রোগা হওয়ার চেয়েও ফিট থাকা ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে বাঁচা অনেক বেশি জরুরি! শরীরে নানা রকম অসুখের যে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, তার অনেকগুলিই ওবেসিটির হাত ধরে আসে। তাই মেদবৃদ্ধিকে রুখে দিতে পারলেই অনেক অসুখের সঙ্গে লড়াই করা সহজ হয়ে যায়। তবে শরীরের অন্য অংশের মেদ তাড়াতাড়ি ঝরলেও পেটের মেদ ধরতেই সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। (Fat Cutter Drinks for Weight Loss)
এ দিকে পেটের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলতে পারলে চেহারায় যেমন সৌন্দর্য আসে, তেমনই হৃদরোগ ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের ভয় অনেকটা কমে। পেটের মেদ কমলে হাঁটুর উপর চাপও কম পড়ে। তাই পেটের চর্বি ঝরাতে পারলে ওবেসিটির সমস্যাও অনেকটা এড়ানো যায়। (Peter Med Komano)
জিম, ডায়েট বা ব্যায়ামের নানা কসরতে তো পেটের চর্বি কমেই, কিন্তু যদি এত কিছু নিয়ম মেনে করার সময় না পান বা তেমন সুযোগ না জোটে, তা হলে? (Ojon Komano) ডায়াটেশিয়ানদের মতে, ঘরোয়া কিছু উপায়েও এই মেদ ঝরিয়ে ফেলা সহজ। জানেন সে সব?
উত্তর না হলে উপায়ের হদিস দেবো আমরা। ঝঞ্ঝাটের কিচ্ছু নেই। রোজ সকালে খালি পেটে, কিংবা শুতে যাওয়ার আগে খেতে হবে খালি এক গেলাস শরবত! শরবত নয়, এ হলো পেটের মেদ ঝরানোর মোক্ষম ওষুধ। ইংরেজিতে যার তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘ফ্যাট কাটার ড্রিংক’! (Roga Hobo Ki Kore) আমি, নিজে এতে উপকার পেয়েছি। আশা করি, মেদ-সমস্যার সমাধান হবে আপনারও। (Belly Fat Komanor Tips)
মেদ ঝরান ঘরে তৈরি ৯টি, কার্যকরী ফ্যাট কাটার ড্রিংক-এর সাহায্যে (9 Fat Cutter drinks for weight loss)
#1. ধনেপাতা আর লেবুর শরবত
লেবু-তে যে মেদ ঝরানো সম্ভব, সে তো প্রায় সকলেই জানেন। কিন্তু জানেন কি, একই ভাবে উপকারী অতিপরিচিত ধনেপাতাও? ধনেপাতাই আপনার হজম-প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখবে। আর এতো জানা কথা, হজম যদি ঠিকঠাক হয়, পেটে বা শরীরে অন্য কোথাও চর্বি জমার কোনও সুযোগই পায় না তখন।
ধনেপাতা-লেবুর এই শরবতই মেটাবলিজম (metabolism) বাড়ায়, বারবার খাই খাই ভাব প্রতিরোধ করে।
আর যদি ওজন কমানোর প্রসঙ্গে আসি, সে ক্ষেত্রেও ধনেপাতার ভূমিকা থাকে অপরিসীম। শরীরে সুগার বা চিনির ভারসাম্য যদি ঠিকঠাক না থাকে, চর্বি জমতে বাধ্য তখন। ধনেপাতা এই সুগারেরই হঠাৎ ওঠানামা প্রতিরোধ করে। আটকে দেয় অহেতুক ওবেসিটি (Fat Cutter Drink Natural)।
দিনে তাই অন্তত একটিবার এই ফ্যাট কাটার ড্রিংক অবশ্য়ই খান!
কীভাবে বানাবেন?
#2. লাউ আর গোলমরিচের শরবত
ফ্যাট কাটার ডায়েট-এর পথে যদি হাঁটেন, এই শরবতটা ছাড়া সম্পূর্ণই হবে না আপনার যাত্রা!
