ওর ক্র্যাডল ক্যাপ হয়নি তো? এটি সারিয়ে তোলার ঘরোয়া পদ্ধতিই বা কী কী?

ওর ক্র্যাডল ক্যাপ হয়নি তো? এটি সারিয়ে তোলার ঘরোয়া পদ্ধতিই বা কী কী?

ক্র্যাডল ক্যাপ কী? চিকিৎসকের মুখে নামটা শুনে এই প্রশ্নই করেছিল উষসী। ওর কোলে দেড়মাসের ছোট্ট তাতাই। উষসী তাতাইয়ের একটি সমস্যা নিয়েই ওর চিকিৎসকের কাছে এসেছে। গত কয়েকদিন ধরেই ও লক্ষ করেছে ওর খুদের মাথার ত্বক মানে তালু খুব খসখসে আর লাল হয়ে আছে। এছাড়াও ত্বকটা কেমন যেন আঁশ-আঁশ হয়ে গিয়েছে । চিকিৎসককে এটা দেখাতেই তিনি বললেন তাতাইয়ের ক্র্যাডল ক্যাপ হয়েছে। নামটা শুনেই উষসীর মনে এই প্রশ্ন আসে। (How to Get Rid of Cradle Cap; Natural Methods)

 

ক্র্যাডল ক্যাপ কী? (What is Cradle Cap)

একদম ছোট বয়সে অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্র্যাডল ক্যাপ একটি চর্মরোগ যা জন্মের সময় থেকে এক বছর বয়স পর্যন্ত বা কখনও তার বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে। এই চর্মরোগ খুদের (Cradle Cap (Seborrheic Dermatitis) in Infants) মাথার তালু ছাড়া শরীরের অন্য অংশ যেমন মুখেও হতে পারে। এতে ত্বক খসখসে বা আঁশ-আঁশ প্রকৃতির হয়ে যায়। ত্বকের যে অংশে এটি হচ্ছে সেই অংশ জুড়ে ত্বকের রঙ হলদেটে বা সাদা-সাদা দেখায় এবং মাঝে মধ্যে ত্বক লালচেও হয়ে যায়। এই রোগের নাম ক্র্যাডল ক্যাপ। এতে খুদের কোনও ব্যথা বা কষ্ট হয় না।

 

ক্র্যাডল ক্যাপ কেন হয়? (Why Cradle Cap Appears?)

ক্র্যাডল ক্যাপ চর্মরোগটির আসল কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। তবে মাথার তালুতে থাকা সেবাসিয়াস (Sebaceous) গ্ৰন্থি থেকে একধরনের তৈলাক্ত পদার্থ ক্ষরিত হয় যার নাম সিবাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গ্ৰন্থিগুলো অনেক সময় আকারে বেড়ে বেশি পরিমাণে সিবাম ক্ষরণ করে। সিবামের অতিরিক্ত ক্ষরণ থেকে এই চর্মরোগটি হতে পারে। আবার ত্বকের শুষ্কতার কারণেও এটি হতে পারে। মায়ের কিছু হরমোন শিশুদের দেহে জন্মের পর বেশ কিছু সপ্তাহ থাকে। এমনকী কয়েক মাসও থাকতে পারে। তাদের কারণেও ক্র্যাডল ক্যাপ দেখা দিতে পারে।

 

ক্র্যাডল ক্যাপের লক্ষণ (Symptoms of Cradle Cap)

উষসী চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করেছিল ক্র্যাডল ক্যাপ হলে খুদের আচরণের মধ্যে কী কোনও পরিবর্তন আসে? চিকিৎসক বললেন, এই রোগের ফলে শরীরের ভিতর তেমন কোনও প্রভাব পড়ে না। তাই বাইরের পরিবর্তন দেখেই বোঝা যায় ক্র্যাডল ক্যাপ হয়েছে কি না (Cradle Cap Diagnosis)।

