১০ মাস+ থেকেই পনির থাকুক পাতে; জেনে নিন পনিরের খাদ্যগুণ ও দারুণ রেসিপি!

১০ মাস+ থেকেই পনির থাকুক পাতে; জেনে নিন পনিরের খাদ্যগুণ ও দারুণ রেসিপি!

দেখতে ধবধবে সাদা হলে কী হবে, গুণমানে কারও থেকে কম যায় না এই দুগ্ধজাত দ্রব্যটি। বাড়ন্ত বাচ্চার সার্বিক পুষ্টিতে সব খাবারের সাথে সাথে পনিরও কিন্তু খাওয়াতেই হবে ওকে! আর বাচ্চার মুখের তার নিয়ে চিন্তা করছেন? এই পনিরের সাথে সামান্য কিছু মিলমিশ করেই সহজেই বানানো যায় স্বাস্থ্যকর এবং মজাদার নানান পদ।
ডাক্তারবাবুদের কথায়, বাচ্চার বয়স ১০ মাস পেরোলেই ওকে পনির দেওয়া শুরু করা উচিত। প্রথমে শুরু করবেন ২টি ছোট্ট টুকরো দিয়ে। তারপর ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াবেন। (Benefits of introducing paneer to babies (with recipes))

পনির খাওয়াতে তো বলছি, কেন বলছি জানেন? পনিরের খাদ্যগুণ সম্পর্কে আপনি ওয়াকিবহাল তো? পনিরের হাঁড়ির খবর আর নানা ধরনের রেসিপি (Paneer Recipes for Babies and Kids) নিয়েই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন।

জেনে নিন বাচ্চাকে পনির খাওয়ানোর উপকারিতা, পনিরের খাদ্যগুণ এবং শিখে নিন নানান লোভনীয় রেসিপি। পনিরের পিউরি হোক বা পনির পোলাও; পনির ফিঙ্গার হোক বা চটপটা পালক পনির, কথা দিচ্ছি বাচ্চা খাবে হাসি মুখে। স্বস্তি পাবেন আপনিও।

 

পনিরের খাদ্যগুণ (Nutritional Benefits of Paneer)

একটি ১০০ গ্রাম পনিরের টুকরোয় এইসব পরিপোষকগুলি থাকে;

  • ক্যালোরি -৭২
  • প্রোটিন- ১৩ গ্রাম
  • কোলেস্টেরল- ৪ মিলিগ্রাম
  • ফাইবার- ১৩১ মিলিগ্রাম
  • ফ্যাট- ১.৪ গ্রাম
  • চিনি- ৩.৩ গ্রাম
  • ভিটামিন বি ১- ২১ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন বি ২- ১৮১ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন বি ৩- ১৪৩ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন বি ৬- ৭১ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন বি ১২- ০.৭ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন এ- ১৯.২ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন ই- ১৩ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন সি- ০.৯ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন কে- ০.৭ মাইক্রোগ্রাম
  • কোলিন- ২০ মিলিগ্রাম

 

বাচ্চাকে পনির কেন খাওয়াবেন? (Paneer Benefits for Toddlers)

বাচ্চাকে নিয়মিত পনির খাওয়ানোর উপকারিতা প্রচুর; যেমন

  • হাড় শক্ত হয় এবং বোন কারটিলেজের স্বাস্থ্য ভালো হয়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
  • পনিরে থাকা প্রোটিন ও ফ্যাট বাড়ন্ত বাচ্চার বিকাশে খুবই সহায়ক।
  • পনিরে ল্যাকটোজের পরিমাণ খুব কম থাকে বলে, যে সব বাচ্চারা ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স বা দুধ যাদের সহ্য হয় না; তাদের জন্যও প্রায় নিরাপদ।
  • ভিটামিন বি, অ্যানটিঅক্সিডেনট এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের গুণে ভরপুর প্রোটিন শিশুকাল থেকেই ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো করে এবং বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
  • ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রোটিনের ভালো উৎস হওয়ায় বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য পনির অপরিহার্য।

