দৃশ্য ১: ৪ বছরের তিতলিকে নিয়ে “গেট টুগেদার পার্টি” তে গেছে উমা আর অনি। পার্টিতে ছোট্ট তিতলির বয়সি ৫-৬ জন কুচো খেলা করছে মনের আনন্দে। তিতলিকে দেখে তাকেও দলে নেওয়ার জন্য টানাটানি শুরু করেছিল। কিন্তু তিতলি কিছুতেই যাবে না। অবশেষে ছানার দল তিতলিকে ছেড়েই মন দিয়েছে খেলায়।
দৃশ্য ২: সহজ আর তিতির তাদের ৫ বছরের ছেলে পাপাইকে নিয়ে চড়ুইভাতি করতে গিয়েছে। তাদের বন্ধুরাও এসেছে সব ছানাপোনা নিয়ে। গল্প-আড্ডার মাঝে সবার বাচ্চাই কেউ কবিতা বলছে, কেউ আধো গলায় বেসুরো গান করে আসছে। পাপাই সেদিকে গেলই না। সহজ তো রেগে খাপ্পা ছেলের ওপর। ফিসফিস করে ছেলেকে “অমিশুকে”, “অসামাজিক” তকমা দিতেও ভুললো না! (Tips for Raising an Introverted Child)
আপনার খুদেও কি এরকম? (Raising an Introverted Child) একটু নিজের মতো গুছিয়ে থাকতে ভালোবাসে? সব জায়গায় সমানভাবে মিশতে পারে না বা হইহই করে গল্প করতে পারে না? আপনি ওকে “বড্ড লাজুক” বা “মিশতে পারে না” তকমা দিয়ে বসিয়ে দেন, তাই তো?
জানেন কি, লাজুক আর অন্তর্মুখী দুটো স্বভাব সম্পূর্ণ আলাদা? অন্তর্মুখী বা ইন্ট্রোভার্ট হওয়া মানে কিন্তু লাজুক হওয়া বা লজ্জা পাওয়া নয়। নয় কোনও দোষও। প্রত্যেকের স্বভাব আলাদা এবং অন্য কাউকে তার আলাদা কোনও স্বভাবের জন্য ভারী ভারী বিশেষণ দিয়ে দেওয়া ঠিক নয় একেবারেই। তা সে আপনার ছানাই হোক না কেন!
হ্যাঁ, এদের বোঝা একটু কঠিন। এদের মনের নরম জায়গাটার সন্ধান পেতে একটু বেশি ধৈর্য আর ভালোবাসা প্রয়োজন। ইন্ট্রোভার্ট হওয়া যে কোনও দোষ নয়, বরং একটি বিশেষ স্বভাব মাত্র; এই কথা অনেক বাবা-মা মেনে চলতে পারেন না। ফলত, ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাচ্চার সাথে তাদের সমীকরণ, চুপচাপ বাচ্চা আরও চুপ করে যায়, ওর মন খুলতেই পারে না কারও সামনে। (Introverted Child Definition) দিনে দিনে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় জটিলতার।
অন্তর্মুখী বা ইন্ট্রোভার্ট শিশুকে কীভাবে বড় করে তুলবেন, কীভাবে ওকে ওর মতো করেই বুঝবেন (Bringing Out The Best In Your Introverted Child), তাই নিয়েই আজ আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন। জানতে হলে পড়ে ফেলুন। (Tips to Help Introverted Children Thrive)
হাবে-ভাবে বা কথাবার্তায় এতটুকুও অস্বাভাবিক নয় এরা। শুধু স্বভাবগত কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য কিছু জায়গায় নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে না। ইন্ট্রোভার্ট বাচ্চাদের মধ্যে যে স্বভাবগুলি দেখা যায় (Introverted Toddler Characteristics),
আরও পড়ুন: বাচ্চার নজর সারাক্ষণ মোবাইল ফোন বা টিভির স্ক্রিনে? কতটা ক্ষতি হচ্ছে জানেন?
