ছোট্ট হলেও পুঁচকে জিভের পরিচর্যা প্রয়োজন। জেনে নিন স্বাদেন্দ্রিয় সাফ-সুতরো রাখতে কী করণীয়!

ছোট্ট হলেও পুঁচকে জিভের পরিচর্যা প্রয়োজন। জেনে নিন স্বাদেন্দ্রিয় সাফ-সুতরো রাখতে কী করণীয়!

সোনা, তোমার জিভটা দেখাও তো দেখি। ভাবছেন কী? বাচ্চাকে জিভ দেখাতে বলা কিন্তু শুধু মিষ্টি মিষ্টি ফটো তোলা আর বাচ্চাকে নিজের ইন্দ্রিয় চেনানো নয়। বাচ্চার জিভ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হলেও বাচ্চার কাছে এই আবদারটি রোজ আপনাকে করতে হবে। অবশ্যই সে শুনবে না, কিন্তু ধৈর্য ধরে কসরত আপনাকে করতেই হবে। বাচ্চার গা-হাত-পা, মাথার চুল, চোখ যেমন প্রত্যেকদিন পরিষ্কার করতে হয়, ঠিক তেমনই মুখের ভিতরেও ভালো করে পরিষ্কার করা জরুরি। বাচ্চার স্বাদেন্দ্রিয় অর্থাৎ জিভ নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে বাচ্চার মুখে ইনফেকশন হয় না, জিভে র‍্যাশ হয় না এবং খাবারের সঠিক স্বাদগ্রহণ থেকে শিশু বঞ্চিত হয় না। যদিও কাজটি একটু ধৈর্যসাপেক্ষ, তবে অসম্ভব নয় একেবারেই। কীভাবে বাচ্চার জিভ পরিষ্কার করবেন, দেখে নিন এক নজরে। (How to clean your baby’s tongue in Bangla)

বাচ্চার জিভ পরিষ্কার করা কেন প্রয়োজন? (Why should a mother clean her baby’s tongue?)

প্রথমত, শিশুকে পরিচ্ছন্ন রাখা তার ভালো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। আমরা বড়রা নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি এবং নিয়মিত নিজেদের পরিষ্কার রাখি। বাচ্চারা নিজেরা নিজেদের যত্ন নিতে পারে না বলেই, এগিয়ে আসতে হয় মাকে।

বাচ্চার জিভ নিয়মিত পরিষ্কার করা হলে,

  • মুখের ভিতরে সহজে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না।
  • বাচ্চার মুখের ভিতরের অংশে, গালের ভিতর দিকে, জিভে ও মাড়িতে সাদা সাদা দাগ বা স্তর দেখা যায়। একে থ্রাস (Thrush) বলে। “ক্যানডিডা অ্যালবিক্যানস” নামের একটি ফাঙ্গাস এর জন্য দায়ী। শিশুর জিভ নিয়মিত পরিষ্কার করলে, এই Thrush হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
  • জিভের ওপর র‍্যাশ হয় না, অবাঞ্ছিত ইনফেকশন ঘাঁটি গেড়ে বসতে পারে না।
  • জিভে সাদা স্তর জমে যায় না।
  • মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
  • বাচ্চার মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হয় না।

১ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের জিভ কীভাবে পরিষ্কার করবেন? (How to clean your baby’s tongue who is younger than 1 year old)

