সন্তান চাইছেন? তা হলে সঙ্গম করবেন ঠিক কখন কখন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা!

সন্তান চাইছেন? তা হলে সঙ্গম করবেন ঠিক কখন কখন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা!

গত শুক্রবার তিয়াশার মা খাবার টেবিলে কথাটা তুললেন। ‘বিয়ে হয়েছে দু’বছর হল, এবার ছোট্ট একজন সদস্যকে নিয়ে আয় তোদের পরিবারে।’ কথাটা অংশুও ওকে বারদুয়েক বলেছে। কাজের চাপে তিয়াশা সে নিয়ে মাথা ঘামাতেই পারেনি। মায়ের কথায় টনক নড়ল। (When Should You Have Sex to Get Pregnant)

সত্যি তো! দেখতে দেখতে দুটো বছর কেটে গেল ও আর অংশু একসঙ্গে ঘর বেঁধেছে। অংশুকে সেদিন রাতেই তিয়াশা ওর মনের ইচ্ছে জানালো। শুধু ইচ্ছেটুকুই নয়, বরং পুরোটাই সে যে পরিকল্পনা করে এগোতে চায়, তাও জানালো। কারণ চাকুরিজীবী মেয়েদের সংসার ছাড়া বাইরেটাও সামলাতে হয়। অংশু ওর কথামতো একজন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিল। তার চেম্বারে গিয়ে নিজেদের কথা জানাতে উনি দু’জনেরই প্রশংসা করলেন। কারণ, সন্তানের জন্য পরিকল্পনা করে এগোনোর কথা অনেকেই ভাবেন না।

বিশেষত মেয়েরা চাকুরিজীবী বা কর্মরত হলে হঠাৎ গর্ভধারণের কারণে নানা সমস্যাতেও পড়েন। তাই এই ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিকল্পনা করে এগোতে পারলে অনেক সমস্যাই এড়ানো যায়।
তিয়াশা চিকিৎসককে প্রশ্ন করেছিল, কখন মিলিত হলে সহজেই গর্ভধারণ করা যায়? (How Many Times We Have to Sex to Get Pregnant) কারণ এই সম্পর্কে তিয়াশার কোনও ধারণা ছিল না। চিকিৎসক ওর এই প্রশ্নের উত্তরে গর্ভধারণের বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন।

 

সঙ্গীর সাথে কখন সহবাসে, কখন মিলনে সন্তানধারণের সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি (When Should You Have Sex to Get Pregnant)

#1. মাসিক চক্রে নজর রাখুন (Track Your Menstrual Cycle): মাসিক চক্রই বলে দেয়, কোন সময় একটি মেয়ের শরীর গর্ভধারণে উপযুক্ত। তাই চিকিৎসকরা মাসিক চক্রে নজর রাখার পরামর্শ দেন। মাসিক চক্রের প্রথম সাতদিনের মধ্যেই ঋতুস্রাব হয়ে যায়। এরপর জরায়ু ক্ষয়ে যাওয়া অংশগুলো সেরে উঠতে থাকে। একই সময় ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুও পরিণত হতে থাকে। মাসিক চক্রের ১৪ দিনের মাথায় সবচেয়ে পরিণত ডিম্বাণুটি ডিম্বাশয় থেকে বেরিয়ে ফ্যালোপিয়ান টিউবে আসে। এই প্রক্রিয়াকে ওভিউলেশন বলে।
এই ডিম্বাণুই জননে অংশ নেয়‌। তবে এর মিলন ক্ষমতা মাত্র ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা‌। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, ওভিউলেশনের দু’-একদিন আগেই মিলিত হওয়া উচিত। কারণ মিলিত হওয়ার পর গর্ভে প্রবেশ করা শুক্রাণু পাঁচদিন জীবিত থাকে। ফলে ডিম্বাণু নিঃসৃত হলেই শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয় (Best Time to Get Pregnant After Your Period)।

কীভাবে নজর রাখতে হবে: মাসিক চক্রের দিনসংখ্যা সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না। তাই প্রথমে দু’-তিনটে মাসিক চক্র পরীক্ষামূলকভাবে লক্ষ্য করা উচিত। অনেকের ক্ষেত্রে ওভিউলেশনের দিনটি মাসিক চক্রের ১৪তম দিনে আসে না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৪ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে প্রায় সকলেরই ওভিউলেশন হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়‌। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

 

