ঘরোয়া উপায়ে সেরেল্যাক তৈরির ৬টি সহজ রেসিপি; তোমার ছোট্ট ছানার জন্য

ঘরোয়া উপায়ে সেরেল্যাক তৈরির ৬টি সহজ রেসিপি; তোমার ছোট্ট ছানার জন্য

দৃশ্য ১ – সবাই বলে, গিন্নির হাতের রান্নার স্বাদটাই নাকি আলাদা। কবজি ডুবিয়ে সবাই খাচ্ছে, ফ্যালফ্যাল করে কেবল চেয়ে আছে বাড়ির পুঁচকেটা। ছোট্ট বলে কি কোনও সাধ থাকতে নেই ওর? নাই বা থাকুক দাঁত, মায়ের হাতের রান্না খেতে ওরও তো ইচ্ছে করে নাকি!
কিন্তু এমন কী বানাবেন, যেটা ও খেতে পারবে, আর ওর জন্যে উপকারীও? চিন্তার কিছু নেই, বাচ্চার স্বাদমতো ঘরেই বানিয়ে ফেলুন সেরেল্যাক। মায়ের উষ্ণতাও পেল ছানা, আবার পুষ্টিও গেল শরীরে। (Homemade Cerelac Recipe)

দৃশ্য ২- বাজার থেকে কিনে আনা সেরেল্যাকটা হয়তো ফুরিয়ে গিয়েছে হঠাৎ। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘরোয়া সেরেল্যাক খানিক মজুত করে রাখতে পারেন। এতে আপনার বাচ্চাকে হঠাৎ খিদেয় কষ্ট পেতে হবে না, নিশ্চিন্ত থাকবেন আপনিও। তা বাদে শিশুর খাবার হিসেবে বাজার চলতি সেরেল্যাকগুলো বেশ ব্যয়বহুলও। এছাড়াও এর উপাদানগুলো কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়েও অনেক মা-বাবা চিন্তায় থাকেন।

আজ তাই দেখে নিন স্বাস্থ্যসম্মত উপায় বাড়িতেই কীভাবে সেরেল্যাক বানিয়ে নেওয়া যায়। ঘরে তৈরি এই খাবারটি আপনার শিশুর জন্য খুবই উপকারী। এটি শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই সেরেল্যাক বানানোর সময় উপাদানগুলো আপনার শিশুর শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী কমবেশি করে নিতে পারেন। সাধারণত ছয়-সাত মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি সেরেল্যাক, খিচুড়ি, সুজি এসব দেওয়া হয় শিশুদের। এর ভিতর সবচেয়ে পুষ্টিকর সেরেল্যাকই। বাড়িতে বানানোর গোপন রহস্য ফাঁস করছি আমরা, কথায় ও ছবিতে ! (Homemade Cerelac Recipe)

 

ঘরোয়া সেরেল্যাক আসলে কী (What is Homemade Cerelac?)

নামটা শুনেই মালুম হচ্ছে আকাশ-কুসুম কিছুই নয়, এ হলো কোলের পুঁচকের জন্য ঘরে তৈরি পুষ্টিকর, সুস্বাদু খাবার! হলফ করে বলতে পারি, স্বাদটা এতটাই আকর্ষণীয় যে মাঝে মাঝে চেখে দেখতে ইচ্ছে হতে পারে আপনারও। বাচ্চা ছয় মাস পূরণ করলেই এ খাবার আপনি দিতে পারেন ওকে।

মজার বিষয় হল নরম, থকথকে খাবারটায় নিজের মতো উপাদান মেশাতে পারেন আপনি। কখনও ফল কখনও বা অন্য কিছু! ফলের ভিতর আসতে পারে কলা, আপেল, সবেদা আরও কত কী! আর এই স্বাদ বাড়ানোর স্বাধীনতাই মন জয় করবে আপনার শিশুর। খানিক মিষ্টি করতে চাইলে গুড়ও মেশাতে পারেন। তবে এড়িয়ে চলুন চিনি। পাল্টে পাল্টে এভাবে সেরেল্যাক বানান যদি, খাবার নিয়ে কখনই বোর হবে না একরত্তি! দেখে নিন ছয় মাসের বাচ্চার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতির সেরেল্যাক রেসিপি।

