ওভ্যুলেশন-চক্র নিজেই বোঝার চেষ্টা করুন। তবেই আরও দ্রুত গর্ভধারণ করতে পারবেন আপনি!

ওভ্যুলেশন-চক্র নিজেই বোঝার চেষ্টা করুন। তবেই আরও দ্রুত গর্ভধারণ করতে পারবেন আপনি!

“কোথায় গেল স্টাডি টেবিলের ওপর রাখা টেবিল ক্যালেন্ডারটা?” ঘরময় হাতড়ে পাগলের মতো খুঁজে চলেছে রাজন্যা। বর উদ্দীপ্ত এসেছিলো কী হয়েছে জানতে, বউয়ের তাড়া খেয়ে বাথরুমে আপাতত গা ঢাকা দিয়েছে বেচারা। উদ্দীপ্ত কিছুতেই বুঝতে পারছে না যে, ঘরে আরও হাজারটা ক্যালেন্ডার থাকা সত্ত্বেও রাজন্যার ওটাই কেন চাই!আপনারা নিশ্চয় একটু আন্দাজ করতে পারছেন ওই ছোট্ট ক্যালেন্ডারের ভূমিকা। তাই তো? আসলে, আমাদের অনেকের মতোই রাজন্যা সেই ‘ভুলোমনা’ এক মেয়ে। অফিসে ফাইলের গুঁতো আর বাড়িতে সংসারের চোখপাকানো খেতে খেতে যার নিজের পিরিয়ডস বা মাসিক হওয়ার দিনটা আর মনে থাকে না। ওর ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার একমাত্র উপায় ওই ক্যালেন্ডারে করা গোল গোল দাগগুলি। প্রত্যেক মাসে ওই ক্যালেন্ডারেই পিরিয়ডস শুরু ও শেষের দিনের তারিখ দুটো ঘিরে একখানা করে গোল্লা আঁকে সে। ভাবছেন তো, নিতান্তই যদি ক্যালেন্ডারখানা হারিয়ে যায়, কী আর হবে? বাইরে গেলে ব্যাগে না হয় সর্বক্ষণ একটা স্যানিটারি প্যাড রেখে দেবে, পিরিয়ডস হলে আবার অন্য ক্যালেন্ডারে দাগ দেবে। (Signs and symptoms of ovulation in Bangla, ovulation hochhe bhujhben kibhabe, ovulation ba dimbosfoton ki, ki kore bujhben dimbopat hochhe.Ovulation-signs and symptoms in Bengali.)

কিন্তু গপ্পোটা যে এতো সহজ নয়। রাজন্যা আর উদ্দীপ্ত এবার মা-বাবা হতে চায় খুব শিগগির। মাস তিনেক হল সেই প্ল্যানিং মতোই ওরা মেলামেশা করছে। ওদের ডাক্তারবাবুটি পইপই করে কানে কামড়ে বলে দিয়েছেন ,“কনসিভ করতে হলে মাসিক চক্রের ১২-১৯ দিনের মধ্যে অতি অবশ্যই সহবাস প্রয়োজন, কারণ ওই সময়েই তোমার ওভ্যুলেশন হবে”। আর এই ওভ্যুলেশনের দিনগুলো হিসেব করার জন্যই রাজন্যা একটা ক্যালেন্ডারের জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে।

 

বন্ধ্যাত্ব এড়াতে ওভ্যুলেশন বা ডিম্বোস্ফোটন সম্পর্কে ধারণা রাখুন (Ovulation Calculator & Calendar- Determine Your Most Fertile Days)

 

আমাদের শরীরের মধ্যে সময়বিশেষে যে পরিবর্তনগুলো ঘটে, সেগুলো নিয়ে আমাদের অনেকেরই সঠিক ধ্যানধারণা থাকে না। তাই ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে তার বিচার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অথৈ জলে পড়ি অনেক সময়ই। শরীর কিন্তু তার নিজের মতো করে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করে। আমরা হয় সেটা বুঝতে পারি না বা অজান্তে তাকে গুরুত্ব দিই না। ওভ্যুলেশনের সময়েও কিন্তু শরীর নানাভাবে সিগন্যাল দেয়, এবং ১-২ দিন ধরে। শরীরের মধ্যে ঘটা কার্যকলাপ বুঝি না বলেই ওই সিগন্যালগুলো ধরতে পারি না আমরা। নিজেদের শরীরকে বুঝলে কিন্তু কোনও ক্যালেন্ডার, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা ওভ্যুলেশন কিটের সেরকম প্রয়োজন পড়ে না। কীভাবে বুঝবেন যে আপনার কখন ওভ্যুলেশন হচ্ছে বা এর লক্ষণ কী কী? এই নিয়েই আজকের প্রতিবেদন। দেখে নিন একনজরে।

 

ওভ্যুলেশন কী? মাসের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মহিলাদের ডিম্বাশয় থেকে একটি পরিণত এগ বা ডিম্বাণু বা ওভাম নির্গত হয়। একেই ওভ্যুলেশন বলে।

 

ওভ্যুলেশন কখন হয়? সাধারণত, একটি নির্দিষ্ট মাসিক চক্রের ১২-১৯ দিনের মধ্যে ওভ্যুলেশন হয়ে থাকে। তবে, সবার শরীর সমান হয় না তাই, এই সময়েরও এদিক-ওদিক হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

 

ওভ্যুলেশনের সময়সীমা: ওভারি বা ডিম্বাশয় থেকে নির্গত ওভাম মোটামুটি ১২-২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে।

 

