ঘরে বাইরে সামলে চলার লড়াইটা জিতবেন আপনিও; দরকার শুধু একটু নিয়ম আর সাহস!

ঘরে বাইরে সামলে চলার লড়াইটা জিতবেন আপনিও; দরকার শুধু একটু নিয়ম আর সাহস!

আধুনিক যুগের আর পাঁচটা মেয়ের মতোই ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী আপনি। এই মাস কয়েক হবে হয়তো, একটা ফুটফুটে শিশুর মা হয়েছেন। একটা সম্পূর্ণ অন্য জীবন, মাতৃত্বের স্বাদ এই প্রথম অনুভব করলেন; আর দেখতে দেখতে বাচ্চার জন্মের পর কয়েক মাস যেন চোখের পলক ফেলতেই শেষ হয়ে গেলো, তাই না? ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা ওয়ালা একরত্তিকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো বা শুধুই তাকিয়ে তাকিয়ে তার কীর্তিকলাপ দেখা, আপনার দিনগুলো যেন ২৪ ঘণ্টার ছিলই না। সামনে এবার এক নতুন পরীক্ষা এসে হাজির। নিজের কর্মক্ষেত্রে আবার যোগ দিতে হবে আপনাকে। মাতৃত্বকালীন ছুটি যে প্রায় শেষের মুখে। ওই পুঁচকেটাকে বাড়িতে রেখে অফিসে যেতে হবে । তাই একজন মা হিসেবে আপনার মনের অবস্থা কেমন হবে, সেটা আমরা বেশ বুঝি। হয়তো আপনার মন খারাপ বা চিন্তা সম্পূর্ণ ভাবে দূর করে দিতে পারবো না আমরা। কিন্তু, যাতে আপনার মানসিক চাপ অনেকটাই কমে, তার কিছু উপায় বলে দিতে পারি। (How to start working again after maternity leave in Bengali)

মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে অফিস; কীভাবে তৈরি করবেন নিজেকে? (How to start working again after maternity leave)

এসময় মায়েদের মনে যেসব অনুভব কাজ করে থাকে
(Mothers have to deal with these emotions during this period)

  • কর্মরতা মায়েরা যখন ম্যাটারনিটি লিভ বা মাতৃত্বকালীন ছুটির পরে অফিসে যায়, তখন তাদের মানসিক কষ্ট তো হয়েই থাকে, উপরন্তু অনেক মা নিজেকে দোষ দিতে শুরু করে বাচ্চার দেখভাল না করতে পারার জন্য। এর জন্য, মানসিক উদ্বেগ বেড়ে যায় ও মা সবদিক সামলে উঠতে পারে না।
  • সবথেকে বড় চিন্তার কারণ, আপনি বাচ্চাকে যার দায়িত্বে রেখে যাবেন সে বাচ্চার অযত্ন করবে না তো বা বাচ্চার কোনও ক্ষতি করবে না তো?
  • বাচ্চা ঠিক সময়ে খাবে কি না, বাড়িতে রেখে যাওয়া বুকের দুধ তার জন্য পর্যাপ্ত হবে কি না, মা কে ছেড়ে বাচ্চা ঠিকমতো ঘুমবে কি না!
  • উপার্জনের কারণে মাকে বাইরে বেরোতে হলে বাচ্চার যদি মায়ের ওপর থেকে টান চলে যায় বা বাচ্চা অন্য কারও কাছে থাকতেই বেশি পছন্দ করে!
  • বেশ কয়েকমাস পরে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে সেই জায়গায় মানিয়ে নেওয়া যাবে তো বা সময়মতো কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে আসা যাবে তো?

আপনি যা করতে পারেন
(What should you do?)

