নরম, তুলতুলে বলে পুচকুকে কোলে নিতে ঘাবড়ে যাবেন না! সহজ পদ্ধতি বাতলে দিলাম আমরা

নরম, তুলতুলে বলে পুচকুকে কোলে নিতে ঘাবড়ে যাবেন না! সহজ পদ্ধতি বাতলে দিলাম আমরা

বেশির ভাগ দম্পতি যেভাবে জীবন কাটান, জয়িতা আর পারিজাতের জীবনটা ঠিক তেমন নয়। জয়িতা কাজ করে এক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে। পারিজাত ছবি আঁকে এবং গ্রাফিক ডিজাইন করে। জয়িতাকে রোজ অফিস যেতে হয়। অফিসে কাজের সময়েরও কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। আর পারিজাতকে প্রায় বাড়ি থেকে বেরোতেই হয় না। বাড়ির কাজকার্ম-রান্নাবান্নার দায়িত্বের অনেকটাই পারিজাতের কাঁধে। ফলে যখন ওরা সিদ্ধান্ত নিল, এবার বাবা-মা হবে, তখন থেকেই ঠিক ছিল, এদের সন্তান জন্মানোর পর পারিজাতকে তাকে সামলানোর অনেকটা দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা এবং দায়িত্ব পালন করার মধ্যে অনেকটা ফারাক আছে। সেটা পারিজাত টের পেল, ওদের মেয়ে মানি-র বয়স যখন এক মাস তখনই। (How to hold a new-born baby- important tips and guideline in Bangla, Nabojatokke kole newar poddhoti, Nabojatokke kole newar age je niom mana uchit.How To Hold a Newborn Baby- Important Tips and Guidelines in Bengali.)

 

এতদিন এই কাজটা মূলত সামলাতো জয়িতা। কাজটা বলতে, মানিকে বিছানা থেকে কোলে তোলা, তাকে পরিষ্কার করানো, খাওয়ানো—এই সব আর কী! পারিজাত যে তাকে আদর করত না বা সঙ্গ দিত না, তা নয়। কিন্তু পুরোটাই জয়িতার উপস্থিতিতে। কিন্তু মানি যখন ঠিক এক মাস বয়স, ঠিক সেই দিনই জয়িতাকে বেরোতে হল এক খুব জরুরি কাজে। তাও মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের জন্য। এই সময়টুকু মানিকে সামলানোই পারিজাতের দায়িত্ব। কিন্তু এক মাসের কন্যাকে কোলে তুলতে গিয়েই পারিজাত টের পেল, কাজটা যতটা সহজ হবে সে ভেবেছিল, ততটাও নয়। এতদিন জয়িতার সামনে মানিকে কোলে তুলত, আদর করত। কখনও কখনও জয়িতাই পারিজাতের কোলে মানিকে বসিয়ে দিত। কিন্তু নিজে হাতে কাজটা করতে গিয়ে বেশ চাপে পড়তে হল পারিজাতকে। এই বুঝি সোনার কাঁধে লাগে, এই বুঝি পেটে চাপ পড়ে, এই বুঝি হাত চাপা পড়ে কান্নার রোল তুলে দেয়! মায়েদের মধ্যে একটা সহজাত ক্ষমতা থাকে, বাচ্চাদের সামলানোর বিষয়ে। প্রকৃতি বাবাদের যে কেন সেই সহজাত ক্ষমতা দেননি! মহা চাপে পড়ল পারিজাত।

 

এখন তার মনে হল, ইন্টারনেটই একমাত্র ভরসা। অতএব গুগল খুঁজে কতগুলো কায়দা বের করল পারিজাত। মোটামুটি সেগুলো একত্র করলে, যতটা দাঁড়ায়, তা দিয়েই এই ঘণ্টাখানেক মেয়েকে সামলে নিতে পারবে সে। কারণ গোড়ার কথাটাই সে বুঝে গিয়েছে। কীভাবে তার মেয়েকে কোলে নিতে হবে, কীভাবে ধরতে হবে। এই বুদ্ধিটা যদি আগে তার মাথায় আসত, তা হলে হয়তো গত একমাসে মেয়েকে আরও ভালো করে সামলাতে পারত সে—এই মুহূর্তে এটাই মাথায় ঘুরতে লাগল তার।

 

নবজাতককে কোলে নেওয়ার আদব-কায়দা (How To Hold a Newborn Baby)

 

