যেসব দম্পতি স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম বা যেসব মহিলা দীর্ঘ দিন চেষ্টা করেও কনসিভ করতে পারে না, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে তাদের অন্যতম পরিত্রাতা হিসেবে আসে আইভিএফ (IVF) পদ্ধতি। ইন ভিটরো ফারটিলাইজেশন (In Vitro Fertilization) বা IVF হল জননক্রিয়ায় সাহায্যকারী একটি প্রযুক্তি বা ART (assisted reproductive technology)। যে সমস্ত দম্পতির প্রাকৃতিক উপায়ে ভ্রূণ তৈরি হয় না, তাদের ক্ষেত্রে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করে বিশেষ ল্যাবোরেটরি ডিশে রেখে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করা হয় এবং তারপর ভ্রূণকে জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। (Steps of IVF or IVF Procedure in Bangla)
যে মহিলা এই IVF পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাতে ইচ্ছুক, তার মাসিক চক্রের প্রথমদিন থেকে এই চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসক কিছু ওষুধ বা ইঞ্জেকশন সেই সময়ের আগে থেকেই রোগিণীকে দিতে থাকেন। Steps of IVF in Bangla.
মাসিক চক্রের সর্বপ্রথম দিনটি থেকেই এই IVF প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সবার আগে মাসিক চক্রের প্রথম দিনটি চিহ্নিত করা হয়।
মাসিক চক্রের প্রথম দিন চিহ্নিত করার পর সেদিন থেকেই মূল চিকিৎসা শুরু হয়ে যায়। মহিলাদের ডিম্বাশয় বা ওভারি সাধারণত এক মাসে ১ টিই ডিম্বাণু উৎপাদন করে। এই পর্যায়ে রোগিণীকে ৮-১৪ দিনের জন্য বিশেষ ওষুধ দেওয়া হয়; যাতে ডিম্বাশয়ে একের বেশি ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়। এই পর্যায়ে ডিম্বাশয়কে উত্তেজিত করা হয় বলে একে স্টিমুলেশন ফেজ (stimulation phase) বলা হয়ে থাকে। এই সময়ে নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম মেনে ইঞ্জেকশন নিতে হয়। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে যে ওষুধ শরীরে ঢোকানো হয়, তাতে follicle-stimulating hormone (FSH) এবং luteinizing hormone (LH) নামের দুটি হরমোন থাকে, যারা ডিম্বাশয়কে বেশি ডিম্বাণু উৎপন্ন করার জন্য উত্তেজিত করে।
মহিলাদের শরীরে এই হরমোন দুটি উপস্থিত থাকলেও, বাইরে থেকে এই ইঞ্জেকশন নেওয়ার ফলে বেশি ডিম্বাণু তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নিয়মিত রক্তপরীক্ষা এবং আল্ট্রা সাউন্ডের মাধ্যমে ডিম্বাশয়ের স্থিতি এবং ফলিকলের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা হয়। ওষুধ বা ইঞ্জেকশনের মাত্রার তারতম্য হতে পারে এর ওপর ভিত্তি করেই। এর পরবর্তী পর্যায়ে ট্রিগার ইঞ্জেকশন (trigger injection) দেওয়া হয়; এই ইঞ্জেকশনের প্রভাবে ডিম্বাণুগুলি ওভ্যুলেশনের জন্য তৈরি হয়ে যায়।এই ইঞ্জেকশন নেওয়ার সঠিক সময় ডাক্তারই নির্ধারণ করেন।
এই পর্যায়ে ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়। ট্রিগার ইঞ্জেকশন দেওয়ার আগেই এই ডিম্বাণু সংগ্রহের দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করা হয়ে যায়। এই পর্যায়ে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়। রোগিণীকে অজ্ঞান করে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয় এবং পুরো পদ্ধতিটি হতে ২০-৩০ মিনিট সময় লাগে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে একটি নিডলের সাহায্যে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়। যে ফ্লুয়িডের মধ্যে ডিম্বাণু থাকার সম্ভাবনা আছে, চিকিৎসক সেই ফ্লুয়িড বার করে আনেন। মোটামুটি ৮-১৫টি ডিম্বাণু সংগ্রহ করা যায়। এই ডিম্বাণু সংগ্রহ হয়ে যাওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে রোগিণী সুস্থভাবে বাড়ি যেতে পারেন।
এবার পালা শুক্রাণু সংগ্রহের। বিবাহিত দম্পতিদের ক্ষেত্রে, পুরুষ সঙ্গীটির কাছ থেকে তাজা বীর্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই নমুনা থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। ডিম্বাণু আর শুক্রাণু একই দিনে সংগ্রহ করা হয়। এই স্পার্ম বা শুক্রাণুগুলিকে বিশেষ উপায়ে পরীক্ষা করা হয় এবং কোন কোন স্পার্মগুলি সতেজ ও গুণমানে ভালো, সেটি শনাক্ত করা হয়।
এই পর্যায়ে বিশেষজ্ঞরা বিশেষ ল্যাবরেটরি ডিশে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর নিষেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
নিষেক প্রক্রিয়া সফল হলে ভ্রূণ বা Embryo তৈরি হয়। এই ভ্রূণকে বিশেষ ধরনের অত্যাধুনিক ইনকিউবেটরে রাখা হয়। এই ইনকিউবেটরে মায়ের গর্ভের মতোই পরিবেশ তৈরি করা থাকে। ৬-৭ দিন এই ভ্রূণটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
যদি ইনকিউবেটরে ভ্রূণের বৃদ্ধি ঠিকমতো হয়, তা হলে তা মায়ের জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। ৫-১০ মিনিটের মধ্যে এই ভ্রূণ প্রতিস্থাপন হয়ে যায়। ভ্রূণকে ক্যাথিটার নামের ছোট্ট টিউবে রেখে এবং যথাসম্ভব কম নাড়াচাড়া করে নিপুণ হাতে জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের কাজ করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
কিছুদিন পরে, মায়ের রক্তপরীক্ষা করা হয়। স্বাভাবিক ভাবে কনসিভ করলে মায়ের শরীরে হরমোনের মাত্রা যেরকম আসে, এই ক্ষেত্রেও যদি সেরকম ফলাফল আসে, তা হলে এই IVF –এর পুরো প্রক্রিয়াটি সফল হয়েছে বলা হয়।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null