কিছু সময় পরপরই শুধু ‘প্যাঁ’। মা যেই একটু আরাম করে পা ছড়িয়ে বসেছে, অমনি দস্যি ছানার ইচ্ছে হল, ‘অনেকক্ষণ চুপচাপ আছি, এবার একটু কেঁদে নেওয়া যাক ’। একরত্তি ছোট্ট শিশুরা এই কান্নার মাধ্যমেই বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ করে। তার সব অনুভূতি, সব চাহিদা, ভালোবাসা, মন্দবাসার একটাই বাহ্যিক প্রকাশ; কান্না। তাই কচি শিশুর কান্না নিছক চ্যাঁ-প্যাঁ নয়, তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনেক কথা।
আর সেটা বুঝে নিতে হয় মা – বাবাকেই। যারা সদ্য মা-বাবা হয়েছেন, বাচ্চা সম্বন্ধে তাদের কোনও অভিজ্ঞতা স্বাভাবিক ভাবেই থাকে না। অনেক সময় দেখা যায়, বাচ্চার কান্নার মানে উদ্ধার করতে ব্যর্থ মা নিজেও কাঁদতে বসে পড়েছেন।
আপনার ছোট্ট বাচ্চাটির কান্না বোঝা একেবারেই এতটা কঠিন কাজ নয়। প্রথম প্রথম অসুবিধে হবে; তারপর দেখবেন বাচ্চা কান্নার জন্য তৈরি হওয়ার আগেই, আপনি তৈরি কান্নার দাওয়াই নিয়ে। কয়েকদিন বাচ্চার কান্নার ধরন বা সময় একটু পর্যবেক্ষণ করুন, দেখবেন বাচ্চার কান্নার ভাষা আপনি একবারেই বুঝে যাচ্ছেন। (Learn how to understand your baby’s cry in Bangla.)
খিদে পাওয়ার আগেই বাচ্চাকে নির্দিষ্ট সময়মতো খাইয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু কখনও যদি দেখেন যে বাচ্চা খুব বেশি চিৎকার না করে একটানা কাঁদছে, মুখে আঙুল দিচ্ছে বা হাত ঢোকাতে চাইছে, তা হলে বাচ্চার খিদে পেয়েছে। নিশ্চিত হবার জন্য আপনার আঙুল আলতো করে বাচ্চার মুখের কাছে দিন। যদি বাচ্চা আপনার আঙুল খেতে যায়, তা হলে সত্যিই বাচ্চার খিদে পেয়েছে।
বাচ্চার শরীরে কোনও অস্বস্তি বা ব্যথা হলে বাচ্চা চোখ- মুখ লাল করে প্রচণ্ড চিৎকার করে কাঁদে। কান্নার প্রাবল্য বাড়তেই থাকে। অনেকসময় দেখা যায়, এভাবে কাঁদতে কাঁদতে যেন বাচ্চার শ্বাস আটকে যাচ্ছে, কান্না আটকে যাচ্ছে। এরকম ভাবে কাঁদলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা বা গ্যাস হওয়ার ব্যথা খুবই সাধারণ একটি জিনিস। খাওয়ানোর পর যদি বাচ্চা কাঁদতে শুরু করে, তা হলে হয়তো তার পেটে গ্যাস হচ্ছে। কলিক ব্যথাতেও বাচ্চারা বেশ কষ্ট পায় এবং দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাঁদতে পারে। বাচ্চার পেটে ব্যথা হচ্ছে বুঝতে পারলে গ্রাইপ ওয়াটার খাওয়ান। এছাড়াও আলতো হাতে পেটে, পিঠে চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করে দিন যাতে গ্যাস বেরিয়ে যায়। বাচ্চাকে প্রত্যেকবার খাওয়ানোর পর তাকে কোলে নিয়ে আলতো করে পিঠ চাপড়ে চাপড়ে ঢেকুর তুলিয়ে দিন। পেট ভরে খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কখনও শুইয়ে দেবেন না।
বাচ্চারা আদর খেতে খুবই পছন্দ করে এবং সবথেকে বেশি উপভোগ করে মায়ের সান্নিধ্য। যদি আপনার বাচ্চা আপনি সামনে গেলেই ঘ্যানঘ্যান করতে শুরু করছে, আপনি ওর কাছে না দাঁড়িয়ে ঘুরে ফিরে বেড়ালে কেঁদে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে, তা হলে ওকে কোলে নিয়ে একটু আদর করুন তো দেখি। মা- বাবা বা বাড়ির অন্য কোনও প্রিয়জনের কাছে আদর পেলেই সে চুপ করে যাবে।
আরও পড়ুনঃ হেঁচকি খুকির, হেঁচকি খোকার; হেঁচকিতে যায় চেনা!