 

বাচ্চার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতির সেরেল্যাক রেসিপি (Homemade Cerelac Recipe in Bangla)

উপকরণ (Ingredients)

  • লালচাল বা আতপ চাল- দেড় কাপ
  • মাষকলাই ডাল- এক কাপ
  • সবুজ ছোলার ডাল- এক কাপ
  • মুগ ডাল- এক কাপ
  • খোলায় ভেজে নেওয়া ছোলা- এক কাপ
  • মসুর ডাল- এক কাপ
  • ভাঙা গম- এক কাপ
  • সাবুদানা- আধ-কাপ
  • ছোলার ডাল- আধ-কাপ
  • ভুট্টাদানা- আধ-কাপ
  • কাঠবাদাম- আধ-কাপ
  • কাজুবাদাম- আধ-কাপ
  • এলাচদানা- ৮-১০ টা

 

ঘরেই তৈরি করুন শিশুর জন্য সেরেলাক (Easy And Healthy Homemade Cerelac Recipe for Baby)

 

তৈরির নিয়ম (How to Prepare)

  • কাঠবাদাম, কাজুবাদাম আর এলাচ বাদ দিয়ে বাকি উপাদানগুলো সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন এগুলো ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
  • এরপর নীচের নিয়মানুযায়ী একে একে সবগুলো উপাদান শুকনো খোলায় ভাজতে থাকুন।
  • চালগুলো কিছুটা ফুলে ওঠা না পর্যন্ত ভাজতে থাকুন।
  • ডাল আর গমের গুঁড়ো বাদামী আর কিছুটা মুচমুচে হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। সবুজ ছোলার ডাল সবুজ থেকে বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
  • সাবুদানা কিছুটা কুড়মুড়ে ও শুকনো করে ভেজে নিন।
  • টেলে নেওয়া ছোলা আরও কিছুক্ষণ ভেজে মুচমুচে করতে হবে।
  • ভুট্টা মুচমুচে হয়ে ফুটতে শুরু করা পর্যন্ত ভাজুন।
  • যতক্ষণ না গন্ধ ছড়াচ্ছে, ভাজতে থাকুন কাঠবাদাম আর এলাচদানা।
  • কাজুবাদাম সোনালি করে ভেজে নিন।
  • এবার ভাজা উপাদানগুলোকে ঠান্ডা করে নিন।
  • সবশেষে ঠান্ডা ডাল, বাদাম, চাল আর মশলা ব্লেন্ডার বা গ্রাইন্ডারে গুঁড়ো করে নিন। ব্যাস, তৈরি পুষ্টিকর ঘরোয়া সেরেল্যাক।

 

এয়ারটাইট কৌটোয় (বাতাস ঢুকবে না) সংরক্ষণ করে একমাস অবধি ব্যবহার করতে পারেন এই পুষ্টিকর ঘরোয়া সেরেল্যাক।

 

আরও পড়ুন:  সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর কিছু রেসিপি, আপনার বাচ্চার জন্য

 

ওপরের পদ্ধতিতে যদি সেরেল্যাক তৈরি করেন, তা হলে সেটা একমাস অবধি ব্যবহার করতে পারেন সঠিক পাত্রে সংরক্ষণ করলে। মানছি, এই সেরেল্যাক বানাতে একটু সময় লাগে, কিন্তু ছানার খাতিরে মাসে একবার এইটুকু সময় বের করে নেওয়া যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মতও বটে! এছাড়াও, ধরুন আপনি বাইরের ভালো মানের কেনা সেরেল্যাকই বাচ্চাকে খাওয়ান, হঠাৎ দেখলেন তা ফুরিয়ে গেছে বা এমন কোনও জায়গায় আছেন সেখানে সেরেল্যাক কিনতে পারছেন না। এরকম অবস্থায় কি খুদে না খেয়ে থাকবে?

