ক’দিন পরেই ডেলিভারি? প্রস্তুতি নিন আজ থেকেই, মিলিয়ে নিন কেনাকাটির চেকলিস্ট!

ক’দিন পরেই ডেলিভারি? প্রস্তুতি নিন আজ থেকেই, মিলিয়ে নিন কেনাকাটির চেকলিস্ট!

৩৪ সপ্তাহে পা দিলেন বুঝি? শরীর-মনের দিক থেকে এবার প্রসবের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার পালা! (Requirements Of a New Mom)

এই প্রস্তুতি পর্বের মাঝেই সবচেয়ে ক্লান্তিকর বা বিরক্তির হয়ে উঠতে পারে হসপিটালের ব্যাগ গোছানার কাজটা। বলা তো যায় না, লেবার পেইন সঙ্গে করে কখন হাজির হয় সে! আজই তাই চেকলিস্ট মিলিয়ে গোছ-গাছের (Things Every New Mom Needs) কাজ শুরু করে দিন।

প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতাল যাওয়া, প্রসবের গোটা সময়টা, তারপর ছানা-সমেত সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরা, সবের কথা মাথায় রেখেই টিপস দিচ্ছি আমরা। মিলিয়ে নিলেই হলো!

 

#1. লেবার ও ডেলিভারির জন্য গোছগাছের চেকলিস্ট! (Hospital Bag Checklist for Labor and Delivery)

 

  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্তর: এইটের বেলায় সবচেয়ে বেশি ভুল হয় প্রসূতি মায়েদের। ডেলিভারির দিন এগিয়ে এলে তাই আগেভাগেই নিজের পরিচয়পত্র, মেডিক্লেম থাকলে তার কাগজপত্তর, হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন ফর্মই সবই ভরে নিন ব্যাগে। হঠাৎ লেবার পেইন শুরু হলে এত্তকিছু মাথাতেও থাকবে না, শেষমেশ ভোগান্তি হবে হাসপাতাল পৌঁছে।

 

  • ব্যবহারে সহজ হসপিটাল ব্যাগ: হাতের গোড়ায় গুছিয়ে রাখুন ব্যবহারে সহজ একটা হসপিটাল ব্যাগও (Hospital Bag)। (ব্য়াগে যা যা রাখবেন- নার্সিং ব্রা, একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া যায় এমন অন্তর্বাস, বেশ কয়েকটা স্যানিটারি প্যাড, টুকটাক দরকারের ওষুধপত্র, ইত্যাদি)

 

  • নরম বালিশ: ডেলিভারির সময়টা প্রসূতি মায়ের শরীর নানান অস্বস্তির ভিতর দিয়ে যায়। এসময়টা শোওয়াটাও যদি আরামের না হয়, খুব সমস্যা তখন! হাসপাতালে যে বালিশ দেবে আপনাকে, তাতে হয়তো ঘুমই আসবে না ঠিকঠাক। আর ঘুম না হলে আরও কাহিল হয়ে পড়বেন আপনি। গোছগাছের সময় নিজের বালিশটাও তাই বগলদাবা করে নিন। (Items Needed for Labor and Delivery) আপনার সঙ্গী যদি আপনার সাথেই হাসপাতালে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, তার জন্যও গুছিয়ে নিন একটা।

 

  • দরকারি ঘরোয়া দাওয়াই: প্রসব বেদনা যখন শুরু হবে, তখন কিন্তু বেজায় ক্লান্ত লাগবে আপনার। আর এই যন্ত্রণা এক-দু’ঘণ্টার নয়। টেনে দিতে পারে গোটা এক বেলাও। এ সময় ব্যথা কমানোর কিছু টোটকা জানা থাকলে সুবিধা হবে আপনারই! বাড়িতে তাই হট প্যাক (Hot Pack) তাই সঙ্গে রাখুন সবসময়। পরিষ্কার এক পাটি মোজায় চাল বা বিনসের দানা ভরে দিন। হাসপাতালের মাইক্রোওয়েভ ওভেনে সহজেই গরম করা যাবে এটি। লেবার পেইন চলার সময় এই হট প্যাক পেটের কাছটায় ধরে রাখুন। আরাম পাবেন নিশ্চয়!

