বাচ্চার ওজন বাড়াতে সহায়ক ঘী মেলানো ৫টি রেসিপি। ট্রাই করুন আজই!

বাচ্চার ওজন বাড়াতে সহায়ক ঘী মেলানো ৫টি রেসিপি। ট্রাই করুন আজই!

সুছন্দা খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছে। ওর ছেলে পাপুর বয়স এখন আট মাস। জন্মের সময় পাপুর স্বাস্থ্য খুব ভালো ছিল। কিন্তু গত এক-দেড় মাসে ওর ওজন ঠিক ভাবে বাড়ছে না। ছ’মাস বয়স পর্যন্ত তার খোকাকে দেখেই যেমন ‘গোলগাল’ বলে মনে হত, সে যেন এখন কিছুটা রোগা হয়ে গিয়েছে। (Recipes using Ghee for Baby Weight Gain)

বিষয়টা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণেই সুছন্দা চিকিৎসকের দ্বারস্থ। ডাক্তারবাবু জানালেন শিশুর জন্মের সময় বা তার ছ’মাস পর পর্যন্ত শরীরে ‘বেবি ফ্যাট’ থাকে। যা তারা মায়ের দুধ থেকে পায়। কিন্তু মায়ের দুধ পান বন্ধ হয়ে গেলে অনেক বাচ্চারই স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে।

এর দাওয়াই কী? ডাক্তারবাবুর উত্তর— ঘী (Best Foods for Weight Gain in Babies & Toddlers)!
ঘীয়ের কতগুলো সহজ রান্না বা কয়েকটি সাধারণ পদে ঘী মিশিয়ে এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় (What are the Popular Ghee Recipes for Babies?)। ডাক্তারবাবু দিয়ে দিলেন সেই তালিকাও।

 

কোন বয়স থেকে শিশুকে ঘী দেওয়া যেতে পারে? (When can you start giving ghee to your baby?)

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শিশুরা যতদিন স্তন্যপান করে, ততদিন তাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ফ্যাট সেই দুধ থেকেই তারা পেয়ে যায়। স্তন্যপান বন্ধ হওয়ার পরেই শিশুকে ঘী খেতে দেওয়া উচিত (Baby Food Recipes to Gain Weight)। যদি শিশু ছ’মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খায়, তা হলে সাত-আট মাসের মাথায় তাকে ঘী খাওয়ানো শুরু করা উচিত।
তবে অবশ্যই মাথায় রাখবেন, আপনার সোনাকে ঘী দেওয়ার আগে চিকিৎসকের থেকে জেনে নিন, এটা ঠিক হচ্ছে কি না। উনি যদি বলেন, এক্ষুণি না-দিতে, তা হলে তাঁর পরামর্শ মতোই এগোন উচিত।

 

শিশুকে কতটা ঘী দেওয়া যেতে পারে? (How much ghee can you give your baby?)

কোনও ভাবেই দিনের মাথায় এক চামচের বেশি নয়। এবং যখন থেকে ওকে ঘী খাওয়াতে শুরু করবেন, তখন থেকেই অন্য চর্বিযুক্ত খাবারের উপর রাশ টানতে হবে (Ghee for Babies Good or Bad)। আবারও বলা দরকার, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই কথা বলে নিতে হবে। একেক শিশুর শরীরের গড়ন একেক রকম। তাই ঠিক কতটা ঘী তাকে দিতে হবে, সে বিষয়ে বলতে পারেন একমাত্র চিকিৎসকই।

 

ঘীয়ের উপকারিতা (Benefits of Ghee for children)

  • ওজন বাড়ানো: যে সব বাচ্চাদের ওজনের ঘাটতি রয়েছে, তার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে ঘী।

 

  • হজমের সহায়ক: খাবার দ্রুত হজম করায় এবং পুষ্টি পেতে সাহায্য করে ঘী (Amazing Facts about Ghee for Babies)।

 

