মন বসে না পড়ার টেবিলে? পড়াশোনায় বাচ্চার আগ্রহ ফেরাতে জরুরি টিপস!

মন বসে না পড়ার টেবিলে? পড়াশোনায় বাচ্চার আগ্রহ ফেরাতে জরুরি টিপস!

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চাকে পড়াতে বসানোর মতো কঠিন কাজ বোধহয় আর দু’টি হয় না! (Ways to Make Learning Fun for Young Kids)
পড়বে পড়বে ভাবছে, অথচ মন বসছে না কিছুতেই। দিনভর হুটোপাটি, স্কুল-খেলা সব সেরে কোথা থেকে যেন সিন্দাবাদের ভূত চেপে বসত আমার সাড়ে ৭ বছরের কন্যার শরীরে! যতই ভোলাই, যতই গপ্পো করি কাজ হতো না কিছুতেই! বইখাতা ছেড়ে পড়ার ঘরের জানলা দিয়ে যেন ছুট্টে পালাত ওর মনটা, কিংবা একরাশ ঘুম ঢোলে পড়ত চোখের কোণায়।

খুব রাগ হতো, এদিকে মায়ার বশে তেমন বকতেও পারতাম না। প্রচলিত কোনও টোটকাই যখন কাজে এলো না আর, এই অধম দ্বারস্থ হলো ‘গুগল’ জেঠুর! (Creative Ways To Make Learning Fun For Your Kids) ইন্টারনেট ঘেঁটেঘুঁটে আর ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিজেই কিছু মজার ওষধিও হাতে এসে গেল চকিতে।

ওষধি বললাম ঠিক, কিন্তু আসলে হলো পড়ার সাথী, মজার মজার গুচ্ছ সরঞ্জাম। যেগুলো হাতে পেয়ে কিছুদিনেই পড়ায় মন ফিরেছে আমার কন্যা রত্নের। নিয়ম করে হোমওয়ার্কও সেরে রাখছে ও, সে আমি পাশে থাকি বা না থাকি। (Strategies to Make Learning Fun ) পড়াশোনায় ছেলেমেয়ের আগ্রহ ফেরাতে ওষধিগুলি একবাট্টি ট্রাই করে দেখতে পারেন আপনিও। চেকলিস্ট থাকল এখানে!

 

পড়াশোনাই যেভাবে হয়ে ওঠে খেলার মতো মজার! (Ways to Make Learning At Home)

#1. রংচং-এ পেন-পেন্সিল
কথাতেই আছে ‘পেহলে দর্শনধারী’। মেয়ে যাতে নিজে নিজেই পড়তে বসতে চায়, তা নিশ্চিত করতে ওর পড়াশোনার সামগ্রীই উল্টে-পাল্টে দিয়েছিলাম আমি। তার ভিতর অন্যতম এক সেট রঙিন পেন্সিল। আর মজার মজার নানান রঙের কালি পেন!
আমার ভূমিকা ছিল এ-পর্যন্তই। এগুলিকে ব্যবহার করার উপায় খুঁজে নিল মেয়ে নিজেই। (Strategies to Motivate Your Child to Learn) নোটবুকে দেখলাম প্রশ্ন একরকম পেনে লিখছে, উত্তর আরেক পেনে। লেখার মাঝে মাঝেই রঙিন পেন্সিল দিয়ে ছবিও আঁকছে ঘনঘন।
এতে কী হলো, যে পড়াটা ওর মুখস্থ হতে বা মনে রাখতে এর আগেই সময় লাগত অনেকটা, এঁকে-লিখে সেটাই আরও তাড়াতাড়ি বুঝে নিতে লাগল ও। পেন-পেন্সিলগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার তাগিদেই যেন পড়ার প্রতি আগ্রহই চুটকিতে বেড়ে গেল ওর!