 

পুঁচকের পছন্দের পনিরের পদ (Must Try Easy To Make Paneer Recipes For Babies)

 

#1. পনির পিউরি: বাচ্চার বয়স ১০ মাস হলে (When Can I Give Paneer And Cheese To My Baby?) পনিরের সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন এই পদটি দিয়ে।

  • টাটকা পনিরের কিউব করা টুকরো ৪টি, একটি ছোট কলা, ২টি স্ট্রবেরি একটি ব্লেন্ডারে নিয়ে নিন।
  • পেস্টের মতো ঘনত্ব আনার জন্য ওতে মেশান সামান্য জল বা ফর্মুলা।
  • ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন।
  • খাওয়ানোর আগে এর সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন অল্প পরিমাণে বাদাম গুঁড়ো।

 

#2. পালক পনির: ছানার বয়স যদি ১ বছর হয়ে গিয়ে থাকে তা হলে ওকে পালক পনির দেওয়াই যায়। খাবারের নামটা ভারী হলেও বাচ্চার মতো করে বানালে পুষ্টির জোগান দিতে এর জবাব নেই।

  • তাজা, সবুজ পালং শাক জলে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন এবং ভালো করে ধুয়ে নিন।
  • এবার পাত্রে জল ফুটতে দিন। জল ফুটে গেলেই পালং শাকটা জলে ফেলে দিন। শাকগুলো নরম হয়ে নেতিয়ে এলেই সেটা তুলে ঠান্ডা জলে ফেলুন। এতসব গল্প এজন্যই কারণ, এই পদ্ধতি মেনে চললে পালং-এর ঘন সবুজ রং বজায় থাকে। আর আপনার খুদে খাবার মুখে তোলার আগে সেটা যে তাকিয়ে দেখে বেশি সময় কাটায় এটা আপনাকে আর নাই বললাম!
  • এবার শাকটা ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন।
  • প্যানে সামান্য ভেজিটেবল অয়েল বা অলিভ অয়েল গরম করে নিন। তেলে ফেলে দিন গোটা জিরে আর কিছু রসুনকুচি। একটু নেড়ে নিয়ে শাকের পেস্টটা ঢেলে দিন।
  • পরিমাণমতো নুন মেলান এবং ঢাকা দিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন।
  • পনিরের কয়েকটা কিউব হাতে করে গুঁড়িয়ে ঝুরিঝুরি করে নিন এবং শাকে মিশিয়ে দিন। কিছুক্ষণ রান্না করুন।
    ওপর থেকে সামান্য পাতিলেবুর রস ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
  • বাচ্চা যদি দাঁতে কামড়াতে শিখে যায় বা আপনি বাড়ির অন্য সদস্যদেরও পালক পনির খাওয়াতে চান; তা হলে পনির কিউবগুলো গোটা গোটা মেশান; ভাঙার কোনও প্রয়োজনই নেই।

 

#3. ফ্রুটি পনির: পদটা বানাতে ৫ মিনিটও সময় লাগবে না অথচ বাচ্চা খাবে তারিয়ে তারিয়ে। (How to Make Paneer For Babies? )

  • পাকা পেঁপে, কলা, আপেল কুচিয়ে নিন।
  • ২ টুকরো পনির গ্রেট করে নিন।
  • ব্লেন্ডারে সবকিছু একসাথে দিয়ে প্রয়োজনমত জল বা ফর্মুলা দিয়ে মিক্স করে দিন।
  • বাচ্চা একটু বড় হয়ে গেলে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।

 

আরও পড়ুন: হরেক মাছের হরেক রেসিপি। তোমার বাচ্চার সার্বিক পুষ্টিতে বানাতে শুরু করো আজই!

