একরত্তি ছানার মায়ের কাছে প্রত্যেকটা দিনই তো একেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। বাচ্চাকে সবকিছুই তো অতি যত্নে করিয়ে দিতে হয়। আবার সেই, পুতুলের মতো প্রতিপক্ষটি সাইজে এইটুকু হলে কী হবে, বিনা প্রতিবাদে সে কোনও কিছু মেনে নেওয়া পছন্দ করে না। খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো ছাড়াও মায়ের জন্য আরও একটা মস্ত কঠিন কাজ, দস্যি বাচ্চাকে স্নান করানো। অবশ্য কিছু কিছু ভাগ্যবতী মা রয়েছে, যাদের ছানা বড়ই লক্ষ্মী। এতটাই যে, তারা স্নানের সময়টাই সবথেকে বেশি ভালোবাসে।
চারদিকে ছপাৎ ছপাৎ শব্দ করে জলে বাজনা বাজিয়ে, মায়ের মুখে-জামায় সাবানের বুদবুদ ছুঁড়ে, স্নানের জায়গা থেকে চারদিকে জল ছিটিয়ে মায়ের কাজ বাড়িয়ে অনাবিল আনন্দ পায় সে। আর বাকিদের ছানারা স্নান করাতে গেলেই হয়তো চিৎকার জুড়লো বা মাথায় জল পড়তেই নাক ডেকে ঘুমিয়ে পড়লো। তখন বেচারি মা কী করে স্নান করায় বাচ্চাকে বলুন দেখি! জানেন কি, স্নানের সময় কীভাবে বাগে আনবেন খুদেগুলোকে? স্নানের সময়টা মা ও বাচ্চার কাছে কীভাবে হয়ে উঠবে সবথেকে আনন্দের আর আরামের? বলে দিচ্ছি চুপিচুপি; প্রয়োগ করে দেখুন তো! (Make your baby’s bath fun, safe and stress-free. How to make your baby’s bath fun in Bangla.)
বাচ্চার নাড়ি যতদিন না পড়ে যায়, ততদিন পর্যন্ত জল ঢেলে স্নান করাবেন না। বা নাড়ি পড়ে যাওয়ার পর যদি জায়গাটা নরম থাকে, সেটা শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ততদিন পর্যন্ত না হয় বাচ্চার গা স্পঞ্জ করিয়ে দিন বা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিন। নাড়ি পড়ে যাওয়ার পর আপনার বাচ্চা একদম তৈরি জলে ভিজে স্নান করার জন্য। এনে দিন ওকে একটা ছোট্ট বাথ টাব। বাথ টাব কেনার সময় তার সাইজ ভালো ভাবে দেখে কিনুন। বাচ্চার যাতে ওর মধ্যে বসে স্নান করতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। আর আপনিও ভালোভাবে বাচ্চাকে স্নান করাতে পারবেন কি না, দেখে নিন।
বাচ্চার স্নানের জল কখনই ঠান্ডা হওয়া উচিত না। ঈষদুষ্ণ গরম জলে খুদেটিকে স্নান করান। বাথ টাবে বাচ্চার স্নানের জল ভরার পর নিজের কনুই ডুবিয়ে জলের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিতে ভুলবেন না। এতে যেমন বাচ্চার ঠান্ডাও লাগবে না, আবার আরামদায়ক তাপমাত্রায় বাচ্চা চনমনে হয়ে উঠবে। কুসুম কুসুম গরম জলে বাচ্চাকে বসিয়ে দিন সাবধানে। বাচ্চা যাতে ভয় না পায়, তার জন্য আপনি নিজে জলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে, একটু জল ছিটিয়ে মজা করে ওর দিকে তাকিয়ে অঙ্গভঙ্গী করুন। জল দিয়ে স্নান করা যে কোনও ভয়ের কারণ নয়, উল্টে সে আরাম পাবে, এটা বাচ্চাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