  • ক্র্যাডল ক্যাপ হলে ওই অংশের ত্বকের রঙ লাল বা হলদেটে হয়ে যায়। তবে ক্র্যাডল ক্যাপ হওয়া অংশের রং শিশুর গায়ের বর্ণের উপর নির্ভর করে।
  • ত্বক আঁশ আঁশ প্রকৃতি হয়ে যায়। অল্প অল্প চামড়া উঠতে থাকে।
  • ক্র্যাডল ক্যাপ হওয়া অংশের ত্বক অমসৃণ হয়ে যায়। ত্বকের উপরিভাগ ফুসকুড়ির মতো উঁচুনিচু হয়ে যায়।
  • এটি দেখে আপাতভাবে চুলকানির রোগ মনে হলেও, এতে কোনও চুলকানি হয় না।
  • ক্র্যাডল ক্যাপ মাথার তালু ছাড়াও মুখ, বগল, কানের পিছনে বা ডায়পার পরানোর অংশেও হতে পারে।
  • ক্র্যাডল ক্যাপ যেমন অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তেমনই এটি সারিয়ে তোলার বেশ কিছু ঘরোয়া উপায়ও রয়েছে। ছোট্ট তাতাইয়ের চর্মরোগ হয়েছে জানতে পেরে উষসীর মুখ ভার হয়ে গিয়েছিল। তা দেখে চিকিৎসকই ঘরোয়া উপায়গুলো একে একে বলে দিলেন।

 

আরও পড়ুন: যেভাবে যত্ন নিলে সুন্দর হয় শিশুর চুল

 

ক্র্যাডল ক্যাপ সারিয়ে তোলার কিছু ঘরোয়া উপায় (Home Remedies Of Cradle Cap) 

#1. অলিভ তেল: অলিভ তেলে ভিটামিন ই থাকায় এটি শিশুর ত্বকের জন্য নিরাপদ ও উপকারী। ভিটামিন ই ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমণের থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি ত্বককে পুষ্টিও জোগায়। এক থেকে দুই চামচ অল্প অলিভ তেল নিয়ে খুদের মাথার তালুতে মাসাজ করে দিন। কয়েক ঘণ্টা বা সারারাত রাখার পর, পরের দিন শিশুদের শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুইয়ে দিন।

#2. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার: অ্যাপেল সিডার ভিনিগার শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এটি ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে। দুই চামচ ভিনিগার-এর সঙ্গে এক চামচ জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি খুদের তালুতে আলতোভাবে মাসাজ করে দিন। এরপর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে অল্প গরম জলে ওর মাথা ধুইয়ে দিন। (Ways to Get Rid of Cradle Cap) অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ব্যবহার করার সময় লক্ষ্য রাখুন যাতে এটি ওর চোখে চলে না-যায়।

#3. বেকিং সোডা: বেকিং সোডা ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়। বেকিং সোডার ক্ষারীয় পিএইচ ত্বকের তৈলাক্ত সিবামের পিএইচকে মন্দীভূত করে। তবে একবছরের কমবয়সি শিশুদের বদলে দুই তিন বছর বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা ভালো। অল্প পরিমাণ সোডা বেশি পরিমাণ জলে গুলে খুদের মাথার তালুতে লাগিয়ে দিন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। বেকিং সোডা ব্যবহারের এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফুসকুড়ির মতো ত্বকের অমসৃণ অংশ পাতলা চামড়াসমেত তালু থেকে উঠে আসে।

#4. নারকেল তেল: নারকেল তেল ত্বকের আর্দ্রতা সঠিক রাখতে সাহায্য করে। হাতে দুই তিন ফোঁটা তেল নিয়ে হাতের তালু ঘষে অল্প উষ্ণ করে নিন। এরপর খুদের মাথায় আলতোভাবে মালিশ করে দিন। মালিশের সময় ওই অংশের পাতলা চামড়া আলগা হয়ে এলে তা ফেলে দিন। কিছুক্ষণ পর অল্প গরম জলে ওর মাথা ধুইয়ে দিন (How to Get Rid of Cradle Cap with Coconut Oil)।