  • মায়েরা, ত্যাগ স্বীকার করা যখন মেনেই নিয়েছেন তখন আর দুঃখ না করে হাতের লম্বা নখগুলো সবার আগে কেটে ফেলুন। বাচ্চার জিভ পরিষ্কার করার সময় বাচ্চা নড়াচড়া করবেই, আপনার নখে পুঁচকেটির ছোট্ট লাল জিভটি কিন্তু আঘাত পেতে পারে।
  • নিজের হাত জীবাণুনাশক সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন।
  • বাচ্চারা সাধারণত প্রতিবাদ না করে কোনও জিনিসই মেনে নিতে পারে না। আর জিভ পরিষ্কার করতে গেলে তো বাচ্চার মুখে আপনাকে হাত ঢোকাতে হবে। কাজেই সে বিদ্রোহ করবেই করবে। বাচ্চাকে শান্ত রাখার একটা উপায় হল, তাকে কোলে নিয়ে তার জিভ পরিষ্কার করা।
  • বাচ্চাকে একহাতে আরাম করে শুইয়ে দিন, যেন আপনি ওকে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছেন বা আদর করছেন। বাচ্চা কোলে শুয়ে দুলুনি খেতে পছন্দ করলে, তাকে কোলে শুইয়ে নিন।
  • এবার একটা পরিষ্কার কাপড় নিয়ে সেটা নিজের তর্জনীতে ভালো করে জড়িয়ে নিন। এবার ওই আঙুলটা ঈষদুষ্ণ গরম জলে ভিজিয়ে বাচ্চার নিচের ঠোঁটে আলতো করে চাপ দিতে থাকুন, যাতে সে মুখটা খোলে।
  • বাচ্চা মুখ খুললে, আঙুলে জড়ানো কাপড়টা দিয়ে বাচ্চার জিভের ওপর আলতো করে বৃত্তাকারে মালিশ করুন। জিভের মাঝখানে ও পাশে সব জায়গায় এই ভাবে কাপড়টা দিয়ে আলতো হাতে মালিশ করে দিন। প্রয়োজন হলে কাপড়টা আবার ওই ঈষদুষ্ণ জলে ডুবিয়ে নিতে পারেন।
  • জিভ পরিষ্কার হয়ে গেলে গালের ভিতরের দিক, মাড়ি এই একইভাবে আলতো হাতে মালিশ করে করে পরিষ্কার করে দিন।
    আপনার বাড়িতে যদি Sterilized ইয়ার বাডস থাকে, তাহলে এই ইয়ার বাড ঈষদুষ্ণ জলে ডুবিয়ে একইভাবে বাচ্চার জিভ পরিষ্কার করতে পারেন।
  • নিয়মিত একবার, বিশেষ করে খাওয়ার পরে বাচ্চার জিভ অবশ্যই পরিষ্কার করুন।

১ বছরের বেশি বয়সি বাচ্চাদের জিভ কীভাবে পরিষ্কার করবেন (How to clean a toddler’s tongue)

  • বাজারে অনেক নামীদামি কোম্পানির Infant toothbrush পাওয়া যায়। এই সব ব্রাশের দাঁড়া বা bristle খুবই নরম হয়। এই ব্রাশ আলতো হাতে বাচ্চার জিভে বৃত্তাকারে ঘসে দিন।
  • বাচ্চার বয়স ২ বছর হয়ে গেলে, সামান্য টুথপেস্ট ব্রাশে লাগিয়ে জিভে আলতো হাতে ঘসে দিন।বাচ্চার দাঁত আগে পরিষ্কার করবেন, তারপর জিভ।
  • খেয়াল রাখবেন, বাচ্চা যেন এই পেস্ট গিলে না ফেলে।

কিছু কথা মাথায় রাখুন (Things to keep in mind while cleaning your baby’s tongue)

  • ২ বছরের কম বয়সি বাচ্চাকে কখনওই ফ্লোরাইড যুক্ত কোনও পেস্ট ব্যবহার করতে দেবেন না।
  • বাজারে বাচ্চাদের ব্যবহারোপযোগী অনেক Infant toothpaste পাওয়া যায়। বাচ্চার বয়স ২ বছর হয়ে গেলে এই পেস্ট ওকে দিতে পারেন।
  • আপনি যে toothpaste ব্যবহার করে অভ্যস্ত, সেটাই যদি বাচ্চাকে দিতে চান, তা হলে তার পরিমাণ যেন একটি মটরশুঁটির দানার মতো হয়।
  • বাচ্চা toothpaste ব্যবহার করে ব্রাশ করার পর, ভালো করে জল দিয়ে কুলকুচি করে মুখ ধুইয়ে দেবেন।
  • একদম ছোট বাচ্চাকে কখনওই কোনও কিছুতে অত্যধিক জোর করা ঠিক নয়। বাচ্চা যখন শান্ত থাকবে, তখন তার জিভ পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন।
  • আঙুল মুখের বেশি ভিতরে ঢোকাবেন না। বাচ্চা বমি করে ফেলতে পারে।
  • জিভের ওপর সাদা স্তর যদি খাবার কারণে পড়ে, তাহলে উপরে লেখা পদ্ধতিতে পরিষ্কার করলেই তা চলে যায়। কিন্তু যদি দেখেন, যে সাদা স্তর এভাবে পরিষ্কার করার পরও যাচ্ছে না, তাহলে সম্ভবত বাচ্চাটির কোনও ইনফেকশন বা Thrush হয়েছে, এরকম অবস্থায় দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। Clean Baby Tongue Thrush.

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null