আমাদের শরীরে রক্ত উৎপাদন হওয়ার জন্য আয়রন নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দায়ী। শরীর এই আয়রনের সাহায্যেই হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। এই হিমোগ্লোবিন রক্তের মাধ্যমে শরীরের সর্বত্র অক্সিজেন সরবরাহ করে। শিশুর শরীরে যদি হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হয়, তা হলে শরীর পর্যাপ্ত মাত্রায় লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে পারে না এবং শিশুর শরীরে রক্ত চলাচলের মাধ্যমে অক্সিজেনের প্রবাহও ঠিক ভাবে হয় না। আয়রনের অভাবে শিশু রক্তাল্পতা বা anemia-র শিকার হয়। একদম ছোট্ট বাচ্চারা, যারা বুকের দুধ খায়, তারা সাধারণত মায়ের দুধ থেকেই পর্যাপ্ত আয়রন পেয়ে যায়। আর যেসব বাচ্চারা ফর্মুলা খেতে শুরু করেছে, তারাও সেই ফর্মুলা থেকেই প্রয়োজনীয় আয়রন পেয়ে থাকে; কারণ সমস্ত নামী কোম্পানির ফর্মুলা বা বাচ্চাদের খাবার আয়রন সমৃদ্ধ হয়। (Iron Rich Foods For Babies and Toddlers in Bangla. Bachhar jonye iron smridhho khabar)
যেসব বাচ্চারা প্রসবের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম নেয় বা জন্মের সময় ওজন খুব কম থাকে, তাদের সাধারণ বাচ্চাদের তুলনায় বেশি পরিমাণে আয়রনের প্রয়োজন হয়।
আপনার বাচ্চা যদি সলিড খাবার খেতে শুরু করেছে বা ফর্মুলার পাশাপাশি তাকে আপনি একটু করে ভিন্ন স্বাদের খাবার খাওয়ার অভ্যেস করাচ্ছেন, তা হলে অবশ্যই খেয়াল রাখুন যে, সে খাবারের থেকে পর্যাপ্ত আয়রন পাচ্ছে কি না? বাড়ন্ত ছানার খাদ্যতালিকায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেন অবশ্যই থাকে। কোন ১০টি খাবারে বাচ্চা পর্যাপ্ত আয়রন পেতে পারে, তারই একটা হিসেব ছকে দিচ্ছি আমরা।
ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আধ কাপ ডিমের কুসুমে প্রায় ৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
প্রাণীজ লিভার আয়রনের অন্যতম উৎস বলা চলে। মুরগীর মাংস এবং লাল মাংসেও এই আয়রন থাকে। তবে মাংস রান্না করার সময় মাংসের ফ্যাট জাতীয় অংশ বাদ দিয়ে রান্না করার চেষ্টা করুন। কারণ ফ্যাটের অংশে আয়রন খুবই কম থাকে। দেখা গিয়েছে, ৩ আউন্স লাল মাংসে প্রায় ২-৩ মিলিগ্রাম আয়রন বর্তমান।
আধ কাপ কুমড়োর বীজে প্রায় ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। কুমড়োর বীজ গুঁড়ো করে বা মিহি করে বেটে বিভিন্ন খাবারে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন।
রান্না করা পালং শাক শিশুর শরীর হজম করে নিতে পারে সহজেই। রান্না করা পালং শাক এক কাপ খেলে শিশুর শরীরে প্রায় ৬ মিলিগ্রাম আয়রন যায়। এই পালং শাক ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ফাইবার ও ভিটামিন ই-র গুণেও সমৃদ্ধ।
আলুর সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে হলে আলু খোসা সমেত রান্না করুন। বাচ্চারা সাধারণ আলু বা মিষ্টি আলু এমনিই খুব পছন্দ করে। খোসা শুদ্ধ আলু বেক করে বা পাতলা করে কেটে ভাপিয়ে রান্না করে শিশুকে দিন। আলুতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি-ও বর্তমান। খোসা সমেত একটি সেদ্ধ আলুতে প্রায় ৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
মুসুরি ডাল, রাজমা, রমা কলাই, মটরশুঁটি, শিমের বীজ ইত্যাদিতে আয়রনের পরিমাণ পর্যাপ্ত। আধ কাপ মুসুরি ডালে প্রায় ৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। ছোলাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এক কাপ ছোলাতে প্রায় ৫ মিলিগ্রামের কাছাকাছি আয়রন থাকে।
বাচ্চারা কিসমিস খেতে ভীষণ পছন্দ করে। একটি কাপের ১/৪ কাপ কিসমিসে প্রায় ১ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। কিসমিস, আপ্রিকট ইত্যাদি শুকনো ফল বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে।
পিনাট বাটার শুধু খেতেই যে সুস্বাদু তা নয়, শিশুর শরীরে আয়রনের জোগান দিতেও পারদর্শী। ওটমিল বা ব্রেডের সাথে পিনাট বাটার বাচ্চাকে খেতে দিন।
ঠিক শুনেছেন, চকোলেট সবসময় খারাপ হয় না। অরগ্যানিক ডার্ক চকোলেট আয়রনের অন্যতম ভালো উৎস এবং এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও থাকে। এতে চিনির মাত্রা কম হওয়ায় বাচ্চার দাঁতে ক্যাভিটি হওয়ার ভয়ও থাকে না।
সামুদ্রিক মাছের মধ্যে সহজলভ্য চিংড়ি মাছ আয়রনের খুব ভালো উৎস। নানা রকম চিংড়ি মাছ আপনি বাচ্চার জন্য নানা উপায়ে রান্না করে দিতেই পারেন। তবে সাবধান, চিংড়ি মাছে অনেকের সাংঘাতিক এলার্জি থাকে। তাই সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন বা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন। (Iron Rich Foods For Babies and Toddlers)
ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে আয়রন খুব ভালোভাবে শোষণ করতে সাহায্য করে। তাই বাচ্চার শরীরে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তার শরীরে যাতে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম যায়, সেটাও দেখা প্রয়োজন। খাবারের মাধ্যমেই যদি বাচ্চা প্রয়োজনীয় সমস্ত ভিটামিন ও মিনারেল পেয়ে যায়, তার থেকে বেশি ভালো আর কিছু হয় না। নিজে নিজে কখনও কোনও আয়রন সাপ্লিমেন্ট কিনে বাচ্চাকে খাওয়াবেন না। খাদ্যাভ্যাস থেকে শিশুর শরীরে কোনও অসুবিধা দেখা দিলে বাচ্চার ডায়েটিশিয়ান বা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null