ছোট্ট নীহারের বয়স সবে ছ’মাস । কয়েক দিন আগেই ওর অন্নপ্রাশন হল। অন্নপ্রাশনের পর নীলিমাও সবজির পরিজ করে দিত খুদেকে। এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল, সমস্যা দেখা দিল তিন-চারদিন আগে থেকে। গত কয়েক দিন ধরে নীহারের পেট ঠিক মতো পরিষ্কার হচ্ছে না। নীলিমা লক্ষ্য করেছে দুধ খাওয়ানোর পর ও প্রায়ই বমি করে দিচ্ছে। কয়েক দিন আগেও এমনটা হত না। তাই অবশেষে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ। (Lactose Intolerance in Babies; Reasons, Signs & Treatment)
চিকিৎসক পুরোটা শুনে জানালেন, নীহার ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স-এর সমস্যায় ভুগছে। এই সমস্যাটার কথা নীলিমা জানত না। চিকিৎসককে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললেন (Milk Intolerance in Babies and Kids)।
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স-এর অর্থ হল ল্যাকটোজ জাতীয় খাবার সহ্য করতে না-পারা। আমাদের শরীরে ল্যাকটোজ জাতীয় খাবার হজম হয় ল্যাকটেজ উৎসেচকের সাহায্যে। যে শিশুদের এমনকী বড়দেরও এই সমস্যা থাকে, তাঁদের শরীরে ল্যাকটেজ উৎসেচকের উৎপাদন অনেকটাই কমে যায়। ফলে ল্যাকটোজ জাতীয় খাবার খাদ্যতন্ত্রে গন্ডগোল পাকায়।
শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা সাধারণত দুই বা তিন বছর বয়সের পরে আসে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ক্ষেত্রে জন্মের এক-দুই বছরের মধ্যেও এমন ইনটলারেন্স দেখা যায়। সেক্ষেত্রে খুদের ডায়েটে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হয়।
নীলিমা বুঝতে পারছিল না, কেন হঠাৎ নীহারের এমন সমস্যা হল। এর পিছনে কী কারণ থাকতে পারে। চিকিৎসককে এই কথা জিজ্ঞেস করাতে তিনি কয়েকটি কারণ বললেন।
ছোট্ট শিশু কথা বলতে পারে না। কোনও কারণে কষ্ট হলে সে শুধু কাঁদে। ফলে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স হলে অনেক সময়ই তা সহজে বোঝা যায় না। নীলিমা চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করল, কী কী লক্ষণ দেখে সহজে বোঝা সম্ভব যে সোনামণির ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স হয়েছে। চিকিৎসক এবারে সেই প্রসঙ্গেই এলেন (Lactose Intolerance in Babies Symptoms Breastfed)।
#1. ডায়রিয়া (Diarrhea): ল্যাকটেজ উৎসেচক সঠিক পরিমাণে উৎপাদিত না-হলে ল্যাকটোজ জাতীয় খাবার, যেমন দুধ সম্পূর্ণ হজম হয় না। এই হজম না-হওয়া ল্যাকটোজ অন্ত্রের মধ্যে থেকে যায়। পরে এটিই খুদের ডায়রিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে সাধারণত দুধ খাওয়ার দুই বা আড়াই ঘণ্টা পরে খুদের ডায়রিয়া হতে পারে। ডায়রিয়ায় ওর শরীর খুব তাড়াতাড়ি ডিহাইড্রেটেড হতে থাকে। এই ব্যাপারে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
#2. বমি (Vomiting): সাধারণত স্তন্যপানের সময় শিশুরা শান্ত থাকে। তবে স্তন্যপানের পর দুধ বমি করে দিলে তা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স-এর লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স-এর ফলে খুদের খাদ্যনালী দুধ বা অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার সহ্য করতে পারে না। এই কারণেই ছোট্ট সোনা বমি করে ফেলে। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণেও খুদে দুধ বমি করতে পারে। এমনটা হলে দেরি না-করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: জেনে নিন কোন কোন খাবার ১ বছরের নীচে দিলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে আপনার বাচ্চার!
#3. পাতলা পায়খানা (Loose Stools): ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স-এর অন্যতম লক্ষণ পাতলা পায়খানা। এক্ষেত্রে পায়খানা দুধ খাওয়ার আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা বাদে হয়। দুধ ঠিকঠাক হজম না-হওয়ায় অন্ত্রে বিয়োজিত হতে থাকে। এই কারণেই পায়খানা পাতলা হয়। পায়খানার রং সাধারণত হলুদ বা সবুজ হয় (Lactose Intolerant Baby Poop)।
#4. মাথাধরা-বমিবমি ভাব (Nausea): দুধ খাওয়ার পরেই খুদে ঝিমিয়ে পড়ছে, মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে একরত্তির। এমন লক্ষণকে নসিয়া বলে। দুধ খাওয়ার পরে পরেই ছোট্ট সোনার নসিয়া হলে বুঝতে হবে এটি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স-এর লক্ষণ। একাধিকবার দুধ খাওয়ার পর ওর মধ্যে নসিয়ার লক্ষণ ফুটে উঠলে চিকিৎসককে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানানো উচিত।
#5. পেট ফুলে যাওয়া (Bloating): চিকিৎসকের মতে, দুধ খেলে একরত্তির পেট ফুলে ওঠার কথা নয়। তবে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স-এর কারণে খুদের পেটে দুধ ঠিক মতো হজম হয় না। এর ফলে দুধ থেকে অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, যা ফুলিয়ে দেয় ছোট্ট পাকস্থলী। দুধ খাওয়ার পর পেট ফুলে গেলে তা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স-এর লক্ষণ হতে পারে।
#6. কান্নাকাটি (Crying): ছোট্ট সোনা কথা বলতেও শেখেনি। তাই কান্নার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করতে চায় ওর সমস্যার কথা। দুধ ঠিকমতো হজম না-হওয়ায় পেটে অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। এতে পেটের পেশিতে ব্যথা হতে থাকে। যার ফলে ছোট্ট সোনা কান্নাকাটি করতে থাকে।
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স শোনার পর থেকেই নীলিমা খুব চিন্তায় ছিল। কারণ ছোট্ট নীহারের এখন দুধ খাওয়ারই সময়। দুধ না-খাওয়ালে ওর ঠিকমতো পুষ্টিই হবে না। অথচ, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স-এর কারণে ও দুর্বলও হয়ে পড়ছে। চিকিৎসক অবশ্য তখনই এর থেকে মুক্তির উপায়গুলো (Lactose Intolerance in Infants Treatment) এক এক করে জানালেন।
ছোট্ট নীহারের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স তেমন গুরুতর ছিল না। চিকিৎসক পরীক্ষার মাধ্যমেই তা বুঝতে পারেন। নীলিমাও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওকে দুধ খাইয়ে যেতে থাকে। নীলিমার চিন্তার শেষ ছিল না। কবে যে সেরে উঠবে তার খোকা! তবে মায়ের সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে মাত্র কয়েকদিনেই নীহার সেরে ওঠে। তখন ও আবার আগের নীহার। খাওয়া নিয়ে যার একটুও কান্নাকাটি নেই। (Lactose Intolerance in Babies; Reasons, Signs & Treatment)
আরও পড়ুন: বাড়তি খাবার পেটে গেলে বাচ্চার ঢেকুরের সঙ্গে তা বেরিয়ে আসে। এটা কিন্তু বমি নয়, রইল প্রতিকারের উপায়!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null