পারিজাতের যে সমস্যা হয়েছে সে সমস্যায় ভোগেন অনেক বাবা-ই। বুঝতে পারেন না, তাঁদের ছোট্ট সোনা, সদ্য জন্মানো খোকা বা খুকুকে কী করে কোলে নেবেন তাঁরা। বিশেষ করে যখনও পর্যন্ত শিশুদের ঘাড় শক্ত হয় না, ততক্ষণ বাবাদের মনও শক্ত হয় না, নিজের সোনাকে কোলে নেওয়ার বিষয়ে। এমনকী চাপে থাকেন অনেক মা-ও। তাদের জন্যই রইল টিপস। কী করে কোলে নেবেন সদ্যজাত বা একদম ছোট বাচ্চাদের।একরত্তি ছোট্টসোনাকে কোলে নিতে, আদর করতে কার না ভালো লাগে! আর সেখানে তো ছোট্টসোনার বাবা-মায়ের খুশির কথা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু এই নবজাতককে কোলে তোলার আগে কতগুলো জিনিস মাথায় রাখা দরকার

 

  • হাত ধুয়ে নিন: একদম ছোট শিশুকে কোলে তোলার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। সাবান দিয়ে ধুয়ে নিলে ভালো। আর তারপর যদি হ্যান্ডস্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবানু-মু্ক্ত করে নেওয়া যায়, তা হলে তো খুব ভালো হয়।

 

  • মন হালকা করুন: নিজের মনকে প্রস্তুত করে নিন। আপনি কোলে তুললেই আপনার সোনা চোট পাবে, এমন ধারণা ত্যাগ করুন। সাবধান হন, কিন্তু ভয় পাবেন না।

 

  • ভেবে নিন: ওকে কীভাবে কোলে নেবেন, সেটা আগে থেকে ভেবে রাখুন। যাতে পরে গিয়ে হতচকিত না হতে হয়।

 

  • আগলে রাখুন: মনে রাখবেন, ওর ঘাড় এখনও শক্ত নয়। তাই সবার আগে ভেবে নিন, মাথার পিছনে কীভাবে ‘সাপোর্ট’ দেবেন।

 

আরও পড়ুনঃ নবজাতকের পরিচর্যায় কিছু টিপস, যা আমরা খেয়াল করি না!

 

এবার দেখে নেওয়া যাক, সদ্যোজাত শিশুকে কোলে নেওয়ার পদ্ধতি (How to hold a new-born baby- important tips and guideline)

 

#1. কোলে রাখা: শিশুকে যেভাবেই ধরা হোক না কেন, তার সব ক’টাকেই আমরা বলি ‘কোলে নেওয়া’। কিন্তু এই পদ্ধতিটা হল প্রকৃত অর্থে কোলে শোওয়ানো।

  • প্রথমে নিজে বাবু হয়ে বসুন। শিশুকে আপনার কোলে চিৎ করে শোওয়ান।
  • আপনার হাঁটুর কাছে ওর মাথা থাকবে।
  • আপনার হাতের তালু দুটো ওর মাথার তলায় দিয়ে মাথার ভারটা রাখুন।
  • ওর পা দুটো থাকবে আপনার পেটের কাছে।

 

#2. শোল্ডার হোল্ড: এটা ছোট শিশুকে ধরার সব চেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি।

  • শিশুর দুই বগলের তলায় হাত দিয়ে ধরে, ওকে আপনার কাঁধের উচ্চতায় নিয়ে আসুন।
  • আস্তে করে ওর মাথা আপনার কাঁধের ওপর শুইয়ে দিন।
  • আপনার একটা হাত থাকবে ওর তলায়। সে হাতের ওপর ওর শরীরের ভারটা থাকবে।
  • অন্য হাত থাকবে আর মাথার পিছনে। সেই হাত মাথাটা টলে যাওয়া থেকে আটকাবে।
  • আপনার কাঁধের ওপর দিয়ে ও আপনার পিছন দিক তাকাতে পারবে।

 

#3. ক্র্যাডল হোল্ড: শিশুকে স্তন্যপান করানো বা ঘুম পাড়ানোর জন্য এই ভাবে ধরাটা খুব যথাযথ।

  • শিশুকে আপনার বুকের কাছে অনুভূমিক ভাবে ধরুন।
  • আপনার একটা হাত থাকবে ওর মাথা আর ঘাড়ের তলায়।
  • অন্য হাত থাকবে ওর নিতম্ব আর কোমড়ের নীচে।
  • একটু সচেতন থাকবেন, যেন ও গড়িয়ে না যায়।

 

#4. মুখোমুখি ধরা: শিশুর সঙ্গে খেলা করা বা ওকে আনন্দ দেওয়ার জন্য একদম আদর্শ কায়দা এটা।

