কিছু কিছু বাচ্চার হয়তো বাইরের পৃথিবীটা দেখার বা তার মা-বাবার কোলে চাপার ভীষণ তাড়া থাকে। আর তাই, দিন-ক্ষণ, সঠিক সময় কিছু না বিবেচনা করেই একরত্তি এসে হাজির হয় প্রি-ম্যাচিওর বেবি (premature baby) বা সময়ের আগে জন্ম নেওয়া বাচ্চা হিসেবে। (Parenting a premature baby/ How to take care of a premature baby in Bangla)
যাই হোক, যতটা খেলাচ্ছলে আমরা এই গল্পটা করছি, এর বাস্তব কিন্তু মোটেই এতোটা মধুময় নয়। সাধারণত, মায়ের গর্ভে যদি শিশু ৪০ সপ্তাহ থাকে, তা হলে তার পূর্ণ বিকাশ হয়ে যায়। ৪০ সপ্তাহ পরে জন্মগ্রহণ করা শিশু সহজেই বাইরের পৃথিবীর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আর যেসব শিশু গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহের আগেই জন্ম নেয়, তাদের প্রি-ম্যাচিওর বাচ্চা বলা হয়। একটি প্রি-ম্যাচিওর বাচ্চার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিপূর্ণ রূপে তৈরি হয় না এবং তারা সহজে মাতৃগর্ভের বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। সেক্ষেত্রে, এই সব বাচ্চার সঠিক চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন হয়। জন্মের সময় শিশুর ওজন যদি আড়াই কিলোগ্রামের কম হয়, তা হলে তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় Low birth weight baby (LBW) বলা হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রি- ম্যাচিওর বাচ্চারা এইরকমই কম ওজনের হয়ে থাকে বা অনেক ক্ষেত্রেই আরও কম ওজন নিয়েও জন্মগ্রহণ করতে পারে। আবার ব্যতিক্রম হিসেবে, নির্দিষ্ট সময়ে জন্ম নেওয়া বাচ্চাও কোনও কারণে কম ওজনের হয়ে থাকতে পারে। জন্মানোর পরে একটি প্রি- ম্যাচিওর বাচ্চার উন্নতমানের যথাযথ চিকিৎসা যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরে সঠিক যত্নের। আজ এই নিয়েই আমাদের আলোচনা।
Also read: শিশুর সুরক্ষায় কোন বয়সে কোন টিকা!
গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহের আগেই বাচ্চার জন্ম হতে পারে। এই শিশুদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে বিকশিত হওয়ার আগেই তারা জন্ম নেয় বলে, বাইরের পরিবেশে তারা খাপ খাওয়াতে পারে না এবং সঠিক ভাবে শ্বাসক্রিয়াও চালাতে পারে না। চোখের পাতা তৈরি হয় না বলে, এরা চোখ মেলে চাইতেও পারে না। এই বাচ্চাদের হাসপাতালের Neonatal intensive care unit (NICU)-তে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিশেষ চিকিৎসা প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, এই শিশুরা মানসিক বা শারীরিক দিক থেকে নিখুঁত হতে পারে না। ২৮-৩১ তম সপ্তাহের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রি- ম্যাচিওর বাচ্চার ওজন তুলনামূলক কিছুটা বেশি হয়। এদের শ্বাসক্রিয়াও বাইরে থেকে অক্সিজেন প্রয়োগ করে নিয়মিত রাখতে হয় ও টিউবের সাহায্যে বাচ্চাকে খাওয়ানো হয়। আবার গর্ভাবস্থার ৩২-৩৬ মাসের মধ্যে যেসব শিশু জন্ম নেয়, তাদের ওজন কম হলেও এদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতোই কাজ করতে শুরু করে দেয়। সঠিক তত্ত্বাবধানে থাকলে এরা জলদিই সুস্থ হয়ে ওঠে।
একটি প্রি- ম্যাচিওর বাচ্চার জন্মের পরেই বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। সে না পারে ঠিকমতো শ্বাস নিতে, না পারে মায়ের দুধ খেতে। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সব বাচ্চার শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা খুব বেশি থাকে এবং বিশেষ চিকিৎসার মাধ্যমে তার জন্ডিস কমানো হয়। বাচ্চাকে টিউবের মাধ্যমে খাবার খাওয়াতে হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত NICU তে বিশেষ যত্ন ও পর্যবেক্ষণে বাচ্চাকে রাখার পরেই চিকিৎসক বাচ্চাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। প্রি-ম্যাচিওর বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় বলে এরা সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই, জন্মের পরেও যেমন উন্নতমানের ডাক্তারি পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন, ঠিক তেমনই প্রয়োজন বাচ্চা নিজের বাড়ি আসার পর তার সঠিক দেখভালের।
Also read: কীভাবে বুঝবেন বাচ্চার কান্নার ভাষা?
বাচ্চা যদি ইনকিউবেটরের বাইরে ২৪-৪৮ ঘণ্টা কোনও অসুবিধা ছাড়া শ্বাস নিতে পারে, দেহের তাপমাত্রা ঠিক থাকে, ওজন ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে এবং সে মায়ের দুধ খেতে পারে, তা হলে চিকিৎসক বাচ্চাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। বাড়ি আসার পর যেভাবে বাচ্চার যত্ন করবেন:
পরিশেষে বলি,বাচ্চা মানুষ করা অবশ্যই জটিল এবং তার থেকেও জটিল প্রি- ম্যাচিওর বাচ্চাকে সুস্থ করে মানুষ করা। তবে অসম্ভব নয় কোনও কিছুই। সঠিক যত্ন আর চিকিৎসা পেলে এই বাচ্চারাও সম্পূর্ণ সুস্থ বাচ্চার মতোই হয়ে ওঠে। প্রয়োজন শুধু বাড়তি সতর্কতা আর চোখ-কান খোলা রাখা। একটু সতর্ক হলেই যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে পারবেন আপনি। ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। বিশেষ পরিস্থিতিতে কীভাবে শিশুকে সামলাবেন সেই ব্যাপারে কথা বলুন। ডাক্তারের কাছে CPR এর সম্বন্ধে জেনে রাখুন, যাতে বাচ্চার শ্বাসের অসুবিধা হলে তাকে সেই মুহূর্তে আরাম দিতে পারেন। বাড়ির সবার সহযোগিতা নিন আর একটু সাহসী মন রাখুন, প্রি-ম্যাচিওর বাচ্চার কোনও ক্ষতিই হবে না।
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null