 

  • মোবাইল ভরা গান, সিনেমা: হাসপাতালে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তই বড্ড একঘেয়ে আর দুশ্চিন্তার হতে পারে। ভাবী সন্তানকে দেখার প্রবল ইচ্ছে সেই সাথে প্রসব প্রক্রিয়া নিয়ে নিজের মনে অজানা ভয়, দুইয়ে মিলে মেজাজটাই বিগড়ে দিতে পারে আপনার। এই সময় তাই সঙ্গী হতে পারে গান, সিনেমা বা পছন্দের কোনও বই। আগে থাকতেই মোবাইলে পছন্দের শিল্পীর গান ভরে রাখুন, মজার সিনেমাও ডাউনলোড করে নিতে পারেন। সেই সাথে থাকুক পছন্দের লেখকের কোনও বইও। মন উচাটন হলেই সাহায্য নিন এগুলোর! (The Ultimate Hospital Bag Checklist)

 

 

#2. মায়ের যত্নে গোছগাছ ও কেনাকাটির চেকলিস্ট! (Personal Care Items For Mom)

 

  • পরিচ্ছন্নতায় যা যা লাগবে: হাসপাতাল হোক যা-ই হোক, মায়ের যত্ন কিন্তু নিতে হবে মাকেই। এ ক্ষেত্রে কেউই এগিয়ে আসবে না আপনার সাহায্যে। যে কটা দিনই হাসপাতালে থাকুন না কেন, পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে থাকার চেষ্টা করুন। (Here’s What A New Mom Really Needs) আপনার ও আপনার ভাবী সন্তান-দু’জনের জন্যই দরকার এটা। বডি ওয়াশ, শ্যাম্পু, মুখ মোছার ওয়াইপস, নিজের টুথপেস্ট, ব্রাশ সবই রাখুন সাথে। ও হ্যাঁ, লিপ বামটা ভুলবেন না যেন! হাসপাতালের পরিবেশে এমনিই শরীর শুষ্ক হওয়ার সুযোগ থাকে। সেটাই আরও বাড়িয়ে দেয় প্রসব-প্রক্রিয়া!

 

  • পোশাক-আশাক-মাথার ক্লিপ: হাসপাতাল থেকে যে গাউন দেবে তার চেয়ে অনেক গুণে স্বস্তির হবে আপনার পরার নরম-সুতির নাইটিগুলো! সেই সাথে যদি একটা রোবও রাখতে পারেন সাথে, তা হলে তো কথাই নেই। এরই সাথে বেশ কয়েক জোড়া আন্ডারওয়্যার রাখুন সাথে। নানা কারণে এ সময়ে নানা ধরনের ডিসচার্জ হতে পারে, একই আন্ডারওয়্যার পরে থেকে নিজের বিপদ বাড়াবেন না!
    গুছিয়ে নিন চুল গুটিয়ে রাখার ক্লিপও। বিশেষ করে যদি আপনার বড় চুল হয়, চোখে-মুখে তা পড়ে খুব অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। হাতের গোড়ায় ব্যান্ড, ক্লিপ সবই রাখুন তাই। (Preparation Before Baby Delivery)

 

 

আরও পড়ুন: নেল কাটার থেকে থার্মোমিটার; একরত্তিকে ঘরে আনার আগে কেনাকাটির চেকলিস্ট!

 

  • চটি-জুতো-মোজা: না না, এটা শুনে হাসার কিছু নেই। বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই বলছি। হাসপাতালের মেঝে বড্ড ঠান্ডা হয়। নিজের একটা হাওয়াই তাই সাথে রাখাই ভালো। ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থাকলে মোজাও কাজে আসতে পারে দারুণ ভাবে। তবে হ্যাঁ, এমন চটিই সঙ্গে রাখুন যেটা চটজলদি পরিষ্কারও করা যায়। (Things Needed for Delivery) হাসপাতালের মেঝে তো, যদি নোংরা হয় কখনও! (What Do You Need to Pack for Baby Delivery)

