ভরা গ্রীষ্মের মাঝে কোলে এসেছে বাড়ির খুদে সদস্যটি। বাড়ির বড়রা যেখানে দিনে ৩-৪ বার গায়ে জল ঢেলে নিচ্ছেন, ফ্যানের তলায় বসে আইসক্রিম খাচ্ছেন বা লু কাটাতে আম-পোড়ার শরবতে চুমুক দিচ্ছেন; সেখানে ওই একরত্তির কান্নাই একমাত্র সম্বল। আর বেচারি নতুন মা পড়েছে মহা বিপদে। এক তো গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত, তার ওপর ওইটুকু বাচ্চাকে কীভাবে সে আরাম দেবে বুঝে উঠতে পারছে না। চারিদিক থেকে আসা নরম গরম উপদেশের যদিও কোনও অভাব নতুন মায়ের নেই, তাও যেন খুঁতখুঁতুনি যায় না তার। নতুন মায়ের জন্য আমাদের প্রথম পরামর্শ, সবার আগে আপনি মাথা ঠান্ডা রাখুন এবং নিজেকে সুস্থ রাখুন। তবেই না কচিটাকে আরাম দিতে পারবেন! গরমে ডিহাইড্রেশন, হিট র্যাশ, ডায়াপার র্যাশ, খেতে না চাওয়া বা শরীর গরম হয়ে যাওয়া, এইসব কিছু থেকে শিশু বাঁচতে পারে আপনি একটু সতর্ক থাকলেই। কী করলে এই প্রচণ্ড গরমেও ভালো থাকবে সদ্যোজাত শিশুটি, দেখে নিন এক নজরে। (Gorome shishur jotno. How to take care of a newborn in summer in Bangla.)
গরমে আমাদের যেমন ঘন ঘন জল তেষ্টা পায়, শিশুরও কিন্তু গলা শুকিয়ে যায়। যেহেতু, সদ্যোজাত শিশু মায়ের দুধই খায়, তাই ওকে কিছুক্ষণ পরপর একটু করে দুধ খাইয়ে দিন। যদি কোনও কারণবশত আপনি ওকে ব্রেস্ট মিল্ক দিতে পারছেন না এবং ফর্মুলা খাওয়াতে শুরু করেছেন, তা হলে বাচ্চাকে ফর্মুলার সাথেই জল দিতে হবে। কিন্তু, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। বাচ্চাকে জল খাওয়াতে হলে সেই জল যেন অতিমাত্রায় বিশুদ্ধ হয় এবং জলের বোতল যেন অবশ্যই স্টেরিলাইজড করা হয়। শিশুকে জল দেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া একান্ত জরুরি। বাচ্চা ব্রেস্ট মিল্ক খেলে লক্ষ্য রাখতে হবে আপনার খাওয়া-দাওয়ার ওপর। বেশি করে জল খান আপনিও। দিনে অন্তত ৩ লিটার তো বটেই।
প্রচণ্ড গরমে বাচ্চাকে স্নান করানো অবশ্যই উচিত। তবে, মনে রাখবেন, বাচ্চার স্নানের জল যেন কখনই খুব গরম বা খুব ঠান্ডা না হয়। কুসুম গরম জলে বাচ্চাকে স্নান করান। হাতের কনুই জলে ডুবিয়ে জলের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিন। বাচ্চাকে স্নান করালে বাচ্চার দেহের তাপমাত্রাও কমে এবং ও আরাম পায়। এমনকি, ডাক্তার যদি অনুমতি দেন, তা হলে আপনার ছোট্ট শিশুটিকে আপনি দিনে এক বারের বেশিও স্নান করাতে পারেন। স্নানের সময় বগল ও গোপনাঙ্গের খাঁজ পরিষ্কার করে দিন। এইসব স্থানে ঘাম বেশি হয় বলে নোংরা বেশি বসে ইনফেকশন হতে পারে।
গরম কাল বলে ভাববেন না, যে শিশুকে তেল মাখানো যাবে না। আমরা না হয় বড়, গরম কালে তেল মাখার নাম শুনলে আঁতকে উঠি। কিন্তু, শিশুর ক্ষেত্রে একেবারেই এই ধারণা কাজ করে না। বাচ্চাকে ভালো কোম্পানির বেবি অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করে দিন। লক্ষ্য রাখবেন, বাচ্চাকে যে বেবি অয়েল মাখাচ্ছেন সেটা ওর স্যুট করছে কি না। যেহেতু, বাচ্চা একেবারেই ছোট, তাই যে কোনও নতুন কিছু শুরুর আগে একটু বিশেষ লক্ষ্য রাখতেই হবে। ভালো গুণমানের বেবি অয়েল শিশুকে মাখালে শিশুর শরীর ঠান্ডা হয়, ত্বক নরম থাকে এবং ওর ঘুমও ভালো হয়। তবে, যেহেতু গরম কাল, তাই শিশুকে তেল মালিশ করে দেওয়ার পর ভালো করে ভিজে কাপড় দিয়ে সব তেলটা মুছে দিন বা স্নান করিয়ে দিন। শিশুর গায়ে যেন অতিরিক্ত তেল লেগে না থাকে বা তেল প্যাচপ্যাচে ভাব না থাকে। গরম কালে সরষের তেল মাখাবেন না কারণ; এই তেল শরীর গরম করে। গরমে সরষের তেল মাখালে শিশুর র্যাশ, ফুসকুড়ি বা ঘামাচি হতেই পারে। বেবি অয়েল ছাড়া নারকেল তেল, তিল তেল বা অলিভ অয়েল শিশুর মালিশের জন্য খুব ভালো।এই তেলগুলি মাখালেও শিশুর শরীর ঠান্ডা হয়।
আরও পড়ুন: কীভাবে বুঝবেন বাচ্চার কান্নার ভাষা?