না, নিজেরা যে সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করেন, তা কখনই দেবেন না পুঁচকেটাকে। অনেক ভালো কোম্পানির বেবি সোপ এবং শ্যাম্পু পাওয়া যায়। নিয়ে আসুন সেগুলোই। বাচ্চার সাবান বা শ্যাম্পুতে যেন পারফিউম বা কোনও কৃত্রিম রং মেশানো না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সাবান প্রথমে হাতের তালুতে ঘষে ফেনা করে নিন, তারপর বাচ্চাকে নিজের সুবিধা মতো ধরে সাবান মাখিয়ে দিন। সাবান মাখানো হয়ে গেলে হাতের তালুতে করে জল নিয়ে বাচ্চার গায়ের সাবান ধুইয়ে দিন। বাচ্চা একটু বড় হয়ে গেলে অর্থাৎ বসতে শিখে গেলে, ওকে বসিয়ে বসিয়ে স্নান করান। একদম ছোট্ট বাচ্চাকে স্নান করাবেন খুব সাবধানে এবং মাথা তুলে রেখে।
শ্যাম্পুর ক্ষেত্রেও ভালো বেবি প্রোডাক্টই কেনা উচিত। এখন এমন বেবি শ্যাম্পু পাওয়া যায়, যার ফেনা বাচ্চার চোখে ঢুকে গেলেও বাচ্চার চোখে জ্বালা করে না। ভালো কোম্পানির tear-free শ্যাম্পু নিয়ে আসুন পুঁচকেটার জন্য। সপ্তাহে এক বা দু’দিন শ্যাম্পু করিয়ে দিন বাচ্চাকে। শ্যাম্পু নেবেন অল্প পরিমাণে, ফেনা করে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে দিন ছোট্ট সোনার স্কাল্প ও চুল। এতে ওর খুব আরাম লাগবে। যদি ওর মাথায় খোসার মতো হয়েছে, অর্থাৎ cradle cap হয়েছে, তা হলে শ্যাম্পু করার সময় খুব নরম বেবি ব্রাশ দিয়ে আস্তে আস্তে চুল ছাড়ানোর মতো করে দিন। এতে খোসাগুলো আলগা হয়ে বেরিয়ে আসবে। কখনই বাচ্চার মাথা বেশি ঘষবেন না বা আঁচড়াবেন না।
আরও পড়ুন: বাচ্চাদের জন্য ভিটামিন ডি কেন প্রয়োজন?
শ্যাম্পু করানোর সময় চোখে জল ঢোকে বা কানে মুখে বেশি জল আসে বলে, অনেক শিশু সেটা অপছন্দ করে। এনে দিন ওকে উজ্জ্বল রঙের একটা বেবি শাওয়ার ক্যাপ। এই শাওয়ার ক্যাপ পরিয়ে শ্যাম্পু করালে একটুও জল-ফেনা আসবে না খুদের চোখে মুখে; দিব্য আনন্দে জল ছেটাবে ও। আর নির্বিঘ্নে শ্যাম্পু করানোও হয়ে যাবে।
খেলনা ভালোবাসে না, এমন শিশু মনে হয় নেই। বাচ্চা নিতান্ত ছোট হলে তার কথা আলাদা। কিন্তু, বসতে শেখার পর তো তাকে খেলনা এনে দিতেই হয়। প্যাঁকপেঁকে হাঁস বাথ টাবে ভেসে বেড়াক, জল ছেটানো হাতিটা শুঁড়ে করে একটু না হয় জল ছিটিয়ে দিক; আপনার বাচ্চা এতো মজাদার বাথ টয় পেয়ে বাথ টাব ছেড়ে উঠতেই চাইবে না।
বাচ্চাকে স্নান করিয়ে ওকে বেশি করে আদর করুন, ও যাতে বুঝতে পারে স্নান করার পর ওকে আপনার আরও বেশি ভালো লাগছে। মায়ের আদর পেতে সানন্দে রোজ স্নান করবে কুচো ছানা।
বাচ্চাকে স্নান করানোর সময় বা পরিষ্কার করার সময় এই ভুলগুলি করছেন না তো/ Baby Bath Time Safety Tips/ How to make your baby’s bath fun
আরও পড়ুন: ৭টি ধাপে শিশুর পটি ট্রেনিং!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null