পালং শাক দারুণ স্বাস্থ্যকর; বাচ্চাকে রেঁধে খাওয়ান ৮ মাস+ থেকে!

পালং শাক দারুণ স্বাস্থ্যকর; বাচ্চাকে রেঁধে খাওয়ান ৮ মাস+ থেকে!

রুকুর বয়স দেড় বছর। তা হলে কী হবে, দুষ্টুমিতে ও পাল্লা দেয় ওর থেকে বড় দাদা-দিদিদের! ওর দুষ্টুমিতে নাজেহাল দোলন। খাবার নিয়ে সারাদিন ওর পিছনে ছুটে বেড়াতে হয়। অল্প একটু খাওয়ার পর কিছুতেই আর খেতে চায় না। দোলন চিন্তায় পড়ে যায়। এমন চলতে থাকলে ওর শরীরে পুষ্টি হবে কী করে? এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে দোলন রুকুর চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিল। চিকিৎসককে জানাতে তিনি বললেন, রুকুকে এখন পালং শাক খাওয়ানো উচিত। হঠাৎ পালং শাকের কথা শুনে দোলন অবাক হল। ও চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করলো, পালং শাকই কেন? চিকিৎসক জানালেন পালং শাক খুদেকে এনার্জি জোগাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর নানা উপকারিতা রয়েছে। চিকিৎসক একে একে সেগুলো দোলনকে জানালেন। (Spinach For Babies: Health Benefits And Recipes)

 

পালংশাকের উপকারিতা (Health Benefits Of Spinach):

শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে: দুষ্টুমি করতে করতে অনেক শিশুই ঘেমে যায়। আবহাওয়ার কারণেও অনেক খুদের ঘাম হয়। ঘাম হওয়ায় ওর শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। যার ফলে খুদে ডিহাইড্রেশনে ভুগতে পারে। অন্যদিকে পালং শাকে রয়েছে ৯২ শতাংশ জল। জলীয় ভাগ বেশি হওয়ায় পালং খুদেকে হাইড্রেটেড রাখে।

  • রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়: ওর দুষ্টুমি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কাও বাড়তে থাকে মায়ের মনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন সি, কে ও ভিটামিন এ-র মতো উৎপাদন। এই উপাদানগুলো খুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে খুদে যতই দুষ্টু হোক, সহজে অসুস্থ হয়ে পড়ে না।

 

  • প্যারাসাইট ধ্বংস করে: ছোট বাচ্চাদের অন্ত্রে প্যারাসাইট গোত্রের জীবাণু প্রায়ই বাসা বাঁধে। এই প্যারাসাইটগুলোর খুদের শরীর থেকে পুষ্টি শুষে নেয়। দুর্বল করে দেয় ছোট্ট শরীরকে। পালংশাক অন্ত্রে থাকা এই প্যারাসাইটগুলোও ধ্বংস করে।

 

  • হাড়ের জন্য ভালো: পালং শাকে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম খুদের হাড়কে শক্ত করে। বেড়ে ওঠার বয়সে এ কারণেই চিকিৎসক ‌ওকে পালং শাক খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।

 

  • পেশির জন্য ভালো: দুষ্টুমি করতে করতে চোট পেতেই পারে খুদে। পেশিতে আঘাত পেলে তা সহজে সারতেও চায় না। তাই বেড়ে ওঠার বয়সে ছোট্ট শরীরের পেশিও মজবুত হওয়া জরুরি। প্রতি একশো গ্রাম পালং শাকে থাকে তিন গ্রাম প্রোটিন যা খুদের পেশিকে মজবুত করতে সাহায্য করে।

 

  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়: বাচ্চাদের খাদ্যতন্ত্র বড়দের মতো পরিণত হয় না। তাই সাধারণ খাবারদাবার থেকেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসকের মতে, পালংশাকের খেলে এমন হয় না। বরং এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

 

  • হজম করতে সাহায্য করে: একশো গ্রাম পালং শাকে প্রায় তিন গ্রাম ফাইবার থাকে। ফাইবার থাকায় এটি খুদের বাওয়েল মুভমেন্ট স্বাভাবিক রাখে। ফলে খাবার হজম করতে অসুবিধা হয় না।