ওভ্যুলেশনের গুরুত্ব কতখানি? একটি পরিণত ওভাম মহিলার দেহে প্রায় ১২-২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকে। এই সময় যদি ফ্যালোপিয়ান টিউবে উপস্থিত শুক্রাণু বা স্পার্ম এই ওভামকে নিষিক্ত করে, তবেই ভ্রূণ তৈরি হয়। যারা কনসিভ করার প্ল্যান করছেন, তাদের সেজন্য এই সময়ে নিয়মিত সহবাস করতে বলা হয়। ওভামের আয়ু একদিন বা ২৪ ঘণ্টা হলেও শুক্রাণু (sperm) মহিলার দেহে ৩-৬ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাই ওভাম নিঃসরণের ৪-৫ দিন আগেও যদি কেউ প্রোটেকশন ছাড়া শারীরিক ভাবে মিলিত হয়ে থাকে, তা হলে কনসিভ করার সম্ভাবনা বাড়ে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি ওভাম নিষিক্ত না হয় , তা হলে সেটি নষ্ট হয়ে যায়।

 

আরও পড়ুনঃ বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে আগে থেকে আঁচ পাওয়ার উপায় আছে কি?

 

 

ওভ্যুলেশন হওয়ার লক্ষণগুলি কী কী? (Signs and Symptoms of Ovulation)

সবার ক্ষেত্রে যে এইসব লক্ষণগুলি বোঝা যাবে, এমন কিন্তু কোনও কথা নেই। সবার শরীর অনুযায়ী সব উপসর্গের ধরন ও প্রাবল্য আলাদা হয়। সাধারণত, একজন মহিলার শরীরে ওভ্যুলেশন হওয়ার সময় যে যে লক্ষ্মণ দেখা যায়, সেগুলি হল;

 

#1. ওভ্যুলেশন পেন: তলপেটের একদিকে ব্যথা হতে পারে। প্রত্যেক মাসে যে একই দিকে ব্যথা হবে, এমন কোনও কথা নেই। যে কোনও একদিকে চিনচিনে একটা ব্যথা হতে পারে। একে সহজ কথায় ওভ্যুলেশন পেন বলা হলেও এর পোশাকি নাম মিটেলসমারজ (Mittelschmerz)। এই ব্যথা কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা হতে পারে।

 

#2. যোনিস্রাবে পরিবর্তন: ওভ্যুলেশনের সময় শরীর বেশি মাত্রায় ইস্ট্রোজেন তৈরি করতে থাকে। এর ফলে সারভিকাল মিউকাস আরও স্বচ্ছ এবং পিচ্ছিল হয়ে যায়। অনেকটা এগ হোয়াইটের মতোই। এরকম হওয়ার মূল কারণ, তখন সহবাস করলে যাতে স্পার্ম সহজেই ওভামের কাছে পৌঁছে যেতে পারে।

 

#3. গন্ধকাতর নাক: অনেকেরই এই সময় সবকিছুতে বেশি গন্ধ লাগে। নাক যেন ওভ্যুলেশনের সময়ই বেশি সক্রিয় হয়ে পড়ে।

 

#4. স্পর্শকাতর ব্রেস্ট: ব্রেস্ট ও নিপল সংবেদনশীল হয়ে যায়। হরমোনের ওঠাপড়ার কারণেই এমন হয়ে থাকে। ব্রেস্ট-এ সামান্য ব্যথাও হতে পারে।

 

#5. অধিক মাত্রায় শারীরিক চাহিদা: ওভ্যুলেশনের সময় অনেক মহিলারই শারীরিক চাহিদা বেড়ে যায়। আপনি যদি কনসিভ করার প্ল্যান করছেন, তা হলে এর থেকে ভালো তো আর কিছুই হয় না।

 

#6. শরীরের তাপমাত্রায় হেরফের: শরীরের তাপমাত্রাতেও (Basal body temperature) হেরফের লক্ষ্য করা যায় ওভ্যুলেশনের সময়। যদিও তা খুব একটা উল্লেখযোগ্য নয়।

 

#7. সারভিক্স বা জরায়ুর গ্রীবা খুলে যাওয়া: সারভিক্স তুলনামূলক নরম হয়ে যায়। সারভিক্স যেন বেশি খুলে গেছে এরকম অনুভূতিও হতে পারে।

 

#8. ভাল্ভা ও ভ্যাজাইনা অল্প ফুলে ওঠা: ওভ্যুলেশনের সময় ভাল্ভা ও ভ্যাজাইনা কিছুটা হলেও ফুলে ওঠে।

 

 

বিশেষ কিছু টিপস:

 

  • পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম, ওভারিতে ছোট ছোট সিস্ট বা টিউমার থাকলে ওভ্যুলেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

 

  • বিশেষ কিছু ওষুধের প্রভাবে ওভ্যুলেশনে সমস্যা হতে পারে।

 

  • সবার শরীর আলাদা, তাই সবার ক্ষেত্রে ওভ্যুলেশনের সমস্ত লক্ষণ একইরকম নাও হতে পারে। নিজের শরীর নিজে বোঝার চেষ্টা করুন।

 

  • শরীরে কোনও অসুবিধা বুঝলে বা নিজের শরীর আরও ভালোভাবে বুঝতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

 

  • প্রয়োজন হলে আপনি ভালো কোম্পানির ওভ্যুলেশন কিট ব্যবহার করতে পারেন নির্দ্বিধায়। ব্যবহারের আগে ভালো করে নিয়মকানুন পড়ে নিন।

 

  • চিন্তামুক্ত থাকুন, আনন্দে থাকুন।

 

 

আরও পড়ুনঃ সন্তানধারণে অক্ষমতা? নারীই একা দায়ী নয় সবসময়!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null