 

#4. পনির ফিঙ্গার: বাচ্চা হাতে কিছু ধরতে শিখেছে, ৯-১০ মাস বয়স হয়ে গেছে ওর (Paneer Recipes for 10 Months Baby)। এখনই সময় ওকে নানা ধরনের পুষ্টিকর “ফিংগার ফুড” বানিয়ে দেওয়ার। পনির দিয়ে কিন্তু দারুণ ফিংগার ফুড বানাতে পারেন। বাচ্চা নিজে হাতেই খাক না পনিরের এই পদটা।

  • টাটকা পনির আঙুলের মতো লম্বা লম্বা করে কেটে নিন।
  • প্যানে অল্প বাটার গরম করে নিন।
  • এবার পনিরগুলো ওই বাটারে এপাশ-ওপাশ উল্টে ভেজে ফেলুন।
  • পনিরের দুদিকটাই সোনালি হয়ে ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।
  • বাটারে কিছুটা নুন থাকেই; তাই আর আলাদা করে নুন না দেওয়াই ভালো।
  • একটু ঠান্ডা করেই খেতে দিন আপনার কুচোকে।

 

#5. পনির ওমলেট: হ্যাঁ, বাচ্চাদের বাহারি খাবার নিয়ে কথা বলছি, ওমলেট না থাকলে চলে? এর আগের প্রতিবেদনে বলেছিলাম “রঙিন ওমলেটের” কথা; আজ বানাবো পনির ওমলেট। ব্রেকফাস্ট হোক বা বিকেলের টুকটাক; জমে যাবে বাচ্চার পাত। (Simple Paneer Recipes for Babies)

  • পনির গ্রেট করে নিন।
  • পেঁয়াজ কুচিয়ে কেটে নিন। বাচ্চা যদি ঝাল খায় অল্প লংকাকুচি দিলেও কোনও ক্ষতি নেই।
  • প্যানে তেল গরম করে নিন। ওতে পেঁয়াজকুচি আর লঙ্কাকুচি দিয়ে দিন। একটু নাড়াচাড়া করে গ্রেট করা পনিরটা ঢেলে দিন।
  • এক মিনিট মতো রান্না করে গ্যাস অফ করে দিন। পনির ভেজে নেওয়ার দরুন অমলেটের মধ্যে পনিরের কাঁচা গন্ধ পাবে না খুদে।
  • এবার অন্য পাত্রে ডিম, অল্প নুন, জিরে গুঁড়ো, গোলমরিচ গুঁড়ো নিয়ে ভালো করে ফেটান। পেঁয়াজ আর পনিরের ভেজে রাখা মিশ্রণটা মিলিয়ে দিন এর মধ্যে। আবার ভালো করে মেশান।
  • এবার প্যান গ্যাসে বসিয়ে ওমলেট যেভাবে বানান, বানিয়ে ফেলুন।

 

#6. পনির ভেজিস ফ্রাই: এই পদটাও ভারী রংচঙে কিন্তু। মজাদার ফিংগার ফুড হিসেবে দিব্যি দিতে পারেন বাচ্চাকে। ১ বছর হয়ে গেলেই হল (Paneer Recipes for 1 Year Old Baby)! বানানোও খুব সোজা। দেখে নিন ঝটপট!

  • গাজর, বিন্স, ফুলকপি, মটরশুঁটি, মিষ্টি আলু, পেঁপে, ক্যাপ্সিকাম ইত্যদি যা কিছু বাচ্চাকে দিতে চান, সরু সরু করে কেটে কুকারে জল আর এক চিমটে নুন দিয়ে একটা সিটি দিয়ে সেদ্ধ করে নিন।
  • এবার সেদ্ধ হওয়ার পরে জলটা ঝরিয়ে নিন।
  • প্যানে অল্প বাটার গরম করুন। ওতে পেঁয়াজকুচি, রসুনকুচি ও আদাকুচি দিন। একটু ভাজা হয়ে গেলে সেদ্ধ সবজিগুলো দিয়ে ঢাকা দিয়ে একটু রান্না করুন।
  • পনির কিউবের আকারে কেটে বা গ্রেট করে মেশান। প্রয়োজনমতো নুন আর গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন।
  • প্লেটে সাজিয়ে বাচ্চাকে খেতে দিন। নিজেও খেতে পারেন স্বাস্থ্যকর এবং কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার হিসেবে।
    এই খাবারটাই একটু এদিক ওদিক করে সাজিয়ে দিতে পারেন পনির ভুরজি হিসেবে। (Paneer Finger Foods for Baby)