কখনও নয়! চটজলদি কীভাবে সেরেল্যাক বানিয়ে নিতে পারবেন তার হদিস দিয়ে দিচ্ছি ছবিতে। এই সেরেল্যাকগুলো তৈরিতে বেশি উপকরণের কচকচি নেই, বানানো সময়সাপেক্ষও নয়। হঠাৎ প্রয়োজনে কীভাবে বানাবেন সুস্বাদু সেরেল্যাক ,তার পাঁচটি  পদ্ধতি দিয়ে দিলাম ছবিতে ->

Homemade cerelac

 

বাচ্চাকে খাওয়ানোর নিয়ম (How to Serve Homemade Cerelac to Your Baby)

  • এক কাপ দুধ নিয়ে ফুটে উঠতে দিন।
  • এরপরে এতে দুই চা-চামচ সেরেল্যাক মেশান আর নাড়তে থাকুন যাতে জমাট না বেঁধে যায়। এভাবে ঘন, থকথকে পেস্ট তৈরি হবে। প্রয়োজনে আরও দুধ মেশাতে পারেন।
  • হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে দিন। হালকা গরম থাকতে থাকতেই খাওয়ান আপনার বাচ্চাকে।

 

খেয়াল রাখুন এই জিনিসগুলো (Precautions You Need to Take While Preparing Cerelac at Home)

  • যে পাত্রে বানাবেন, সেটা যেন ভেজা না হয়। উপাদানগুলো রোস্ট করার আগে দেখে নিন, পাত্রটি খটখটে কি না!
  • উপাদান ঠিকঠাক ভাজা হল কি না, যাচাই করতে নিজের মুখে নিয়ে দেখুন। যদি দেখেন, বাদামের মতো মট করে ভেঙে যাচ্ছে তবেই আঁচ বন্ধ করুন।
  • ভাজার আগে সব উপাদান খুব ভালো করে ধুয়ে নিন, যাতে তাতে নোংরা কিছু না থাকে। দরকারে আগের রাতে ভিজিয়ে শুকিয়ে রাখুন!
  • ভুলেও কখনও না ভেজে গুঁড়ো করবেন না।
  • ৬-৭ মাসের বেশি বয়সের বাচ্চাদের ডাল দেওয়াই যায়। কিন্তু হজম হওয়ার জন্য সেটা যেন নরম হয়, সেটা খেয়াল রাখুন।
  • বাচ্চা বছর দেড়েকের হলে তবেই বাদাম, এলাচ- এসব মেশান।

 

ঘরে তৈরি সেরেল্যাকের সুবিধা (Benefits of homemade Cerelac)

  • উপাদানগুলো আপনি নিজের মতো পছন্দ করতে পারবেন। কোনও খাবারে শিশুর এলার্জি থাকলে সেটা বাদ দিতে পারবেন স্বচ্ছন্দে!
  • আতপ চাল এর অন্যতম উপাদান। এর ফাইবার শিশুর হজমশক্তির বিকাশে সাহায্য করে।
  • .বাড়িতে তৈরি বলে এতে কোনও রাসায়নিক বা প্রিজারভেটিভ থাকে না। টাটকা বানিয়ে টাটকা দিতে পারেন শিশুকে।
  • ছোলার ডাল আর আরও নানা ডালে শিশুর বাড়-বৃদ্ধি তরান্বিত করে। কেননা ডালে আছে ভরপুর প্রোটিন!
  • ঘরের তাপমাত্রায় একমাস অবধি, আর ফ্রিজারে হলে ছয় মাস অবধি সেরেল্যাক গুঁড়ো সংরক্ষণ করতে পারবেন।
  • খাবারের গুণমান নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশই নেই। কেননা এটা তৈরি করেছেন আপনি নিজে, নিজের হাতে!

 

আরও পড়ুন:  বাচ্চার জন্য সুস্বাদু, নরম সাতটি খাবারের রেসিপি 

 

একজন মা হয়ে অন্য মায়েদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চান? মায়েদের কমিউনিটির একজন অংশীদার  হয়ে যান। এখানে ক্লিক করুন, আমরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।

null

null