গর্ভকালে মুখজুড়ে ব্রণর হানা অস্বাভাবিক নয়। ওষুধ নয়, সারিয়ে তুলুন ঘরোয়া উপায়ে!

গর্ভকালে মুখজুড়ে ব্রণর হানা অস্বাভাবিক নয়। ওষুধ নয়, সারিয়ে তুলুন ঘরোয়া উপায়ে!

সন্তানের জন্ম হওয়ার আগে হবু মা কে ভীষণ সুন্দর দেখতে হয়ে যায়; ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, চোখ-মুখের লালিত্য দেখে যেন চোখ ফেরানো যায় না। কি, আপনিও এমনটা শুনে অভ্যস্ত নিশ্চয়? আগেকার দিনে,মা-দিদিমারা এমনও বলতেন যে, হবু মায়ের রূপলালিত্য দেখে নাকি আন্দাজ করা যায়, গর্ভস্থ সন্তানটি ছেলে না মেয়ে। কিন্তু বিধি বাম, সবার জন্য এমন মোটেই হয় না। মা ও বাচ্চার শরীরে কোনও খারাপ প্রভাব না হলেও মুখে ব্রণর বিচ্ছিরি উঁকিঝুঁকি ও দাগ যে কতোটা বিরক্তির উদ্রেক করে, তা বোধ করি ভেঙে বলার প্রয়োজন নেই। গর্ভাবস্থায় হরমোনের খামখেয়ালিপনার কারণে ত্বকে সেবাম নামক তেলতেলে পদার্থের নিঃসরণ বেড়ে যায় বলেই ব্রণর ব্যাকটেরিয়া অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। (Natural remedies to treat pimples during pregnancy in Bangla)

যে সব মায়েরা আগে এই ব্রণর সমস্যায় ভুগেছেন বা মাসিকের আগে যাদের দু-একটা ব্রণ হয়ে থাকে, গর্ভাবস্থায় তাদের ওপরই ব্রণর আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আবার যাদের ত্বক আগে থেকেই তেলতেলে, তাদেরও ব্রণ হওয়ার ভয় থাকে। পরিস্থিতি যেমনই হোক, একটু সচেতন থাকলে বা নিজেদের ত্বকের যত্ন নিলে ব্রণ বেশি বাড়ে না বা মুখে দাগ হয় না। ব্রণতে লাগানোর বাজারচলতি কেমিক্যাল ওষুধ ব্যবহার করলে হবু সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। সেইজন্যই ব্রণ কমাতে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করতে বলা হয়। এইসব টোটকা খুবই কার্যকর এবং বানানোও সহজ।

গর্ভকালে মুখে ব্রণর উঁকিঝুঁকি? ঘরোয়া টোটকায় সারিয়ে তুলুন আজই! (Natural remedies to treat pimples during pregnancy in Bangla)

#1. টক দই, লেবু, মধুর প্যাক (Curd, lemon and honey pack)

অল্প টক দইয়ের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও এক চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে পরিষ্কার মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করে ভালো করে ধুয়ে নিন। দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড ও লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড মুখে অতিরিক্ত তেল বের হওয়া বন্ধ করে, রোমছিদ্র পরিষ্কার করে আর মধু খুবই ভালো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান।

#2.তুলসী, নিম ও পুদিনাপাতার বরফ (Basil, neem and pudina ice)

যে জায়গায় ব্রণ হয়,সেখানে ফুলে থাকে এবং ব্যথা হয়। ব্রণ ওঠার সময় যদি একটি বরফ পরিষ্কার কাপড়ে মুড়ে ব্রণর ওপরে লাগানো হয়, তা হলে লাল ভাব ও ব্যথা কমে যায়। তুলসীপাতা, নিমপাতা ও পুদিনাপাতা সমপরিমাণে নিয়ে জলে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে জল ছেঁকে আইস-ট্রে তে রেখে দিন। প্রত্যেকদিন ৩-৪ বার এই বরফ পুরো মুখে লাগান। যে ব্রণ উঠেছে, তার ফোলাও কমবে আবার নতুন ব্রণ হওয়াও আটকাবে।

#3.কাঁচা হলুদ আর চন্দন বাটা (Turmeric and sandal paste)

কাঁচা হলুদ ও চন্দন বাটা স্নানের আগে সারা মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে নিন। এই প্যাক ব্রণর পিছনে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে।

#4.ডাবের জল (Coconut water)

ব্রণর দাগে ডাবের জল লাগান, দাগ চলে যাবে।

#5. ওটস ও গ্রীন টি স্ক্রাব (Oats and green tea scrub)

