বেবি সোয়াডলিং ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে জড়িয়ে রাখুন শিশুকে; কীভাবে, কেন? উত্তর এখানে!

বেবি সোয়াডলিং ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে জড়িয়ে রাখুন শিশুকে; কীভাবে, কেন? উত্তর এখানে!

প্রতিবেদনের নামটা দেখে একটু হকচকিয়ে গেলেও যেতে পারেন বই কি! আপনার মনে আসতেই পারে যে বাচ্চাকে কীভাবে কাঁথায় বা পাতলা চাদরে মুড়ে রাখব; সেটাও আমরা কীভাবে বলে বোঝাতে পারি? এ তো সবাই করে থাকে, সবাই জানে! (How to Swaddle a Baby: Instructions, Safety Tips and Benefits)

“ওইটুকু একটা বাচ্চা, তার মাথাটা বাদ দিয়ে পুরো গায়ে চাদর মুড়ে দিলেই হল। এতে এতো শেখার কী আছে বাপু? এদের সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি”।

আপনার কথা যে এক্কেবারে সঠিক, এ আমরা জানি। সত্যি, কিছু জিনিস যেমন একেবারেই শেখার নয়, ঠিক তেমনি কিছু জিনিস ‘ওঃ, এ আর এমন কী!” বলে এড়িয়ে যাওয়ারও নয়।

এইজন্যই আমরা ছোট হোক বা বড়, বাচ্চা সম্পর্কিত যে কোনও বিষয় নিয়ে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকি। আমাদের জন্য যদি একজন নতুন মায়েরও বিশেষ সুবিধা হয়, সেটাই আমাদের প্রাপ্তি।
যাই হোক, আসল কথায় ফিরি এবার। বাচ্চাকে কাঁথায় মুড়ে শোওয়ানো বা কোলে নেওয়া বা ঘুম পাড়ানো সবাই করে থাকে (How to Swaddle a Baby Step by Step)। কিন্তু,তাতে বাচ্চা কতটা আরাম পায় তার খবর ক’জন রাখেন?

নবজাতকের ঘুম, আরাম, বিশ্রাম সবকিছুতে এই সোয়াডলিং বা চাদরে মোড়া ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে বাচ্চাকে জড়ালে ও আরামে ঘুমবে বা এই চাদরে জড়িয়ে নেওয়ার উপকারিতাই বা কী? এই নিয়েই আজকের প্রতিবেদন খাস নতুন মায়েদের জন্য (How to Swaddle a Baby and Why)।

 

 

একদম ছোট্ট বাচ্চাকে চাদরে জড়িয়ে রাখা বা সোয়াডলিং কেন প্রয়োজন? (Benefits of Swaddling)

  • মায়ের পেটে যেমন গুটিসুটি হয়ে ঘুমতো ছোট্ট ছানাটি, ঠিক একইরকম আরাম ও নিরাপদ বোধ করে ওকে ঠিকভাবে কাপড় দিয়ে মোড়া হলে।
  • বাচ্চার ঘুম ভালো হয় এবং অনেকক্ষণ ঘুমোয়।
  • বাচ্চার স্নায়বিক পেশীর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • এইভাবে জড়িয়ে রাখলে বাচ্চা যেহেতু সোজা হয়ে শুয়ে থাকে, তাই সাডেন ইনফ্যানট ডেথ সিনড্রমের প্রকোপে শিশুর অকালমৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।
  • নবজাতক বা ১ মাসের বাচ্চারা ঘুমতে ঘুমতে মাঝে মাঝেই কেঁপে ওঠে। এর নাম স্টারটল রিফ্লেক্স (Startle Reflex)। একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা হলেও বাচ্চার ঘুমের ব্যঘাত ঘটতেই পারে। বাচ্চাকে কাপড়ে
  • জড়িয়ে রাখলে এই ধরনের অসুবিধা কম হয়।
  • বাচ্চাকে শান্ত করতে, ওর কান্না থামাতে খুব কাজ দেয় এই সোয়াডলিং।

 

বাচ্চাকে ছোট চাদর/কাঁথা/বেবি সোয়াডলিং ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে মুড়ে রাখার সঠিক পদ্ধতিটি জানেন? (How to Swaddle a Baby)

