মৌমিতা আজ সকালেই জানতে পারল ওর পিসিওএস (PCOS)-এর সমস্যা রয়েছে। পিসিওএস মানে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (Polycystic Ovary Syndrome)। গত দু’মাসে ওর ঠিক মতো পিরিয়ড হয়নি। তাই আজ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। তারপরেই এই কঠিন বিষয়টা জানা! কলেজে ওর সঙ্গে রাঘবের প্রেমের কথা সবাই জানত।
ওরা নিজেরাও একটা সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে ফেলেছে গত কয়েক বছরে। পলিসিস্টিক ওভারি সেই পথে বাধা সৃষ্টি করবে না তো? (Polycystic Ovary Syndrome (PCOS) Symptoms, Causes, and Treatment)
রাঘব বলে রেখেছিল, চেম্বার থেকে ফিরে ওকে সবটা জানাতে। মনে একরাশ সংশয় নিয়ে রাঘবকে ফোন করল মৌমিতা। চিকিৎসক ওকে যা যা বলেছেন (Mahila Rog), সবই জানালো ওকে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই সমস্যা হয়। ওভুলেশন পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর জরায়ুর ডিম্বাণুথলি থেকে ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়। ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) আর লিউটিনাইজিং হরমোন (LH) ডিম্বাণুর এই নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। পিসিওএস-এ (PCOS (Polycystic Ovary Syndrome)) ডিম্বথলির সংখ্যা জরায়ুতে বাড়তে থাকে, কিন্তু তা থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ হয় না। এর ফলে এক বা একাধিক পিরিয়ড মিস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
ডিম্বাণু নিঃসরণ না-হওয়ায় নারী শরীরে অ্যান্ড্রোজেন নামক হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। কমে যায় ইস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টেরন-সহ অন্যান্য নারী হরমোনের ক্ষরণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ডিম্বথলিগুলোই জরায়ুতে সিস্ট তৈরি করে। একাধিক সিস্ট তৈরি হয় বলে এই রোগের এমন নামকরণ।
নারীর মেনস্ট্রুয়াল এজ (Mayer Swasthya) অর্থাৎ মোটামুটি ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের (অনেকের ক্ষেত্রেই এই বয়সের সীমারেখার ব্যতিক্রম দেখা যায়) মধ্যে এই রোগ দেখা দিতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দেশে প্রায় ৪০ শতাংশের কাছাকাছি মহিলা পিসিওএস-এ আক্রান্ত (Polycystic Ovarian Syndrome (PCOS, PCOD))। মৌমিতা জানতো, ওর বন্ধু দিশারিও পিসিওএস-এ আক্রান্ত। দিশারিই প্রথম এই রোগের লক্ষণগুলো ওকে জানায়।
লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা গেলেও দিশারি জানতো না ঠিক কী কারণে পিসিওএস-এর সমস্যা শরীরে দেখা দেয়। মৌমিতার মনে ছিল ওর চিকিৎসকের বলা কথাগুলো। ও সেই কথাগুলোই ভাগ করে নিল দিশারির সঙ্গে।
পিসিওএস-এর লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কে (PCOS Symptoms & Causes) জানতে পারার পর রাঘব সাময়িকভাবে মনমরা হয়ে পড়েছিল। ও জানতে চেয়েছিল এই সমস্যার চিকিৎসাগুলো কী কী। মৌমিতাকে সে সব বিস্তারিত বলে দিয়েছিলেন ওর চিকিৎসক। বেশ কিছু ওষুধও ওকে লিখে দিয়েছিলেন। মৌমিতা সেগুলোই রাঘবকে জানালো ।
আরও পড়ুন: যন্ত্রণাদায়ক মাসিকের কারণ ও ঘরোয়া টোটকায় প্রতিকার
#1. ইস্ট্রজেন নিয়ন্ত্রণ: ওভারিতে সিস্ট হওয়ার অন্যতম কারণ ইস্ট্রজেন হরমোনের সাম্য নষ্ট হওয়া। ইস্ট্রজেনের পরিমাণ বেড়ে গেলে ওভুলেশন অনিয়মিত হয়। যার ফলে ওভারিতে সিস্ট তৈরি হয়। তাই সিস্ট রুখতে শরীরে ইস্ট্রজেন ব্যালান্সের দিকে খেয়াল রাখুন। সয় প্রোটিন, প্রসেসড মিট শরীরে ইস্ট্রজেনের পরিমাণ বাড়ায়। প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল খেলেও শরীর রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ইস্ট্রজেনের পরিমাণ বাড়তে পারে। তাই ডায়েটে যতটা সম্ভব অরগ্যানিক মিট ও ডেয়ারি প্রোডাক্ট রাখুন (Effective Natural Treatments for Ovarian Cysts)। এতে ইস্ট্রজেনের সঠিক মাত্রা বজায় থাকবে।