 

 

#3.হাসপাতাল ছাড়ার আগে কেনাকাটির চেকলিস্ট (Essentials for Leaving the Hospital)

 

  • অরগ্য়ানাইজার: সবে মা হয়েছেন তো, শরীর-মনের ধকল সামলে সব কাজ আগের মতোই সুনিপুণ ভাবে করতে কিছুটা সময় লেগে যাবে আপনার। প্রসবের আগে থেকেই তাই হাতের কাছে রাখুন একটা অরগ্য়ানাইজার। (New Baby Checklist) এবার তাতে নোট করে নিন, কখন কী করতে হবে। যেমন ওষুধ খাওয়া বা খাওয়ানো, ডাক্তারের কাছে চেক আপ ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

  • ব্রেস্ট পাম্প: সদ্যোজাত অনেক শিশুই শুরু শুরুতে ঠিক ভাবে বুকের দুধ খেতে পারে না। আর এর থেকেই দুশ্চিন্তা শুরু হয় নতুন মায়ের। দুশ্চিন্তা হওয়াও স্বাভাবিক! বুকের দুধটুকুও না পেলে শিশু পুষ্টি পাবে কী করে! এ কারণেই বলছি হাসপাতাল থেকে ফেরার আগেই সঙ্গীকে বলে ব্রেস্ট পাম্প (Breast Pump) কিনে রাখুন একটা। এগুলো ব্যবহারে সহজ। উপরন্তু একটানা ব্যবহারে মায়ের বুকের দুধের ফ্লো-ও বেড়ে যায় অনেকটা!

 

  • নিপল শিল্ড: শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সমস্যা মেটাতে ব্যবহার করতে পারেন ভালো মানের স্টেরিলাইজড নিপল শিল্ডও (Nipple Shield)। নিপল শিল্ডের সাথে নবজাতক শিশু সহজেই ল্যাচ করতে পারবে বুকের সাথে আর দুধ খেতেও কোনও অসুবিধা হবে না ওর।

 

  • দুধ খাওয়ানোর বালিশ: সন্তান প্রসবের পরেই যে ক্লান্তি-অস্বস্তি ধুয়েমুছে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে, এমন ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। এবার শুরু হবে নতুন লড়াইয়ের পালা। আর তা হলো ব্রেস্টফিডিং বা স্তন্যপান করানো (Breast Feeding Pillow)। ঠায় বসে, বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো সত্যিই খুব কষ্টের হয় নতুন মায়ের কাছে। কাঁধে যে তার চাপ পড়ে বেজায়! এখন ব্রেস্টফিডিং পিলো বা দুধ খাওয়ানোর একটা বালিশই কাজটা অনেক সহজ করে দিতে পারে। আরাম পাবেন আপনি, স্বস্তি পাবে ছোট্ট শিশুও।

 

  • রকিং চেয়ার/ দোলনা চেয়ার: যদি সিজার হয় তো কথাই নয়, নরমাল হলেও বাচ্চাকে ঘুরে ঘুয়ে, সোজা হয়ে বসে ঘুম পাড়ানো বেশ কষ্টের হতে পারে। উপায় থাকতে সেই ধকল নেবেন কেন? বাড়িতে মজুত রাখুন রকিং চেয়ার বা দোলনা চেয়ার (Rocking Chair)। এতে বসে অনায়াসেই বাচ্চাকে ঘুম পাড়াতে পারবেন আপনি। আপনি যদি টুকটাক কাজও করেন, বালিশের সাপোর্ট দিয়ে এমনিই শুইয়ে দিন ছোট্ট ছানাকে। চেয়ারের দুুলুনিতে ঘুমিয়ে থাকবে ও।

 