  • আপনার একটা হাত থাকবে শিশুর মাথা আর ঘাড়ের পিছনে।
  • অন্য হাতটা থাকবে শিশুর শরীরের তলার দিকে। তার শরীরের গোটা ভারটা থাকবে আপনার এই হাতের উপর।
  • আপনার বুকের একটু তলার দিকে ওকে এই অবস্থায় এমন ভাবে ধরুন, যাতে ও আপনার মুখোমুখি থাকে।
  • এবার ওর সঙ্গে হেসে কথা বলার চেষ্টা করুন।

 

#5. কাঁখে ধরা: শিশুর ঘাড় একটু শক্ত না-হলে এই ভাবে ধরা মুশকিল। তাই ওর বয়স তিন মাস হলে, তারপরেই এভাবে ওকে ধরা উচিত।

  • আপনার হিপ-বোনের ওপর শিশুকে বসান। ওর মুখ থাকবে বাইরের দিকে।
  • আপনার একটা হাত এমন ভাবে ওর কোমর ঘিরে থাকবে, যাতে ও কোনও ভাবেই পড়ে না-যায়।
  • চারপাশের সব কিছুর সঙ্গে ওকে আরাম করে আলাপ করিয়ে দেওয়ার জন্য এই পজিশনের তুলনা নেই।
  • যেহেতু এক্ষেত্রে আপনার একটা হাত খালি, আপনি সেই হাত দিয়ে অন্য কাজও করতে পারেবন। তবে তাতে শিশুর প্রতি অমনযোগী হয়ে যাবেন না যেন।

 

#6. বেলি হোল্ড: এই ভাবে ওকে আগলে রাখাটাও শিশু খুব উপভোগ করে। ঘুম পাড়ানোর জন্য এই পদ্ধতিটাও বেশ ভালো।

  • ওকে উপুড় করে শুইয়ে দিন আপনার হাতের ওপর।
  • এমন ভাবে শোওয়াবেন, যেন আপনার হাতের তালুর উপর ওর পেট থাকে। আর বাহু বরাবর গোটা শরীরটা রাখা অবস্থায় ওর মাথাটা যেন, আপনার বাহুর ওপর শোওয়ানো থাকে।
  • আপনার অন্য হাতটা ওর শরীরটাকে যতটা পারে ঢেকে রাখবে। এতে ও খানিকটা নিরপদ অনুভব করবে।
  • ওর হাত দুটো আপনার হাতের দু’পাশ দিয়ে ঝুলে থাকবে, তাতে ওর আরাম লাগবে।

 

#7. চেয়ার হোল্ড: শিশুরা যখন নিজেদের চারপাশের সব কিছু সম্পর্কে খুব কৌতূহলী হয়ে উঠছে, তখন এই ভাবে তাদের ধরলে, ওর খুব মজা পায়।

  • ওকে চেয়ারে বসানোর মতো করে আপনার গায়ের সঙ্গে সাঁটিয়ে বসান।
  • আপনার একটা হাত থাকবে ওর তলায়। সেই হাতের উপর ওর গোটা শরীরের ভারটা থাকবে।
  • অন্য হাত দিয়ে আপনি ওকে কাঁধের দিক থেকে জড়িয়ে রাখুন।
  • ওর মাথাটা আপনার বুকে ঠেস দিয়ে থাকবে। তাতে মাথাটা টলে যাবে না।

 

#8. ফুটবল হোল্ড: এটাও বাচ্চাকে স্তন্যপান করানো বা ঘুম পাড়ানোর আদর্শ অবস্থান। অনেক মায়ের কাছেই শিশুকে ধরার জন্য এটা সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি।

  • এটাও ক্র্যাডল হোল্ডের মতোই। আপনার একটা হাত এখানেও থাকবে শিশুর মাথা আর ঘাড়ের নীচে। কিন্তু ক্র্যাডল-এ যেমন একটা হাত শিশুরে শরীরের তলার অংশকে ধরে থাকে, এক্ষেত্রে তা নয়।
  • এখানে অন্য হাতটা থাকবে শিশুর শরীরের একদম তলা বরাবর আরেকটি হাতকে ছুঁয়ে।
  • অর্থাৎ আপনার দুটো হাতের ওপর শিশু অনুভূমিক ভাবে শুয়ে থাকবে।

 

ইন্টারনেট দেখে পারিজাত, যা বুঝল, তাতে এই কয়েকটা পদ্ধতি জানা থাকলেই সে সহজেই মানি-কে সামলে রাখতে পারবে। শুধু তা-ই নয়, জয়িতা না-থাকলেও সে সহজেই পারবে মানি-কে খাওয়াতে বা ঘুম পারাতে। শুধু একটু সচেতন থাকলেই হলো!

 

আরও পড়ুনঃ সদ্যোজাত শিশুর অ্যালার্জি; কারণ ও প্রতিকার

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null