নিরাপদে কাটবে সোনামণির দোল! সতর্ক থাকতে আগাম জেনে নিন বিশেষ কিছু টিপস!

নিরাপদে কাটবে সোনামণির দোল! সতর্ক থাকতে আগাম জেনে নিন বিশেষ কিছু টিপস!

রাত্তিরটার অপেক্ষা কেবল। তার পরেই আসছে আমাদের সবার প্রাণের উৎসব, রঙের উৎসব, দোল। পাতা ঝরার মরসুম ‘আসছে বছর আবার হবে’, বলে চলে গিয়েছে। বসন্তের আলতো আদর গায়ে মেখে, ঝকঝকে প্রকৃতি এখন রোজ যেন হোলি বা দোল খেলার আনন্দে মত্ত। রাধাচূড়া- কৃষ্ণচূড়ার রঙে নিজেকে সাজিয়ে তুলছে প্রত্যেকদিন। এমন সময়, আমরা রং না মেখে থাকি কী করে? তাইতো, এই বসন্তেই সাড়ম্বরে পালন করা হয় দোল উৎসব। আর বড়রা সব নানা রকম রং মেখে রঙিন হয়ে থাকবে, আর ছোট্ট ‘মানুষ’ গুলো মুখ চুন করে ঘুরে বেড়াবে, এমনটা তো আর হতে দেওয়া যায় না। তাই, বছরের এই দিনটায় ওদের আর বাধা দেবেন না। ওরা নিজেরাও রঙিন হয়ে উঠুক আর অন্যদেরও রঙিন করে তুলুক। দোলের সাতরঙা আবিরের মতো ওদের জীবনের রং-ও থাকুক অমলিন। বাচ্চাদের সাথে চুটিয়ে উদযাপন করুন দোল উৎসব। শুধু কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখুন, তা হলেই রং মাখতে গিয়ে বাচ্চার কোনও রকম র‍্যাশ, ইনফেকশন বা বিপদ হবে না। দেখে নিন এক নজরে। (Moner sukhe rong makhuk bacchar dol; sudhu samanyo sotorko thakun apni. How to play Holi safely with kids in Bangla.)

 

#1. রং মাখার আগে চুলের যত্ন (How to prepare child’s hair before playing Holi?)

আপনার লক্ষ্মী ছানাটি তো নিজের ব্যাপারে বড়ই উদাসীন। তাই রং খেলতে গিয়ে যাতে ওর চুল বা ত্বকের কোনও ক্ষতি না হয়, সেটা দেখতে হবে আপনাকেই। দোলের আগের রাতে শোওয়ার আগে বাচ্চার চুলে তেল মাখিয়ে দিন ভালো করে। নারকেল তেল হাল্কা গরম করে স্কাল্পে ও চুলে ভালোভাবে মালিশ করে করে লাগিয়ে দিন। সকালে রং খেলতে যাওয়ার আগে আবার চুলে নারকেল তেল লাগিয়ে দিন। চুল যদি বাঁধার মতো লম্বা হয়, তা হলে বেঁধে দিন। এতে রং চট করে চুলে বসে যেতে পারে না এবং চুল রুক্ষ হয় না।

#2. তকতকে থাক নরম ত্বক (Prepare your child’s skin before Holi)

যেদিন বাচ্চা রং খেলবে, সেদিন একদম সকালে ও ঘুম থেকে ওঠার পরেই, ভালো করে সারা গায়ে তেল মাখিয়ে দিন। নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল, আপনি শিশুর জন্য যা তেল ব্যবহার করেন, তাই ওকে মাখাতে পারেন। এরপর, বাইরে বেরোনোর আধ ঘণ্টা আগে, বাচ্চার মুখে ও গায়ে ভালো করে সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে দিন। তেল লাগানোর ফলে বাচ্চার ত্বক নরম থাকবে আবার রং সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শেও আসবে না। সানস্ক্রিন লোশন লাগানোর ফলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে শিশুর ত্বক রক্ষা পাবে আবার রং ত্বকের লোমকূপে বসে যেতেও পারবে না।

#3. চোখ ঢাকা থাক রোদচশমায় (Get a stylish sunglass for your child in this Holi)