  • বেবি বটল স্টেরিলাইজার: আর কিছু থাক না থাক, বাচ্চাকে নিয়ে ঘরে ফেরার আগে এটার ব্যবস্থা করতেই হবে আপনাকে। ছোট্ট বাচ্চার রোগভোগের আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। এই একখান স্টেরিলাইজারই (Baby Steriliser) ওকে পেটের রোগ থেকে দূরে রাখবে অনেকটা। একসাথে একবারে ছ’টি বোতল স্টেরিলাইজ মানে জীবাণুমুক্ত করতে পারবেন আপনি। ব্যবহারও খুব সহজ!
    হলফ করে বলা যায়, স্টেরিলাইজারই ৯৯.৯% ক্ষতিকারক জীবাণু মারতে সক্ষম এবং সংক্রমণ প্রতিরোধকও।

 

  • ডায়াপার ব্যাগ: হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর কিছুদিনের শান্তি। তারপরই টিকাকরন হোক বা ডাক্তার দেখানো, ছোট্ট ছানাকে নিয়ে মাঝেসাঝেই বেরোতে হবে আপনাকে। সাথে থাকবে তল্পিতল্পাও! এত কিছু একসাথে বহন করা ঝক্কির বই কি! তাই বলি, সময় থাকতে একটা ডায়াপার ব্যাগ (Diaper Bag) কিনে রাখুন আপনি। অনেকগুলি পকেট থাকবে ডায়াপার ব্যাগে, যেমন প্লাস্টিক পাউচ, চেঞ্জিং ম্যাট। শিশুর প্রয়োজনীও সব জিনিসই (ডাইপার / ক্লিনজিং ওয়াইপ / হ্যান্ড স্যানিসাইজার / ফরমুলা বটল / প্য়াসিফায়ার / জামাকাপড়) তাই সহজে গুছিয়ে নেওয়া যায় এতে।

 

  • লাগবে নতুন পোশাক-আশাক: ডেলিভারি হয়ে গেল মানেই আপনি যে পুরনো জামাকাপড় আবারও পরতে পারবেন, এমন আশা করবেন না যেন! প্রসবের পরও বেশ কিছু দিন গর্ভবতীর মতো দেখাবে আপনাকে। পেটের আকার থাকবে পাঁচ মাসের গর্ভবতীর মতোই। এ সময়ে তাই বেছে নিন সুতির, ঢিলেঢালা পোশাক। যাতে স্বস্তি বোধ করেন আপনি, দরকারে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোও হয় সহজ! সামনে বোতামওয়ালা কিছু জামা কিনে রাখার পরামর্শ তাই দিয়ে রাখলাম আমরা।

 

এত কিছু পরামর্শ দেওয়া একটাই কারণে (Hospital Bag Checklist for Mom), আপনার মানসিক উদ্বেগের কথা আমরাও বুঝি হাড়ে হাড়ে। প্রেগন্যান্সি থেকে ডেলিভারি এবং পোস্ট ডেলিভারি পুরো পথটা যতটা সহজ দেখায়, ততটাও মসৃণ নয় আসলে। ক্লান্তি, হতাশা, চিন্তা, ব্যথা সবটাই মুখ বুজে পেরোতে হয় প্রসূতি মাকে। শেষ বেলায় তাই বাড়ির লোককেই পাশে থাকার পরামর্শ দেব আমরা। (Preparing for Childbirth? Don’t Forget These Items)

আপনারাই পারেন প্রসূতি মাকে শরীর-মনে শান্তি দিতে। ডেলিভারির দিন যত এগিয়ে আসবে, ততই মনের জোর দিন হবু মাকে। তাঁর খাওয়াদাওয়া, ইচ্ছে-অনিচ্ছের গুরুত্ব দিন। ডেলিভারির পর জোর দিন তাঁর বিশ্রাম-আরামের ওপর। এই বিশ্রাম বলতে শারীরিক-মানসিক দুইয়ের কথাই বলছি আমরা। হতে পারে সদ্যোজাত সন্তান রাতের পর রাত জেগেই থাকছে, সেই সাথে জেগে থাকছেন নতুন মা-ও। সেক্ষেত্রে সকালের দিকে ছোট্ট শিশুটি যখন ঘুমিয়ে পড়ছে, তখন ঘুমানোর সুযোগ করে দিন মাকেও। (Requirements of a New Mom)

 

আরও পড়ুন: নবজাতকের ক্ষতি হয় যে ৭ কারণে!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

null

null