অনিতা ওর তিন বছরের ছেলে অন্তুকে নিয়ে জেরবার। কারণ অবশ্য ওর দুষ্টুমি নয়। ছোট্ট অন্তু কিছুতেই ওষুধ খেতে চায় না। এদিকে প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে কফ বসে গিয়েছে বুকে। যতই ওকে ঘুরতে নিয়ে যাও, খেলনা এনে দাও, অন্তুবাবু কিছুতেই ওষুধ মুখে নেবেন না। অথচ ওষুধ না খেলে সমস্যা কমবেও না। অনিতা ওর এই অসহায় পরিস্থিতির কথা জানাচ্ছিল বন্ধু ইলিনাকে। ইলিনার ছেলে অন্তুর চেয়ে বয়সে এক বছরের বড়। তাই এসব ব্যাপারে ইলিনা বেশ অভিজ্ঞ। ও অনিতাকে ওষুধ খাওয়ানোর বেশ কয়েকটি উপায় জানালো। (Easy Tricks to Get Your Child to Take Medicine, What Do You Do When Your Child Refuses to Take Medicine)
#1. খাবারের সঙ্গে দিন (Offer With Foods): ওষুধ দেখলেই খুদে কান্নাকাটি শুরু করে। কিছুতেই ওষুধ খেতে চায় না। ছোট্ট সোনাকে নিয়ে অনেক মায়েরাই এই সমস্যায় ভোগেন। বিশেষজ্ঞরা তাদের পরামর্শ দেন ওষুধটি খাবারের মধ্যে মিশিয়ে খাওয়ানোর। (Ways to Get Kids to Take Medicine) দুধ বা ফলের রসের মতো তরল খাবারে ওষুধ মিশিয়ে সহজেই খাওয়ানো যায়। তবে শক্ত খাবারে ওষুধ না-মেশানোই ভালো। এতে পুরো খাবারটি না-খেলে ওষুধের ডোজ সম্পূর্ণ হয় না। খুদের ওষুধটি খাবারে মিশিয়ে খাওয়ানো যায় কি না, সে ব্যাপারে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
#2. অল্প করে বারেবারে খাওয়ান (Break It Up): একবারের চেষ্টায় ওষুধ খেতে অনেক শিশুরই সমস্যা হয়। ওষুধের আকার দেখলে বাচ্চার মনে ভয়ও জন্মায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ, ওষুধটি ভেঙে বারেবারে খাওয়ান। প্রতিবারে অল্প ওষুধ শরীরে যায়। ফলে খাওয়ার সময় খুদের তেমন সমস্যা হয় না। ওষুধ নিয়ে ছোট্ট মনে অযথা আতঙ্কও জন্মায় না।
#3. ছোট্ট সারপ্রাইজ (Little Bribery): বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই উপায়টি দারুণ কাজ করে। ছোট্ট সোনাকে বোঝান, ঠিক মতো ওষুধটি খেয়ে নিলে ওর জন্য অপেক্ষা কলছে একটা ছোট্ট সারপ্রাইজ। ওর জন্য রাখা সারপ্রাইজটি হতে পারে কোনও নতুন খেলনা বা লজেন্স বা চকোলেট। তবে ওষুধ খাওয়ানোর পর অবশ্যই সারপ্রাইজটি ওর হাতে তুলে দিন। (Getting Toddlers to Take Medicine) নয়তো ও কষ্ট পাবে। রোজ রোজ একই সারপ্রাইজ না-দিয়ে সারপ্রাইজের মধ্যে বদল আনুন।
#4. মুখে হাসি রাখুন (Keep Smile On Face): ছোট্ট খুদেকে ওষুধ খাওয়ানোর সময় মুখে হাসি রাখুন। এতে আপনার তরফ থেকে ওর কাছে একটি পজিটিভ অনুভূতি পৌঁছায়। ওষুধের স্বাদ ভালো না-লাগলেও খুদে তা মেনে নিতে পারে। অন্যদিকে ওষুধ খাওয়ানোর সময় মুখ গোমড়া থাকলে খুদে ভাবে এই জিনিসটা বোধহয় গুরুতর কিছু। বিশেষজ্ঞদের মতে, ও যদি ওষুধ খেতে নাও চায়, তবু মুখে হাসি বজায় রাখুন। মুখের হাসি হারিয়ে ফেললে ওর মেজাজও বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
#5. ফ্লেভারড ওষুধ আনুন (Choose Flavoured Medicine): ওষুধের তেতো স্বাদের জন্যই শিশুদের এই জিনিসটি একেবারে না-পসন্দ। এজন্য বাচ্চাকে ওষুধ খাওয়াতেও ঝক্কি পোয়াতে হয়। বেশ কিছু ওষুধ নির্মাণকারী সংস্থা এই সমস্যা মেটাতে বাচ্চাদের ওষুধের মধ্যে আঙু্র, কলা-সহ বেশ কিছু ফলের ফ্লেভার যোগ করেছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে, এই ফ্লেভারড ওষুধ ছোট্ট সোনার জন্য কিনে আনুন। এতে ছোট্ট সোনাও ওষুধ খাওয়া উপভোগ করবে, আপনারও চিন্তা মিটবে। (Clever Ways to Help the Medicine Go Down)
#6. ওকেই বাছতে দিন (Let Him Choose): এখন বাচ্চাদের ওষুধ সলিড, লিক্যুইড নানা রকম ফর্মেই পাওয়া যায়। চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ কেনার সময় দেখে নিন, ওষুধের বিভিন্ন ফর্ম পাচ্ছেন কি না। বিভিন্ন ফর্ম থাকলে, ছোট্ট সোনাকে ওষুধটি বেছে নেওয়ার অধিকার দিন। এতে খুদে মনে করে, ওকে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বরং ওর ইচ্ছের দাম রয়েছে। ওষুধ খাওয়ানোর সময়েও চামচ না ড্রপার— কোনটা ওর পছন্দ জেনে নিন। এতে ওষুধ খাওয়ার পদ্ধতি ওর বিরক্তিকর মনে হবে না।
আরও পড়ুন: বাচ্চার নজর সারাক্ষণ মোবাইল ফোন বা টিভির স্ক্রিনে? কতটা ক্ষতি হচ্ছে জানেন?
