মেঘার ছোট্ট ছেলের বয়স এখন আটমাস। ওর ডাকনাম সোনু। সলিড খাবারে মোটামুটি অভ্যাস হয়েই গেছে সোনুর। মেঘাও প্রায়ই ওর জন্য নতুন রেসিপি বানানো শিখছে। তবে গতকাল থেকে ছোট্ট সোনু পেটের সমস্যায় ভুগছে। গতকালের মতো আজও ওর প্রচণ্ড শক্ত পায়খানা হয়েছে। মেঘা ঠিক করল এই ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সোনুর চিকিৎসককে সবটা জানাতেই উনি তখনের মতো কিছু ওষুধ বলে দিলেন। এরপর মেঘাকে পরামর্শ দিলেন খুদেকে ওটস্ খাওয়ানোর। (The ultimate guide to oatmeal Benefits, Risks and Recipes for Babies)
ওটস্-এর নাম শুনলেও মেঘা এর উপকারিতা সম্পর্কে জানত না। ও জিজ্ঞেস করলো, ওটস্ খুদের জন্য কেন প্রয়োজনীয় যদি বলেন, খুব ভালো হয়। চিকিৎসক ওটস্-এর বেশ কিছু গুণাগুণের কথা মেঘাকে জানালেন (Health Benefits of Eating Oats and Oatmeal)।
#1. কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়: যেসব শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় প্রায়ই ভোগে, তাদের জন্য ওটস্ খুবই উপকারী। জলে গুলে যায় এবং গোলে না— দুই রকম ফাইবারই এতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এই কারণে ওটস্ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যও সহজে হয় না।
#2. পুষ্টিদ্রব্যে সমৃদ্ধ: একশো গ্রাম ওটস্-এ থাকে ১৭ গ্রাম প্রোটিন ও সাত গ্রাম ফ্যাট। এছাড়াও এতে রয়েছে বেটাগ্লুকোন নামক ফাইবার। বিশেষজ্ঞদের কথায়, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ ওটস্ থেকেই পাওয়া সম্ভব। (Oats for Babies – Health Benefits, Nutritional Content & Recipes)
#3. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-এ সমৃদ্ধ: শিশুর ছোট্ট শরীরের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে তৈরি হওয়া ‘ফ্রি রাডিক্যাল’গুলোকে নষ্ট করে। ‘ফ্রি রাডিক্যাল’ কমলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, ওটস্-এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই কারণেই সকালের জলখাবারে এটি শিশুদের জন্য উপযুক্ত খাবার (Oats Benefits)।
#4. শক্তি: ছোট্ট সোনার বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে শক্তি: ১০০ গ্রাম ওটস্-এ রয়েছে ৪০০ কিলো ক্যালোরি শক্তি। এই শক্তিই খুদেকে দুষ্টুমির জন্য প্রয়োজনীয় এনার্জি জোগায়।
#5. হজমে সাহায্য করে: ওটস্ খুদের বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এতে সহজে হজম হয় না, এমন কোনও খাবারও ওটস্-এর উপস্থিতিতে সহজে হজম হয়ে যায়। এ কারণে চিকিৎসকরা খুদেকে ওটস্ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।
ওটস্-এর যেমন উপকারিতা অনেক, তেমনই এর কিছু আশঙ্কার দিকও রয়েছে (Disadvantages of Oats)। চিকিৎসক সেগুলোও মেঘাকে জানিয়ে রাখলেন।
#1. অ্যালার্জি: ওটস-অ্যালার্জি অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তাই ওটস খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলেন।
লক্ষণ: ওটস-অ্যালর্জির কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে। যেমন সর্দি, খাবার বমি করে দেওয়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। ছোট্ট সোনার অ্যালার্জি থাকলে এর মধ্যে যে কোনও লক্ষণই ফুটে উঠতে পারে। এছাড়াও অনেক শিশুর ক্ষেত্রে ত্বকে লাল লাল র্যাশও হয়। (Side Effects of Oats for Babies)
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওটস্ খাওয়ানোর আগে প্রথমে এটি অল্প পরিমাণে খাইয়ে দেখতে হবে। ছোট্ট সোনার যদি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া না-হয়, তবেই ওকে ওটস্-এর রেসিপি বানিয়ে দিন। অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হলে দেরি না-করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
#2. সঠিক ওটস্: খুদের জন্য ওটস্ বাছার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। (Baby Oatmeal vs Regular Oatmeal) বিশেষজ্ঞদের কথায়, গ্লুটেন ফ্রি, রোলড ওটস্-ই শিশুর জন্য বেছে নেওয়া ভালো।
#3. সিদ্ধ করুন: ছোট্ট সোনার জন্য ওটস্ বেশি সময় ধরে সিদ্ধ করে নেওয়াই ভালো। খুদে খাদ্যতন্ত্র প্রাপ্তবয়স্কদের মতো পরিণত নয়। বেশি থাকলে সিদ্ধ থাকলে ওর হজমে সুবিধা হয়। চিকিৎসকরা বলেন, ওটস্-এর কোনও রেসিপি করার আগে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নেওয়া ভালো। (How to Give Baby Oatmeal for Baby Food)
আরও পড়ুন: পুষ্টিগুণে ভরপুর পদ্মের বীজ মাখানা! জেনে নিন উপকারিতা ও রেসিপি
উপকারিতা, অপকারিতা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা দিয়ে চিকিৎসক সোনুকে ওটস খাওয়ানোর পরামর্শই দিলেন। ইউটিউব ঘেঁটে খুদে-স্পেশাল কিছু রেসিপি (Baby Oatmeal ) শিখে নিতেও বললেন তিনি। সেই রেসিপিগুলোই এখন রপ্ত করেছে মেঘা, আপনাদের সুবিধায় মেঘার কথামতো ছবিতে সাজিয়ে দিলাম আমরা। (The ultimate guide to oatmeal Benefits, Risks and Recipes for Babies)
আরও পড়ুন: পুষ্টিগুণে ভরা বার্লি থাক শিশুর পাতে। ঝালিয়ে নিন ৭ রেসিপি
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null