#5. বেবি ব্রাশ: ক্র্যাডল ক্যাপের অংশের ত্বকে প্রচুর পরিমাণে ফুসকুড়ি থাকে। সিবামের অতিরিক্ত ক্ষরণের ফলে এগুলো হয়। শিশুদের জন্য তৈরি ব্রিসলস সাধারণত নরম ও পাতলা হয়।‌ এই ব্রাশ দিয়ে নিয়মিত ওর তালু আঁচড়ে দিন। এতে ক্র্যাডল ক্যাপের অংশে থাকা মৃত ত্বক ঝরে যাবে। পাশাপাশি এতে মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকবে।

#6. আমন্ড তেল: অলিভ তেলের মত আমন্ড তেলেও রয়েছে ভিটামিন ই, যা ত্বককে পুষ্টি জোগায় ও ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে। আমন্ড তেল অল্প পরিমাণে ওর তালুতে মালিশ করে দু-এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুছিয়ে দিতে পারেন বা অল্প গরম জলে ধুইয়েও দিতে পারেন (Cradle Cap Treatment Tactics)।

#7. চা গাছের তেল: সাধারণত ব্রণ সারাতে এই তেল খুবই উপকারী। ছোটদের ক্র্যাডল কাপের ক্ষেত্রেও এই তেল একই কাজ করে। চা গাছের তেল ত্বকের সিবাম গ্ৰন্থির অতিরিক্ত নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এক ভাগ চা গাছের তেল ১০ ভাগ আমন্ড তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার তালুতে আলতো ভাবে মালিশ করে দিন। ২০ মিনিট পরে অল্প গরম জল ধুয়ে বেবি শ্যাম্পু দিয়ে খুদেকে স্নান করিয়ে দিন।

#8. ভেজিটেবল তেল: অন্যান্য তেলের মত ভেজিটেবিল তেলও ক্র্যাডল ক্যাপ সারিয়ে তোলার জন্য উপকারী। এই তেল ছোট সোনার ত্বককে মসৃণ করে ও ত্বকের আঁশ-আঁশ ভাব কমায়। অল্প পরিমাণে এই তেলের ওর মাথার তালুতে আলতো ভাবে মালিশ করুন এবং দু-ঘণ্টা পরে বেবি শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুইয়ে দিন (How to Prevent Cradle Cap)।

 

কখন গুরুতর ব্যাপার (When It Is Serious?)

ক্র্যাডল ক্যাপ নিয়ে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। চিকিৎসকের কথা শুনে বুঝতে পারল উষসী। সাধারণত ঘরোয়া উপায়ে নিজে থেকেই সেরে যায় এই চর্মরোগ। তবে কিছু সময় তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

  • দেহের একটি অংশ থেকে অন্যান্য অংশে এই রোগটি ছড়িয়ে পড়লে তা চিন্তার ব্যাপার। সেক্ষেত্রে চিকিৎসককে বিষয়টি জানানো উচিত।
  • নিয়মিত ঘরোয়া উপায়ের প্রয়োগের পর ত্বকের ওই অংশ যদি আরও লাল হয়ে যায়, বা বেশি পরিমাণে ফুসকুড়ি দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে ঘরোয়া পদ্ধতির বদলে অন্য উপায় অবলম্বন করতে হতে পারে।

ক্র্যাডল ক্যাপ খুব কম ক্ষেত্রেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় (Cradle Cap Treatment Tactics and When to Worry)। সাধারণত কয়েকদিন যত্ন নিলেই এটি সেরে যায়। যেমন হয়েছে তাতাইয়ের ক্ষেত্রে। উষসী চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিয়মিত যত্ন নেওয়ায়, একবছর বয়স হওয়ার আগেই ওর মাথার তালু একদম মসৃণ। একবছরের জন্মদিনে ওর মাথায় চুলভর্তি। কেকটা কাটার সময় তাই রীতিমতো ফিল্মস্টার মনে হচ্ছিল উষসীর চোখের মণিকে। (How to Get Rid of Cradle Cap)

 

আরও পড়ুন: ছোট্ট ছানার ত্বকের যত্নে কোনও ত্রুটি হচ্ছে না তো? কীভাবে দেখভাল করবেন, চেকলিস্ট ছকে দিলাম আমরা!

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null