#2. সুগন্ধী মার্কার
মেয়েবেলায় সুগন্ধী মার্কারগুলোর প্রতি তীব্র আকর্ষণ কাজ করতো আমার। ভাবলাম বুঝি, আমারই তো কন্যে, দেখি না কিনে কাজ হয় কি না!
ওমা, যেমন ভাবা তেমনই কাজ। সুগন্ধী, চকচকে রঙের মার্কারগুলিই এখন আমার মেয়ের পড়ার সঙ্গী। বইতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ওই মার্কার দিয়েই দাগ দিচ্ছে ও। লিখে রেখে যাতে ভুলে না যায়, সেটাও ওভাবেই মার্ক করে রাখছে। (Effective Ways to Make Learning Fun for Young Kids) স্কুলের কিছু নোটিস, যেটা মনে রাখতেই হবে সেটাও মার্কার বুলিয়েই মনে রাখছে ও। পড়ার ফাঁকে আঁকিবুকিও কেটে নিচ্ছে মনের সুখে…

#3. মজার ইরেজার
ইরেজারই ছোট ছোট ভুল মুছে আবার সঠিক উত্তর খুঁজে বের করতে সাহায্য করে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে। বলা যেতে পারে, এই ইরেজারই ওদের ‘দুর্দিনের’ সাথী!
মেয়ের যখন পড়াশোনা থেকে মন প্রায় যায় যায় অবস্থা, তখন আমি এক সেট নতুন ইরেজারও কিনে দিয়েছিলাম ওকে। মজার মজার আকার সেই সাথে মিষ্টি গন্ধ! বলাই বাহুল্য মেয়ের ওগুলোর প্রতি ঝোঁক তৈরি হতে সময় লাগল না দু’দিনও। (Ways to Make Learning Fun for Students ) ক্রিকেটের ব্যাট-বল কিংবা উইকেট, ছোট্ট কুকুরের মুখ বা লেজওয়ালা বিড়াল ছানা, হরেক আকারের ইরেজার দিয়ে ওর আকৃতি নিয়ে ধ্যান-ধারণাও আরও স্পষ্ট হতে লাগল! সেই সাথে ভুল ‘মুছে’ সঠিক পথে এগনোর প্রবণতাও!

#4. আকর্ষণীয় নোটবুক
খাবার হোক বা খাতা, ম্যাড়ম্যাড়ে হলে চলে বলুন তো? আপনি যদি সেই আমাদের কালের রুলটানা সাদামাটা খাতা এনে সোনাকে বলেন, ‘নে এতেই লেখা-পড়া কর তুই’, ওর রঙিন মন সেটা মানবে কেন! চারদিকে যে এত্ত রকম ঝকমারি জিনিসের হাতছানি। সব না হোক, সাধ্য মতো ওর মনের সাধও একটু-আধটু পূরণ করা উচিত বই কি! (Creative Ways to Make Learning Fun for Toddlers)
আমার মেয়ের লেখার খাতাগুলিও সব পাল্টে দিয়ে নতুন একঝাঁক বাহারি নোটবুক এনে দিয়েছিলাম আমি। যার পরতে পরতে মিশে ছিল সেগুলি ব্যবহারের তীব্র আকর্ষণ! সে জিরাফের ছবিই হোক কিংবা দূরদেশের কোনও সূর্য ঢলা পাহাড় অথবা খোপ কাটা, ছবিওয়ালা পড়ার রুটিন।
যেটা হলো, এই নোটবুকগুলো পেয়ে মেয়ের পড়ার প্রতি ঝোঁকটাই যেন একলাফে বেড়ে গেল অনেকটা। ক্যালেন্ডার মেনে নিজে নিজেই এখন পড়তে বসছে ও, সেই সাথেই জানছে, চিনছে নানান দেশের নানান অজানা কথা!

 

আরও পড়ুন: খেলায় খেলায় শেখা! জেনে নিন, শিশুর শিক্ষায় খেলা ও খেলনার গুরুত্ব ঠিক কতখানি?

 