ভালো কোম্পানির বেবি পাউডার শিশুটিকে অনেক আরাম দিতে পারে। গরমে ঘাম থেকে হওয়া র্যাশ বা বিছানার সাথে ঘষা লেগে শিশুর পিঠে যে র্যাশ হয়, তার থেকে রক্ষা করতে পারে এই বেবি পাউডার। বেবি পাউডারে কুলিং এজেন্ট থাকায় বাচ্চার শরীর ঠান্ডাও রাখে। তবে, কোনও কিছুই তো অতিরিক্ত ভালো নয়। এই একই কথা পাউডারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বেশি পাউডারে লোমকূপ বন্ধ হয়ে র্যাশ গজাতে পারে। বাচ্চার গায়ে সরাসরি পাউডার ঢালবেন না। নিজের হাতে পাউডার ঢেলে হাতে মেখে নিন, তারপর বাচ্চার গায়ে আপনার হাতে করে পাউডার মাখিয়ে দিন। এর ফলে, বাচ্চাকে অতিরিক্ত পাউডার মাখানোও হয় না, আবার বাচ্চার নাকে পাউডার ঢুকে যায় না।
বাচ্চাটিকে এমন জামা-কাপড় পরান, যেন তাতে যথেষ্ট হাওয়া বাতাস খেলে। বাচ্চার গায়ে ঘাম হলে কিছু সময় পরপর ওর জামা পাল্টে দিন। দুপুরের চড়া রোদে ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে না বেরোলেই ভালো। সারাদিন ডায়াপার পরিয়ে রাখবেন না। প্রয়োজনে শুধুমাত্র রাতেই ডায়াপার পরান।
জন্মের পর বাচ্চারা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করে। তাই বাচ্চা যেখানে থাকে, সেই ঘরের তাপমাত্রার হঠাৎ হঠাৎ রদবদল তার ছোট্ট শরীর ঠিক ভাবে মানিয়ে নিতে পারে না। বাচ্চা যে ঘরে থাকবে, সেখানে ফ্যানের স্পিড বা এয়ারকন্ডিশনের তাপমাত্রা একই রকম রাখুন। বাচ্চার ঘরের আদর্শ তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি হওয়া উচিত। এয়ার কুলার ব্যবহার করলে তা যেন নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। How to take care of a Newborn in Summer in Bangla.
উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও বাড়ির আশেপাশের জায়গা বা জল জমার মতো জায়গা থাকলে, সেগুলি পরিষ্কার করিয়ে নিন। এতে জমা জলে মশা জন্মাতে পারবে না। বাড়িতে জানলায় নেট লাগিয়ে রাখলে ঘরে হাওয়া চলাচল হয় আবার শিশু পোকামাকড়-মশা ইত্যাদির কামড়ের থেকে রক্ষা পায়। গরমকালে দুপুরে কোনও ভাবেই বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে বেরোবেন না। কোনও ঘিঞ্জি জায়গায় ছোট্ট শিশুকে নিয়ে যাবেন না। একটু সতর্ক থাকুন, আরামে কাটবে গরম।
আরও পড়ুনঃ মশা-মাছি থেকে শিশু থাকুক দূরে
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null