এই যে আপনারা এই ধরনের প্রতিবেদনের শিরোনামটা পড়েই এদিক ওদিক তাকিয়ে না পড়ে পালিয়ে যান, এটা কী ভালো করেন? মা হতে চাইছেন বা মা হতে চলেছেন বা মা হয়ে গেছেন বা আপনি আমার মতোই এখনও ঝাড়া হাত-পা বিবাহিতা মানুষ; সে আপনি যেই হন না কেন, নিজের শরীরটাকে চেনার বা জানার কী আপনার এত্তটুকু ইচ্ছে নেই? (Menstrual Cycle: Signs, Symptoms & Phases)
না, সকাল সকাল বকাবকি মোটেই করছি না, শুধু বলছি নিজেদের একটু বুঝুন। নিজেদের শরীর, মন কখন কীভাবে কথা বলে, কীভাবে সে সিগন্যাল দিতে চায় যে কোনও আপদ-বিপদে, সেগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
আরে, শরীর আপনার! আপনি যদি তাকে ভালো না বেসে শুধুমাত্র কিছু কুসংস্কার বা লজ্জার আবরণ দিয়ে বগলচাপা করে রাখেন, তা হলে ভবিষ্যতে ভুগবেন আপনিই। আমি বকবক করে দিয়ে চলে যাবো, কিন্তু সতর্ক আপনাকেই হতে হবে। মাসিকের (Period) নাম করবেন ফিসফিস করে, বাড়িতে হাঁটাচলা করবেন চেপেচুপে বা মাসিকের সমস্যা হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হলেই আপনার গায়ে জ্বর আসবে। এমন হলে তো মুশকিল! (Masik Chakra)
ভালো করে কথাগুলো চোখ দিয়ে পড়ুন, মন দিয়ে বুঝুন আর বুদ্ধি দিয়ে অনুভব করুন। রজঃস্রাব মাসিক বা পিরিয়ডস মেয়েদের একটা একচেটিয়া শ্রেষ্ঠ সম্পত্তি। (Period Cycle) এই মাসিক হয় বলেই আমরা সন্তানের জন্ম দিতে পারি, প্রাণ সৃষ্টি করতে পারি। তাই এই মাসিক মেয়েদের কাছে লজ্জার নয়, বরং চরম গর্বের বিষয়।
এবার আসল কথায় আসি। বুঝছেন তো মাসিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ? শুধু আপনার জন্য নয়, আপনার প্রাণ সৃষ্টির ক্ষমতা ঠিকঠাক রাখার জন্যও বটে! তাই নিজের শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অথচ খামখেয়ালী প্রক্রিয়াটির সম্বন্ধে বুঝুন (What is the Menstrual Cycle?), জানুন এবং অন্যদের জানান।
মহিলাদের মাসিক কী? কেন হয়? মাসিকের পর্যায়গুলি কী কী বা কখন দেখা দেবে বিপদ? আজ এইসবকিছু নিয়েই চুলচেরা আলোচনা করব আমরা। আপনাদের ভালোবাসি বলেই বন্ধু হিসেবে আমার এই অনুরোধ। (Menstrual Cycle: Signs, Symptoms & Phases) নিজেরা ভালো থাকতে চাইলে অন্তত চোখ থেকে লজ্জার খোলসটা সরিয়ে প্রতিবেদনটা পড়ুন।
মাসিক বা পিরিয়ডস কী এবং কেন হয়? (What is Menstruation?)
কোনও জটিল বিজ্ঞানের ভাষা দিয়ে নয়; সহজ গল্পের ছলেই এই মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। প্রত্যেক মহিলার শরীরে দুটি করে ডিম্বাশয় বা ওভারি থাকে। (Girls Period) আমন্ড বাদাম দেখেছেন তো? প্রায় এই বাদামের মতোই আকার হয় ওভারির। মহিলাদের জননতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল এই ওভারি।
পিউবারটির সময়ে পৌঁছে গেলে অর্থাৎ বালিকা থেকে কিশোরী হওয়ার পথে প্রবেশ করার সময়ে দেখা দেয় এই মাসিক। সাধারণভাবে বললে, একটি মেয়ের ৮-১৫ বছর বয়সের মধ্যে যে কোনও সময়ে এই মাসিক শুরু হয়ে যায় (The Menstrual Cycle) ।
আমাদের অর্থাৎ মেয়েদের শরীরে মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ওভারি বা ডিম্বাশয় থেকে এগ বা ওভাম বা ডিম্বাণু নির্গত হয়। এই ওভামকে যদি স্পার্ম নিষিক্ত করে তবেই ভ্রূণ তৈরি হয়। এই পরিণত ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার সময় এলেই শরীর ভাবী ভ্রূণের কথা চিন্তা করে নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করে।
ওভারি থেকে এই ওভাম বা ডিম্বাণু নিঃসরণের সময় এলেই জরায়ুর দেওয়াল মোটা হতে শুরু করে, একে পোশাকি ভাষায় বলা হয় জরায়ুর লাইনিং তৈরি হওয়া। ভ্রূণ তৈরি হলে সে এই জরায়ুর গায়েই স্থাপিত হবে। (Stages of Menstrual Cycle) তাই, তার কথা ভেবেই ব্লাড ভেসেলস, টিস্যু দিয়ে শরীর জরায়ুর লাইনিং মোটা করে।