  • একজন মা হিসেবে নিজের গুরুত্ব কোনও দিন কম হতে দেবেন না, অন্তত নিজের কাছে। মনে রাখবেন, আপনি দুধের শিশুকে ছেড়ে বাইরে কাজে যান কারণ আপনি ওর জন্য সবথেকে সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে চান। বাচ্চা যাতে যত্নে থাকে, তার আনুসঙ্গিক সমস্ত ব্যবস্থা করে দিন কিন্তু কোনও দিন নিজেকে দোষ দেবেন না। বাইরের কারও কথায় প্ররোচিত হবেন না বা দুঃখ পাবেন না।
  • আপনার সবথেকে বড় দায়িত্ব হল, এমন একজন বেবি সিটার খোঁজা যার কাছে বাচ্চা ভালো থাকবে। একজন পেশাদার, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বেবি সিটারই আপনার বাচ্চাকে সঠিক যত্ন দিতে পারে। আপনি যদি মনে করেন, যে বাচ্চাকে কোনও ক্রেশে রেখে যাবেন, তা হলে সেই ক্রেশ সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিন এবং নিজে গিয়ে সবকিছু দেখে আসুন। প্রয়োজনে অন্য কর্মরতা মায়েদের সাথে কথা বলুন।
  • বাচ্চাকে বেবি সিটারের কাছে রেখে গেলে, অফিস থেকে কিছুক্ষণ পরপর ফোন করে বাচ্চার খবর নিন। বাচ্চার বাবাও এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারেন। এছাড়াও, এখন সিসিটিভির সাহায্যে বাচ্চার গতিবিধি আপনি দেখতে পারেন‌; আবার উন্নত মানের ন্যানি ক্যামেরার সাহায্যে অফিসে বসেই বাড়িতে বাচ্চা কেমন আছে বা বেবি সিটার ঠিকমতো বাচ্চাকে যত্ন করছে কি না, তাও লক্ষ্য রাখতে পারেন। সম্ভব হলে, বাড়ির কোনও বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যকে আপনার বাড়ি এসে থাকার জন্য অনুরোধ করতে পারেন।
  • ছুটির পরে অফিসে যোগ দেওয়ার আগেই, বাচ্চাকে অন্য কারও কাছে থাকা অভ্যেস করান। বেবি সিটার বা ক্রেশ যাই হোক না কেন, বাচ্চাকে রেখে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে ঘুরে আসুন। সেসময় নিজের কিছু কাজ করে নিন বা নিজেকে একটু সময় দিন। এই সময় যেহেতু প্রয়োজন হলেই আপনি বাড়ি চলে আসতে পারেন, তাই বাচ্চার খাওয়া বা কান্নাকাটি সম্পর্কে ভয় পেতে হয় না। এভাবে ক্রেশে বাচ্চা কেমন আছে বা বাড়িতে বেবি সিটারকে সে কেমন পছন্দ করছে, এসবই আপনি আগে থেকে জেনে যাবেন এবং অফিসে গিয়ে এই বিষয়ে চিন্তা হবে না।
  • সম্ভব হলে বা নিতান্ত নিরুপায় হলে, অফিসে কথা বলে রাখুন যাতে প্রয়োজনমতো আপনি বাচ্চাকে নিয়ে অফিসে আসতে পারেন এবং কিছু সময়ের জন্য নিজের কাছে রাখতে পারেন। আপনি যদি চান, যে বাড়ি ফিরে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন, তা হলে অফিসে কথা বলে কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখুন এবং বুকের দুধ পাম্পের সাহায্যে বার করে রাখুন।
  • অনেকদিন ছুটি কাটিয়ে অফিসে এসে কাজের জায়গায় কোনও রকম অসুবিধা হলে, অন্য কলিগদের সাহায্য নিন। নতুন করে কাজ শুরু করার আগে, যা যা হয়ে গছে আর আপনাকে যা করতে হবে, তার সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করুন। নিজের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার কোনও কারণ নেই। অফিসের সবাই একজন নতুন মায়ের পরিস্থিতি বুঝবে এবং আপনি প্রয়োজনীয় সাহায্যও পাবেন। আপনার অফিসে যদি বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা থাকে, তাহলে অনুমতি নিয়ে প্রয়োজন মতো বাড়িতে থেকেও কাজ করতে পারেন।
  • সকালে ওঠার চেষ্টা করুন এবং নিজের সমস্ত কাজকে একটা রুটিনের মধ্যে ফেলুন। বাচ্চাকে যতোটা বেশি সম্ভব সময় দিন, নিজে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন ও খাওয়া-দাওয়া করুন। দৈনিক কাজগুলো রুটিন মেনে করতে অসুবিধা হলে, আপনার বন্ধু বা এবিষয়ে অভিজ্ঞ মায়েদের পরামর্শ নিন।

ঘরে বাইরে সামলে চলার লড়াইটা একমাত্র মেয়েরাই পারে। আপনি নিজের কেরিয়ারে যতটা সফল, একজন মা হিসেবে তার থেকেও বেশি। তাই ভয় পাবেন না বা পরিস্থিতির চাপে নিজের মনোবল হারাবেন না। আপনি সব পারবেন, দরকার শুধু একটু নিয়ম, টাইম ম্যানেজমেন্ট আর সাহস। আর পাশে তো আমরা সবসময় আছি।

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null