  • নরম, পাতলা কাঁথা, বেবি সোয়াডলিং ব্ল্যাঙ্কেট বা ছোট্ট চাদর; যা দিয়ে বাচ্চাকে জড়িয়ে নিতে চাইছেন সেটির একদিকের কোণা ত্রিভুজের মতো মুড়ে নিন।
  • ত্রিভুজের মতো কাপড়টা ভিতর দিকে থাকবে এরকম ভাবে বাচ্চাকে কাপড়ের ওপর শোওয়ান। বাচ্চার ঘাড় কিন্তু কাপড় থেকে বেরিয়ে থাকবে।
  • এবার ডানদিক থেকে কাপড় এনে বাচ্চার বামহাতের তলা দিয়ে আরামদায়ক ভাবে মুড়ে দিন।
  • এবার পায়ের তলার কাপড় নিয়ে বাচ্চার গায়ের ওপর দিয়ে নিয়ে পিঠের দিকে মুড়ে দিন (How to Swaddle a Baby Step by Step)।
  • এবার বাকি রইলো বাম হাতটি। বামদিকের কাপড়ের ভাঁজ বামহাত হয়ে বাচ্চার গায়ে জড়িয়ে ওর ডানহাতের ওপর দিয়ে জড়িয়ে দিন।
  • কখনওই খুব টাইট করবেন না। বাচ্চাকে জড়িয়ে রাখলেও সে যেন ইচ্ছেমতো তার হাত-পা নাড়তে পারে।

 

আরও পড়ুন: রাতভর শিশুর নিশ্চিন্ত ঘুমের ৭টি সহজ টিপস! সেই সাথে জেনে নিন, পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি কেন?

 

বিশেষ সতর্ক থাকবেন কী কী নিয়ে? (Swaddle Safety Tips)

সোয়াডলিং বা কাপড় দিয়ে বাচ্চাকে আরামদায়ক ভাবে জড়ানোর পদ্ধতিটি যতই জনপ্রিয় হোক না কেন; পদ্ধতি ঠিক না হলে কিন্তু আরামের থেকে অস্বস্তি বেশি হয়। তাই, জেনে রাখুন এই বিষয়গুলি;
নবজাতক এবং ১ মাসের বাচ্চাকেই এইভাবে সোয়াডলিং করুন।

  • যদি একদম ছোট বয়সে কাপড়ে জড়িয়ে ওকে কোলে তোলেননি বা ঘুম পাড়াননি; তা হলে নতুন করে ২ মাস বা ৩ মাস বয়সে এটা শুরু করবেন না।
  • বাচ্চা একটু হাত-পা নাড়তে শিখে গেলে বা ২/৩ মাসের হয়ে গেলে সোয়াডলিং করলে ওর নাড়াচাড়া করতে অসুবিধে হয় এবং সারাক্ষণ এভাবে রাখলে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় (When to Stop Swaddling)।
  • একদম ছোট্ট বাচ্চাকেও সারাক্ষণ জড়িয়ে রাখবেন না। ওকে হাত-পা মেলেও থাকতে দিন (Swaddling Baby How Long)।
  • বাচ্চার গায়ে খুব টাইট করে কাপড় জড়াবেন না। ও যেন একদম বদ্ধ অনুভব না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। হাত-পা নাড়ানোর মতো, পা মুড়ে সোজা করার মতো জায়গা যেন কাপড় জড়ানোর পরেও থাকে।
  • বাচ্চাকে যদি সোয়াডলিং ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে জড়িয়েছেন, তারপরে কোনও ভাবেই আর ওর গায়ে এক্সট্রা চাদর দেবেন না। শিশুর গা খুব গরম হয়ে যেতে পারে।
  • চাদর যেন কোনভাবেই বাচ্চার নাকে বা মুখে পৌঁছতে না পারে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন।
  • বাচ্চা যেই পাশ ফিরতে শিখবে, বা উপুড় দিতে চেষ্টা করার মতো অঙ্গভঙ্গী করবে; তখন থেকে আর কোনও ভাবেই সোয়াডলিং করবেন না।
  • সোয়াডলিং এর কাপড় যেন কোনও অবস্থাতেই ঘাড়ের ওপরে না ওঠে। বাচ্চার ঘাড় ও মাথা খোলা থাকবে সবসময়।
  • সোয়াডলিং করলে বাচ্চা যদি খুব ঘেমে যায় বা ওর শরীর গরম হয়ে যায়, তা হলে করবেন না।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যাই করুন না কেন, সতর্কতা প্রতি মুহূর্তে প্রয়োজন। তা সে খাওয়ানো হোক বা ঘুম পাড়ানো হোক বা জড়ানো। প্রয়োজনে কোনও অভিজ্ঞ মানুষের পরামর্শ নিন। আর আপনার কাজ সহজ করতে এখন অনলাইনে বা দোকানে গুচ্ছের বেবি সোয়াডলিং ব্ল্যাঙ্কেট কিনতে পাওয়া যায়। যেমন তাদের রং, তেমন তাদের বাহার। চাইলে ছোট্ট সোনার জন্য খানকতক অর্ডার দিয়ে দিতে পারেন বা টুক করে কিনেও আনতে পারেন। (How to Swaddle a Baby: Instructions, Safety Tips and Benefits)

 

আরও পড়ুন: ওর ক্র্যাডল ক্যাপ হয়নি তো? এটি সারিয়ে তোলার ঘরোয়া পদ্ধতিই বা কী কী?

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null