 

#7. ভুট্টা ও পনির পোলাও: বাচ্চা বলে রোজ একঘেয়ে খাবার খাবেই বা কেন আর আপনি দেবেনই বা কেন! মুখ বদলে খাবার দিলে ওদের খাবারের প্রতি আগ্রহ জন্মায় আর বায়নার বহরও অনেকটা কমে। লাঞ্চে বা ডিনারে এই বিশেষ পোলাওটা বানিয়ে দেখতে পারেন কিন্তু!

  • পোলাও-এর চাল ভালো করে ধুয়ে ২০ মিনিট মতো ভিজতে দিন। আপনি ততক্ষণে অন্য কাটাকাটি, বাটাবাটিগুলো সেরে ফেলুন।
  • একটা লবঙ্গ,এলাচ,দারচিনি, গোটা গোলমরিচ, পুদিনা পাতা কয়েকটা, ধনে পাতা কয়েকটা, ৪/৫ কোয়া রসুন, আদা ১/২ ইঞ্চি টুকরো, ৪-৫ টা কাজু, একটা টম্যাটো, ২টি লঙ্কা; এইসবকিছুর একটা পেস্ট বানিয়ে নিন।
  • প্রেসার কুকারে ঘি গরম করে নিন। গোটা জিরে, তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি ফোড়ন দিন।
  • পেঁয়াজকুচি দিয়ে দিন এবং একটু ভাজা ভাজা করে নিন। এরপর যে পেস্টটা বানালেন সেটা দিয়ে দিন এবং কাঁচা গন্ধ না চলে যাওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
  • এবার ভুট্টাদানা ও দই মেশান। কিছুক্ষণ রান্না করুন।
  • চালটা দিয়ে দিন এবং ভালো করে মিক্স করুন।
  • এবার পনিরের টুকরোগুলো দিয়ে দিন এবং প্রয়োজনমতো নুন দিন।
  • কুকারের ঢাকা লাগিয়ে তিনটে সিটি হওয়া অবধি অপেক্ষা করুন।
  • যতক্ষণ না ভাপ খুলছে, তড়কা বানিয়ে নিন।
  • একটা ছোট পাত্রে ঘি গরম করে ওতে তেজপাতা ও গোটা জিরে ফোড়ন দিন। অসুবিধা না থাকলে দিতে পারেন একটা শুকনো লঙ্কাও। ফোড়ন তৈরি হয়ে গেলে পোলাও এর ওপর ঢেলে দিন। চামচ দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে নিন।
    বাচ্চার বয়স বিচার করে ওকে খাবার বানিয়ে দেবেন। পনির প্রথম খাওয়ানোর পরে ৩ দিন ওর শরীর ও পটিতে কোনও পরিবর্তন আসছে কি না লক্ষ্য রাখবেন। একদম অল্প পরিমাণে খাওয়াতে শুরু করবেন ও ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াবেন। শরীরে কোনও অস্বস্তি হলে বা ওর যদি দুধ সহ্য না হয়; তা হলে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে নেবেন। (Benefits of introducing paneer to babies (with recipes))

 

আরও পড়ুন: ছোট্ট ছানার জন্য সহজ-স্বাস্থ্যকর ১০ ধারার খিচুড়ির রেসিপি!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

 

null

null