বাচ্চারা কিন্তু স্টাইল করতে বা সাজতে দিব্যি ভালোবাসে। দোলের আগে বাজারে-দোকানে নানা রকম বাহারি রোদচশমা দেখে তার কচি মনেও কি একটু ইচ্ছে হয়নি ওটা কেনার? একটা বাহারি রোদচশমা কিনে দিন আপনার বাচ্চাটিকে। এই চশমা পরে রং খেলতে গেলে চোখে আবির বা রং ঢুকে যাওয়ার ভয় থাকবে না আর চোখে রোদও লাগবে না।

 

#4. সঠিক জামাকাপড় পরিয়ে দিন (Choose right clothes for your child)

পুরনো নরম জামা পরিয়ে দিন বাচ্চাকে। জামা হাত-পা ঢাকা হলে বেশি ভালো হয়। জামা যেন অতিরিক্ত ঢলঢলেও না হয়, আবার টাইটও না হয়। পর্যাপ্ত হাওয়া চলাচল করা জরুরি।

 

#5. ব্যবহার করুন প্রাকৃতিক রং (Use natural colors instead of chemical ones)

বাজার চলতি রং বা আবিরে প্রচুর পরিমাণে কেমিক্যাল থাকে। এই কেমিক্যাল বাচ্চার গায়ে লাগলে র‍্যাশ, ইনফেকশন ইত্যাদি হতে পারে। আবার কোনও ভাবে চোখে এই রং ঢুকে গেলে বা বাচ্চা এই রং খেয়ে ফেললে প্রচণ্ড ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি রং বা আবির ব্যবহার করুন ও বাচ্চাদের এই কেমিক্যাল ছাড়া আবির দিয়েই রং খেলতে দিন। বাজারে এখন প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হারবাল আবিরের ভীষণ চাহিদা। পকেটে একটু টান পড়লেও বাচ্চার স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপোষ করা, কিছুতেই নয়।

 

কীভাবে তুলবেন রং (How to remove colors after Holi?)

বাচ্চার রং খেলা হয়ে গেলে বেসন, হলুদ আর দই দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে বাচ্চাকে মাখিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পরে অল্প ঘসে ঘসে তুলে দিন ও স্নান করিয়ে দিন। চুলের রং শ্যাম্পু করলেই চলে যাবে।

 

কী কী করতে পারেন আপনি (Keep these in mind to have a safe Holi with kids)

  • রং খেলতে বাচ্চাকে কখনওই একা ছাড়বেন না। একজন বড় কেউ যেন ওর সঙ্গে থাকে।
  • ওয়াটার বেলুন কিনে দেবেন না বা বাচ্চার বন্ধুদেরও বারণ করুন। ওয়াটার বেলুন ছোঁড়াছুঁড়ি করার সময় অসাবধানে জোরে আঘাত পেতে পারে বাচ্চা।
  • পিচকারি কিনে দিন। এতে জল অপচয়ও কম হয়। বাচ্চাকে শিখিয়ে দিন, যেন কখনওই কারও মুখে, চোখে বা কানে পিচকারি দিয়ে রং না ছোঁড়ে। বাচ্চার বন্ধুদেরও আদর করে সেরকমটাই বোঝান।
  • বাচ্চার গলায় একটা ছোট্ট ওয়াটার বোতল ঝুলিয়ে দিন বা নিজে রাখুন। দুর্ঘটনাবশত বাচ্চার চোখে- মুখে রং ঢুকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে জলের ঝাপটা দিয়ে ধুইয়ে দিন।
  • বাচ্চার আশেপাশেই থাকুন। বাচ্চা যেন উত্তেজিত হয়ে অতিরিক্ত ছোটাছুটি না শুরু করে। এতে অন্যের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে আবার নীচে পড়ে থাকা জলে বাচ্চা পা পিছলে পড়ে যেতেও পারে।
  • বাচ্চাকে শেখান, সে যেন কাউকে জোর করে রং না মাখায়। তাকে কেউ জোর করে রং মাখাতে চাইলেও সে যেন বারণ করে।
  • আবির নিয়ে ছোঁড়াছুঁড়ি করতে বারণ করুন।
  • রং খেলে বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই স্নান করতে নিয়ে যাবেন না। এতে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ৫-১০ মিনিট বিশ্রাম নিতে দিন। তারপর স্নান করতে নিয়ে যান।
  • রং তুলতে কখনওই কেরোসিন তেল ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলে তুলো ডুবিয়ে আলতো হাতে ঘসে রং তুলুন।
  • স্নানের পর গায়ে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে দিন।

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null