 

  • লিভার সুস্থ রাখে: নতুন শক্ত খাবার থেকে অনেকক্ষেত্রে খুদের লিভারে সংক্রমণ হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের কথায়, পালংশাক খেলে এমন হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।‌ বরং এই শাক লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। (Spinach for Babies: Nutritonal Value, Health Benefits & Recipes)

 

পালংশাকের এতরকম গুণের কথা জানতে পেরে দোলন অবাক। এদিকে রুকু তো খুবই দুষ্টু। কিছুতেই খাবার খেতে চায় না। ও চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করল, কোন কোন রেসিপি খুদের জন্য রান্না করা যায়? (Spinach Reccipes for Babies Indian) চিকিৎসকও বেশ কয়েকটি রেসিপি বলে দিলেন। (Spinach Recipes for Toddlers Indian)

#1. পালং পিউরি (Spinach Puree): খুদেকে অন্যান্য শক্ত খাবার যেমন পিউরি আকারে দেওয়া হয়, তেমনই দেওয়া যেতে পারে পালং শাকও। এক্ষেত্রে পালং শাক প্রথমেই ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর একটি প্রেশার কুকারে দুটো সিটি দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। ব্লেন্ডারে সিদ্ধ করা পালংশাক মিহি করে নিলেই তৈরি পালংশাকের পিউরি। (How to Make Spinach Puree for Babies)

#2. পালং ও গাজরের পিউরি (Spinach And Carrot Puree): পালংশাক ও গাজর— দুটোই ভিটামিন এ-এর গুণে সমৃদ্ধ। তাই পালং ও গাজরের পিউরি হতেই পারে ওর প্লেটের দুর্দান্ত আইটেম। এই ডিশটি বানাতে প্রথমে পালং শাক ভালো করে সিদ্ধ করে নিন। এরপর গাজরও একইভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। দু’টি সবজি একসঙ্গে সিদ্ধ করা উচিত নয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, এতে দুই সবজির মধ্যে বিক্রিয়ার ফলে অক্সালিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, যা ছোট্ট সোনার শরীরের জন্য ভালো নয়। দু’টি সবজিই সিদ্ধ হয়ে গেলে একটি ব্লেন্ডারে মিশিয়ে নিন। ব্লেন্ডারে মেশানোর সময় প্রয়োজন বুঝে জল মেশান।

#3. পালংয়ের স্যুপ (Spinach Soup): এর জন্য প্রথমে কড়াইতে অল্প তেল বা ঘি মাখিয়ে সামান্য গোটা জিরে ফোড়ন দিন। এর মধ্যে কুচি কুচি করে কাটা পেঁয়াজ ও রসুন দিয়ে অল্প নেড়ে নিন। এরপর ছোট ছোট করে কাটা পালংপাতা দিয়ে দু’কাপ দিয়ে অল্পক্ষণ ফোটান। ফোটানো হয়ে এলে একটি গ্রাইন্ডারে পুরো মিশ্রণটি মিহি করে নিন। এবারে মিশ্রণটি ছাঁকনিতে ছেঁকে খুদেকে পরিবেশন করুন।

 

আরও পড়ুন: পুষ্টিগুণে ভরা বার্লি থাক শিশুর পাতে। ঝালিয়ে নিন ৭ রেসিপি

 

#4. পালং-চিকেন স্যুপ (Spinach Chicken Soup): শুধু পালংশাক খাওয়ালে অনেক খুদেই নাক সিঁটকোয়। তবে পালংয়ের সঙ্গে চিকেন থাকলে, তখন সেটাই খুদের কাছে হয়ে ওঠে লোভনীয়। চিকেনের বদলে শুধু চিকেনস্টক দিয়েই এই ডিশটি বানানো যায়। (Spinach Recipe for One Year Old)
এক্ষেত্রে প্রেশার কুকারে প্রথমে চিকেনের কয়েকটি টুকরো পরিমাণমতো জল দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে শুধু স্টকটা বার করে নিন। একইভাবে পালং শাকও সেদ্ধ করে নিন। এবারে সেদ্ধ করা পালং শাক একটি ব্লেন্ডারে দিয়ে পরিমাণমতো স্টক মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। ব্লেন্ড করার সময়ে সাধারণ জল মেশাবেন না। এতে পিউরির স্বাদ খারাপ হয়ে যেতে পারে। পরিবেশনের আগে অল্প মাখন ছড়িয়ে দিন স্যুপের উপরে।