  • মস্তিষ্কের বিকাশ:৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর মস্তিষ্কের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশ হয়। ঘীয়ের মধ্যে থাকা ওমেগা ৩ মস্তিষ্কের বিকাশের সহায়ক।

 

  • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ঠান্ডা লাগা, জ্বর হওয়ার মতো সাধারণ অসুখের মোকাবিলা করতে ঘী খুবই সাহায্য করে।

 

  • প্রয়োজনীয় এনার্জি: শিশুর বড় হয়ে ওঠার জন্য দিনের মাথায় প্রায় ১৫০০ ক্যালোরি শক্তির প্রয়োজন। যার অনেকটাই পাওয়া যায় ঘী থেকে।

 

  • প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেল: ঘীয়ের মধ্যে ভিটামিন এ, ডি, ই, কে থাকে। এছাড়াও বেশ কিছু মিনারেল-ও থাকে এর মধ্যে। শিশুর বৃদ্ধিতে যেগুলোর কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে (Amazing Health Benefits Of Ghee For Babies)।

 

  • কার্সিনোজেন তাড়ায়: বেশ কিছু পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ঘীয়ের মধ্যে থাকা উপাদান শিশুর শরীর থেকে কার্সিনোজেন তাড়াতে সাহায্য করে। ফলে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, পরিমিত মাত্রার ঘী খেলে শিশুদের শরীরে ক্যানসারের প্রবণতা কমে।

 

  • ত্বকের জন্য ভালো: শিশুদের ত্বকের নানবিধ অসুখের মোকাবিলা করতে ঘী সাহায্য করে (Ghee for Baby Skin)।

Ghee for babies in Bengali

ঘী দিয়ে তৈরি পদ, যা শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে (Recipes using Ghee for Baby Weight Gain)

#1. সাধারণ ডাল-ভাত ও ঘী (Rice and Daal with Ghee): শিশুকে যে ডাল-ভাত খেতে দেন, তার সঙ্গে কিছুটা ঘী মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন (High Calorie Foods for Baby Weight Gain)।

  • যে ভাবে ওর জন্য ভাত বানান এবং ডাল সিদ্ধ করেন, সেই একই পদ্ধতিতে ডাল-ভাত বানিয়ে নিন।
  • এবার ডাল এবং ভাতের সঙ্গে হাফ চামচ করে ঘী মিশিয়ে নিন।
  • হাল্কা আঁচে সামান্য গরম করে নিন।
  • লক্ষ্য রাখবেন ঘী যেন গোটা ডাল এবং ভাতে মিশে যায়।
  • গরম-গরম ওকে খাওয়ান।

 

আরও পড়ুন: বাচ্চাকে খাঁটি ঘী খাওয়ানোর উপকারিতা; সঙ্গে থাকল বাড়িতেই ঘী বানানোর সহজ রেসিপি!

 

#2. ঘী ভাত (Ghee Rice): শিশুর বয়স এক বছর বা তার বেশি হয়ে গেলে ওকে নিরাপদে ঘী ভাত খাওয়াতে পারেন।

  • প্রেসার কুকারে পাঁচটি সিটি দিয়ে ভাত সিদ্ধ করে নিন।
  • ভাত একটু ঠান্ডা হয়ে গেলে তাতে এক চামচের মতো বা তার চেয়ে সামান্য কম ঘী মিশিয়ে নিন।
  • পরিমাণ মতো নুনও দিতে পারেন।
  • দরকার হলে শিশুকে খাওয়ানো যাবে, এমন কিছু মশলা (যেমন ধনে)-ও মিশিয়ে দিতে পারেন।

 

#3. সুজি ঘী (Sooji ghee): এটাও বছর খানেকের শিশুদের জন্য আদর্শ। তবে খাওয়ানো শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিন (When to Introduce Ghee for Babies)।