অবাক হবেন না, একদম কচি বাচ্চারও একাকীত্ব বোধ হয়ে থাকে। বাচ্চা সবসময় চায় যে তার সাথে কেউ থাকুক, তার সাথে কথা বলুক, সঙ্গ দিক। অনেক সময় দেখা যায়, বাচ্চার ঘর থেকে সবাই চলে গেলে সে কাঁদতে শুরু করে। ঘরে কেউ তার কাছে এলেই সে চুপ। আবার ঘরে আর ৫ জন নিজের মতো গল্পে মত্ত থাকলে তাতেও বাচ্চার প্রবল আপত্তি। সে কথা বলতে জানে না বলে কি সে গল্প করতে পারে না? অতএব, কান্না দিয়েই সে নিজের প্রতিবাদ বা অভিমান দুই ব্যক্ত করে। তাই নতুন মা-বাবা, বাচ্চাকেও সময় দিন, সবার সাথে গল্পের মাঝে ওর সাথেও দু-একটা কথা বলে নিন।
বাচ্চা ঘ্যানঘ্যান করে কাঁদার সাথে সাথে যদি হাই তোলে, চোখ কচলায়, তা হলে তাকে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিন। ঘুম পেলেও সঠিক পরিবেশ সে পাচ্ছে না বা আরাম করে শুতে পারছে না, তাই বাচ্চা কাঁদছে। চারদিক শান্ত করে তার নরম বিছানায় শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিন।
অনেক বাচ্চা ডায়াপার ভিজে গেলেই অস্বস্তিতে কাঁদতে শুরু করে দেয়। যদিও কখনওই বাচ্চাকে ভেজা ডায়াপার পরিয়ে ফেলে রাখা উচিত নয়। এতে খুব বাজে র্যাশ বা ত্বকে জ্বালা হতে পারে। সময়ের আগেই বাচ্চার ডায়াপার পাল্টে দেওয়া দরকার এবং ভালো ব্র্যান্ডের উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন ডায়াপার ব্যবহার করা উচিত। বাচ্চা বিরক্ত হয়ে কাঁদলে, ডায়াপার বদলাতে হবে কি না, একবার দেখে নিন।
সাধারণত, যেসব কাজ করলে বাচ্চা কান্না থামিয়ে শান্ত হয়ে যায়, সেগুলো সব করলেও যদি বাচ্চা ক্রমাগত কাঁদতে থাকে, তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বাচ্চা মানুষ করার ক্ষেত্রে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। বাচ্চার কান্না থামাতে না পেরে কখনওই নিজের মেজাজ হারিয়ে ফেলবেন না, বাচ্চাকে জোরে ঝাঁকুনি দেবেন না বা ওর ওপর চেঁচাবেন না। মনে রাখবেন, আপনার রাগ বা বকুনি বোঝার মতো বয়স ওর হয়নি। বাচ্চার সবথেকে প্রিয় মানুষ মা, ঠিক সেভাবেই আদর করে, ধৈর্য সহকারে বাচ্চাকে ভোলানোর চেষ্টা করুন। ছোট্ট একরত্তি কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার শান্ত হয়ে খেলা করবে।
আরও পড়ুনঃ স্তন্যপানের পরেও কাঁদতে পারে শিশু, রইল কারণ-সমেত সমাধান!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null