গুড্ডির জন্মের পর অতীন আর তনিকার দাম্পত্য জীবন আবার আগের মতো হাসিখুশি হয়ে উঠেছে। তিন বছর আগে বিয়ে হলেও মা হতে না-পারায় মন খারাপ ছিল তনিকার। তাই গুড্ডি আসার খবর পেয়েই আনন্দে ওর মন ভরে ওঠে। একই আনন্দে ভেসে গিয়েছিল অতীন। মেয়ে হওয়ার পর অতীনের কর্মজীবনেও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। গুড্ডি যেন ওদের জীবনে মা লক্ষ্মীর অবতার। (Slow or Poor Infant Weight Gain)
কুঁড়ির মতো সেই মা লক্ষ্মীকে নিয়ে দারুণ চলছিল তিনজনের ছোট্ট সংসার। কিন্তু চিন্তার হাওয়া বয়ে আনল গুড্ডির চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন। আর পাঁচটা বাচ্চার মতো গুড্ডিকেও নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে চেক-আপ-এর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ১৫ মাস বয়স হওয়ার পর একদিন গুড্ডিকে দেখে চিকিৎসক ব্যাজার মুখে তনিকা আর অতীনকে জানালেন, গুড্ডির ওজন আর পাঁচজন বাচ্চার মতো বাড়ছে না (Baby is Not Gaining Weight)।
গত দুই মাস ওর ওজন স্বাভাবিক ওজনের থেকে কম ছিল, এবারও তাই। ডাক্তারের কথা শুনে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গেল অতীন আর তনিকা। মনে নানা রকম দুশ্চিন্তাও এল। তবে কি তাদের লক্ষ্মীর ঠিকমতো খেয়াল রাখা হচ্ছে না? ছোট্ট মায়ের দেখভালে কোনও খামতি থেকে যাচ্ছে?
সদ্যজাত হোক বা দু-তিন বছরের খুদে, ওজনের ঘাটতি পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ বাচ্চার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। অতীন-তনিকা বুঝতেই পারেনি, গত দু’মাসে গুড্ডির ওজন কম ছিল। ছোট্ট সোনার ওজন ঠিক মতো না-বাড়লে অতীন-তনিকার মতো আপনিও চিন্তায় থাকেন। কিন্তু আপনিও কি বুঝতে পারেন না সোনামণির ওজন স্বাভাবিক আছে কি না? (Sisur Ojon Kom) ওজনের ঘাটতি বুঝতে বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু লক্ষণের কথা বলে থাকেন।
এই লক্ষণগুলো শিশুর হাবেভাবে ফুটে উঠছে কি না সেদিকে নজর রাখতে হবে। তা থেকেই বোঝা সম্ভব, আপনার সোনামণি আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই বেড়ে উঠছে কি না। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই লক্ষণগুলো সম্পর্কে।
কীভাবে বুঝবেন আপনার সোনামণি আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই বেড়ে উঠছে কি না! (Ways to Know if Your Baby Is Developing Normally)
#1. ওজন মাপুন: শিশুর ওজন নিয়মিত মাপলে খুব সহজেই বোঝা যায় ছোট্ট সোনার ওজনে হেরফের হচ্ছে কি না। ওজন মাপার সময় শিশুকে খালি গায়ে ওজনযন্ত্রে শুইয়ে দিন। গায়ে জামা থাকলে তার ওজনও রিডিংয়ে চলে আসে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোন মাসে কত ওজন থাকা উচিত তা জানতে দেখতে হবে ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন’ বা হু (WHO) অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড গ্ৰোথ চার্ট (Babies Growth Chart)। তাতে নির্দিষ্ট করে লেখা ওজনের থেকে শিশুর ওজন কম হলে বুঝতে হবে সোনামণির ওজন আর পাঁচটা বাচ্চার মতো তাড়াতাড়ি বাড়ছে না।
#2. মেজাজ বিগড়ে যাওয়া: এমনিতে আপনার সোনামণি বেশ হাসিখুশি। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে তার মেজাজ বিগড়ে আছে। অকারণেই মাঝে মাঝে কেঁদে উঠছে। এমনকী দুধ খাওয়ার সময়েও তার মেজাজ বিগড়েই রয়েছে। এসব দেখে সোনামণির মায়ের কপালে ভাঁজ পড়াটাই স্বাভাবিক। (Poor Weight Gain in Child) বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মেজাজ বিগড়ে থাকা ওজনে ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে।
