্রয়োগের পরেও ছোট্ট সোনার ভয় মোটেই কমেনি। কানের ভিতরটা যেন লাল হয়ে গিয়েছে। ওর কানের ভিতরে ইনফেকশনের কোনওরকম আঁচ পেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে ওকে নিয়ে যান।

কানে পোকা ঢুকলে কীভাবে বাড়িতেই বের করা সম্ভব সে সম্পর্কে তো জানা গেল। তবে পোকা ঢুকলে কানের কী কী ক্ষতি হতে পারে, তাও জেনে রাখা ভালো। বিশেষজ্ঞদের কথায়, এতে মা-বাবা হিসেবে প্রাথমিক আতঙ্ক সহজে কাটিয়ে ওঠা যায়।

 

 

কানে পোকা ঢুকলে ক্ষতির আশঙ্কা কী কী? (What Are the Complications, if Bug Enters Ear)

  • সাধারণত ক্ষতিকর নয়: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কানে ঢুকে পড়া পোকা ক্ষতিকর হয় না। কারণ পোকাটি নিজেও বুঝতে পারে সে ভুল জায়গায় ঢুকে পড়েছে। তাই নিজের প্রাণ বাঁচাতে সে বেরিয়ে আসার চেষ্টাই করে।

 

  • ইনফেকশন: পোকা ছোট্ট সোনার কোনও ক্ষতি করতে না-চাইলেও অনেক সময় তাদের ত্বকে কিছু বিষাক্ত পদার্থ থাকে। এগুলো মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। (How to Deal With Insect Inside Ear) এর থেকে কানে ইনফেকশন হতে পারে।

 

  • শোনার ক্ষমতা লোপ: এমন ঘটনা সংখ্যায় খুব কম হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিছু পোকার দেহ থেকে বিষাক্ত তরলও নিঃসৃত হয়। যার জন্য কানের পর্দা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

 

ঐশীর চিকিৎসক সেদিন চেম্বারেই ছিলেন। তার পাঁচ মিনিটের চেষ্টাতেই কান থেকে বেরিয়ে যায় পোকাটা। পোকাটি অবশ্য ততক্ষণে মরে গিয়েছে। কান ঠিকঠাক আছে বুঝতে পেরে ঐশীর কান্নাও থেমে যায় দু’মিনিটে। (What to Do When Something Is Stuck in Ear)

এরপরেই ঐশীর চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা আর তন্ময়কে উপরের প্রাথমিক পদ্ধতিগুলোই বুঝিয়ে দেন। যাতে এমন ঘটনা আবার কখনও হলে নিজেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। তবে আপনার সোনামণির কানে কখনও পোকা ঢুকলে প্রিয়াঙ্কাদের মতো আর ভয় পাওয়ার দরকার নেই। কারণ আপনি তো এখন প্রাথমিক পদ্ধতিগুলো জেনেই গিয়েছেন। এবারে এমন ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি বুঝে শুধু ওর কান্না থামানোর অপেক্ষা। (Things To Do If Insects Enter Ear)

 

আরও পড়ুন: শিশুর কানে ব্যথার উপশমে ১০টি ঘরোয়া টোটকা

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

null

null