প্রথম সন্তানকে লালন পালন করতে অনেক রকম বাধারই সম্মুখীন হতে হয়। উত্তমার এখন তেমনটাই মনে হচ্ছে। ওর পুঁচকে মেয়ের বয়স মাত্র তিন সপ্তাহ। ডাকনাম রোশনি। তবে এই বয়সেই তার গলা ফাটিয়ে কান্না প্রতিবেশীর কানেও পৌঁছে যাচ্ছে। ঘুম ভাঙলেই প্রায় ২০-২৫ মিনিট ধরে কেঁদে চলে ছোট্ট সোনা। কিছুতেই থামানো যায় না তাকে। প্রথম দিন উত্তমা ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয়নি। বাচ্চা কান্নাকাটি করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তবে দ্বিতীয় দিন যেতেই ওর মনে আশঙ্কা হতে থাকে। ঠিক কেন কাঁদছে রোশনি, ওর কী কোনও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে?
পুঁচকের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবটা জানালো উত্তমা। উনি সবটা শুনে বিস্তারিত কথা বলার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলেন। চিকিৎসকের কাছে যেতেই রোশনির কান্নাকাটি আবার শুরু! চিকিৎসক ব্যাপারটা দেখে জানালেন, ওর কান্নাটা সাধারণ কান্না। তবে কান্নার বেশ কয়েকটি কারণ থাকে। উত্তমাকে এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে দিলেন তিনি। (How Much Crying is Normal for Babies)
#1. স্বাভাবিক কান্না (Normal Crying): জন্মের পর শিশু অত্যন্ত দুর্বল থাকায় ও তেমন কান্নাকাটি করে না। দুই-তিন সপ্তাহ পরে যখন ওর দুর্বলতা কাটে, ওর কান্না অনেকটাই বেড়ে যায়। এই কান্না শিশুর তিন-চার মাস বয়স পর্যন্ত চলতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রতি তিনজনের একজন শিশুরই এমন কান্নাকাটির প্রবণতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, স্বাভাবিক কান্নার কোনও কারণ নেই। এমনি এমনিই ছোট্ট সোনা কাঁদতে থাকে।
#2. পার্পল কান্না (Purple Crying): স্বাভাবিক কান্নার প্রসঙ্গেই উঠে আসে পার্পল কান্নার কথা। নামটা শুনেই অবাক হয়ে যায় উত্তমা। কান্নার নাম পার্পল! চিকিৎসক জানালেন, পার্পল আসলে কতগুলো বৈশিষ্ট্যের আদ্যক্ষর নিয়ে বানানো একটা শব্দ। অনেক সময় দেখা যায়, ছোট্ট খুদে প্রতিদিন একটানা চার থেকে পাঁচঘন্টা কান্নাকাটি করছে। এই কান্না শুরু হয় দুই বা তিন সপ্তাহ বয়স থেকে। যা চার মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত চলে। এই ধরনের কান্না হাজার আদরেও থামানো যায় না। পার্পল শব্দটি থেকে এই কান্নার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা যায়। পার্পল-এর পি হল পিক অফ ক্রায়িং, ইউ-এর অর্থ আনএক্সপেক্টেড, আর-এর মানে রেজিস্টস সুথিং, এর পরের পি এর অর্থ পেইন লাইক ফেস, এল-এর মানে লং লাস্টিং ও ই বলতে ইভনিং বোঝায়।
#3. কলিক কান্না (Colic Crying): পার্পল কান্নার পর চিকিৎসক কলিক শিশুর প্রসঙ্গে এলেন। কলিক শিশুর কান্নার প্রকৃতি পার্পল কান্নার মতোই হয়। তবে কিছুক্ষেত্রে আলাদা হয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, কলিক শিশুর কান্না দিনে অন্তত তিন ঘণ্টার বেশি চলে। এছাড়াও সপ্তাহে তিন দিনের বেশি ও অন্তত তিন সপ্তাহ ধরে চলছে, এমনটা চললে শিশুকে কলিক বেবি বলা হয়। এই ধরনের কান্নার ক্ষেত্রে কখনও মনে হয়, শিশু যন্ত্রণায় কাঁদছে, কখনও হয়তো বা কোনও কারণই বোঝা যায় না। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কান্নার সময়টা এক। সাধারণত রাতের দিকেই এই কান্না ফিরে ফিরে আসে।
আরও পড়ুন: বাচ্চা কিন্তু কেঁদেই আপনার কাছে ওর আবদার বা অভিমান জানায়; কীভাবে বুঝবেন ওর কান্নার ভাষা?
উত্তমা চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইল, রোশনি কী চাইছে, সেটা কি ওর কান্না থেকে বোঝা সম্ভব? চিকিৎসক জানালেন, কান্নার ধরন দেখে কিছুটা আন্দাজ করা যেতেই পারে। যেমন খিদের কান্না অল্প সময় ধরে চলে আর নিচু স্বরে হয়। ব্যথার কান্না আবার হঠাৎ করে শুরু হয়, আর শিশু প্রচণ্ড চেঁচিয়ে কাঁদে। আরও কয়েকটা লক্ষণ উনি বলে দিলেন।
উপরের কারণগুলোর পাশাপাশি অশান্ত পরিবেশ ছোট্ট শিশুর উপর সহজেই প্রভাব ফেলে। আশপাশে প্রচণ্ড আওয়াজ বা জোড়ে নড়াচড়া হলে খুদে সহজেই ভয় পেয়ে যায় ও কাঁদতে শুরু করে। চিকিৎসকরা তাই পরামর্শ দেন সদ্যোজাত শিশুর আশেপাশের পরিবেশ শান্ত রাখার।
আরেকটা রাস্তাও আছে। ওকে ‘হোয়াইট নয়েজ’-এর মধ্যে রাখুন। এর অর্থ টানা চলা এক ধরনের আওয়াজ, যা মনকে শান্ত করে। যেমন সমুদ্রের ঢেউ-এর শব্দ বা ফ্যানের আওয়াজ। এর মধ্যে থাকলেও শিশু মানসিক ভাবে শান্তি অনুভব করে। ওর কান্না কমে।
কাজ না হলে, কাঁদতে দিন! অনেক চেষ্টা করেও খুদের কান্না থামাতে পারছেন না? অথচ ও অসুস্থও নয়! তা হলে আর কী! ওকে কাঁদতে দিন। যদি অনেক ক্ষণ কান্নাকাটি করে শান্ত হয়, তা হলে অসুবিধাই বা কোথায়? আর নিজেকে এর থেকে সরিয়ে রাখতে চাইলে এক চাপ চা বা কফি বানিয়ে নিন, কোনও বন্ধুকে ফোন করে গল্প করুন। তবে তার আগে আপনার খুদেকে নিরাপদ জায়গায় শুইয়ে রাখুন। (How Much Crying Is Normal for Babies)
আরও পড়ুন: কলিক খুবই স্বাভাবিক এক সমস্যা, আপনার পুঁচকের জন্য সমাধানও বাড়িতেই আছে
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null