#3. মলমূত্রে অস্বাভাবিকতা: শিশুর প্রতিদিনের হিসি ও পায়খানায় নজর রাখতে বলেন সব চিকিৎসকই। আসলে এই দুইয়ে কোনও রকম অনিয়ম দেখলে, তা থেকেই বোঝা সম্ভব ছোট্ট সোনার ওজনে সমস্যা হচ্ছে কি না। বিশেষজ্ঞদের মতে, পায়খানা শক্ত না পাতলা, হিসির রঙ গাঢ় হলুদ না হালকা এই সব কিছুই প্রতিদিন নোট করে রাখা উচিত। নরম না হয়ে পায়খানা যদি কোনও দিন খুব শক্ত, কখনও বা পাতলা—এমন হয়, তবে বুঝতে হবে শিশুর শরীর ওজনের ঘাটতির বিষয়ে জানান দিচ্ছে।
#4. কৌতূহল কমে যাওয়া: কিছুদিন আগেও এটা ওটা নিয়ে ছোট্ট সোনার কৌতূহলের শেষ ছিল না। চারপাশের জিনিস ঘাঁটাঘাটি করে তার অনেকটা সময় কাটছিল। অথচ গত কিছুদিন ধরে কেমন যেন ঝিমিয়ে আছে সে। নতুন জিনিস আগে যেমন কৌতূহল নিয়ে দেখত, এখন আর সেই আগ্ৰহই নেই (How to Get Your Toddler to Gain Weight)। হঠাৎ করে চারপাশের জগত নিয়ে শিশুর কৌতূহল এমন কমে যাওয়া মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। ওজন ঠিক মতো না-বাড়ার পিছনে এটিও কারণ হতে পারে।
#5. অত্যধিক ঘুম: ছোট্ট সোনামণির মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম দরকার। শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রত্যেক শিশুরই প্রতিদিন ১৩ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু ছয় সাত মাস বয়সেও ছোট্ট সোনা দুধ খাওয়ার সময় ছাড়া বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে রয়েছে? এটি হল অত্যাধিক ঘুমের লক্ষণ। শিশুর অত্যাধিক ঘুম অনেক সময় তার ওজনে ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। (Slow or Poor Infant Weight Gain)
#6. দৌড়ঝাঁপ কমে যাওয়া: প্রতিদিনই ছোট্ট সোনার দুষ্টুমিতে মেতে থাকে সারা বাড়ি। অথচ কিছুদিন ধরে সে ভীষণ চুপচাপ আর শান্ত হয়ে পড়েছে। ছোট ছোট পায়ে হাঁটবার চেষ্টা করছে না। এমনকী হামাগুড়ি দিতেও যেন তার ইচ্ছে নেই। সোনামণির এমন ঝিমিয়ে থাকা, গুরুতর অসুখের লক্ষণ হতেই পারে। যার জন্য ওজনে ঘাটতি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। (Help Baby Gain Weight Faster)
আরও পড়ুন: বাচ্চার ওজন বাড়াতে বেশি খাওয়াচ্ছেন? সাবধান!
কী কী কারণে ঠিকঠাক ওজন বাড়ছে না আপনার ছোট্ট ছানার? ধারাবাহিক হলে চিন্তার কারণ আছে বই কি!
(Why Isn’t Your Baby Gaining Weight? And When Should You Worry?)
ওজন ঠিক মতো না বাড়লে সব মায়েরই দুশ্চিন্তা হয়। সন্তানের দেখভাল মা হয়েও ঠিক মতো করতে পারছেন না, এই সন্দেহও মনে জাগে। শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্রেফ দেখভাল ঠিক না-হলেই ওজনে ঘাটতি দেখা যায়, তা কখনওই নয়। শিশুর ওজন ঠিক মতো না-বাড়ার পিছনে থাকতে পারে আরও বেশ কিছু কারণ। কী কী কারণ, এবারে সেগুলোই দেখে নেওয়া যাক।
গুড্ডির ওজন ঠিক মতো না-বাড়ার কারণ ছিল ওর ঘন ঘন ডায়রিয়া। ডায়রিয়া থেকে যে এমনটা হতে পারে তা বোঝেনি অতীন-তনিকা। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলায় দু’মাসেই তার ওজন বেড়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়। মা লক্ষ্মী এরপর থেকে সারাদিন হাসিমুখে। সন্তানের মুখে এমন খিলখিল হাসি থাকুক, তা সব মা-ই চান। তাই মায়ের নজর থাকুক বাচ্চার ওজনের দিকে। ওজন না-বাড়ায় তাকে যেন অপুষ্টিতে না ধরে। আপনাকে সাহায্যের জন্য সঙ্গে তো রইল এই গাইডলাইন। (Slow or Poor Infant Weight Gain)
আরও পড়ুন: আর দুশ্চিন্তা নয়, নিয়ম মানলেই নাদুসনুদুস হবে কোলের ছানা!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null