#7. আগে আইসক্রিম খাওয়ান (Feed Ice First): অল্প বরফ বা আইসক্রিম ওষুধ খাওয়ানোর সময় খুবই কাজে দেয়। বরফের মতো ঠান্ডা খাবার খুদের জিভের স্বাদকোরকগুলিকে সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এতে ওষুধের তেতো স্বাদ ছোট্ট সোনা বুঝতে পারে না। (Stress-Free Tips for Giving Your Child Medicine) বরফখন্ড খুদের গলায় আটকে চোকিংয়ের আশঙ্কা থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা বরফখন্ডের বদলে আইসক্রিম বা চুষে খাওয়া যায় এমন ঠান্ডা খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেন।
#8. চিকিৎসক ও রুগির খেলা (Pretend Of Being Doctor): ছোট্ট খুদেকে ডাক্তার সাজিয়ে একটি পুতুলকে ওর রুগি সাজিয়ে দিন। প্রথমে ওকে ডাক্তার হতে বলুন। ডাক্তার সেজে ও ওষুধ খাওয়াবে ওর পুতুলকে। এরপর আপনি ডাক্তার সেজে একই ভাবে ওকে ওষুধ খাওয়ান। এভাবে খেলাচ্ছলে ওষুধ খাওয়ালে ওর মেজাজ সহজে বিগড়ে যাবে না।
#9. স্বাদকোরক এড়িয়ে যান (Avoid Taste Buds): জিভের সামনের অংশে স্বাদকোরকগুলি বেশি সংখ্যায় থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, ওষুধ খাওয়ানোর সময় এই অংশটায় ওষুধ না ছোঁয়ানোর। সরাসরি জিভের পিছনের অংশে ওষুধটি দিলে খুদে তার স্বাদ নিতে পারে না। এতে ওষুধ গিলতেও ছোট্ট সোনার সমস্যা হয় না। তবে এই ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ওষুধটি দেওয়ার সময় কোনও ভাবে যেন গলার ভিতরে না-চলে যায়। (Easy Trick to Get Your Toddler to Take Medicine) এতে চোকিংয়ের আশঙ্কা থাকে।
#10. গিলতে শেখান (Teach To Swallow Pills): ছোট্ট সোনা একবার ওষুধ গিলতে শিখে নিলে আর কোনও সমস্যাই নেই। তাই প্রথমেই ওকে এই কায়দাটা শিখিয়ে দিন। এক্ষেত্রে প্রথম প্রথম ওকে ছোট চকলেট ক্যান্ডি গেলার পদ্ধতিও শেখানো যেতে পারে। এতে গিলতে না-পারলে প্রথমেই ওকে ওষুধের তেতো স্বাদ নিতে হবে না। ধীরে ধীরে খুদে গিলে ফেলতে পারদর্শী হলে একই ভাবে ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। ছোট্ট খুদে আর তখন ভয় পাবে না। (Tips to Help Your Child to Take Medicine)
খুদেকে ওষুধ খাওয়ানোর নানা কায়দা তো জানা গেল (How to Give Medicine to a Toddler Who Refuses), ওষুধের ব্যাপারে আরও কয়েকটি তথ্য বাবা-মায়ের মনে রাখা উচিত। ইলিনা সেগুলিও অনিতাকে এক এক করে জানিয়ে দিল।
সমস্ত নির্দেশাবলী পড়ুন: ওষুধ কেনার পরে তা সংরক্ষণ করে রাখা একটা বড়সড় দায়িত্ব। নয়তো ওষুধের গুণাগুণ বজায় থাকে না। ছোট্ট সোনার ক্ষেত্রে যার প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। তাই ওষুধ কেনার পর ওর গায়ে লেখা সমস্ত নির্দেশাবলী পড়ুন। এছাড়াও ওষুধ কী ভাবে খাওয়াতে হবে, সে সম্পর্কেও কিছু নির্দেশ ওষুধের গায়ে লেখা থাকে। খুদের নিরাপত্তার জন্য সেগুলোও একবার পড়ে নেওয়া প্রয়োজন।
ইলিনার থেকে পরামর্শ পেয়ে অনিতা অনেকটাই উপকৃত হয়। এরপর অন্তুকে ওষুধ দেওয়ার সময় ও খাবারে মিশিয়েই খাওয়াত। দুষ্টু অন্তুবাবু কখনই তা টের পায়নি। (Toddler Medicine Hacks) ফলে অনিতার পরিকল্পনাও সফল হয়েছে। এরপর থেকে অন্তুর ওষুধ খাওয়া নিয়ে আর তেমন সমস্যা হয়নি। (Easy Tricks to Get Your Child to Take Medicine)
আরও পড়ুন: ছোট্ট সোনাকে নিয়ে নিশ্চিন্তে বেড়ান, শুধু তালিকা দেখে মিলিয়ে নিন এই ব্যবস্থাগুলো করেছেন তো!
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null