৬ মাসের কম বয়সি শিশুর ডায়াবেটিস বা মধুমেহ; বিরল হলেও এ রোগের হানা অসম্ভব নয়!!

৬ মাসের কম বয়সি শিশুর ডায়াবেটিস বা মধুমেহ; বিরল হলেও এ রোগের হানা অসম্ভব নয়!!

নিওনেটাল ডায়াবেটিস; খটমট নামটি শুনেই আশা করি বুঝতে পারছেন যে, সাধারণ ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ এইটি নয়। যদিও, সাধারণ মধুমেহ বা ডায়াবেটিস কিন্তু মোটেই সাধারণ নয়; বহু মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে কিন্তু এই তথাকথিত ‘সাধারণ’ রোগটি তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় রোগীকে। যেহেতু বহু মানুষই এই ডায়াবেটিসের খপ্পরে পড়ে থাকেন, তাই একে আজকাল ‘সাধারণ রোগ’ বা ‘Common disease’ বলা হয়। নিওনেটাল ডায়াবেটিস রোগটির কথা সাধারণভাবে শোনা যায় না। সাধারণত, বিরল প্রকৃতির এই ডায়াবেটিস আক্রমণ করে ৬ মাসের কম বয়সি শিশুদের। হ্যাঁ, একদম ঠিক পড়লেন; ৬ মাসের কম বয়সি শিশুকে যদি ডায়াবেটিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়, তা এই নিওনেটাল ডায়াবেটিসের কারণেই হয়ে থাকে। রোগটি বিরল হলেও অস্বাভাবিক নয় একেবারেই। আসুন জেনে নিই, নিওনেটাল ডায়াবেটিসের হাঁড়ির খবর। (Neonatal Diabetes – Types, Symptoms, Treatment and Complications. Neonatal diabetes in Bangla)

আরও পড়ুনশিশুর হাঁপানি জনিত সমস্যা; লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা

কেন হয় নিওনেটাল ডায়াবেটিস (Reason behind Neonatal Diabetes)

শরীরে জিনের মিউটেশনের কারণে নিওনেটাল ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।

নিওনেটাল ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ (Types of Neonatal Diabetes)

নিওনেটাল ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়ে থাকে।

  • ট্রানসিয়েন্ট নিওনেটাল ডায়াবেটিস মেলিটাস (Transient Neonatal Diabetes Mellitus)
  • পার্মানেন্ট নিওনেটাল ডায়াবেটিস মেলিটাস (Permanent Neonatal Diabetes Mellitus)

এই দুই ধরনের নিওনেটাল ডায়াবেটিসের মধ্যে ট্রানসিয়েন্ট নিওনেটাল ডায়াবেটিস মেলিটাস বা TNDM, সঠিক চিকিৎসায় থাকলে সাধারণত বাচ্চার জন্মের এক বছরের মধ্যেই সেরে যায়। যদিও ভবিষ্যতে শিশুটির যৌবনে এর ফিরে আসার ভালোরকম সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে, পার্মানেন্ট নিওনেটাল ডায়াবেটিস মেলিটাস বা PNDM যে শিশুটির হয়, তাকে সারাজীবন ডায়াবেটিক হয়েই কাটাতে হয় এবং চিকিৎসাধীন থাকতে হয়।

কেন এই রোগকে বিরল বলা হয় (Why is Neonatal Diabetes rare?)

