কী কী কৌশলে সহজে ছাড়াবেন সোনার স্তন্যপানের অভ্যাস? দেখে নিন একনজরে!

কী কী কৌশলে সহজে ছাড়াবেন সোনার স্তন্যপানের অভ্যাস? দেখে নিন একনজরে!

স্তন্যপান যে শিশু ও মায়ের মধ্যে শুধু একটা নির্ভেজাল ভালোবাসা ও নির্ভরশীলতার বন্ধন গড়ে তোলে, শুধু তাই নয়; স্তন্যপান করানো বা করা দুটোই সমান ভাবে জরুরি। শিশুর জন্য তো বটেই, স্তন্যপান করানো মায়ের সুস্বাস্থ্যের জন্যও ভীষণ প্রয়োজন। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত একটি শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধই খাওয়ানো উচিত। ৬ মাসের পর থেকে বাচ্চা একটু করে সলিড খাবার খেতে শুরু করে। ৬ মাসের পর বাচ্চা শুধুমাত্র বুকের দুধের ওপর নির্ভর করে থাকে না বা থাকা কাম্যও নয়। কিন্তু সে বিশেষ কিছু সময়ে, যেমন ঘুমনোর আগে বা রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়লে, মায়ের দুধই খেতে চায়। ১-১.৫ বছর পর্যন্ত সলিড খাবারের পাশাপাশি বুকের দুধ শিশুকে দিতেই পারেন আপনি। কিন্তু, ১৮ মাস হয়ে গেলে ধীরে ধীরে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা উচিত। সাধারণত, অনেক বাচ্চাই ২ বছরের পর বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয় নিজে নিজেই। কিন্তু আবার অনেক ক্ষেত্রেই সেটা হয় না। বাচ্চা একটা নির্দিষ্ট বয়সের হয়ে যাওয়ার পরও যদি মায়ের দুধ খাওয়া না ছাড়ে, তা হলে কৌশল করে তার এই অভ্যাস ছাড়াতে হবে। ১৮ মাসের পর থেকেই যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ার অভ্যেস ছাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেন, কিছুদিনের মধ্যে শিশু তাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। কী কী কৌশলে সহজে ছাড়াবেন এই অভ্যাস? দেখে নিন এক নজরে। (Bacchake buker dudh chharanor kichu koushol. How to wean your child at 18 months in Bangla)

আরও পড়ুনস্তন্যপান করানো মায়েদের খাদ্যতালিকা

#1. মায়ের দুধ ছাড়ানো: কখন করবেন, কী ভাবে করবেন (How to wean your child at 18 months)

  • নিজের ধৈর্য বাড়িয়ে নিন সবার আগে। একটি বাচ্চাকে মানুষ করার ক্ষেত্রে সম্ভবত ধৈর্যটাই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। বাচ্চার জন্মগত অভ্যাস ছাড়াতে একটু সময় লাগবে বই কি। তাই শুরুর আগে নিজে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকুন।
  • বাচ্চা সলিড খেতে শুরু করেছে এবং আপনি মানসিক ভাবে প্রস্তুত যে, ওকে বুকের দুধ খাওয়ানো আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেবেন। এক্ষেত্রে, বাচ্চা যাতে অন্য সলিড খাবার থেকেই সমস্ত পুষ্টিগুণ যথেষ্ট পরিমাণে পায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • বাচ্চাকে নিজে থেকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দিন। বাচ্চা যদি নিজে খেতে চায়, তা হলে প্রথম দিকে তাকে ‘না’ বলবেন না। তাকে দুধ খাওয়ান কিন্তু অল্প পরিমাণে। এমনটা যেন কখনই না হয়, যে বাচ্চার খিদে পেয়েছে এবং সে খিদে মেটানোর জন্য বুকের দুধ খেতে চাইছে। বাচ্চা যদি মায়ের দুধ খাবার বায়না ধরে, তা হলে যেন তা নিতান্তই অভ্যাসবশত হয়ে থাকে।

#2. বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করবেন যেভাবে (How to wean your child (older children))

  • বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আস্তে আস্তে কমাতে থাকুন এবং একবার খাওয়ানোর পর আরেকবার খাওয়ানোর মধ্যে যেন অনেকটা সময়ের পার্থক্য থাকে।
  • ঘুমানোর সময় বাচ্চা যেভাবে শুয়ে বুকের দুধ খেতে অভ্যস্ত, সেই ভাবে শুয়ে তাকে ঘুম পাড়াবেন না। এমন পোশাক পরবেন না, যাতে বাচ্চা সহজেই বুকের দুধ খেতে পারে। দুপুরে বা বেলার দিকে বাচ্চাকে কোলে শুইয়ে ঘুম পাড়ান।
  • অনেক বাচ্চা বুকের দুধ ছাড়ানোর সময় প্রচণ্ড কান্নাকাটি করে, জেদি হয়ে যায় এবং যে কোনও জায়গাতেই দুধ খাওয়ার জন্য বায়না করতে পারে। তাকে আদর করে ভোলাবার চেষ্টা করুন। ধমকে বা বকে কোনও কাজ হয় না, বরং হিতে বিপরীত হয়। অনেক বাচ্চা মনে করে যে, মা তার থেকে হয়তো দূরে চলে যাচ্ছে বা তাকে আগের মতো ভালোবাসছে না। এই ধারণা থেকে সে আরও বেশি জেদি হয়ে যায় এবং দুধ খাওয়ার জন্য বায়না বেশি করে। বাচ্চাকে এই সময় বেশি আদর করুন, সঙ্গ দিন এবং তাকে অন্যান্য কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। তাকে গল্প বলুন, তার প্রিয় কার্টুন চরিত্র বা পুতুলকে দেখিয়ে ওকে বোঝান যে, আর মায়ের দুধ খাওয়া ঠিক নয়, মা কষ্ট পাবে বা সে বড় হয়ে গেছে বা সবাই হাসবে।
  • বাচ্চা পড়ে গিয়ে কাঁদলে বা টিকা নিতে গেলে তার পরেই তাকে আর বুকের দুধ দেবেন না। অন্যভাবে ভোলানোর চেষ্টা করুন। আপনার বাচ্চা কী ভালোবাসে বা কী করতে পছন্দ করে সেটা আপনি সবথেকে বেশি জানেন।সেভাবেই তাকে ভোলান।
  • রাতে ঘুমের মাঝে উঠে অভ্যাসবশত বাচ্চা বুকের দুধ খাওয়ার বায়না করতেই পারে। তাকে সোজা করে কোলে নিয়ে আপনার কাঁধে মাথা রেখে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন, প্রথমে কাঁদলেই দুধ খেতে দেবেন না। এরকম অন্যভাবে কিছুদিন ঘুম পাড়ালেই বাচ্চা বুঝে যাবে যে, সে আর দুধ পাবে না। প্রয়োজন হলে, খাটের পাশে ও যে দুধ খায়, সেটা কিছুটা বানিয়ে রেখে দিন। বোতলে বা সিপার কাপে ওকে খেতে দিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন, তারপর বাচ্চাকে ও যে ভাষা বোঝে, তাতেই বোঝান যে, সকাল না হলে আর দুধ খাওয়া যাবে না।
  • শুনতে একটু নিষ্ঠুর লাগতে পারে, কিন্তু বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়া ছাড়াতে এই টোটকাগুলি প্রয়োগ করতে পারেন। সামান্য নিম পাতা বা কালমেঘ পাতার রস নিয়ে নিপলে লাগিয়ে রাখুন। বাচ্চা জেদ করে দুধ খেতে গেলে যখন ওই প্রচণ্ড তেঁতো স্বাদ পাবে, পরের বার জেদ করার আগে ওই ছোট্ট মাথাতেই দুবার ভেবে নেবে। আরও একটা এরকম উপায় আছে। একটা রসুনের কোয়া একদম কুচি কুচি করে কেটে নিন। এবার এক চামচ অলিভ অয়েলের মধ্যে ওই রসুন কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তেলে রসুন ভিজিয়ে রাখার ফলে উগ্র গন্ধ হয়ে যাবে। এবার ওই তেলটা নিপলে লাগিয়ে রেখে দিন। বাচ্চা যখন দুধ খেতে যাবে, ওই উগ্র গন্ধের জন্য সে খেতে পারবে না। এইরকম বেশ কিছুদিন করতে থাকুন। ক্রমাগত তেঁতো স্বাদ বা উগ্র গন্ধ পেতে থাকলে বাচ্চা নিজেই আর মায়ের দুধ খেতে চাইবে না।

আরও পড়ুনব্রেস্টফিডিং – কিছু মিথ এবং সত্যি

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null