  • এক চামচের মতো ঘীয়ে সুজি প্রথমে ভেজে নিন। খুব বেশি ভাজবেন না। অল্প বাদামি রং হলেই ভাজা বন্ধ করে নিন।
  • তারপর ওর মধ্যে দুধ মিশিয়ে আবার গরম করতে শুরু করুন।
  • ফুটন্ত অবস্থায় এসে গেলে আঁচ কমিয়ে দিন।
  • অল্প চিনি দিন। কম আঁচে চিনি ভালো করে মিশিয়ে দিন পুরো সুজির মধ্যে।
  • ঠান্ডা করে শিশুকে দিন।
  • ইচ্ছে হলে এতে খুব অল্প কাজু এবং কিসমিস দিয়ে দিতে পারেন। তবে সেটা চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করেই।
  • অনেকে দুধের বদলে জলেও সুজি সিদ্ধ করে নেন। তাতেও অসুবিধা নেই।

 

#4. সবজি-ভাত ও ঘী (Vegetable rice and ghee): শিশুদের পুষ্টির জন্য খুবই আদর্শ খাবার (Effective Baby Weight Gain Foods)। তবে কোন কোন সবজি আপনার সোনাকে খাওয়াবেন, তা চিকিৎসককে আগে জিজ্ঞেস করে নিন।

  • প্রেসার কুকারে ভাত সিদ্ধ করে নিন। পাঁচটা সিটি দিয়ে নিতে পারেন। তাতে ভাত একটু বেশি সিদ্ধ হয়ে যাবে। সেটা ভালোই।
  • অন্য একটি পাত্রে সবজি (বিশেষ করে পেঁপে, খুব অল্প কাঁচাকলা, আলু, কড়াইসুটি, বিনস) সিদ্ধ করে নিন।
  • দুটোই আপনার সোনার খাওয়ার মতো অবস্থায় এলে, একসঙ্গে মিশিয়ে নিন।
  • এবার তার মধ্যে এক চামচ ঘী মেশান।
  • অল্প অল্প গরম থাকা অবস্থায় ওকে খেতে দিন।

 

#5. ডালিয়ার জাউ (Dalia poridge): এক বছরের বেশি বয়সের শিশুদের জন্য খুব ভালো খাবার।

  • সুজির পদটি বানানোর মতোই এখানেও ডালিয়া প্রথমে অল্প ঘীয়ের মধ্যে ভেজে নিন। এক্ষেত্রেও খুব বেশি্ ভাজবেন না। অল্প বাদামি রং হয়ে গেলেই ভাজা বন্ধ করুন।
  • তারপর এতে দুধ মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন।
  • ফুটতে শুরু করলেই আঁচ কমিয়ে দিন।
  • অল্প চিনি মিশিয়ে আঁচ নিভিয়ে ফেলুন।
  • ঠান্ডা হলে এতেও কাজু বা আমন্ড মিশিয়ে দিতে পারেন (Best Homemade Baby Weight Gain Food)।

 

শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো খাবার খাইয়ে খুব অল্প দিনেই পাপুর স্বাস্থ্যের পরিবর্তন টের পেল সুছন্দা। তবে পাশাপাশি কয়েকটি পরামর্শ দিয়ে রেখেছেন ডাক্তারবাবু।

  • কোনও কিছুই বেশি খাওয়ানো ভালো নয় (When and How Much Ghee to Babies)। আপনার খোকা বা খুকুর কোন বয়সে কতটা ঘী খাওয়া উচিত, তা বিশেষজ্ঞের থেকে ভালো করে জেনে নিয়ে তবেই ওকে ঘী দিন।
  • দোকানের নামী বা অনামী ব্র্যান্ডের ঘী খারাপ নয়। কিন্তু বাড়িতে বানানো ঘী শিশুদের জন্য বেশি ভালো।
  • ঘী খাওয়ার পর শিশুর কোনও সমস্যা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। (Recipes using Ghee for Baby Weight Gain)

 

আরও পড়ুন:বাড়ন্ত বয়সে মেনে চলুন সঠিক ডায়েট চার্ট। বাচ্চার বাড়-বৃদ্ধি নিয়ে আর চিন্তাই থাকবে না আপনার!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

null

null