মাত্র সাতদিন হল নিবেদিতার কোল আলো করে এসেছে ছোট্ট বাবলি। নিবেদিতা ও সোম দু’জনেই প্রচণ্ড খুশি। সবই ঠিকঠাক চলছিল বাবলির জন্মের পর। এমনকী বাবলির জন্মের সময়ও সব স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বাবলিকে বাড়ি আনার পর থেকেই নিবেদিতার মধ্যে একটা পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝেই ও কারণ ছাড়াই মুসড়ে পড়ছে। বেশ কয়েকবার নিবেদিতাকে লুকিয়ে কাঁদতেও দেখেছে সোম। হঠাৎ কী এমন সমস্যা হল নিবেদিতার? হাজার জিজ্ঞাসা করেও তার কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। নিবেদিতা নিজেও আসলে অন্ধকারে, কেন তার মন সবসময় বাবলিকে নিয়ে এত নেগেটিভ ভাবছে, কেন প্রথম সন্তানকে নিয়ে ভিতরে ভিতরে একটা অজানা ভয় কাজ করছে। শেষ পর্যন্ত নিবেদিতা তার সমস্যা নিয়ে ছুটে যায় একজন চিকিৎসকের কাছে। তিনিই বুঝিয়ে দেন ঠিক কী সমস্যায় রয়েছে নিবেদিতা। (postpartum depression symptoms causes and treatments in Bengali, prosober porer obosaad, postpartum depression symptoms causes and treatments in Bangla.Postpartum Depression Symptoms, Causes, Treatments in Bengali.)
ভাবছেন, এই পরিস্থিতিতে নিবেদিতা একাই পড়েছে? মোটেই তা নয়, বরং নিবেদিতার মতো আরও অনেক নতুন মায়েরাই এই এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যান। বিশেষজ্ঞরা এমন সমস্যার পোশাকি নাম দিয়েছেন পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা পিপিডি (PPD)। ছোট্ট প্রাণকে সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখানো সব মায়েদের কাছেই এক চ্যালেঞ্জ। শুধুই কি তাই, তার জন্মের পর একজন মেয়ের জীবন সম্পূর্ণ অন্যরকম হয়ে যায়। ছোট্ট সোনার খেয়াল রাখতেই তার দিনটা কাটে। আর এই জায়গাতেই সদ্য মায়েরা সমস্যায় পড়েন। তাদের মনে শিশুর খেয়াল রাখা নিয়েই একটা ভয় কাজ করে। সোনাকে তিনি ঠিক মতো দেখভাল করছেন তো? তার দুধ খাওয়ায় কোনও সমস্যা হচ্ছে না তো? সে তো আর কথা বলে জানাতে পারে না নিজের চাহিদা। তাই মায়েদের দায়িত্ব হয়ে পড়ে আরওই কঠিন। অনেক মায়েরাই এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন না। এর থেকেই মনের মধ্যে ডিপ্রেশন (depression) বা অবসাদ আসতে থাকে। শুধু তাই নয়, কোনও কারণ ছাড়াই হতে পারে এই ডিপ্রেশন। এই সময় শিশুকে দেখভাল করতে ইচ্ছে করে না। কখনও কখনও তো ফুটফুটে সোনার কান্নকাটি শুনলেও বিরক্ত লাগে। (prosober porer obosaad, postpartum depression symptoms causes and treatments in Bangla)
বেশকিছু লক্ষণ দেখলেই সহজে বোঝা যায় আপনি পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে আক্রান্ত কি না। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেগুলো।
এখন প্রশ্নটা হল, কেন নতুন মায়েরা এইরকম ডিপ্রেশন বা অবসাদে ডুবে যান? এর উত্তর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
উপরে উল্লেখ করা বিষয়গুলো পড়তে পড়তে কি মনে হচ্ছে, এই সমস্যাগুলো নিজের বা আপনার কাছের কারওর মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন? সদ্য মা হওয়ার পর কি আপনিও পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন বলে মনে হচ্ছে? তা হলেও মারাত্মক দুশ্চিন্তা করা বা হতাশ হয়ে পড়ার কোনও কারণ নেই। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকই এর ওষুধ দিতে পারবেন। এখন পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের চিকিৎসার জন্যই বিশেষ ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। তবে এই সমস্যার সমাধান ওষুধ ছাড়াও হয়। দেখা যাক সেগুলোও।
#1. ওষুধের সাহায্যে (Medication): ডিপ্রেশনের মূল কারণ হরমোনের ভারসাম্যের অভাব। চিকিৎসকরা হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনেন ওষুধের প্রয়োগ করে। ওষুধগুলো বিশেষভাবে নতুন মায়েদের জন্যই বানানো হয়। কারণ নতুন মায়েরা শিশুদের স্তন্যপান করান। এই ওষুধ মায়ের বুকের দুধে কোনও প্রভাব ফেলে না। মস্তিষ্কে কিছু রাসায়ণিক পরিবর্তন ঘটিয়ে অবসাদ দূর করে এই সব ওষুধ।
#2. মনোবিদের পরামর্শ (Psychologist counselling): বাচ্চার মুখের দিকে চাইলেই মাথায় বাজে চিন্তা আসছে, মনটা অজানা আশঙ্কায় ভরে উঠছে। একজন পেশাদার মনোবিদ তাঁর পরামর্শ দিয়েই আপনাকে বের করে আনতে পারেন এই সমস্যা থেকে। তাঁকে জানান, আপনার মনে ছোট্ট সন্তানকে কতরকম দুশ্চিন্তা চলে। কখনও কখনও যে সেগুলো সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাও বলুন। তিনি আপনাকে এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে পারেন। মনে এমন চিন্তা এলে কী কী করবেন, বাতলে দেবেন তিনিই।
#3. ব্যায়াম করুন (Exercise to lessen depression): অবসাদ কাটানোর ঘরোয়া সমাধানও আছে। রোজ সকালে নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়ামের ফলে ‘হ্যাপি’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এটি মানসিক চাপ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। ব্যায়ামের ফলে আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে যায়। যে দায়িত্ব পালন কঠিন বলে মনে হচ্ছিল এতদিন, সেগুলোও সহজ মনে হতে থাকে।
#4. হাসিখুশি থাকুন (Be happy): আপনার ভালো থাকাতেই সন্তানের ভালো থাকা। তাই সারাদিন হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। রেডিয়োতে মজার অনুষ্ঠান শুনুন, টেলিভিশনে কমেডি শো দেখুন, কমেডি সিনেমা দেখে সময় কাটান। মন অনেকটা হালকা হবে। বাড়িতে পুরোনো বন্ধুদের ডেকে তাঁদের সঙ্গে দেদার আড্ডা মারুন। এতে আপনার মন এমনিই ভালো হয়ে যাবে। (prosober porer obosaad, postpartum depression symptoms causes and treatments in Bangla)
পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন মোটেই খুব জটিল সমস্যা নয়। নতুন মায়েদের মধ্যে আকছাড় এই সমস্যা দেখা যায়। একটু বুদ্ধি করে আর বাস্তবটাকে বুঝে চললেই নিজেকে বা নিজের প্রিয়জনকে এই সমস্যা থেকে বের করে আনতে পারবেন আপনি। দরকার শুধু একটু ধৈর্য আর ভালোবাসা।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null