#5. ভাত-পালং-এর কম্বো (Spinach With Rice): ভাত ও পালংয়ের কম্বো রেসিপিও মন কেড়ে নিতে পারে ছোট্ট খুদের। এক্ষেত্রে প্রথমে চাল একটু বেশি পরিমাণ জলে সেদ্ধ করে নিন, যাতে তুলনায় নরম হয়। এরপর আগের নিয়মেই পালং শাকের পিউরি তৈরি করে নিন। এবারে ব্লেন্ডারে ভাতের সঙ্গে অল্প জল মিশিয়ে তাতে পালং পিউরি ঢেলে ব্লেন্ড করে নিলেই তৈরি ভাত-পালং এর কম্বো (Palak Recipes for Babies)।

#6. পালং আপেলের পিউরি (Spinach Apple Puree): এক্ষেত্রে প্রথমে আপেলের খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এরপর একটি প্যানে অল্প জল, আপেলের টুকরো, দারচিনি ও লবঙ্গ দিয়ে বেশি আঁচে কিছুক্ষণ নেড়ে নিন। এবারে ভালো করে ধোওয়া পালং শাক প্যানে দিয়ে অল্প কষিয়ে নিন। ১৫ মিনিট কষানোর পর আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। পালং ভালোমতো সেদ্ধ হয়ে গেলে পুরো মিশ্রণটি ব্লেন্ডারে মিশিয়ে নিন।

#7. ওটস্-পালংয়ের পিউরি (Oats And Spinach): একটি ফ্রাইং প্যানে অল্প জল দিয়ে তাতে ওটস্ নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ পর তাতে পালংপাতা দিয়ে জল দিয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে নিন। সিদ্ধ হয়ে এলে একটি ব্লেন্ডারে ভালো করে মিশিয়ে নিলেই তৈরি ওটস্-পালংয়ের পিউরি। (Baby Weaning Spinacg Recipe)

 

মনে রাখুন (Keep In Mind):

  • ভালো করে ধুয়ে নিন: পালংশাক ফলাতে নানারকম কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এতে ধুলোবালিও লেগে থাকে। তাই রান্নার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। নয়তো ছোট্ট সোনার বিপদ হতে পারে।
  • নুনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ: ছোট্ট বাচ্চার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে এক চিমটে রক সল্ট আপনি ব্যবহার করতেই পারেন। বাচ্চার দুই বছর পেরিয়ে গেলে এই সাবধানতারও প্রয়োজন নেই। সাধারণ লবণই ওর রান্নায় মেলানো যায় অনায়াসে।
  • ছেঁকে নিন: পিউরি পরিবেশনের আগে সব সময়ই ভালো করে ছেঁকে নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে খুদের গলায় খাবারের কণা আটকে বিপত্তি হতে পারে। ছেঁকে নিলে পিউরিতে কোনও বড় কণা থাকলে তা ফেলে দেওয়া যায়।

 

চিকিৎসকের বলে দেওয়া রেসিপির মধ্যে বেশ কয়েকটি দোলন বাড়িতে চেষ্টা করেছিল। রুকু হাসিমুখেই সেই সবকটি খেয়েছে। আশ্চর্যের ব্যাপার, অন্য খাবার তেমন না খেলেও পালংয়ের রেসিপি ওর মনপসন্দ। রুকুর ওজন বাড়তে দেখে দোলনও মনে মনে খুশিই। (Spinach For Babies: Health Benefits And Recipes)

 

আরও পড়ুন: ডানপিটে বাচ্চার জন্য (১০ মাস+) ডালিয়া; ঝালিয়ে নিন উপকারিতা ও রেসিপি!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

null

null