#2. লক্ষ্য রাখুন সার্ভিক্যাল মিউকাসের ঘনত্বে (Keep An Eye On Cervical Mucus): সার্ভিক্যাল মিউকাসের ঘনত্বের তারতম্য দেখে ওভিউলেটের (ওভিউলেট করার অর্থ ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বেরিয়ে ফ্যালোপিয়ান টিউবে আসা) সময় সহজেই বোঝা সম্ভব। পিরিয়ডস হয়ে যাওয়ার পর দু’-এক দিন ধরে যোনি থেকে ডিমের সাদা অংশের মতো আঠালো পদার্থ নির্গত হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম সার্ভিক্যাল মিউকাস।
প্রথম দু’দিন এই মিউকাস কম পরিমাণে নির্গত হয়। দু’দিনের পর এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। পাশাপাশি মিউকাসটি ক্রিমের মতো ঘন হয়ে ওঠে। পরবর্তী পর্যায়ে মিউকাস ক্ষরণের পরিমাণ অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে মিউকাস এর ঘনত্বও কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওভিউলেশন পর্ব চলে বলেই যোনি থেকে এই পিচ্ছিল পদার্থ ক্ষরিত হয়। শেষ পর্যায়ে যখন মিউকাসের ঘনত্ব কমে যায়, তখনই ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে বেরিয়ে আসে। তাই সার্ভিক্যাল মিউকাসের কম ঘনত্ব ও বেশি পরিমাণে ক্ষরণই সংকেত দেয় মিলিত হওয়ার।

 

#3. সার্ভিক্সের প্রকৃতি (Type Of Cervix): সার্ভিক্স হল গর্ভের সবচেয়ে নীচের দিকের অংশ। এই পথ দিয়েই শুক্রাণু গর্ভে প্রবেশ করে। একই ভাবে এই পথেই ভ্রুণ মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে। সার্ভিক্সের চেহারা মাসিক চক্রের এক একটি পর্বে এক এক রকম থাকে। পিরিয়ডস হওয়ার পর সার্ভিক্সের মুখ ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে খুলে যেতে থাকে। তাই এই সময় সার্ভিক্যাল মিউকাস নির্গত হয়। আবার ওভিউলেশন পর্ব শেষ হওয়ার পর সার্ভিক্সের মুখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়‌। পরবর্তী পিরিয়ডস-এর আগে পর্যন্ত এটি বন্ধই থাকে। প্রকৃতির নিয়মে ওভিউলেট করার সময়ে সার্ভিক্স সবচেয়ে বেশি উন্মুক্ত থাকে। অর্থাৎ এই সময়ে শুক্রাণু সহজেই গর্ভে প্রবেশ করতে পারে।

কীভাবে বোঝা সম্ভব: সার্ভিক্সের চেহারা কখন কেমন তা খুব সহজেই বোঝা সম্ভব। মূত্র ত্যাগ করার সময় বা স্কোয়াট করে বসে যোনিতে আঙুল ঢুকিয়ে বোঝা সম্ভব সার্ভিক্সের মুখ কী অবস্থায় রয়েছে।
স্বভাবতই সার্ভিক্সের মুখ খোলা থাকলে আঙুল অনেকটা প্রবেশ করতে পারে। তবে সার্ভিক্সের হঠাৎই সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হয়, তা নয়। বরং সার্ভিক্স পেশি ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে উন্মুক্ত হয়। আবার ধীরে ধীরে দৃঢ় হয়ে বন্ধ হয়। তাই চিকিৎসকদের মতে, সার্ভিক্সের মুখ কী অবস্থায় আছে রয়েছে তা মাসিক চক্রের প্রতিদিনই নোট করে রাখা উচিত। সার্ভিক্স যখন সবচেয়ে বেশি উন্মুক্ত, তখনই মিলিত হওয়ার উপযুক্ত সময় (Best Time to Conceive Morning or Night)।

 

আরও পড়ুন: সহজলভ্য কিছু খাবারেই বাড়তে পারে সন্তানধারণের সম্ভাবনা। ছবিতে রইল হদিস!

