মা হওয়ার পর কেটে গেছে একটা মাস। এক বিয়েবাড়ির নেমন্তন্নে যেতে অনেকদিন পর বার করলেন সাধের বালুচরী শাড়িখানি। সাজগোজ শুরু হওয়ার প্রথম পদক্ষেপেই মনে জোর ধাক্কা। ব্লাউজটা হাতে ঢুকছেই না! একটু মুষড়ে গিয়ে এবার বেরলো জামদানি, তারপরে তসর, তারপরে ঢাকাই। এবং একটারও ব্লাউজ আপনার গায়ে হল না। অথচ মাত্র এক বছর আগে, এই শাড়ি-ব্লাউজ পরেই ননদের বিয়েতে চোখ টেনেছেন সব্বার। এ কী হল আপনার সাথে? মনে মনে চরম মুষড়ে পড়ে, আজ আয়নায় অনেকদিন পরে নিজেকে খুঁটিয়ে দেখলেন আপনি। আর ভালোই বুঝতে পারলেন, আপনার শরীরের আনাচে কানাচে বাসা বেঁধেছে থলথলে চর্বি। বেশ খানিকটা মোটা হয়ে পড়েছেন আগের থেকে। (Tips to Lose Weight after Pregnancy)
দুঃখ পাওয়ার তো কিছু নেই! এটাই হওয়ার ছিল। প্রেগন্যান্সিতে ওজন বাড়বে এটাই তো স্বাভাবিক এবং সুস্থ গর্ভকালের লক্ষণ। অস্বাভাবিক যেটা, সেটা হল ডেলিভারির পর একটা নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সেই মেদ কমানোর চেষ্টা না করা। বা, বলতে পারি নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন না হওয়া। স্থূলত্ব সর্বদা ক্ষতিকর আর বহু রোগের কারণ।
শুধু সবার চোখে সুন্দর ছিপছিপে (Ojon Komanor Upay) থাকার জন্য নয়, নিজের শরীরের ভিতরটা সুস্থ রাখতেও অতিরিক্ত মেদ কমানো প্রয়োজন। আজ না হয় একটা ব্লাউজের সেলাই খুলে সেটা পরে বিয়েবাড়ি ঘুরে এলেন, কিন্তু আপনার ছোট্ট রানির প্রথম জন্মদিনে যে আর কোনও জামা/ব্লাউজের সেলাই খুলতে হবে না, তার দায়িত্ব আমাদের (Weight Loss Tips)। একটু নিবেদিত প্রাণ হয়ে এই সহজ নির্দেশগুলো মেনে চলুন, আপনার ওজন কমতে বাধ্য। ভালো করে পড়ে ফেলুন আজকের এই প্রতিবেদন। আর জেনে নিন কীভাবে সহজে বিদায় করবেন ‘বেবি ওয়েট’ (Pregnancyr Por Ojon Komano)।
চিকিৎসকদের মত অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় একজন সুস্থ মহিলার প্রায় ১১.৫-১৮ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন বাড়তে পারে। গর্ভস্থ বাচ্চার ওজন ছাড়াও এই অতিরিক্ত ওজনের জন্য দায়ী থাকে অ্যামনিওটিক ফ্লুয়িড, প্লাসেন্টা, ব্রেস্ট-টিস্যু, আকারে বেড়ে যাওয়া জরায়ু, রক্ত এবং কিছু অতিরিক্ত চর্বি। হবু মায়ের শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করা ও ব্রেস্ট ফিডিং-এর জন্য এনার্জি সঞ্চয় করে রাখাই এই অতিরিক্ত চর্বির প্রধান কাজ।
প্রেগন্যান্সির সময়ে মায়ের শরীরের অভ্যন্তরে ঘটা এই সব ক্রিয়াকলাপ বা খাদ্যাভ্যাস বা চেহারার ধাতের প্রভাবে যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চর্বি জমে যায়, তা হলে তাকে ‘বেবি ওয়েট’ বলা হয় (Belly Fat Komanor Upay)। এই ‘বেবি ওয়েট’ কিন্তু বেশিরভাগ মায়ের কপালেই জুটে যায় এবং এটি অত্যন্ত সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনা। থলথলে চর্বিওয়ালা পেট, প্রশস্ত কোমর ও নিতম্ব এই অতিরিক্ত ওজনের প্রতীক হয়েই ধরা দেয় নতুন মায়ের কাছে।
বাচ্চা হয়ে যাওয়ার পরে খানিক সুস্থ হয়েই যদি সঠিক ডায়েট আর হালকা শরীরচর্চা মেনে চলা হয়, তা হলে কিন্তু এই বেবি ওয়েট বা এক্সট্রা মেদ ঝরিয়ে ফেলা একেবারেই হাতি-ঘোড়া কিছু কাজ নয় (Weight Loss Tips)। প্রয়োজন শুধু সঠিক সময়ে সতর্কতার।
বাচ্চা হওয়ার পরে মায়ের শরীর সুস্থ হতে কিন্তু সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত প্রয়োজন। আবার যেসব মায়েরা এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং করান, তাদের জন্য তো ডায়েটটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দৈনন্দিন ক্যালোরির চাহিদা নির্ভর করে মেটাবলিজম রেট, সে কতটা সক্রিয় এবং বয়সের ওপর।
নতুন মায়ের ক্ষেত্রে যেহেতু মা ও বাচ্চার স্বাস্থ্য একে ওপরের সাথে জড়িত, তাই এক্সট্রা গুরুত্ব দিতে হয় মায়ের ডায়েট চার্টে। ডায়েটিশিয়ানের কথা অনুযায়ী, ওজন কমাতেও সাহায্য করবে অথচ মা ও বাচ্চার পুষ্টিতেও কোনও ব্যাঘাত ঘটবে না, এরকমই একটা চার্ট সাধারণ ভাবে ছকে দেওয়ার চেষ্টা করলাম আমরা।
আরও পড়ুনঃদ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে পাল্টে যায় মাতৃত্বের অভিজ্ঞতাটাই!
