আর বিছানায় শুয়ে হাত-পা ছোঁড়া নয় বা বসে বসে পিটপিটিয়ে চারদিক পর্যবেক্ষণ নয়; স্বাধীন হওয়ার প্রথম মুহূর্ত হাজির হল বলে! আচ্ছা, এই গরমের মাঝে আর হেঁয়ালি না করে আসল কথাটা বলি। কথা হচ্ছে, আপনার ঘরের চাঁদ মামাটির হামা দেওয়া নিয়ে। আপনার সোনামণি এবার যে কোনও দিন গুটি গুটি হামা দিয়ে খপ করে ধরে টানবে আপনার শাড়ির আঁচলখানি,আর আপনি আল্হাদে আটখানা হয়ে এক গামলা কেঁদে ফেলবেন। এদিক ওদিক যেতে মোটেই আপনার সাহায্যের জন্য চ্যাঁ-প্যাঁ জুড়বে না ও, স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ চুটিয়ে অনুভব করবে সারা বাড়ি গুড়গুড়িয়ে হামা দিয়ে। ভেবেই যেন মনটা ভালো হয়ে যাচ্ছে তাই না? (Signs your baby is Learning to Crawl in Bangla. Bachhar hama dewar lokkhon. Signs your baby is learning to crawl in Bengali.)
বাচ্চারা সাধারণত ৭-১০ মাস বয়স হলে হামাগুড়ি দিতে শুরু করে। এবার সব বাচ্চাই যে একই বয়সে হামা দিতে শুরু করবে এমন কিন্তু কোনও কথা নেই। কোনও পুঁচকের মনে হল “ ধুর, আর শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না, এবার একটু অন্য কিছু করি”, সে ৭ মাসের আগেই হামা দিয়ে ভেল্কি দেখিয়ে দিল। আবার কারও মনোভাব হয়তো “ অত আর কে হামা দেয়, একবারে হেঁটে ফেলবো”; সে কিন্তু সত্যিই হামা দেওয়া বাদ দিয়ে হাঁটি হাঁটি পা-পা শুরু করে দেবে। এভাবেই অনেকে কম বেশি এদিক ওদিক করে হামা দিতে। যাই হোক, মোদ্দা কথা, হামা দেওয়াটা বড্ড দরকার। বসার পরে হামা দিলে তবেই বাচ্চার মাংস পেশী সবল হয় এবং হাঁটার জন্য তৈরি হয়ে যায়। তাই শিশুর বাড়-বৃদ্ধিতে হামাগুড়ির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না কিছুতেই। কীভাবে বুঝবেন আপনার বাচ্চা হামা দেওয়ার জন্য তৈরি বা ওকে সাহায্য করবেন কীভাবে? দেখে নিন এক নজরে।
বাচ্চা যখন ভালোভাবে কারও সাহায্য ছাড়াই বসতে পারবে, এদিক ওদিক দুলতে পারবে বসে বসে, নড়াচড়া করতে পারবে ইচ্ছে মতো, তখন থেকেই সে হামা দেওয়ার জন্য তৈরি হতে শুরু করে। একদম সঠিক ভাবে হামাগুড়ি দেওয়ার আগে অনেক রকম অঙ্গভঙ্গী-কায়দা করে থাকে সে, এগুলোকে হামাগুড়ির প্রকারভেদও বলতে পারেন বা হামা শুরুর আগের ইঙ্গিত। বাচ্চা এইসব চেষ্টা করলে আপনিও বুঝতে পারবেন যে ও এবার হামা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেমন;
#1. পেটের ওপর ভর দিয়ে গড়ানো (Rolling over stomach)-> হামা দেওয়া শুরু করার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় সব বাচ্চাই এই কাজটি করে থাকে। শুয়ে থাকা অবস্থায় পাশ ফিরে উল্টে গিয়ে পেটের ওপর ভর দেয় এবং আবার নিজেকে নিয়ে পাশে গোল করে গড়িয়ে যায়। পাশে পাশে গড়িয়ে যেতে বা ফ্লিপ করতে শুরু করে নিজের পেটের ওপর ভর দিয়ে।