পাশাপাশি বেশ কিছু হার্বাল জিনিস, যেমন ড্যান্ডেলিয়ন, মিল্ক থিসল-ও ওভুলেশন নিয়মিত করতে ও জননতন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।
#2. ফাস্টফুড বর্জন: ফাস্টফুড জাতীয় খাবার (List of Foods to Avoid with Ovarian Cyst) এই সমস্যায় আক্রান্ত মহিলাদের জন্য মোটেই ভালো নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পিসিওএস-এ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ওজন বেড়ে যাওয়ার এক স্বাভাবিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, যা সঠিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ওজন বৃদ্ধির ফলে পিসিওএস-এর সমস্যা তুলনায় বাড়তে থাকে। তাছাড়া কার্ডিওভাসকুলার রোগের প্রবণতাও বাড়ে। তাই পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে লো-কার্বযুক্ত খাবারকেই (যেমন, ফল, সবুজ শাক-সবজি, গোটা শস্য) ডায়েট (PCOS Diet) হিসেবে বেছে নিতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
#3. ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম (Exercise)যেমন ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, তেমনই ওভুলেশন পদ্ধতিতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি ইনসুলিনের মাত্রাও স্বাভাবিক রাখতেও ব্যায়াম অনেক বেশ কার্যকরী উপায়। চিকিৎসকরা তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন (Ovarian Cyst Treatment at Home)। মেদ ঝরিয়ে বিএমআই ২৫-এর নীচে নিয়ে আসতে পারলে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা অনেকটাই কাটানো যেতে পারে।
ডায়েট ও মেদ ঝরানোর পাশাপাশি কিছু ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট হরমোনের ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই, ফ্লাক্সসিড অয়েল, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি তার মধ্যে অন্যতম!
#4. জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি: এই সমস্যায় অনেক চিকিৎসক জন্মনিয়ন্ত্রক ট্যাবলেট (Birth Control Pill) খাওয়ার পরামর্শ দেন। এর বিশেষ ফর্মুলা ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে। দুই হরমোনের ক্ষরণই অ্যান্ড্রোজেনের ক্ষরণ কমিয়ে ডিম্বাণু নিঃসরণে সাহায্য করে (Ovarian Cysts Treatment & Management)।
#5. অস্ত্রোপচার: পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না-করালে বাড়তে পারে সিস্টের সংখ্যা। অত্যাধিক সিস্ট জরায়ুর পক্ষে মোটেই ভালো নয়। সেক্ষেত্রে মেডিকেশনের বদলে চিকিৎসকরা বেছে নেন সার্জারির পথ। ল্যাপারোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে জরায়ু থেকে সিস্টটিকে অপসারণ করা হয়।
গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে, এই ভয়েই মরে যাচ্ছিল মৌমিতা। রাঘবই ওকে আশ্বস্ত করলো, এখনই তেমন কিছু ভাবার নেই। আর চিকিৎসকও তো ওকে তেমন কিছু বলেননি। ফলে ভবিষ্যতে কথা ভবিষ্যতেই ভাবা যাবে। রাঘবই কড়া নির্দেশ দিল, চিকিৎসকের প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চলতে। কারণ মৌমিতা সুস্থ হয়ে উঠুক সেটাই ও চায়। (PCOS Symptoms and Treatment)
আরও পড়ুন: মাসিক চক্র নিয়ে ঠিক কতটা জানেন আপনি? নিজের সুস্থতার খাতিরে পড়ে নিন এর ইতিবৃত্তান্ত
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null