মুখ স্ক্রাব করা অত্যন্ত জরুরী। এতে মুখের মরা চামড়া পরিষ্কার হয় এবং লোমকূপও পরিষ্কার থাকে। ব্রণ থাকলে কখনওই মুখ ঘষবেন না বা শক্ত দানার কোনও স্ক্রাব মুখে লাগাবেন না। তাতে ব্রণ আরও বেড়ে যায়। ওটস ব্লেন্ডারে গুঁড়ো করে নিন।এবার একটি পাত্রে জল ও গ্রীন টি মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। পাতা ও চা দুটোই ওটসের গুঁড়োর সাথে ভালো করে মিশিয়ে পরিষ্কার মুখে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে হাল্কা হাতে স্ক্রাব করে ধুয়ে নিন। এতে ত্বক ভিতর থেকে পরিষ্কার হয় ও তেলভাব নিয়ন্ত্রণ হয়। সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাকটি লাগান।

#6. অ্যালোভেরা জেল (Aloe vera gel)

ব্রণর ক্ষেত্রে এই অ্যালোভেরা জেল খুবই কার্যকর। বাজারে অনেক কোম্পানির অ্যালোভেরা জেল কিনতে পাওয়া গেলেও বাড়িতে গাছ থাকলে সবথেকে ভালো। অ্যালোভেরা গাছের পাতা চিরে ভিতরের থকথকে জেলটি বের করে নিন এবং একটু সময় ফ্রিজে রেখে দিন। রাতে শোওয়ার আগে এই জেল মুখে লাগিয়ে আধঘণ্টা রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। যদি খুব বেশি চিটচিটে না লাগে, তা হলে সারারাতও রাখতে পারেন।

#7. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার (Apple cider vinegar)

এক চামচ খাঁটি অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ও তিন চামচ শুদ্ধ জল মিশিয়ে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলতে পারেন টোনার। দিনে দুবার এই টোনার তুলোর সাহায্যে মুখে লাগিয়ে নিন। এই টোনার অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ বন্ধ করে এবং ত্বককে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়।

#8. নিম হলুদের পেস্ট (Neem and turmeric paste)

ব্রণর জন্য নিম, হলুদের পেস্ট লাগানো বহু পুরনো ও উপকারী পদ্ধতি। নিমপাতা ভালো করে ধুয়ে, তার সাথে অল্প কাঁচা হলুদ দিয়ে বেটে মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে দিন।সপ্তাহে ৩ বার লাগাতে পারেন।

#9. মুলতানি মাটি ও গোলাপ জল (Multani mitti and rose water)

মুলতানি মাটি ও গোলাপ জলের মিশ্রণ ত্বক ঠান্ডা রাখে, সেবাম বা তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে ও ব্রণ শুকোতেও সাহায্য করে। মুলতানি মাটি ও গোলাপ জল মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিয়ে সারা মুখে লাগান।শুকিয়ে গেলে ভালো করে ধুয়ে নিন।

যেগুলো অবশ্যই মনে রাখবেন (Things to keep in mind)

  • দিনে দু-তিন বার ভালো করে ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। এর বেশি মুখ ধোবেন না।
  • মুখ ধুয়ে টোনার ব্যবহার করুন। শুধু গোলাপ জলও আপনি টোনার হিসেবে লাগাতে পারেন। নন-অয়েলি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • কখনওই ব্রণ খুঁটবেন না বা তার ওপর ঘষাঘষি করবেন না। এতে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে ও আরও ব্রণ হয়। মুখে স্থায়ী দাগ হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
  • ফেস প্যাক লাগানোর পরে সবসময় খুব ভালো করে মুখ ধোবেন। ফেস প্যাক যাতে মুখে লেগে না থাকে। তারপর স্কিন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন।
  • বাইরে থেকে এসে বা মুখে মেক আপ করার প্রয়োজন হলে, খুব ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে নেবেন। ওই অবস্থায় ভুল করেও রাতে ঘুমোতে চলে যাবেন না। মুখের লোমকূপে ময়লা, তেল বসে যাওয়া ব্রণ হওয়ার অন্যতম কারণ।

প্রচুর জল খান ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। অহেতুক চিন্তা করবেন না,কারণ এতে আপনার ব্রণ বাড়তে পারে। এইসমস্ত ঘরোয়া টোটকা থেকে ভালো ফল পেতে আপনাকে একটু ধৈর্য ধরে এগুলো লাগাতে হবে ও সময় দিতে হবে। যদি মনে হয়, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কোনও ভাবেই নিজে কোনও ওষুধ খাবেন না বা লাগাবেন না। ব্রণ বা ব্রণের দাগ কয়েকদিনের অতিথি, তাই এসব নিয়ে মন খারাপ না করে, মা হওয়ার এই পর্যায়টা চুটিয়ে উপভোগ করুন।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null