৩০০,০০০ বা ৪০০,০০০ শিশুর মধ্যে হয়তো ১ জনের এই নিওনেটাল ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। নিওনেটাল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশের ট্রানসিয়েন্ট NDM থাকে।

নিওনেটাল ডায়াবেটিসের উপসর্গগুলি কী কী (Symptoms of Neonatal Diabetes)

  • বাচ্চার গলা বারবার শুকিয়ে যায় বলে বাচ্চা অস্বস্তিতে কাঁদতে থাকে।
  • শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায় বা শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়।
  • বার বার প্রস্রাব করে।

কীভাবে চিকিৎসা করা হয় এই রোগের (Treatment of Neonatal Diabetes)

ব্লাড গ্লুকোজ পরীক্ষা করে এই রোগ শনাক্ত করা হয়। চিকিৎসকেরা প্রথমে এমন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করেন, যে ওষুধের প্রভাবে প্যাঙ্ক্রিয়াস থেকে বেশি পরিমাণ ইনসুলিন নিঃসরণ হয়। নিওনেটাল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুটির যদি এই জাতীয় ওষুধে কোনও কাজ না হয়,তা হলে তাকে বাইরে থেকে ইনসুলিন দেওয়া হয়। ট্রানসিয়েন্ট নিওনেটাল ডায়াবেটিস মেলিটাসের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস সেরে গেলে ওষুধ খাওয়ার বা ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। আর যারা পার্মানেন্ট নিওনেটাল ডায়াবেটিস মেলিটাসে আক্রান্ত তাদের সারাজীবনই নিয়মিত ওষুধ বা ইনসুলিন নিতে হয়।

নিওনেটাল ডায়াবেটিসের কারণে কী কী ক্ষতি হতে পারে? (Possible complications of having Neonatal Diabetes)

যেহেতু জিনের মিউটেশনের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে, তাই এই রোগ শরীরের অন্যান্য অংশেও ভালো রকম প্রভাব ফেলে। নিওনেটাল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর যেসব শারীরিক সমস্যা হতে পারে, তা হল;

  • কম ওজন
  • দুর্বল শরীর
  • বাড়-বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং পেশী মজবুত ভাবে গড়ে ওঠে না।
  • মৃগী বা খিঁচুনি রোগ
  • ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (Diabetic Ketoacidosis (DKA))
  • স্বাভাবিক শিশুদের জিভের থেকে বড় জিভ। একে ম্যাক্রোগ্লসিয়া(Macroglossia) বলে।
  • কিডনি, হৃদযন্ত্র বা চোখের ক্ষতি হতে পারে।

আরও পড়ুন: সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুর পরিচর্যায় টিপস!

নিওনেটাল ডায়াবেটিস যে বিরল, তাতে সন্দেহ নেই। আবার, কারও যে হতেই পারে না, সেটাও তো আমরা জোর গলায় বলতে পারি না। তাই না? দুঃখের বিষয়, এই ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার মতো কোনও সমাধান এখনও আবিষ্কার করা যায়নি। সাধারণত ৬ মাসের কম বয়সি বাচ্চাদেরই এই নিওনেটাল ডায়াবেটিস ধরা পড়লেও ক্ষেত্র বিশেষে কিন্তু ৬ মাস বেশি বয়সি বাচ্চাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। বাচ্চারা যেহেতু নিজের শারীরিক অস্বস্তির কথা বলে বোঝাতে পারে না, তাই বাচ্চার অস্বাভাবিক যে কোনও আচরণ বা অস্বস্তির মর্মোদ্ধার করতে হবে আপনাকেই। প্রয়োজন বুঝলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখান এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করান। ট্রানসিয়েন্ট নিওনেটাল ডায়াবেটিস মেলিটাস সেরে যাওয়ার পর, শিশু ১৫-১৬ বছরের হয়ে গেলে নিয়মিত তার ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করান, কারণ ডায়াবেটিসের ফিরে আসার একটা সম্ভাবনা থাকে। সঠিক চিকিৎসায় থাকলে এবং নিয়মে জীবন কাটালে, যতই বিরল রোগ হোক না কেন, তার সাথে লড়াই করা সম্ভব। তাই ভয় পাবেন না। শুধু শিশুর কোনও রোগ না চেপে বা না লুকিয়ে ডাক্তারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকুন। আপনার সন্তান আরাম করে দুধে ভাতেই কাটাবে একটা স্বাভাবিক জীবন। (Neonatal diabetes in Bangla)

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null