রোজ সকালে, খালি পেটে লাউয়ের শরবতই ঝরঝর করে ওজন ঝরিয়ে দেবে আপনার (Bhuri Komanor Upay)। তবে গোলমরিচ মেলাতে ভুলবেন না যেন! গোলমরিচ ব্যবহার করতে বলছি, কারণ লাউ একটু ঠান্ডা প্রকৃতির সবজি। গোলমরিচ সেই ভাবটাই কাটিয়ে দেবে। শরবতটাকে আপনার শরীর-মতো করে তুলবে! আপনার যদি সাইনাস, ঠান্ডা লাগার ধাত থাকে, তা হলেও ক্ষতি হবে না কোনও।
এই শরবতটা খেতেও যেমন ভালো, তেমনই কার্যকরীও বটে। বিশেষ করে উচ্চ-রক্তচাপের (High Blood Pressure)-এর মতো সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, এই শরবতটা তাঁদের জন্যই সুপারিশ করব আমি।
কীভাবে বানাবেন?
#3. টমেটো, করলা, শসার শরবত
এটা শুধুই মেদ ঝরানোর টোটকাই নয়, কার্যকরী ঘরোয়া ওষুধও বটে। এই শরবতই রক্তে সুগারের মাত্রা আর ইনসুলিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই আগেভাগেই বলে দিই, রক্তে যাঁদের সুগারের মাত্রা এমনিতেই কম, তাঁরা এই শরবতটির সাহায্য নেবেন না!
বাকিরা দুদিন অন্তর, দিনে একবার করে এই শরবত খেতে পারেন। অন্তত এক মাস খেতে থাকুন ফল পেতে (Fat Cutter Drink)।
তিন সবজির এই রঙিন-মিশেল আপনার হজম-প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখবে, মেটাবলিজম বাড়াবে, শরীর থেকে টক্সিন দূর করে রক্ত পরিষ্কার রাখবে!
কীভাবে বানাবেন?
#4. জোয়ান-জল
বদহজম-অ্যাসিডিটির উপশমে প্রায়ই জোয়ান-জলের সাহায্য নিই আমরা। আর এভাবেই অজান্তে মেদ-হঠাও কর্মসূচিরও অংশীদার হয়ে 🙂
ওবেসিটি কমানোর লড়াই জারি রাখতে রোজ রাতে আর রোজ সকালে খালি পেটে জোয়ান জল খেতে থাকুন (Fat Cutter Drink for Night)। হলফ করে বলতে পারি, আপনার অভিযান সফল হবেই।
অন্তত এক মাস এই অভ্যাস জারি রাখুন। সাথে সুষম ডায়েটও মেনে চলুন। মাস পেরোলে ফলাফল নজর এড়াবে না আপনার! ৩টি সহজ ধাপে বানিয়ে ফেলুন জোয়ান জল। (Ojon Komanor Sohoj Upay)
কীভাবে বানাবেন?
জোয়ান-জল বানানোর আরও একটা পদ্ধতি আছে। তা হলো, রাতভর জোয়ান জলে ভিজিয়ে সকালেও সেটি খেতে পারেন আপনি!
আরও পড়ুন: প্রেগন্যান্সির পরে বাড়তি ওজন চটজলদি কমাবেন কীভাবে? রইল সহজ এবং নিরাপদ উপায়
#5. চিরতার জল
করলা-নিমের থেকে প্রায় ১০গুণ বেশি তেঁতে চিরতা! এগাছের যে কোনও অংশ দিয়েই ওবেসিটি প্রতিরোধক ওষুধ তৈরি সম্ভব।
বাজারে আপনি হরেক ফ্যাট কাটার ক্য়াপসুল পেয়ে যাবেন, যেগুলো কি না এই চিরতার নির্যাসেই তৈরি। আমি বলবো, ওসবের ধার ধারবেন না। স্রেফ চিরতার জল খান, তাতেই অনেক ভালো ফল পাবেন।
বানাতে সহজ, আবার চটজলদি ওজন কমানোর জন্য চিরতার জুড়ি মেলা ভার।
কীভাবে বানাবেন?
আগে থেকেই সাবধান করে দিচ্ছি, চিরতার জল কিন্তু খুব তেঁতো। তবে এর প্রভাব জিভে থেকে যাবে বড়জোর আধঘণ্টা (Ojon Komanor Medicine)। এটুকু যদি সহ্য করে নিতে পারেন, আপনার রোগা হওয়ার পথে তখন আর আসে কে!