ওভারি বা ডিম্বাশয় থেকে নির্গত ওভাম মোটামুটি ১২-২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। এই সময় যদি ফ্যালোপিয়ান টিউবে উপস্থিত শুক্রাণু বা স্পার্ম এই ওভামকে নিষিক্ত করে, তবেই ভ্রূণ তৈরি হয়। এই সময়ের মধ্যে যদি কোনও নিষেক না ঘটে, তা হলে এর প্রায় ১৪-১৫ দিন পরে জরায়ুর লাইনিং ছিঁড়ে রক্ত ও মিউকাসের সাথে বেরিয়ে আসে। একেই আমরা মাসিক বা পিরিয়ডস বলি (Monthly Period)।
ঋতুস্রাব বা মাসিকের উপসর্গগুলি কী কী? (Symptoms of Menstruation)
এক্ষেত্রে মনে হতে পারে যে মাসিকের আবার উপসর্গ কী! একটাই তো হয়, চার-পাঁচদিন ধরে বিরক্তিকর ব্লিডিং। (Period Signs) মানছি, ওটাই প্রধান উপসর্গ। কিন্তু তা ছাড়াও শরীরে কিন্তু আরও নানা ধরনের অস্বস্তির সৃষ্টি হয়, যাকে আমরা উপসর্গের নাম দিতেই পারি।
এই উপসর্গগুলি সাধারণভাবে বলা হয়েছে। এর সংখ্যা এবং প্রাবল্য শরীর অনুযায়ী আলাদা আলাদা হয় ।শুধু মাসিক চলাকালীন যে নানা উপসর্গ দেখা দেয় তাই নয়, মাসিকের আগেও হরমোনের নাচন কোঁদনের প্রভাবে দেখা দেয় অকারণ মুড সুইংস বা ক্র্যাম্পস। একে আমরা Pre-menstrual সিন্ড্রোম বলে থাকি।
আরও পড়ুন : যন্ত্রণাদায়ক মাসিকের কারণ ও ঘরোয়া টোটকায় প্রতিকার
মাসিকের পর্যায়গুলি কী কী? (Phases Of The Menstrual Cycle)
একটি নিয়মিত মাসিক চক্রকে মোটামুটি তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন,
সাধারণত, একটি নির্দিষ্ট মাসিক চক্রের ১২-১৯ দিনের মধ্যে ওভ্যুলেশন হয়ে থাকে। তবে, সবার শরীর সমান হয় না তাই, এই সময়েরও এদিক-ওদিক হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। (Menstrual Cycle Explained)
মাসিক চক্র কীভাবে হিসেব করতে পারেন? (Understanding Menstrual Cycles, Your Periods and Ovulation)
একটি আদর্শ, নিয়মিত মাসিক চক্র বা দুটি পিরিয়ডসের মধ্যবর্তী ব্যবধান হওয়া উচিত ২৮ দিনের। বলাই বাহুল্য, হাতে গোনা কয়েকজন ভাগ্যবতী মহিলারই এই সময় বা গ্যাপ নির্দিষ্ট থাকে। এমনকি, পরপর দুটো মাসিক চক্রের সময়ের ব্যবধানও সমান হয় না প্রায়ক্ষেত্রেই। (Menstrual Cycle Phases Symptoms) সাধারণভাবে বলা যায়, একটি সুস্থ স্বাভাবিক নিয়মিত মাসিক চক্র ২১ থেকে ৩৫ দিনের হয়ে থাকে। মাস এবং শরীর বিশেষে কিন্তু এই সময়েরও এদিক ওদিক হতে পারে। মাসিকের এই তিনটি পর্যায় সম্পূর্ণ হতে যে সময় লাগে, সেই সময় ধরেই আমরা মাসিক চক্রের (Menstrual Cycle Days) হিসেব করে থাকি।
রজঃস্রাব বা পিরিয়ডস নিয়ে মহিলাদের কী কী সমস্যায় ভুগতে হয়? (What Are Common Period Problems?)
সাধারণভাবে একটা নিয়ম মেনে চললেও শরীরের ভিতরে কোনও অসুবিধা হলে তার প্রকাশ ঘটে কিন্তু এই মাসিকের মাধ্যমেই। সেই অসুবিধা হতে পারে মহিলাদের জননতন্ত্র সংক্রান্তই। (PMS, Cramps, and Irregular Periods) মাসিক নিয়ে যেসব সমস্যাগুলো খুব সাধারণ মেয়েদের ক্ষেত্রে, সেগুলো হল;
মাসিকের হাঁড়ির খবর এতক্ষণে বুঝে গেছেন। কোনটা স্বাভাবিক আর কোনটা নয়, তাই নিয়েও একটা ধারণা তৈরি হয়েছে নিশ্চয়। (Get To Know The Phases Of Your Menstrual Cycle) তাই, নিজের শরীরের কাজকর্ম নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকুন। যাতে এতটুকু এদিক ওদিক হলে আপনি শরীরের পাঠানো বিপদ সিগন্যাল ধরতে পারেন। যে কোনও সমস্যা চেপে না রেখে ডাক্তারকে দেখান। লুকিয়ে রাখলে রোগ সারে না, জটিলতা বাড়ে। নিজেকে ভালবাসুন, সুস্থ থাকুন। (Menstrual Cycle: Signs, Symptoms & Phases)
আরও পড়ুন : মাসিকের ওই দিনগুলোয় নারীর মন ভালো-খারাপ হওয়ার পিছনে থাকতে পারে হরমোনের ভূমিকাও
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null