#5. বাহারি পেন-পেন্সিলের কেস
সব যখন নতুন নতুনই হলো, পেন-পেন্সিলের কেস বা বাক্সটিই বা বাদ যায় কেন। খোপওয়ালা, বাহারি রঙের বাহারি সব পেন-কেস এখন পাওয়া যায় বাজারে। পেন, পেন্সিল, ইরেজার, স্কেল তো বটেই বাচ্চার খুচখাচ খেলনা বা পছন্দের জিনিসও দিব্য সিঁধিয়ে যায় এতে। (Ways To Make Learning Fun For Toddlers & Preschoolers)
মেয়েকে আমি যে কেসটি কিনে দিয়েছিলুম, তাতে ও কয়েন জমায় এখন। নানান কয়েন, যেটা সচরাচর পাই না আমরা। রথ দেখার সাথে কলা বেচা-দুইয়ের ইচ্ছেই পূরণ হলো এতে। নতুন পেন-কেসটি এখন হাতছাড়াই করতে চায় না আমার মেয়ে। ওর পছন্দের পেন, মার্কার, ইরেজার সবই রাখছে ওতে। সেই সাথে মেটাচ্ছে নিজের শখও!
কে বলতে পারে, কয়েন জমানোর এই নেশাই হয়তো বেঁধে দেবে ওর আগামীর পথ!

 

এত্ত সব কেনাকাটির সাথে সাথে পড়াশোনায় ওর আগ্রহ ফেরাতে, পড়াশোনাকে খেলার মতোই মজার করে তুলতে আরও কিছু পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছিলাম আমি। সংক্ষেপে দিয়ে দিলাম তার তালিকাও! (How to Make Learning Fun at Home)

  • দায়িত্ববোধ: সাধারণত অস্থির প্রকৃতির ছেলেমেয়ের ভিতরই পড়াশোনায় মনোযোগ বসানোর সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়। এর মোকাবিলায় বাচ্চাকে দায়িত্ব দিতে হবে ছোট থেকেই। হতে পারে খেলার সাথী কোনও পোষ্য কিনে দিলেন ওকে। কিংবা ভাই-বোনের দেখভালের ভার দিলেন কিছুটা। দায়িত্বশীল হলেই বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বাড়বে, আর আত্মবিশ্বাসই পড়াশোনায় মনোযোগ এনে দেবে ওর! মেয়েকে যেমন একজোড়া খরগোশ কিনে দিয়েছিলাম আমি।

 

  • সুষম খাবার: যত বড় হবে, ততই ফাস্টফুড, ভাজাভুজিতে মন হবে বাড়ন্ত বাচ্চার। এগুলো থেকে যত পারুন দূরে রাখুন ওকে। ডায়েটে ঢোকান ভিটামিন, মিনারেল যুক্ত খাবার। প্রথম প্রথম বায়না করবে বাচ্চা, না পেলে আবার সয়েও যাবে। মেয়েকে আমি রোজ ডিম-আপেল খাওয়াই, জোর করে হলেও। আপনিও শুরু করুন আজ থেকেই।

 

  • মস্তিষ্কের বিশ্রাম: সারাদিন কাজকর্ম শেষে আমাদেরও যেমন ক্লান্তি আসে, তেমনটাই ক্লান্তি আসে বাচ্চারও। স্কুল থেকে এসেই খেলাধূলা, তারপরই পড়তে বসা। এত কিছুর মধ্যে আপনার বাচ্চা কতটুকুই বা বিশ্রাম পায় বলুন তো? ওর মস্তিষ্কেরই বা আরামটা হয় কখন? (How to Make a Child Interested in Studying)
    মস্তিষ্কের আরাম বলতে কিন্তু কম্পিউটার বা অনলাইন গেম-এর কথা বলছি না আমরা। বাচ্চার খাতিরে, পড়াশোনায় ওর আগ্রহ বাড়াতে ফাঁকে ফাঁকে নিজের মতো সময় কাটাতে দিন ওকে। মেয়ে যেমন আমার গান গাইতে ভালোবাসে খুব, ওকে সেই সুযোগটা করে দিই আমিই।

 

  • ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম বা অল্প শরীরচর্চাই আপনার বাচ্চাকে মানসিক নানা চাপ থেকে দূরে রাখতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই তার সু-প্রভাব পড়ে মনোযোগের ওপর। এর প্রমাণ আমি নিজে। মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় যখন রাতের ঘুম উবে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল, এক পরিচিতর পরামর্শে ওকে তখন যোগব্যায়াম ক্লাসে দিলাম আমি। বলতে নেই, আগের চেয়ে আমার দু’চোখের মণি অনেক সহনশীল, অনেক মনোযোগী এখন! (Ways to Make Learning Fun for Young Kids)

 

আরও পড়ুন: খেলতে খেলতে বুদ্ধির বিকাশ

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

 

null

null