#2. ভর দিয়েছে পাছার ওপর (Booty Scooting)-> যেহেতু, বাচ্চা বসার পরেই হামা দেওয়া শুরু করে, তাই প্রথম দিকে অনেকেই উল্টো ভাবে হামা দেওয়ার চেষ্টা করে। বড্ড বেশি পরিশ্রম আর ঠিকঠাক এগোতে পারে না বলে, সব বাচ্চাই ক’দিন পরে আর এরকম করার চেষ্টা করে না। এতে বাচ্চা তার ছোট্ট পাছাটির ওপর ভর দিয়ে বসে, এবার একটা হাত পিছনে রেখে সাপোর্ট দেয় আর পাগুলোকে সামনের দিকে রাখে। এবার ওই হাতে ভর দিয়ে পাছা তুলে সামনের দিকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করে। শুনতে যতটা মজার, এটা দেখতে তার থেকেও বেশি মজাদার কিন্তু। আপনার বাচ্চা এরকম করলে মোবাইলে ভিডিও করতে ভুলবেন না যেন।
#3. কম্যান্ডো স্টাইল (The commando style)-> পেটের ওপর ভর দিয়ে, ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা টেনে ঠিক কম্যান্ডোদের মতোই সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে পুঁচকে। বেশির ভাগ বাচ্চাই পেটের ওপর পুরো ভর দিয়ে এই স্টাইলেই হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করে। হাঁটুতে মালাইচাকি থাকে না বলে, শরীরের পুরো ভর একবারে হাঁটুর ওপর না ফেলে পেটের ওপর দেয়। ধীরে ধীরে হামা দেওয়া শিখে গেলে তখন চার হাত-পা কাজে লাগাতে আর অসুবিধা হয় না।
#4. এবার ভালুক হই (Bear walk)-> দুই হাত ও দুই হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে নিজের শরীরকে সামনের দিকে ছুঁড়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে খুদে। এইভাবে হামা দেওয়া শিখতে গিয়ে মাধ্যাকর্ষণের টানকে কাটিয়ে ওঠা শিখে যায় শিশু। পুরো শরীরকে সামনে দিকে ছুঁড়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে এতে যথেষ্ট শক্তি ক্ষয় হয় এবং পেশীর ভালো ব্যায়াম হয়। ভালুক অনেকটা এরকম ভাবে হাঁটে বলে একে ‘বিয়ার ওয়াকিং’ বলা হয়।
#5. একটু হামা- একটু বসা (Crawl and sit)-> বাচ্চা একটু করে হামা দেওয়ার মতো পজিশনে আসে আবার তারপরেই বসে পড়ে। বসে বসেই আবার চেষ্টা করে হামা দেওয়ার মতো ভঙ্গী করতে বা দু’হাতে সাপোর্ট পেতে। এভাবেই আস্তে আস্তে হামা দেওয়া শিখে যায় আপনার খুকু/ খোকা।
#6. যেমন হয় হামাগুড়ি (Casual crawling)-> বেশ খেটেখুটে আপনার বাচ্চা হামা দেওয়া শিখে গেলো, এবার যেমন হামাগুড়ি দেওয়া হয়, ঠিক সেরকম দুই হাত ও হাঁটু/ পায়ে ভর দিয়ে হামা টানা শুরু করে দিল বাড়িময়। আপনিও দিলেন অনেকগুলো হাততালি।
#7. ক্রিসক্রস হামা (Cross crawling)-> হামাগুড়িতে এক্কেবারে এক্সপার্ট হয়ে গেছে আপনার ছানা। যে হাত এগোচ্ছে, ঠিক তার কোনাকুনি হাঁটুও ভর দিয়ে এগিয়ে আসছে হামা দেওয়ার সময়। অর্থাৎ, যদি ডান হাত ভর দিয়ে সামনে এগোয়, তা হলে বাঁ হাঁটু এগিয়ে আসছে হামা দিতে সাহায্য করতে। হাত ও পা কোণাকুণি ভাবে কাজে লাগে বলে একে ক্রিসক্রস হামা নাম দেওয়াই যায়।
যদিও বাচ্চার হামাগুড়ি দেওয়া একটা স্বাভাবিক ঘটনা এবং বাচ্চার স্বতঃস্ফূর্ত বৃদ্ধির একটা অংশ, তাও আপনি ওকে সাহায্য করতে পারেন হামা শিখতে। আপনাকে মোটেই ওকে হামাগুড়ি দিয়ে দেখাতে হবে না, আপনি ওর মাংস পেশীর জোর বাড়াতে সাহায্য করবেন আর ওকে উৎসাহ দেবেন। কীভাবে দেখুন;
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null