#1. সবকিছুই শেখান, তবে একটু ধীরে: “যাও, খেলা করতেই হবে” বা “সবাই পারছে তুমিও পারবে” বা “আজ এটা না করলে আর কোথাও নিয়ে যাবো না” বা “এই কথা বল”; এই জাতীয় কথাবার্তা ছোট্ট বাচ্চাটাকে বলবেন না। এতে ওর মনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে। হইহই করে মিশে যাওয়া ওর স্বভাববিরুদ্ধ হওয়ায় এই ধরনের জোর চাপিয়ে দিলে ও নিজেকে হয়তো আরও গুটিয়ে নেবে। ওকে সময় দিন নিজের মতো করে মানিয়ে নেওয়ার।
#2. বাচ্চার স্বভাবকে সম্মান করুন, ছোট করবেন না: “মিশতে পারিস না”, “কোথাও নিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় না” বা “ওদের দেখেও কিছু শেখ” এই ধরনের কথাগুলো বাবা মায়ের থেকে একেবারেই কাম্য নয়। ও যেমন সেভাবেই ওকে মেনে নিন। ওর সাথে কথা বলুন, ওর মতামত জানতে চান এবং ওর ইচ্ছেকেও সম্মান করুন।
#3. আদর দিন বেশি করে: ইন্ট্রোভার্টবাচ্চাদের জগত মুষ্টিমেয় কয়েকটি মানুষকে ঘিরেই গড়ে ওঠে। এরা সবার সাথে সমানভাবে মিশতে পারে না বা মন খুলে কথা বলতে পারে না। বাবা-মা এবং নিজের গুটিকয়েক বন্ধুর সামনেই নিজের আবেগ- অনুভূতি তুলে ধরে। (How to Raise an Introverted Child)
#4. ওদের নিয়ে মজা করবেন না: ইন্ট্রোভার্টপ্রকৃতির বাচ্চারা খুব সংবেদনশীল হয়। নিজেদের নিয়ে ইয়ার্কি-ঠাট্টা পছন্দ করে না একেবারেই। কাজেই অন্যদের সামনে ওদের নিয়ে মজা করবেন না। আপনি হয়তো এক ভেবে মজা করবেন, বাচ্চার মন অন্য কিছু ধরে আঘাত পাবে।
#5. জোর করবেন না: ওর যদি কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছে না হয় বা আপনার ইচ্ছেমতো কাজ করতে ইচ্ছে না হয়; তা হলে জোর করবেন না। কিছু পরে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন, জিজ্ঞাসা করুন। দেখবেন ও ঠিক আপনার কাছে মন খুলবে।
#6. বাচ্চাকে উৎসাহ দিন: ওর প্রত্যেকটা কাজে উৎসাহ দিন। ও হয়তো এগিয়ে গিয়ে কারও সাথে হ্যান্ডসেক করলো। সেই কাজটা আপাতদৃষ্টিতে খুব বড় না হলেও ওর কাছে কিন্তু একটা মাইলস্টোন। তাই উৎসাহ দিন ভরপুর।
#7. তুলনা টানবেন না: কারও সাথে তুলনা করবেন না । ওর যেন কোনও ভাবেই মনে না হয়, আপনি ওকে নিয়ে অখুশি।
#8. গল্প করুন: প্রচুর প্রচুর গল্প করুন ওর সাথে। আবার ওকে নিজের সাথেও সময় কাটাতে দিন। ও হয়তো কল্পনা করতে, ছবি আঁকতে বা কবিতা লিখতে ভালবাসে। ওকে ওর মতো করে ছেড়ে দিন দিনের কিছুটা সময়।
#9. ওর পাশে দাঁড়ান: কম বন্ধু থাকা কোনও দোষের নয় বা মিশতে একটু সময় নেওয়া কোনও অসুবিধার বিষয় নয়, এটা ওকে বুঝিয়ে দিন। ওর কোনও স্বভাব দেখে অন্য মানুষ ওর বিচার করবে এটা ওর মাথায় ঢুকতেই দেবেন না।
#10. স্কুলে কথা বলে রাখুন: বাচ্চার স্কুলে ওর প্রকৃতি জানিয়ে রাখুন। ওকে যেন স্কুল বুলিং-এর শিকার না হতে হয় ওর চুপচাপ স্বভাবের জন্য। ওর বন্ধুদেরও বলে রাখুন এভাবেই। ছোট ছোট হাতগুলোর থেকেই সাপোর্ট পাবে আপনার চুপচাপ সন্তান। আর আস্তে আস্তে হয়তো নিজেকে মেলতে পারবে ওদের কাছেও।
আপনি হইচই পছন্দ করলেও আপনার সন্তানটিও যে তাই করবে, এমন আশা করা খুব অন্যায়। সবার নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে, আর সবাই নিজের মতো করে সুন্দর। তাই বাচ্চার অসুবিধায় ওর পাশে থাকুন, ওর ওপর নিজের ইচ্ছে চাপিয়ে অসুবিধার সৃষ্টি করবেন না। (Tips for Raising an Introverted Child)
আরও পড়ুন: বুলিং বা টিটকিরি কতটা ক্ষতি করছে আপনার বাচ্চার? জেনে নিন ও সতর্ক হোন!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null