সপ্তাহে তিনদিন খান, খালি পেটে। ঠিকঠাক ফল পেতে একমাস খেতে থাকুন।
#6. অ্যালোভেরা জুস
ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা অতুলনীয়। সে আবার নতুন কথা কী! কিন্তু কখনও ভেবেছেন কি, অ্যালোভেরা জুস খেয়ে ঝকঝকে ত্বক আসে কী করে?
কারণ হল এই যে, অ্যালোভেরাই ত্বকের সাথে সাথে সারা শরীরকেই ডিটক্সিফাই করে (Detoxification )।
অ্যালোভেরা আপনার শরীরের মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে দেয়, ডিটক্সিফায়ার হিসেবে দারুণ কাজ করে। ফ্যাটি/ চর্বিযুক্ত লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার তাই এটাই সর্বোত্তম উপায়।
অ্যালোভেরা জুসই রক্তের টক্সিন উপাদানগুলিকে পটির মাধ্যমে আপনার শরীর থেকে বের করে দেবে। সেই সাথে নিয়ন্ত্রণ করবে কোলেস্টেরলের মাত্রাও।
কীভাবে বানাবেন?
আমি বলবো, যে কোনও প্রসিদ্ধ আয়ুর্বেদিক স্টোর থেকে অ্যালোভেরা জুস কিনেই নিন। কেননা এটা বানানো বড্ড ঝক্কির।
আপনার মনে হতেই পারে, তা আবার কেন! অ্যালোভেরার পাতা কেটে, রসটা নিয়ে একটু খেয়ে নিলেই হলো! না, হলো না! গাছটা কোথায় বড় হয়েছে, সেখানের মাটির ধরন কী, সবেরই ওপর নির্ভর করে এর গুণমান (Fat Cutter Drink For Extreme Weight Loss)।
তাই বলছি, খামোকা ঝুঁকি কেন নেবেন। কিনেই নিন না এই একটা জুস খালি?
#7. আদা-রসুন-লেবুর শরবত
এই উপাদানগুলি কতটা উপকারী, তা বোধহয় মোটামুটি আমরা সকলেই জানি। না জানলে আপনার জন্যই রইল সংক্ষিপ্ত বিবরণ…
ওজন, ফিটনেস নিয়ে যখন এত মাতামাতিও ছিল না, তখন থেকেই বোধহয় ওবেসিটি প্রতিরোধে আদা-রসুন-লেবুর ব্যবহার চলে আসছে (The Best Weight Loss Drinks)।
এখনও কার্যকরী ফ্যাট কাটার হিসেবে এর সাহায্য আপনি নিতেই পারেন। তবে জেনে নিতে হবে বানানোর কৌশল!
কীভাবে বানাবেন?
#8. দারুচিনির জল
আমাদের শরীরের লিভার আর অন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষায় দারুণ কাজ করে দারুচিনি। রোজ সকালে খালি পেটে দারুচিনির জল খাওয়ার অভ্যাসই শরীর থেকে টক্সিন তাড়ায়, লিভারের সাফাই করে (How to Lose Belly Fat)।
আর আপনার লিভার যত সাফ-সুতরো থাকবে ততই চাঙ্গা হবে শরীরের মেটাবলিজম আর ফ্যাট গলানোর ক্ষমতা!
কীভাবে বানাবেন?
#9. জিরে-জল
মশলা হিসেবে রোজের খাবারে জিরে তো ব্যবহার করছেনই। কিন্তু জানেন কি, শোওয়ার আগে এক গেলাস জিরে-জলই জাস্ট কামাল করতে পারে? (Weight Loss Recipe)
ওজন ঝরানোর যুদ্ধ আর একটু জোরদার করতে কাল থেকেই রোজ রাতে জিরে-জল খেতে থাকুন, অন্তত ৩০ দিন। ফল পাবেন হাতেনাতে (Chorbi Komanor Upai)।
কীভাবে বানাবেন?
আরও পড়ুন: প্রসবের পর মেদ ঝরানোর ৬ টোটকা
একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
null
null