যাই বলুন আর তাই বলুন; মা হওয়া যতই সুখের হোক, যতই আনন্দের হোক, এর রাস্তাটা কিন্তু বড্ড চড়াই-উতরাইয়ে ভরপুর। চোদ্দবার বাথরুম ছোটা, শুতে বসতে অস্বস্তি, চারদিকে খিটখিটে ব্যথা-বেদনাতো লেগেই রয়েছে। আবার এর সাথে ফাউ হিসেবে আসে মর্নিং সিকনেস বা সকাল বেলার অস্বস্তি। নামটা যতই শৌখিন হোক না কেন, বাস্তবে এই মর্নিং সিকনেস অত্যন্ত জ্বালাতন করা একটি উপসর্গ। হ্যাঁ, প্রেগন্যান্সির অন্যতম একটি উপসর্গ হল এই মর্নিং সিকনেস। সকালে উঠেই গা বমি বমি ভাব, ক্লান্ত লাগা, বমি হওয়া; এই সবকিছুকেই পোশাকি ভাষায় আমরা ‘মর্নিং সিকনেস’ বলে থাকি। (Nausea And Vomiting During Pregnancy)
প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক পর্যায়ে, কনসিভ করার ৫-৬ সপ্তাহ পর এই গা গুলানো, বমি হওয়া ইত্যাদি শুরু হয়। ৮-৯ সপ্তাহের সময় এই মর্নিং সিকনেস হবু মাকে সবথেকে বেশি কষ্ট দেয়। সাধারণত, প্রেগন্যান্সির ১৪-তম সপ্তাহের পরে এই উপসর্গগুলি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। যদিও, এই সময়ের রকমফের একেকজনের একেক রকম হয়ে থাকে। মাথা ঘোরা, ক্লান্তি বা গা গুলানো ভাব, সকালে ওঠার পর সবথেকে বেশি হলেও বমি দিনের যে কোনও সময় হতে পারে। কারও ক্ষেত্রে এই মর্নিং সিকনেস খুব বেশি হয় আবার কারও কম। হবু মায়েদের সকালগুলো তো আর এরকম বমিভাব বা ক্লান্তি দিয়ে শুরু হতে দেওয়া যায় না। জানেন কি, কিছু ঘরোয়া টোটকাই কিন্তু কমিয়ে দিতে পারে মর্নিং সিকনেসের অত্যাচার। দেখে নিন একনজরে।
সকালে উঠে এক গ্লাস জলে একটা পাতিলেবুর রস নিংড়ে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে খান। গা বমি ভাব হলে একটা লেবু গ্রেট করে নিয়ে সেই গন্ধটা নিন। লেমন এসেনশিয়াল অয়েল বা ল্যাভেন্ডার অয়েল কয়েক ফোঁটা নিজের রুমালে দিয়ে রাখুন। গা গুলিয়ে উঠলে রুমাল মুখে চেপে সেই গন্ধটা নিন। দিনের মধ্যে যে কোনও সময় খেতে পারেন কমলালেবুর রসও।
আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম- উপকারিতা আর সাবধানতা!
একটা ছোট্ট আদা কুচি মুখে ফেলে রাখলে গা বমি ভাব কমে যায়। আদা গ্রেট করে জলে ফুটিয়ে, তাতে মধু মিশিয়ে বানিয়ে নিন আদা চা। দিনে ১-২ কাপ এই আদা চা খেলে মর্নিং সিকনেস থেকে আরাম পাবেন অবশ্যই। এক চামচ মধুতে ৫-৬ ফোঁটা আদার রস দিয়ে ঢক করে খেয়ে ফেলুন সকালে উঠেই।আরাম পাবেন সারাটা দিন।
সারাদিনে অন্তত ৮ গ্লাস জল খান। এতে শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকবে আবার মর্নিং সিকনেসও কম হবে।
দারচিনি জলে ফুটিয়ে ঢিমে আঁচে রেখে দিন মিনিট দশেক। ঠান্ডা হয়ে গেলে মধু মিশিয়ে খান। গা গুলালেই আপনি এই দারচিনি জল খেতে পারেন। এতে হজমশক্তিও বাড়ে।
এই ভিনিগার শরীরের pH ব্যালান্স ঠিক রাখে এবং পেটে অ্যাসিডের মাত্রা কম করে। ঈষদুষ্ণ জলে এক চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ও মধু মিশিয়ে খান। মর্নিং সিকনেস অনেক কমে যাবে।
হঠাৎ গা গুলিয়ে উঠলে মৌরি বা লবঙ্গ চিবিয়ে নিন। তৎক্ষণাৎ আরাম পাবেন। খেতে পারেন মৌরি চা।আবার জিরাও বমি ভাব দূর করতে বেশ পারদর্শী। ফুটন্ত জলে এক চামচ জিরা ফেলে দিন এবং কিছুক্ষণ ফুটতে দিন। দিনে ২-৩ বার এই জিরা চা খান।
আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থার প্রথম দশটি লক্ষণ
এছাড়াও ভিটামিন B6 সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, কলা, ব্রাউন রাইস, ভুট্টা, বাদাম ইত্যাদি খান। সকালে উঠেই রান্নাঘরে যাবেন না। দক্ষ ট্রেনারের কাছে শিখে নিন কিছু কিছু যোগব্যায়াম এবং অ্যাকুপাংচার পদ্ধতি। সঠিক ভাবে এইগুলি করা হলে মর্নিং সিকনেসে প্রচণ্ড লাভজনক হয়। মর্নিং সিকনেস কম বেশি সব গর্ভবতী মহিলারই হয়ে থাকে, কিন্তু যদি মনে হয় মাত্রাতিরিক্ত বমি হচ্ছে, মাথা ঘুরছে, এমনকি পেটে জলও রাখতে পারছেন না; তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন সত্বর।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null