প্রেগন্যান্সির পরে ওজন কমানোর সহজ, নিরাপদ অথচ কার্যকর কিছু টিপস;
সবদিক বজায় রেখে, নিজের ওপর একটু মনোযোগ দিলেই কিন্তু সহজে ও নিরাপদে ওজন কমা সম্ভব। তবে, এই ওজন কমানোর চ্যালেঞ্জ নেওয়ার আগে কতগুলো কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে ফেলুন;
#1.বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিং করান: জানেন কি, বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিড করালে দৈনিক প্রায় ৫০০ ক্যালোরি খরচ হয়। যা কি না শরীরচর্চারই সমান। বিনা ঝক্কিতে বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিড করিয়ে যদি সুন্দর ক্যালোরি বার্ন করতে পারেন, এর থেকে ভালো কিছু হয় নাকি! সাধেই কি বলে, ব্রেস্ট ফিড শুধু বাচ্চা নয়, মায়ের জন্যও সমান জরুরি।
#2. ব্রেকফাস্ট বাদ দেবেন না: বাচ্চার দেখভাল করতে গিয়ে নিজের ব্রেকফাস্ট কোনও ভাবেই বাদ দেবেন না বা দুপুর ১২ টায় ব্রেকফাস্ট করবেন না। সময়মতো খাবার খান।
#3. ব্যালান্সড ডায়েট মেনে চলুন: খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন (Bengali Food Diet Plan for Weight Loss) প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদ বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন। আপনি যেহেতু সদ্য মা হয়েছেন, তাই আপনার সাথে সাথে আপনার বাচ্চারও পুষ্টি জড়িত। তাই ডায়েট বানান সাবধানে,
#4. সারাদিনে ৫-৬ বার অল্প অল্প খান: সারাদিনে কিছু না কিছু খাবার খান কিন্ত একেবারে অনেকটা খাবেন না। অনেক গ্যাপ দিয়ে খাবার খাবেন না। দ্রুত ওজন কমানোর চাবিকাঠি এটাই।
#5. এক্সারসাইজ শুরু করুন: নরমাল ডেলিভারি হোক বা সিজারিয়ান, ডেলিভারির ধাক্কা সামলে উঠে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে শুরু করে দিন হালকা শরীরচর্চা। নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে আপনি হয়তো বেশ তাড়াতাড়িই এক্সারসাইজ শুরু করতে পারবেন। কিন্তু সি-সেকশন হলে, কয়েকটা মাস একটু সেরে উঠুন। ডাক্তারের অনুমতি নিয়েই ব্যায়াম করুন।
#6. বাচ্চাকে সাথে নিয়ে প্ল্যান বানান: একা একা যদি ভালো না লাগে, বাচ্চাকে নিয়েই করুন শরীরচর্চা। ওকে কোলে নিয়ে ঘুরতে যান, হেঁটে আসুন কাছাকাছি কোনও পার্কে বেশ কয়েক পাক। ক্রাঞ্চ করার সময় ওয়েট হিসেবে ব্যবহার করুন ওই পুঁচকেটাকেই। তবে অবশ্যই, ডাক্তার বা ফিটনেস ট্রেনারের অনুমতি নিয়ে।
#৭.পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: শুধু ডায়েট ও শরীরচর্চাই নয়, প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুমেরও। চেষ্টা করুন প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোতে। প্রয়োজনে বাচ্চার দেখভালে স্বামীর সাহায্য নিন ।
একটু ধৈর্য ধরুন আর খাওয়া দাওয়ায় নজর দিন। কয়েকমাসের মধ্যেই ফিরে পাবেন আবার আগের চেহারা। ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে নিন অবশ্যই।
আরও পড়ুনঃ কেমন হবে নতুন মায়ের ডায়েট চার্ট
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null