 

#4. শরীরের উষ্ণতা মাপুন (Measure Your Body Temperature): শরীরের উষ্ণতায় চোখ রাখলেই বোঝা সম্ভব ওভিউলেশনের দিনটি। চার-পাঁচ ঘণ্টা ঘুমোনোর পর এই উষ্ণতা মাপতে হয়। মাসিক চক্র শুরু হওয়ার প্রথম দিকে শরীরের উষ্ণতা কম থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ ওভিউলেশন হওয়ার আগে পর্যন্ত কম থাকে। ওভিউলেশনের এক-দু’দিন পর এই উষ্ণতা হাফ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পায়। উষ্ণতা বেড়েছে বোঝার সময় অবশ্য ওভিউলেট করার দিনটি পেরিয়ে গিয়েছে। তবে দিনক্ষণ ঠিকঠাক মনে রাখলে পরের মাসের ওভিউলেশনের দিনটি সহজেই বোঝা সম্ভব।

 

#5. ওভিউলেশন প্রেডিক্টর কিট (Ovulation Predictor Kit): উপরের লক্ষণগুলো থেকে অনেকেই ওভিউলেটের সময়টি বুঝতে পারেন না। তাই চিকিৎসকরা এই কিট ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এই কিটে পরীক্ষার মাধ্যমেই (Best Time to Get Pregnant Calculator) বোঝা সম্ভব ওভিউলেট করার দিনটি কবে আসতে চলেছে।

পরীক্ষা পদ্ধতি: এই কিটের মাধ্যমে মূলত লিউটিনাইজিং হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এই হরমোন ওভিলেটের দিন একজন মেয়ের শরীরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে। কিটে আগে থেকেই একটি নির্দিষ্ট রঙের দাগ দেওয়া থাকে। এই দাগ ওভিউলেশনের সময় লিউটিনাইজিং হরমোনের মাত্রা কতটা থাকা উচিত তা বলে দেয়। পরীক্ষার জন্য কিটে থাকা একটি স্টিকে প্রস্রাব রেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। প্রস্রাবে থাকা লিউটিনাইজিং হরমোনের কারণে নতুন একটি দাগ কিটে ফুটে ওঠে। এই দাগের রং কিটের দাগটির মতো গাঢ় হলে বুঝতে হবে ওভিউলেশনের দিন চলে এসেছে।

ওভিউলেশনের দিন জানলেই গর্ভধারণের সমস্যার সমাধান হয়ে গেল তা কিন্তু নয়। বরং সন্তানের কথা ভেবেই নিজের শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়াও প্রয়োজন। চিকিৎসক তাই বেশ কিছু বিষয়ে সতর্কও থাকতে বললেন তিয়াশাকে।

 

 

সহজে গর্ভধারণের জন্য সহজ কিছু টিপস (Tips to Get Pregnant Soon)

  • মিলিত হওয়ার সময় (Frequency Of Sex): কতদিন অন্তর মিলিত হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, তা নিয়ে পৃথিবীর নানা জায়গায় সমীক্ষা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এক বা দুদিন অন্তর মিলিত হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে (When Can a Woman Get Pregnant After Menstruation)। কারণ ডিম্বাণুর আয়ু ২৪ ঘন্টার বেশি হয় না।
  • ডায়েট নিয়ন্ত্রণ (Diet Control): পরিবারে নতুন সদস্যকে আনতে গেলে তার ভালোমন্দও দেখা জরুরি। মায়ের চেহারা খুব মোটা বা রোগা ভ্রুণের পুষ্টি সঠিক ভাবে হয় না। ফলে গর্ভধারণ সম্ভব হলেও সন্তানের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক নাও হতে পারে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন গর্ভধারণের আগে থেকেই নজর রাখতে হবে শরীরের দিকে।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল (Smoking And Alcohol): ধূমপান ও অ্যালকোহল দুই-ই গর্ভধারণে বাধা দেয়। এমনকী গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের ক্ষতিও করে। ধূমপানের কারণে অক্সিজেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণের পরিকল্পনা থাকলে ধূমপান ও অ্যালকোহল পান দুই তিনমাস আগে থেকেই বন্ধ করা উচিত‌।

 

তিয়াশা আর অংশু দু’জনেই পরের তিনমাস চিকিৎপকের পরামর্শ মতোই চলেছিল। চতুর্থ মাসে তিয়াশা হঠাৎই অসুস্থ বোধ করছিল। চিকিৎসক প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করাতে বলেন। রিপোর্টে অংশুর মনের কথাই ফুটে উঠেছিল। এবার তাদের সংসারে আসতে চলেছে ছোট্ট এক প্রাণ। খবরটা পাওয়া মাত্রই বাড়িতে যেন আনন্দের জোয়ার এল। (When Should You Have Sex to Get Pregnant)

 

আরও পড়ুন: কীভাবে ঠিক রাখবেন শরীর, কীভাবে বাড়বে কনসিভ করার সম্ভাবনা; দেখে নিন একনজরে!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

null

null